বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাশি চক্রের আদি কথা ও রহস্য

  • সম্পাদকীয়   
  • ১ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:৪১

বহুদিন ধরে ভাবছি, রাশিচক্র নিয়ে স্বল্প পরিসরে কিছু একটা লিখব। কিন্তু এটি সম্পর্কে অতটা স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকায় ফার্মগেটস্থ ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের জ্যোতিষীকে জেড আই এর শরণাপন্ন হই। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে চৈতী জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী এ সম্পর্কে অভিজ্ঞ রতন কুমার পাইকের দিকনির্দেশনা নেই এবং তাদের সাথে বিভিন্ন আঙ্গিকে আলাপ-আলোচনা করি। তা ছাড়া এ ব্যাপারে ‘কিরো’ এর বই সহ আরও কিছু বইও জোগার করে স্ট্রাডি করি। অবশ্য আমাদের মুসলিম সমাজে এই জ্যোতিষ শাস্ত্রকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। কারণ এর সাথে ধর্মীয় নীতি বিরোধী ভাগ্য গণনা জড়িত। মজার ব্যাপার হলো যে, এই জ্যোতিষ শাস্ত্রের উদ্ভব অতি প্রাচীনকালে অর্থাৎ যীশু খৃষ্টের জন্মের অনেক আগে কালাডীয় সভ্যতার প্রাক্কালে। প্রাচীনকালে জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান অভিন্ন বলে বিবেচিত হতো। পাশ্চাত্য সপ্তদশ শতকীয় দর্শনে বিজ্ঞানীদের দ্বারা জ্যোতিষশাস্ত্র প্রত্যাখ্যাত হলে দুটি বিদ্যা ক্রমে পৃথক হয়ে যায়। মধ্যযুগের পরবর্তী পর্যায়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে মনে করা হতো সেই ভিত্তি, যার উপর দাঁড়িয়ে জ্যোতিষবিদ্যার কাজ চলতে পারে।

বস্তুত সেই প্রাচীনকালে রাশির স্বকীয়তা ও অবস্থান চিহ্নকল্পে সম্যক ধারণার নিমিত্তে একটি বিশেষ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যে গ্রহসহ তারামণ্ডলগুলোর মধ্য দিয়ে ভূকক্ষ অতিক্রম করে তার প্রতিটিকেই সেই প্রাচীনকালে কোনো না কোনো জন্তুর আকৃতি দেওয়া হয়েছিল। আর এই কারণে প্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা রাশিচক্রকে অভিহিত করত ‘জোডিয়াকোস কিকলোস’ বা ‘জন্তুদের বৃত্ত’। অবশ্য রাশিচক্রে মোট গ্রহসহ তারামণ্ডলের সংখ্যা এবং তাদের আকৃতি আগে অনেকাংশে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হতো না। তবে গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যার গোড়াপত্তনের পর তারামণ্ডলগুলোর সীমানা নির্দিষ্ট করা হয়। আর রাশিচক্রে মোট যে গ্রহসহ ১২টি তারকামণ্ডল আছে, তা হলো- অশ্বিনী, রোহিণী, সোমতারা, পুষ্যা, মঘা, চিত্রা, বিশাখা, জ্যেষ্ঠা, কাউস অস্ট্রেলিস, দেনেব আলগেদি, শতভিষা ও মৎস্যমুখ এবং আপাতভাবে বলা যায় যে, সূর্য এই ১২টি তারামণ্ডলসহ গ্রহের মধ্য দিয়েই অতিক্রম করে থাকে বিধায় কোনো মণ্ডলে সূর্য কতদিন অবস্থান নিয়ে থাকে, তাও নির্দিষ্টভাবে জানা যায়।

