ধরুন পোশাকের দোকানে গিয়ে অনেক যাচাই শেষে মনের মতো একটি বেছে নিয়েছেন। তবে দাম চুকানোর সময় দেখা গেল, পছন্দের সেই পোশাকের এক প্রান্তের রঙ ঝলসে আছে!
এমন দুরবস্থায় নতুন করে দোকানের আর কোনো পোশাক কি আপনার মন ভরাতে পারবে?
একটি পোশাক তখনই কেনার প্রয়োজন থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা, আপনি হয়ত বিকল্প কোনোটি ওই দোকান থেকেই কিনে ফেলতে বাধ্য হবেন।
তবে খুব যদি তাড়া না থাকে- একটু ঘুরে দেখুন, মনে হবে দোকানের বাকি সব পোশাক যেন একদম রঙহীন। অগোচরে রঙ ঝলসে থাকা পোশাকটিই যেন ছিল একশতে একশ!
মনোবিজ্ঞানীরা যে কোনো মানুষের এই একমুখী পছন্দের খোঁজ অনেক আগেই পেয়েছেন। তারা বলছেন, পছন্দের কিছু বাছাইয়ের সময় একজন মানুষ অবচেতনভাবে কেবল একটি নির্দিষ্ট পছন্দকেই বেছে নেন না, একই সঙ্গে বেছে না নেয়া বস্তু বা ঘটনার প্রতি মনের ভেতর প্রবল ‘অপছন্দও’ তৈরি করেন।
যে কারণে পছন্দের বস্তু বা ঘটনাটি কোনোভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলে, বাকিদের প্রতি নতুন করে মনোযোগ আকৃষ্ট হওয়া খুব কঠিন।
মনোবিজ্ঞানীরা এতদিন বিষয়টিকে কেবল বড়দের মনের ‘গোলমাল’ ভাবছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক শিশুদের মধ্যেও একই আচরণের খোঁজ পেয়েছেন।
গবেষণার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল ১০ থেকে ২০ মাসের কয়েকটি শিশুকে। তাদের প্রত্যেকের সামনে কিছুটা দূরে রেখে দেয়া হয় উজ্জ্বল রঙের আলাদা ধরনের দুটি করে খেলনা।
প্রতিটি শিশুকে ছেড়ে দেয়ার পর সে হামাগুড়ি দিয়ে পৌঁছায় যে কোনো একটি খেলনার কাছে। গবেষকেরা এরপর শিশুটির বেছে নেয়া খেলনা সরিয়ে সেখানে রেখে দেন নতুন আরেকটি খেলনা।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবারই নতুন খেলনাই বেছে নিচ্ছে শিশুরা। প্রথমবারের বাছাইয়ে বাদ পড়া খেলনাটি আর কখনোই তাদের মনোযোগ পায়নি।
গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক জন হপকিন্সের সাবেক শিক্ষার্থী অ্যালেক্স সিলভার দারুণ খুশি এই ফলাফলে।
তিনি বলছেন, ‘প্রথমবার বাদ দেয়া খেলনার দিকে আর কখনোই নজর দেয়নি শিশুরা। এর মানে হলো, শিশুরাও কোনো একটি পছন্দ তৈরির সময়ে মনের অবচেতনে অপছন্দটিও ঠিক করে নেয়। আর সেই অপছন্দ পরে দূর হওয়া বেশ কঠিন।’
গবেষক দলের এরপরের লক্ষ্য, শিশুদের মনে ‘মাত্রাতিরিক্ত পছন্দের চাপ’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো কিছু পছন্দ করা খুব একটি খারাপ কিছু নয়, তবে একটির পর একটি পছন্দের প্রবণতা তৈরি হতে শুরু করলে বাড়তে পারে মনের অস্থিরতা। আর মনোবিজ্ঞানে একেই বলা হয় ‘মাত্রাতিরিক্ত পছন্দের চাপ’ বা ‘চয়েস ওভারলোড’।
এমন চাপে মাঝেমেধ্যেই খেই হারান এমন অনেক ‘বড়’ মানুষের সংখ্যা খুব কিন্তু কম নয়।