হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের বর্ণ ব্যবস্থা সমাজকে চারটি বর্ণে বিভক্ত করে যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। যারা তাদের গুরুতর পাপের কারণে এই ব্যবস্থার বাইরে পড়ে তাদের বহিষ্কৃত বা অস্পৃশ্য হিসাবে বঞ্চিত করা হয় এবং বর্ণ ব্যবস্থার বাইরে বিবেচনা করা হয়। বর্বর এবং যারা অধার্মিক বা নীতিহীন তারাও বহিষ্কৃত বলে বিবেচিত হয়। আমাদের বর্তমান সমাজে কেউ বহিষ্কৃত ও নীতিহীন থাকুক তা আমরা কেউ ই চাই না । আমরা চাই সম্প্রীতি। আর এই শব্দের অর্থ হলো বন্ধুত্ব, সদ্ভাব, সৌহার্দ্য, শান্তি, বা মিলমিশ। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মানুষে মানুষে প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে এবং সকলে মিলেমিশে থাকে। ধর্ম ও বর্ন নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি—সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিতে, সম্প্রীতিতে আমরা বসবাস করে যাচ্ছি।
তার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমরা বলতেই পারি ‘এই দেশ আমাদের সবার। সবাই একসঙ্গে এই দেশে সুন্দরভাবে ও শান্তিতে বসবাস করব। এখানে কোনো জাতি-ধর্মে, গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই আমরা এ দেশের নাগরিক।প্রতিটি ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার রয়েছে। সেভাবেই আমরা আমাদের সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জন্মাষ্টমীর মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে এসব কথা বলেন। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘শ্রীকৃষ্ণের হাজার হাজার ভক্ত এখানে উপস্থিত আছেন। এখানে বাদ্য বাজছে। এই আনন্দে সামরিক বাহিনীকে সঙ্গে নেওয়ায় উনারা সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।’তিন বাহিনী প্রধানদের এই যৌথ উপস্থিতি উৎসবকে আরো বর্ণাঢ্য এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি, ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তিনি আরো বলেন, ‘আজকের এই জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যে আদর্শ, সেই আদর্শ এখান থেকে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা এই দেশে সুন্দরভাবে একসঙ্গে বাস করব। এই আনন্দ মিছিল ১৯ ও ২০ শতকে একসময় এক সঙ্গে হতো। একদিকে হিন্দুদের রথ যাত্রা উৎসব অন্যদিকে মুসলমানদের তাজিয়া মিছিল , চলতো ঘন্টার পর কোন অসুবিধা বা বিশৃংখল পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না তারপর ধীরে ধীরে এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইদানিং আবার শুরু হয়েছে।আশা করি, এই উৎসব ও মিছিল সব সময় জারি থাকবে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান আশ্বস্ত করেন সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে যত ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা চান, ইনশাআল্লাহ সেটা তারা দেবেন।সেনাপ্রধানের মতে আজকের এই অনুষ্ঠানে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত আছেন, তাদের মাধ্যমে আজকের এই সম্প্রীতির বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।সবাই ভালো থাকবেন। তিনি বলেন আজকের অনুষ্ঠানের এই এলাকা আমার স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। আজিমপুর, পলাশীতে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। সবার মঙ্গল কামনা করছি।’অনুষ্ঠানে সবাইকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাসের আহবান জানিয়েছেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে এ দেশে একসঙ্গে বসবাস করব। শ্রীকৃষ্ণ যেন সমাজে ন্যায় ও আলোর সত্য প্রজ্বালন করেন। আসুন, পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরো শক্তিশালী করি।’বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসই জোগায় না, ন্যায়ের পথেও চলতে শেখায়। আমরা সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। কখনো ধর্মীয় ভেদাভেদ আমাদের মধ্যে কাজ করেনি। এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব।’ সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বের মানচিত্রে এই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।উল্লেখ্য যথাযথ মর্যাদা ও হিন্দু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। গীতাযজ্ঞ, নামসংকীর্তন, কৃষ্ণপূজাসহ নানা আয়োজনে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে রাজধানীর ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় এবং আনন্দঘন পরিবেশে হিন্দু সম্প্রদায় এ উৎসব উদযাপন করেছে।উদ্বোধনী বক্ত্যব্য শেষে প্রদীপ প্রজ্ব্বালনের মধ্য দিয়ে তিন বাহিনীর প্রধানরা জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশেই আজিমপুর দায়রা শরীফে প্রস্তুতি চলছিল মুসলমানদের ‘আখেরি চাহার সোম্বা’ উদযাপনের প্রস্তুতি।