সত্য কথা বলতে কী, এই জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে প্রাচীনকাল থেকে বির্তকের শেষ নয়। এ ক্ষেত্রে যুক্তিবাদীরা বলেন যে, এটি বিজ্ঞান নয়, বলতে গেলে এটি অপবিজ্ঞান। তারা আরও উল্লেখ করেন যে, কর্ম দ্বারা ভাগ্য নিয়ন্ত্রত হয়। ভাগ্য লেখা থাকলেই যে হবে, তা তারা বিশ্বাস করেন না। আর সবকিছু প্রকৃতি তথা স্রষ্টা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই সৃষ্টি তথা মানুষ হিসেবে জ্যোতিষীরা যে ভাগ্য গণনা করতে পারে। এটি কেমন কথা? মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর জবাবে জ্যোতিষীরা বলেন, যে শাস্ত্র জ্যোতি অর্থাৎ আলোর পথ ধরে এই ভূমণ্ডলে যা কিছু ঘটছে তারই পথ নির্দেশনা করে, তাই জ্যোতিষশাস্ত্র। আর বিজ্ঞান হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান। পথ নির্দেশনাকারী বিশেষ জ্ঞানই হচ্ছে জ্যোতিষশাস্ত্র, যা সদূর পাঁচ হাজার বছর আগে বৈদিক যুগে এই উপমহাদেশেই প্রথম চর্চা শুরু হয়। সনাতনী ধর্মের আওতায় চতুর্বেদের অন্যতম অথর্ববেদের অঙ্গ এই জ্যোতিষ শাস্ত্র। এ শাস্ত্র হাজার হাজার বছর ধরে বহু ঘটনার মূর্ত প্রতীক হিসেবে সনাতনী ধর্মীয় অঙ্গের ধারায় গৃহীত। শুধু তাই নয়, শিক্ষণীয় উপদেশমূলক জ্ঞানের সম্ভার। এ দিকে চলমান জীবনে অনুসরণীয় পঞ্জিকার কথা ধরুন। এখানে চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ, অমাবস্যা, পূর্ণিমা ইত্যাদির কথা দণ্ড, তিথি, পল, অনুপল অনুসারে যেভাবে বর্ণিত থাকে, বাস্তবে তার এতোটুকু গরমিল কী ধরা পড়েছে? কোনো ব্যতিক্রম কী কোন সময় হয়েছে? এ প্রেক্ষাপটে পাঠক সমাজই বিচার করুন এটি বিজ্ঞানভিত্তিক শাস্ত্র কি না? আর ভাগ্য বলে কিছু একটা যে আছে যুক্তিবাদীরা বিশ্বাস করেন না। তারা বলেন, মনুষ্য জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যক্তির কর্ম, শ্রম ও সাধনার দ্বারা। এ বিষয়ে জ্যোতিষীদের ফলিত অভিমত ভিন্নতর। অবশ্য এটি বোঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণের সাহায্যে নিচ্ছি। মনে করি এক বিত্তশালী অভিজাত পরিবারে যে সময় একটি শিশুর জন্ম হলো, ঠিক সেই সময় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে এবং দরিদ্র পরিবারে দুটি শিশু জন্মগ্রহণ করল। এই তিনটি শিশুই ক, একইভাবে লালিত-পালিত হবে? সবাই কী একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে? কিন্তু বাস্তবে তা হওয়ার নয়; তাহলে এমন অবস্থান কার নিয়ন্ত্রণে?

