বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোন দল জিতবে ২০২৬-এর সংসদ নির্বাচনে

  • সম্পাদকীয়   
  • ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:১৮

কী হবে আগামী নির্বাচনে? কোন দল ক্ষমতায় আসবে? বাংলাদেশের মানুষ স্বদেশে কিংবা প্রবাসে যে যেখানেই আছে মোটামুটি সকলেই এখন এই রকম একটা প্রশ্নের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। চব্বিশের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর ছাত্ররা বিপ্লবী সরকার গঠন করবে, সত্যি সত্যিই ওরা একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে, এটি ছিল প্রত্যাশা, স্বপ্নটা প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছিলাম আমরা। কিন্তু ৮ আগস্টের সরকার যখন ১০৬ ধারার ফাঁক দিয়ে একটি আইনী ব্যাখ্যার বৈধতা নিয়ে গঠিত হলো তখনই সব হিসেব পাল্টে গেল।

এরপর সবাই নিশ্চিত হয়ে গেল ফাঁকা মাঠে এখন গোল দেবে বিএনপি। দেখতে না দেখতে পুরো দেশটাই হয়ে উঠলো বিএনপির ফুটবল মাঠ। তারা টেম্পু স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড, হাট, ঘাট, মাঠ, বাজার, চরের বালু, নদীর পানি, পাহাড়ের পাথর সর্বত্রই গোল দিতে লাগলো। এই গোল দেওয়া নিরস্কুশ করার জন্য সরকারকে উপর্যুপরি চাপ দিতে লাগলো দ্রুত নির্বাচন দেবার জন্য।

নির্বাচনের সময়কালও ঠিক হলো। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। বিএনপি কি এই নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতার মসনদে বসবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বাংলাদেশের রাজনীতির ডাইনামিক্সটা আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে।

একটি বৃত্ত এঁকে যদি মাঝ বরাবর খাড়া দাগ দিই এবং তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বৃত্তের ভেতরে বসাই তাহলে দাগের বাঁয়ে দাগ ঘেষে বসবে আওয়ামী লীগ, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ একটি মধ্য বাম মানসিকতার রাজনৈতিক দল। বিএনপি বসবে দাগ ঘেষে দাগের ডানদিকে। অর্থাৎ বিএনপি হচ্ছে মধ্য ডান মানসিকতার রাজনৈতিক দল। সর্বডানে বসবে জামায়াতে ইসলামী এবং একই মানসিকতার ইসলামী দল, সংঘ ও গোষ্ঠীগুলি। সর্ববামে বসবে সিপিবি এবং কম্যুনিস্ট ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো।

বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল মধ্য ডান পন্থার পক্ষে থাকে। সেই দিক থেকে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি জনপ্রিয় দল। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল হয়েও ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে হিমসিম খেতে হয়। এবং সব সময়ই মধ্য বাম থেকে তাদেরকে ডানে কাত হয়ে থাকতে হয়। ছাদ খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হিজাবে মাথা ঢেকে তসবিহ হাতে নিয়ে শেখ হাসিনার ধর্ম প্রদর্শন, কিংবা কথায় কথায় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া, হজে যাওয়া, ওমরাহ করা, ফজরের পর কোরআন পাঠ করার কথা ফলাও করে মিডিয়াতে প্রচার করতে হয় তাদের ‘ডানে কাত’ নিশ্চিত করার জন্য। এ কারণেই আসাদুজ্জামান নূরের মতো মানুষকে নির্বাচনী প্রচারণায় টুপি মাথায় দিয়ে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে হয়, শামীম ওসমানকে বলতে হয় তিনি কত রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন, আওয়ামী লীগকে গঠন করতে হয় জাতীয় ওলামা লীগ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যখন হাসিনা ও তার দলবল দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল তখন বাংলাদেশের রাজনীতি-বৃত্তের ভেতরে একটি বড়ো ধরনের শূন্যতা তৈরি হল। আমরা সবাই জানি প্রকৃতি শূন্যতা পছন্দ করে না। কোনো এক স্থানের বাতাস যদি উষ্ণ হয় তখন অন্য জায়গা থেকে ঠাণ্ডা বাতাস দ্রুত গতিতে ছুটে এসে সেই স্থান পূরণ করে। এর ফলেই তৈরি হয় ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, বাউকুড়ানি। আওয়ামী লীগ যখন গণসুনামিতে উড়ে গেল, বৃত্তের ফাঁকা জায়গা পূরণ করার জন্য ভেতরের অন্য দলগুলোর মধ্যে ঝড় (বা হুড়োহুড়ি) শুরু হয়ে গেল। এটি খুবই স্বাভাবিক।

