বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষাঙ্গনে অশান্ত পরিবেশ: এ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ

  • সম্পাদকীয়   
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:৪৭

শিক্ষা একটি জাতির মৌলিক অধিকার ও উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। শিক্ষিত জাতিই পারে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে।

শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ব্যক্তি জীবনে সংগতি বিধান করা বা সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে চলার যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করা। বর্তমান সমাজে জীবন যাত্রার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। জটিল এ সমাজে চলার জন্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার অনেক বেশি সমৃদ্ধ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষা বলতে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয় পাঠদান কে বোঝায় না। এর পাশাপাশি সাফল্যের পথে ভবিষ্যতে সম্মুখীন হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, প্রবণতা এবং মনোভাব ও মানসিকতা গড়ে তোলা বোঝায়।

শিক্ষাঙ্গন একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের পবিত্র ক্ষেত্র। এখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জন করে, নৈতিকতা শেখে এবং ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হয়।

বর্তমান সময়ে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না, বরং তাদের ভবিষ্যৎকেও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।শিক্ষাঙ্গনের এই অস্থিরতা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং অভিভাবক, শিক্ষক ও সমগ্র জাতির জন্য একটি অশনিসংকেত।বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বারবার দেখা যাচ্ছে ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষক নির্যাতন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, সেশনজট, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা।বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা স্কুল—প্রতিটি স্তরেই দেখা যাচ্ছে দলাদলি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, শিক্ষকদের নিরপেক্ষতা হারানো, সেশনজট, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ক্রমবৃদ্ধি। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারছে না, তাদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে, মানসিক চাপ বাড়ছে এবং তারা হতাশায় ভুগছে। এসবের ফলে একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠার পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে একটি আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ পরিবেশ।

বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে হানাহানি অশান্তি বিশৃঙ্খলা চলছে এর কারণ মূল্যবোধের অবক্ষয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদাবোধ থাকলে অশান্তি ও অস্থিরতা কমে আসত।

শিক্ষাঙ্গনের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের অবহেলা, অবকাঠামোগত সমস্যাও এই অশান্তির অন্যতম কারণ। একদিকে যেমন পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে বা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

শিক্ষিত হলেও কর্মসংস্থান নেই—এই বাস্তবতা শিক্ষার্থীদের হতাশায় নিমজ্জিত করে তুলছে। ফলে তারা সহজেই প্রতিবাদ, বিশৃঙ্খলা কিংবা হতাশায় নিপতিত হয়।

শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চরম প্রভাব ফেলছে। তারা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছে না, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে এবং অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিদেশমুখী হয়ে পড়ছে, ফলে দেশের মেধা পাচার হচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দক্ষ, নৈতিক ও যোগ্য নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে না। জাতির অগ্রগতি থেমে যাবে। তাই শিক্ষাঙ্গনে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। রাজনীতি, সহিংসতা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতিকে দূর করে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। প্রশাসন ও শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি রোধে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে।পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষা বাদ দিয়ে দক্ষতা, নৈতিকতা ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট ও সহনশীলতার চর্চা শিক্ষার অংশ করতে হবে।

শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি একটি জাতির ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করে, শিক্ষাকে জীবনমুখী করে শিক্ষায়তন থেকে অনাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ইভটিজিং দূর করতে হবে.। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতাবিষয়ক শিক্ষা, গণমাধ্যমে সুষ্ঠু প্রচারযোগ্য অনুষ্ঠান ও পারিবারিক মূল্যবোধ তৈরির যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

একটি মেধাভিত্তিক, সুশৃঙ্খল ও সুশাসিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, আজকের প্রজন্ম একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে, যার দায় আমাদের সবাইকেই নিতে হবে।

লেখক: প্রবন্ধকার ও গবেষক।

এ বিভাগের আরো খবর