আখেরি চাহর শোম্বা মূলত আরবি ও ফার্সি বাক্য। প্রথম শব্দ ‘আখেরি’ আরবি ও ফার্সিতে পাওয়া যায়। যার অর্থ হলো- শেষ। ফার্সি ‘চাহর’ শব্দের অর্থ হলো- সফর মাস এবং ফার্সি ‘শোম্বা’ শব্দের অর্থ হলো- বুধবার। অর্থাৎ ‘আখেরি চাহর সোম্বা’র অর্থ দাঁড়ায়- সফর মাসের শেষ বুধবার। দিনটিকে মুসলিম উম্মাহ খুশির দিন হিসেবে জানে এবং খুশির দিন হিসেবেই উদযাপন করে থাকে। কিন্তু কেন? জেনে রাখা দরকার :-সফর মাসের শেষ বুধবার হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ অসুস্থতার পর সাময়িক সুস্থ হয়ে ওঠার দিনকে স্মরণ করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে ইবাদত ও উৎসব প্রচলিত তাই ‘আখেরি চাহার সোম্বা’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মুসলিমরা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি উদ্যোগে এ উৎসব-ইবাদত যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মাধ্যমে পালন করে থাকেন।পারসিক প্রভাবিত অঞ্চলসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দেশ ও অঞ্চলগুলোতে বহু যুগ ধরে ‘আখেরি চাহার সোম্বা’ ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।এ অঞ্চলের সুফি-সাধকসহ দিল্লি সালতানাতের শাসকবর্গ রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই আখেরি চাহার সোম্বা পালন করতেন।আমরাও দেখতে পেয়েছি যথাযোগ্য মর্যাদায় তা উদযাপিত হয়েছে। এবং দুই ধর্মের দুইটি উৎসব মহা ধুমধামে যার যার সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকে সম্পাদন করতে পেরেছেন আয়োজকেরা।এবার আসি অন্য আলোচনায়,সামনে নির্বাচন সমাগম, সেনাবাহিনীকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় আসন্ন নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করেন সুশীল সমাজ। এ প্রসংঙ্গেসেনাপ্রধান বলেছেন, ‘এখন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সেনারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। আগে এত দীর্ঘ সময় মাঠে থাকতে হয়নি। তাই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব থাকলে তা দূর করতে হবে।’ সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে দান কালে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান।
উক্ত অনুষ্ঠানে পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এসময় সব সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।’বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইস্যুতে নানা কটূক্তির জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এসব মন্তব্যে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তাদের বয়স কম। তারা আমাদের সন্তানের বয়সী। তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।’সেনাপ্রধান আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারি দেখাতে হবে। প্রতিশোধমূলক কোনো কাজে জড়ানো যাবে না।’নাম উল্লেখ না করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘একজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না।আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে। নৈতিক স্খলনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মিডিয়া ট্রায়ালের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া হবে না, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’সেনাপ্রধান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সতর্ক করে বলেন, ‘একজন সেনা কর্মকর্তাকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আগেভাগেই খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।’অতএব আমাদের সকল শ্রেনীপেশার জনগণকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে নির্দিষ্টহারে অংশগ্রহণ এর ভিত্তিতে এই দেশে আসন্ন নির্বাচনকে দ্রুত সুষ্ঠ এ সার্থক করে একটি সরকার গঠনে সক্রিয় থাকতে হতে হবে ।