সাধারণত জ্যোতিষীরা গণনার ক্ষেত্রে হাতের রেখার উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অথচ অনেকে বলে থাকেন যে, মাতৃগর্ভে সন্তান থাকাকালে হাত কুঁকড়ে থাকে বলে ওই দাগ পড়বেই, রেখাটেখা বলে কিছু নেই। এ সম্পর্কে জ্যোতিষীরা ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন, মাতৃগর্ভেই শিশুর হাত মুষ্টিবদ্ধ থাকে বলে রেখা হলে তা পাশাপাশিই হতো, লম্বালম্বি রেখাগুলো হতো না। আর তাই যদি হয়, তবে প্রতিটি মানুষের রেখা ভিন্নতর হয় কেন? রেখার গতি-প্রকৃতি একজনের সাথে অন্য জনের মেলে না কেনো? আপন দুই ভাইয়ের হাতের রেখা এক হয় না কেন? জ্যোতিষীরা যে রত্ন (যেমন- পান্না, হীরা, রুবী, রক্ত প্রবাল, গোমেদ, মুক্তা, ক্যাটসআই, পোখরাজ, ফিরোজা, ইন্দ্রনীলা, টোপাজ, ইত্যাদি) ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেন, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু কথা আছে। এই মহাবিশ্ব এতটাই আজব ও রহস্যপূর্ণ যে অনেক কিছু আমাদের জ্ঞানের বাইরে। তথাপিও যতটুকু জানা গিয়েছে, তাতে প্রতীয়মান হয়েছে যে, অতি ক্ষুদ্র পরামাণু বলেন, আর সৌর মণ্ডলের গ্রহ বা উপগ্রহ বলেন। সবই শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে যার যার মতো করে চলছে। এর এতটুকু ব্যতিক্রম নেই। আর প্রত্যেকটির বস্তুর নিজস্বতার আড়ালে মহাজাগিতক রাশি বিচ্ছুরিত করে। অনেক ক্ষেত্রে এই মহাজাগতিক রাশি ঘণীভূত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। তা ছাড়া এই রশি যখন কোনো বস্তুর উপর পড়ে তখন বিকিরণ ঘটায়। এদিকে মানুষ যে রত্ন ব্যবহার করে, তার উপর বাইরে থেকে আসা রাশি ন্যানো তরঙ্গে প্রতিফলিত করে। আর রত্নের অনু-পরামাণু এমনভাবে বিনস্ত, সে এটি বাইরে থেকে রশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে আড়ালে পৃথক পৃথকভাবে শুভ ও অশুভ নির্ধারণপূর্বক শুভকে গ্রহণ করে এবং অশুভকে বর্জন করে থাকে। আরেকটি কথা, ব্যবহৃত রত্নের আবার নিজস্ব বিকিরণ শক্তি আছে। এটি সবসময় পজিটিভ। আর বাইরে থেকে আসা অশুভ রাশির কম্পন বা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নেগেটিভ থাকে। এ ক্ষেত্রে রত্নের পজিটিভ এবং বাইরের পজিটিভ মিলে বিশেষ শক্তি উৎপন্ন করে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করে থাকে। আর রত্নের বিকিরণ রাশি শুধু উপকারী নয়, রত্ন বর্ণেরও উপকারিতা আছে। মানবজীবনে সব রকমের দেহ বা মনের রোগ বর্ণ বৈষম্যেরই পরিণতি। প্রত্যেকটি বর্ণই তার আপন কাজে ব্যস্ত। যেকোনো একটি বর্ণের ক্ষেত্রে সেই বর্ণের রত্ন ব্যবহার অপরিহার্য। এভাবে রত্ন অশুভ গ্রহের প্রভাব দূর করে মানবজীবনে কল্যাণ সাধন করতে পারে।

ছোটবেলা থেকে কতগুলো বচন শুনে আসছি, যেমন- কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন এবং মানুষ তার নিজের ভাগ্যের কারিগর বা নির্মাতা, ইত্যাদি। আসলে এ দুটি বচন সাংসর্ষিক এবং তাদের দৃষ্টিকোন থেকে সবাই ঠিক। আর অত্র প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো জ্যোতিষশাস্ত্র। এতে ভাগ্য গণনাপূর্বক আগত সময়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এটা সত্য যে, এ বিশ্বে মানুষ সমান নয়। কেউ বোকা, আর কেউ বুদ্ধিমান। মূলত বুদ্ধিমানদের আইকিউ লেভেল উপরে থাকে। সাধারণত জ্যোতিষীরা বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। এ দিকে জন্ম তারিখভিত্তিক কতগুলো বৈশিষ্ট্য প্রাচীনকাল থেকে নির্ধারিত। তাই আমি মনে করি জন্ম তারিখভিত্তিক বৈশিষ্ট্য ও আগত জাতকের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা, স্বভাব, আকাঙ্ক্ষা, ইত্যাদি জেনে জ্যোতিষীরা সম্ভাবনার কথা বলে থাকেন। এটি অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়। আবার অনেক সময় সঠিক হয় না। তবে সামগ্রিক বিষয়াদি বিবেচনায় আনলে জ্যোতিষীদের ভূমিকা ফেলনা নয় বিধায় ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।

লেখক: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর