বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব

  • সম্পাদকীয়   
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২৩:১৮

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশকে কর্মের বাহিরে রেখে একটি দেশ বা জাতি কখনো সামনে দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। এগিয়ে নিতে হলে দেশের সকল পেশার মানুষকে কর্মমুখী করে তুলতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষিত করে তোলাটাই এখন আমাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে প্রাথমিক স্তর থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক তথা হাতে-কলমে শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। শিশুদের জন্য এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সেই শিক্ষা যেন কাজে লাগে। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা এক ধরনের গৎবাঁধা তাত্ত্বিক শিক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়। শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে স্কুল আনন্দদায়ক মনে হয় না। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় প্রাণের স্পন্দন জাগে না। শিক্ষা আনন্দময়। আনন্দঘন পরিবেশে শিশুদের পাঠদান সুনিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যক্রম বহুলাংশে শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও জীবনমুখী নয়। দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ, শিষ্টাচার, নৈতিকতা, জীবনধর্মী বিষয়াদিসমৃদ্ধ ন্যূনতম পাঠ্যক্রম প্রণয়ন ও চর্চা একান্ত জরুরি।

প্রতি বছরই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিক্ষার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনীতির গতি প্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করলে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। শিক্ষাকে যদি কর্মমুখী করে তোলা যায়, তবে শিক্ষিত মানুষের চাকরি পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।

শিক্ষা হলো সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। বৃত্তি হলো জীবিকা, কর্ম বা পেশা। বৃত্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাই বৃত্তিমূলক শিক্ষা। যে শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তাকে বলা হয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা। বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যক্তিকে কোনো না কোনো পেশার উপযোগী করে তোলে। সাধারণ পর্যায়ের বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলতে বোঝায় কোনো বিষয়ের স্বল্পমেয়াদি ব্যবহারিক শিক্ষা।

এ ধরনের শিক্ষা অল্প সময়ে স্বল্প ব্যয়ে সহজেই গ্রহণ করা যায়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে মানুষ কৃষিতে, শিল্পে সর্বত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। তাই এসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা অত্যাবশ্যক।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তর থেকেই কৃষি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নিবিড় কৃষিশিক্ষার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং কৃষিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন। ব্যবহারিক কৃষিশিক্ষার জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কৃষি প্রদর্শনী প্লট বা বাগান গড়ে তোলা বাধ্যতামূলক আইন জারি করতে হবে। বিদ্যালয় বাগান হবে কৃষিশিক্ষার জীবন্ত বিদ্যাপীঠ। এখানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কৃষিভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি পাঠ, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ এবং প্রায়োগিক কৃষিশিক্ষার ওপর বাস্তব ধারণা লাভ করবে। বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়নের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বনির্ভরতা অর্জনে সক্ষম হবে।

জাতীয় অগ্রগতি, টেকসই উন্নয়ন এবং জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমানে প্রচলিত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষার স্থলে আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় করার জন্য ন্যূনতম আট বছর মেয়াদি শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা অত্যাবশ্যক। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে আট হতে বারো বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষার মেয়াদ চালু রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি শিক্ষা শেষে পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন।

মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জীবনধর্মী ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন এবং তাকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। এ বিশাল লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুঁথিগত মুখস্থ বিদ্যার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনের ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে। দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে শিক্ষাই একমাত্র মাধ্যম। আমাদের ন্যায় দরিদ্র ও অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি জীবনমুখী শিক্ষার মধ্যেই নিহিত রয়েছে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এ বিভাগের আরো খবর