বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কালনা সেতু: উন্নয়নের মুকুটে আরেকটি পালক

  • কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দিন    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২২ ২৩:৩৫

নড়াইল ও গোপালগঞ্জকে বিভক্তকারী নদী মধুমতীর কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ সেতু বদলে দেবে নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক চিত্র। সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে পর্যটন, কৃষি ও অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেকটি পালক। কালনা সেতুর উদ্বোধন সোমবার। এ দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু।

রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সড়কপথে যোগাযোগের জন্য তৈরি এ সেতু বদলে দেবে নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক চিত্র। সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে পর্যটন, কৃষি ও অর্থনীতিতে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে বেনাপোল, যশোর, নড়াইল ও লোহাগড়া রুটে নিয়মিত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। তা ছাড়া এ অঞ্চলের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনও এই পথে চলাচল শুরু করেছে। এই মহাসড়কটি ইতোমধ্যে দেশের ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে।

নড়াইল ও গোপালগঞ্জকে বিভক্তকারী নদী মধুমতীর কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি একনেক সভায় মধুমতী নদীর ওপর কালনা সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭০ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৬৮০ মিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ২০ মিটার। তখন কালনা সেতু ছিল চার লেনের। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের পর কালনা সেতুর সঙ্গে রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা, জমি অধিগ্রহণ ইত্যাদি নানা জটিলতায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়। অবশেষে আলাদা রেল সেতু নির্মাণসহ সব জটিলতা কাটিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ জুন সংশোধিত প্রকল্পে ছয় লেনের সেতু হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ৩৬ মাস ধরে ২০২১ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সময়ে কাজ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে-১-এর অংশ ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন এই সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।

সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ভিয়েতনামে তৈরি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ১৫০ মিটার দীর্ঘ নেলসন লস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) স্টিলের স্প্যান। জাপানের নিপ্পন কোম্পানির এ স্প্যানটি ছয় লেনের এ সেতুকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর বাস্তবায়ন করছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এ সেতু নির্মাণে ৭০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের পর ২০২০ সালের ১৫ মে বাস্তবায়ন শুরু হয়। কপার ড্যাম পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে পাইলিং করে স্থাপিত মোট ১২টি পিলারের ওপরে সেতুটি এখন দৈর্ঘ্যে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থে ২৭ দশমিক ১ মিটার। ১৫০ মিটার স্টিলের ধনুকের মতো বাঁকা স্প্যানটির উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। সেতুতে মোট এবাডমেট রয়েছে দুটি, ১৩টি স্প্যান এবং ১৬০টি গার্ডার। সেতুর উভয় পাশে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩০ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থ সংযোগ সড়ক রয়েছে। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ।

সওজ বিভাগ ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর অংশ ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরবাসী মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে সরাসরি কালনা সেতু পার হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকাগামী যানবাহন যাতায়াত সহজ ও পথ সংক্ষিপ্ত হবে। এ ছাড়া স্থলবন্দর বেনাপোলের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনেও এই সেতু ব্যবহার করা যাবে। তখন ঢাকার সঙ্গে নড়াইলের দূরত্ব হবে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার অর্থাৎ কমে যাবে ১৮০ কিলোমিটার।

জানা গেছে, নড়াইলের কালনা এলাকায় মধুমতী নদীর তীরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। শিগগিরই এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ দৃশ্যমান হবে। ফলে এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন।

এদিকে কালনা সেতু চালুতে জেলার উদ্যোক্তারা আগে থেকেই বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন যাতে করে সেতু উদ্বোধনের পরপরই এর সুফল পাওয়া যায়। সম্প্রতি নড়াইল-যশোর আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে নড়াইল অংশে জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ইতোমধ্যে বেঙ্গল গ্রুপ, কিষান গ্রুপসহ কয়েকটি কোম্পানি জমি কিনেছে। নড়াইল অংশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কলকারখানা। নড়াইল সদরের ধোপাখোলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ৩৫০ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নড়াইল জেলা কর্তৃপক্ষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইল কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় জানান, কালনা সেতু চালু হলে কৃষি পরিবহণ ও বিপণন সহজ হবে। চাঙা হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর সুফল পাবে নড়াইলের কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

কালনা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে নড়াইলের দূরত্ব হবে মাত্র ১১৩ কিলোমিটার। কালনা সেতু চালু পরবর্তী আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট রাতারাতি পরিবর্তন হবে। ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হবে, বিশেষ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এখানে হচ্ছে। জেলা শহরের অদূরেই বিসিক শিল্পনগরী হতে যাচ্ছে। এসবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নড়াইল জেলা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। কালনা সেতু চালু হলে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। লোহাগড়ায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছেন।

লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট, পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ এবং প্রকল্প পরিচালক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর

এ বিভাগের আরো খবর