দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় আমাজন বনের গহীন অঞ্চলে পাথুরে পাহাড়ের গায়ে আঁকা প্রায় দশ হাজার প্রাচীন চিত্রকলার খোঁজ পেয়েছে একটি গবেষক দল। ধারণা করা হচ্ছে, বরফ যুগের মানুষ এই ছবিগুলো এঁকেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি গার্ডিয়ানে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক জোসে ইরিয়ারতের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বছর আগের এই চিত্রকলাগুলো আবিষ্কার করেছেন।
কলম্বিয়ার চিরিবিকুইট জাতীয় উদ্যানের সেরেনিয়া ডে লা লিনডসা অঞ্চলে প্রায় আট কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই ছবিগুলোতে এমন সব প্রাণী চিত্রিত হয়েছে, যারা বরফ যুগে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত।
ধারণা করা হচ্ছে, আমাজন অঞ্চলে পৌঁছানো প্রথম দিকের মানুষেরা এই ছবিগুলো এঁকেছিল। আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ম্যামথ, পালেওলামা নামের বিলুপ্ত প্রজাতির উট ও বরফ যুগের ঘোড়া। এ কারণে মনে করা হচ্ছে, বরফ যুগের মানুষেরা এই ছবিগুলো এঁকেছিল।
ছবিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মাছ, কচ্ছপ, সরিসৃপ ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উপস্থিতিও রয়েছে।
কলম্বিয়ার ফারক গেরিলাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটিতে ছবিগুলো গত বছর খুঁজে পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে গবেষক দলটি। তবে একটি আবিষ্কার অভিযানটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে ধারণ করায় বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল।
পাথরের গায়ে আঁকা কিছু ছবিতে দেখা গেছে, হাতে হাত ধরে গোল হয়ে বিভিন্ন প্রাণীদের ঘিরে রয়েছে মানুষ। কিছুতে ছবিতে এই মানুষদের নাচতেও দেখা গেছে।
চিত্রকলাগুলো বিভিন্ন মাপের। সেখানে অনেকগুলো হাতের ছাপও পাওয়া গেছে।
গবেষক দলের একজন সদস্য নৃবিজ্ঞানী আল শামাহি বলেন, কিছু ছবি এত উঁচুতে আঁকা হয়েছে যে এগুলো দেখার জন্য ড্রোনের সঙ্গে লাগানো ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে কিছু ছবি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে আঁকা হয়েছিল।
গবেষক দলের প্রধান ইরিয়ারতে বলেন, ‘বিশাল প্রাণীগুলোর প্রতি অস্ত্র উঁচিয়ে ঘিরে থাকা মানুষদের ছবি দেখে মনে হয়, তারা এদের উপাসনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাজনের মানুষ মনে করত সব প্রাণী ও গাছপালারই আত্মা আছে। বিভিন্ন উপায়ে তারা এদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। হয়তো পাথরের গায়ে এই উপায়গুলোর ছবিই আঁকা হয়েছে।’
গবেষকরা ধারণা করছেন ওই অঞ্চলটিতে আরও অনেক প্রাচীন চিত্রকলা খুঁজে পাওয়া যাবে। করোনামহামারির পরে আবারও সেখানে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন তারা।