বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউক্রেন যুদ্ধ কি শেষের পথে?

  • ফুরকানুল আলম   
  • ২০ মে, ২০২২ ২৩:০৩

ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোনবাসের দিকে মনোযোগ দেয়ার আগে পুরো রণকৌশল ঢেলে সাজিয়েছেন তিনি। বদলে ফেলেছেন কমান্ডারদের। তারপরও খুব বেশি সাফল্য এখনও আসেনি, যা তাকে আরও মরিয়া করে তুলছে।

‘শক্তিতে নিজের চেয়ে দুর্বল শত্রুকে সবসময় ধ্বংস করতে হবে। তবে তারা যদি জীবন সম্পর্কে নিরাশ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তাহলে তাকে আর কষ্ট দেয়া যাবে না।’

প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক কৌটিল্য বা চাণক্যের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক বই অর্থশাস্ত্রের সাংগ্রামিক অধিকরণের শেষ অনুচ্ছেদে এ কথা বলা হয়েছে।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রায় তিন মাস পেরোতে চলল। এরই মধ্যে বিভিন্ন শহর থেকে মার খেয়ে পিছু হটেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের নিয়মিত সেনাবাহিনীর বাইরেও দেশটির সাধারণ জনতা নাম লিখিয়েছে প্রতিরোধ যুদ্ধে। পশ্চিমাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের চালান তাদের প্রতিনিয়ত আরও শক্তিশালী করে তুলছে। ২০১৪ সালে যত সহজে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করেছে ক্রেমলিন এবং দোনবাসের বিশাল একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশপন্থি বিদ্রোহীরা, বর্তমান যুদ্ধে তার চেয়ে অনেক বেশি রসদ দিয়েও সেই ধরনের বিজয়ের দেখা পাচ্ছে না রাশিয়া, যাতে পুরো ইউক্রেন দখলের বদলে অ্যাযভ সাগরতীরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ও দোনবাস দখলে মনোযোগ দিয়েছে মস্কো। এই যাত্রায় বন্দরনগরী মারিওপোলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতেই ত্রাহি অবস্থা রাশিয়ার। ইউক্রেন সেনাদের দুর্দমনীয় মনোভাব যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ব্রিটেনের মতে, এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারে।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়াকে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কাবু করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মস্কোকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সুইফট থেকে বের করে দিয়েছে তারা। রাশিয়ার তেল-গ্যাস বিক্রিও দুঃসাধ্য করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ইউক্রেনকে ৩শ' কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন দেখানো পথে হাঁটছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। রাশিয়ার তেল-গ্যাসের নির্ভরতা কমাতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন জোটের নেতারা। তাই মার্কিন অনলাইন পোর্টাল দি ইন্টারসেপ্টের জেরেমি স্ক্যাহিলের সাথে আলাপচারিতায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমতাবলম্বী ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রিয় ইচ্ছাকে পূর্ণ করেছে। সোনার থালায় ইউরোপকে তার হাতে তুলে দিয়েছে’।

বৈশ্বিক সংকটে যত সাহসী ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এখনকার নেতৃত্ব ততটা কার্যকর নয়। জার্মানির সাবেক এই চ্যান্সেলর রুশ ভাষায়ও পটু ছিলেন। ভালো সম্পর্ক ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে। অনেকে মনে করেন এখন মের্কেল থাকলে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অন্যরকম হতো। রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ইউরোপের জন্য রাতারাতি বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তাই ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের শত আহ্বানে রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস না কেনার মতো ঘোষণা দিতে পারছে না তারা। উল্টো ইউক্রেনকে সহযোগিতার কারণে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়াকে গ্যাস দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া থেকে আসে বুলগেরিয়ার গ্যাসের আমদানির ৭৫ শতাংশ আর পোল্যান্ডের ৫৪ শতাংশ। দেশ দুটির জন্য চটজলদি এই আঘাত মোকাবিলা করা খুবই কঠিন হবে। চেক রিপাবলিক ও লাটভিয়ার শতভাগ, হাঙ্গেরির ৯৫ শতাংশ ও স্লোভাকিয়ার ৮৫ শতাংশ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। তাই তারা স্বপ্নেও মস্কোর গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ভাবতেই পারে না। এছাড়া, জার্মানির ৬৬ শতাংশ, ফিনল্যান্ডের ৬৭ শতাংশ, এস্তোনিয়ার ৪৬ শতাংশ, রোমানিয়ার ৪৪ শতাংশ, ইতালির ৪৩ শতাংশ, লিথুনিয়ার ৪১ ও গ্রিসের গ্যাস আমদানির ৩৮ শতাংশ মস্কোর। তাই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর দেশগুলোর এই নির্ভরতা পুতিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বড় শক্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই ইউক্রেন ইস্যুতে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সবাই নিন্দা পর্যন্তই এগুতে পারছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে যেমন ঘাতপ্রতিরোধী করছে, তেমনি রুবলকেও যে কোনো সময়ের চেয়ে করছে শক্তিশালী। ঋণ ও লেনদেনের অর্থ বিশেষ করে গ্যাসের অর্থ পরিশোধে রুবলের ওপর জোর দিয়েছে রাশিয়া। এতে তরতর করে বাড়ছে রুবলের চাহিদা। একইসাথে ডলারনির্ভর দুনিয়াকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। চীনও তার লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ইয়েনকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর হলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হাতিয়ার আরেকটু দুর্বল হবে।

বলা হয়ে থাকে, ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোনবাসের দিকে মনোযোগ দেয়ার আগে পুরো রণকৌশল ঢেলে সাজিয়েছেন তিনি। বদলে ফেলেছেন কমান্ডারদের। তারপরও খুব বেশি সাফল্য এখনও আসেনি, যা তাকে আরও মরিয়া করে তুলছে। এই সময় তার স্বাস্থ্যের নানা জটিলতার খবর চাউর হয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যমে। এমনকি তাদের দাবি, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন পুতিন। তবে এ সব বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। বর্তমান বাস্তবতায় ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চালানোর অবস্থায় নেই রাশিয়া। কারণ সাবেক সোভিয়েতের সাথে এই রাশিয়ার যোজন যোজন ফারাক। তাই পুতিনের দরকার চটজলদি সাফল্য, যার ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শেষের ঘোষণা পারবেন তিনি। সেই ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দুনিয়া। বিশ্বজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়ার পেছনে একটি বড় কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এর ফলে ভীষণ কষ্টে আছে আফ্রিকাসহ তৃতীয় বিশ্বের মানুষ।

ফুরকানুল আলম: নিউজ এডিটর, চ্যানেল 24

এ বিভাগের আরো খবর