ভারতের একটি বাঘ নয় মাস ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে তার সঙ্গীর সন্ধানে। এজন্য মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গনা রাজ্যের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার ঘুরেছে সে। বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে মহারাষ্ট্রের আরেকটি অভয়ারণ্যে থাকা বাঘটি এখনো সঙ্গীর অপেক্ষায় রয়েছে।
দেশটিতে এ পর্যন্ত কোনো বাঘের এটিই সবচেয়ে বেশি দূরত্বে ভ্রমণ।
বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ওয়াকার নামের সাড়ে তিন বছর বয়সী পুরুষ বাঘটি মহারাষ্ট্রের একটি অভয়ারণ্যে ছিল। গত বছরের জুন মাসে সে ভ্রমণ শুরু করে। মহারাষ্ট্রের সাত জেলা ও তেলেঙ্গানার কয়েকটি অঞ্চল পাড়ি দিয়ে এ বছরের মার্চ মাসে দয়াগঙ্গা অভয়ারণ্যে থামে বাঘটি।
২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অভয়ারণ্যটিতে চিতা, নীল গাই, বুনো ভালুক, ময়ূর ও চিত্রা হরিণদের ভেতরে ওয়াকারই একমাত্র বাঘ। ওয়াকারের জন্য সঙ্গী আনবেন কি না সে ভাবনায় আছেন কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে ওয়াকার বংশ বিস্তার করতে পারে। এতে অভয়ারণ্যটিতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
বাঘেরা একা থাকতে পছন্দ করে না। নতুন এলাকা বা সঙ্গীর খোঁজেই ওয়াকার বেরিয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
ভ্রমণকালে অবস্থান শনাক্তের জন্য একটি রেডিও সিগন্যাল ডিভাইস জুড়ে দেয়া হয়েছিল ওয়াকারের গলায়।
বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা জানান, ওয়াকার সোজাসুজি ভ্রমণ করেনি। প্রতি ঘণ্টায় তার গতিবিধি লক্ষ করা হচ্ছিল। পাঁচ হাজারেরও বেশি জায়গায় অবস্থান করেছে সে। দীর্ঘ এই ভ্রমণপথে ওয়াকার অনেক মহাসড়ক, কৃষিজমি, নদী, বন ও ঝর্ণা পাড়ি দিয়েছে। মূলত রাতের অন্ধকারে পথ চলত সে। খাবার জোগাত বন্য শূকর ও গবাদিপশু শিকার করে।
একবারই বিশ্রাম নেয়ার সময় মানুষের মুখোমুখি হয় ওয়াকার। পায়ের চিহ্ন দেখে ওয়াকারের পিছু নিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ওয়াকার তাকে আক্রমণ করলেও ছেড়ে দেয়। সামান্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে পালিয়ে বাঁচেন তিনি।
ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী বিলাল হাবিব বলেন, ‘ওয়াকারের এই দীর্ঘ ভ্রমণ প্রমাণ করে যে মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চল এখনও বাঘেদের চলাফেরার উপযোগী রয়েছে। বলা যায়, উন্নয়ন এখনও সেখানে প্রাণিদের চলাফেরায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।’
বিশ্বের শতকরা ৭০ ভাগ বাঘ রয়েছে ভারতে। এ সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ বাড়লেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নেই ভারতে।