বিএনপি গ্রাভেটির টানেই বাঁয়ে সরতে শুরু করল। যেসব বয়ান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিল, বিএনপি এখন সেইসব বয়ানের ওপর রাজনীতি করছে। অর্থাৎ বিএনপি তার অবস্থান থেকে সরে এসে এখন প্রায় থিতু হয়েছে মধ্যবামে। পুরোপুরি দাগের বামে চলে না গেলেও আমার বিবেচনায় এক-তৃতীয়াংশ দাগের বাঁয়ে চলে গেছে এবং দুই-তৃতীয়াংশ দাগের ডানে আছে কিন্তু তাদের ঝোঁক এখনো বামে, হয়ত আরো খানিকটা বামে সরে যাবে বিএনপি। এবং খুব স্বাভাবিক কারণেই জামায়াতে ইসলামীও প্রকৃতির নিয়ম অনুসরণ করে সর্বডান থেকে সরে এসে মধ্য ডানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জামায়াত এখন আর তাদের কট্টর অবস্থানে নেই। তারা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে, ছাত্রশিবির তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যানেলে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতের মানুষের অন্তর্ভুক্ত করছে। জামায়াতের নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মনির সেদিন জানালেন, আগামী নির্বাচনে তারা আরো চমক দেখাবেন, হিন্দু প্রার্থীও দিতে পারেন। অনেক অমুসলিম এখন জামায়াতে ইসলামীর প্রশংসা করছে। এইসবই প্রমাণ করে জামায়াত এখন আর কট্টর ডানে নেই, তারা ক্রমশ উদার ডানপন্থী, যেটা বিএনপি ছিল, সেই জায়গায় প্রায় পৌঁছে গেছে।

বাংলাদেশের মানুষ চিরকালই উদার ডানপন্থার সমর্থক। আওয়ামী লীগের ডানে কাত হয়ে থাকা যে প্রতারণা ছিল এটি তারা বুঝতে পেরে হতাশ হয়েছে, বিএনপিকেই প্রকৃত উদার ডানপন্থি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এই দুটি দলকে বাংলাদেশের মানুষ বারবার ক্ষমতায় এনেছে উদার ডানপন্থার কারণেই। কিন্তু এই দুটি দলের মধ্যে মানুষ যা পায়নি তা হচ্ছে সততা এবং দেশপ্রেম। একবার বিএনপির জোট সরকারে জামায়াতে ইসলামীকে পেয়েছিল তখন তাদের সততার প্রমাণ পেয়েছে দেশবাসী। যারা বিএনপি করে, যারা আওয়ামী লীগ করে, যারা কম্যুনিস্ট পার্টি করে তারাও জামায়াতের সততার প্রশংসা করে। এখন সেই সৎ রাজনৈতিক দলটি যদি উদার ডানপন্থী হয়ে ওঠে তাহলে এদেশের মানুষ ভোটের রাজনীতিতে তাদের দিকেই যে ধাবিত হবে এটি দিনের আলোর মত পরিস্কার।

বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে বারবার হয় আওয়ামী লীগকে না হয় বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছে। তাই এর বাইরে অন্য কিছু ঘটতে পারে তা আমাদের চিন্তায় সহজেই ধরা দেয় না। হয়ত যা আমাদের চিন্তায় ধরা দেয় না তাই ঘটতে যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে। মনে রাখতে হবে উদার ডানপন্থা এবং সততা এই দুইয়ের কম্বিনেশনটা কিন্তু খুব শক্তিশালী। বিএনপির মত বড়ো রাজনৈতিক দল যদি খুব দ্রুত এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে তাদের মূল রাজনীতিতে ফিরে না আসে তাহলে হয়ত খুব বড়ো ভুল হয়ে যাবে।

লেখক: কবি, রাজনীতি বিশ্লেষক।

এ বিভাগের আরো খবর