এ দেশে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা জন্মেছেন শত প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য।
সেই রকম এক ঝাঁক মানুষের গল্প মিশে আছে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে। গ্রামীণ ব্যাংক সব সময় সংগ্রামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভাগ্যহত মানুষের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক সহায়তার বিশ্বস্ত হাত।
দেশের প্রান্তিক জনগণের জীবনমান উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির সুপরিকল্পিত রূপরেখায় অভাবের গ্রহণকাল কাটিয়ে স্বচ্ছলতার আলো দেখছেন অনেকেই।
এদেরই মধ্যে একজন, সাভারের ধামসোনা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাকসুদা আক্তারের মেয়ে, মার্জিয়া । দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট মার্জিয়া মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তার বাবাকে হারান। দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে অভাবের সংসারে মা মাকসুদা কোনো রকমে ছেলেমেয়েদের নিয়ে দিন কাটাতে থাকেন।
মায়ের এই কষ্ট লাঘব করার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়ে পরিবারকে কিছুটা সাহায্য করে মার্জিয়া। নিজেকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন তার দুচোখ জুড়ে। একটি ল্যাপটপ হলে অনেকেরই মতো আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে আয়ের একটি পথ খুঁজে পাওয়া যাবে, এমন আশা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ধামরাই সরকারি কলেজে স্নাতক সম্মান কোর্সে ভর্তি হন মার্জিয়া।
ল্যাপটপ কেনার ইচ্ছা আরও তীব্র হয়। বাবা নেই, কার কাছে আবদার করবে? মা কে বলে কী হবে, মা যে দরিদ্র অসহায়। গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য মার্জিয়ার মা একদিন তাকে জানান, সদস্যের শিক্ষিত সন্তানদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নবীন উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করে থাকে গ্রামীণ ব্যাংক। মার্জিয়ার চোখে মুখে আশার সঞ্চার হয়।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ল্যাপটপ কিনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন মার্জিয়া। পরবর্তী সময় দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অন্য কম্পিউটার সামগ্রী কিনে আউটসোর্সিং ব্যবসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যায়।
মার্জিয়ার মতো আরেক বাবা হারানো মেয়ে সুরাইয়া পারভিন।
মানিকগঞ্জের মহাদেবপুর ইউনিয়নের বড়ংগাইল গ্রামের বাসিন্দা সুরাইয়ার মা রাফেজা খাতুনের স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন। আত্মীয়স্বজন সাহায্য তো দূরের কথা উল্টো মেয়েদের বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। মা রাফেজা খাতুন দমে যাওয়ার পাত্র না, মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
দুই মেয়েকে নিয়ে সে গ্রামীণ ব্যাংকের দ্বারস্থ হলেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে দুই মেয়েকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। সুরাইয়ার মতো এতিম মেয়েরা পেয়ে যায় গ্রামীণ ব্যাংকের মতো অভিভাবক। সুরাইয়া এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।
মার্জিয়া সুরাইয়া যে স্বপ্ন দেখছে, সে স্বপ্ন পূরণ করে আজ সমাজে সফল এবং উদাহরণ তৈরি করেছে ববিতা রানি আর মাখন চন্দ্র। দুজন হতদরিদ্র পরিবার থেকে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তিনবেলা পেট ভরে ভাত খাওয়াই যাদের স্বপ্ন ছিল, সেই তারাই এখন মানুষ গড়ার কারিগর।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা ববিতার পরিবারে সম্বল বলতে ছিল বসতবাড়ি ২০ শতাংশ জমি, মাঝারি আকারের দুটি আর ছোট সাইজের ৪টি লিচু গাছ। ববিতার মা মুড়ি ভাজার কাজ করতেন। টাকা পয়সার অভাবে ববিতার বোনের অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে হয়ে যায়। ববিতার নিজের ও লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল। ববিতার পাশে এসে দাঁড়ায় গ্রামীণ ব্যাংক। আজকে সে শ্রীপুর ভাংনাহাটি রহমানিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক। সংসারের হাল ধরেছে, স্বাবলম্বী হয়েছে। মাকে নিয়ে সুন্দর স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সিংহীমারা গ্রামের বাসিন্দা মাখন চন্দ্রের মা সুনীতি রাণী রায়। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন কেনার মাধ্যমে শুরু করেন স্বপ্নের দিকে এগিয়ে চলা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। জীবনে তিনি যে কষ্ট করছেন, তার ছেলেমেয়ে যেন সেই কষ্ট না করে সেটা ভেবে দিন রাত সেলাই মেশিনে কাজ করতেন।
হতদরিদ্র মাখন এইচএসসি পরীক্ষার পর পড়ে বিপাকে। পড়াশোনার খরচ চালাবে কে? এমন অবস্থায় পাশে দাঁড়ায় গ্রামীণ ব্যাংক। মাখনের মা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সন্তানের জন্য উচ্চ শিক্ষা ঋণ নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন মাখন চন্দ্র রায়।
সেখান থেকে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি মাখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছে। মাখন আজ শিক্ষিত সমাজে সফল এবং প্রতিষ্ঠিত।
এভাবে বহু মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে সহায়তা করছে গ্রামীণ ব্যাংক। প্রতিকূলতাকে জয় করার সারথি গ্রামীণ ব্যাংক।