বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফ্রান্সের নির্বাচন ও ভবিতব্যের ম্লান আলো

  • ফুরকানুল আলম   
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:০৩

সামাজিক বৈষম্য কমানো, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পদক্ষেপ ও জনকল্যাণমুখী কাজ করতে পারলে, সিঁদুরে যে মেঘের দেখা মিলছে, তা দূরে চলে যেতে পারে। নয়তো আদর্শচ্যুত রাষ্ট্রের তালিকায় জায়গা হতে পারে ফ্রান্সের।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পাশাপাশি মনের উন্নয়ন হচ্ছে কি? বিশ্বব্যাপী এটি এখন বড় প্রশ্ন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা মনটা বিষিয়ে আছে নানা কারণে। যেসব দেশে জীবনধারণের উপকরণ মেলে না, সেখানে অভাবে স্বভাব নষ্ট হচ্ছে, তর্কের খাতিরে এমন যুক্তি মেনে নেয়া যায়। কিন্তু সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে শিক্ষা-দীক্ষা এবং শিল্প-সংস্কৃতিতে এগিয়ে থেকেও কীভাবে মধ্যযুগীয় চিন্তার বিস্তার ঘটছে, তা ভাবনার বিষয়। সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সেই ভাবনার খোরাক দিয়ে গেল।

ফ্রান্সের বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামোকে বলা হয় ফিফথ রিপাবলিক বা পঞ্চম প্রজাতন্ত্র। ১৯৫৮ সালে গলের হাত ধরে এ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়। যাতে প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হয়েছে। ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ১৭৯২ সালে যে প্রজাতন্ত্র চালু হয়, তাকে বলা হয় ফ্রান্সের প্রথম প্রজাতন্ত্র। রাজনৈতিক নানা অস্থিরতায় মাঝে চলে গেছে আরও তিনটি ব্যবস্থা- দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজাতন্ত্র। পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের ফ্রান্সের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে লেখা আছে- ‘France shall be an indivisible, secular, democratic and social Republic. It shall ensure the equality of all citizens before the law, without distinction of origin, race or religion. It shall respect all beliefs. It shall be organised on a decentralized basis.• Equality regardless of origin• Equality regardless of race• Equality regardless of religion• Separation of church and state• Type of government envisionedStatutes shall promote equal access by women and men to elective offices and posts as well as to position of professional and social responsibility.’ছয় দশক পর এই অনুচ্ছেদের উল্টোরথে ছুটছে দেশটি। তৃতীয় বিশ্বের দেশের মতোই ফ্রান্সের সংখ্যালঘুরাও তাদের অধিকার-বঞ্চিত। অনেক সাদা চামড়ার এলিটদের কাছে তারা অচ্ছুৎ। ইতিহাস গড়ে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফের ক্ষমতার মসনদে বসেছেন, তিনিও অভিযোগের বাইরে নন। বিশ্বে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে মার্কিন কমিশনের রিপোর্টের ৬৮ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- ‘‘French President Emmanuel Macron is responding to the spread of what he calls “Islamist separatism,” alleging that it undermines French values and the principle of laïcité (laicits). As a result, in July the French government enacted the Law Reinforcing Respect of the Principles of the Republic, which strengthens state oversight of mosques and other Islamic organizations.

The government now has the power to close houses of worship and dissolve religious organizations without a court order if any members are “provoking violence or inciting hatred.” In addition, religious organizations must obtain a government permit every five years and are subject to an annual audit if they receive foreign funding. Critics of the new law say that it gives the government too much power over civic and religious groups and unfairly targets Islam in a country where Muslims have faced decades of discrimination, hate crimes, and marginalization. অর্থাৎ ফ্রান্সের মূল্যবোধ রক্ষার নামে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যে আইন তৈরি করেছেন, তা দিয়ে মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং তাতে নানান বিধিনিষেধ দেয়া যায়। এই কাজে কোনো আদালতের অনুমতি লাগবে না। এমন বিপুল ক্ষমতার টার্গেট মূলত ফ্রান্সের সংখ্যালঘু মুসলমানরা। যারা দশকের পর দশক প্রান্তিক, ঘৃণাজনিত আঘাত ও বৈষম্যের শিকার। মধ্য ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত ম্যাক্রোঁও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে পুরোপুরি ডানপন্থি অবস্থানে চলে গেছেন।

কারণ সাংবিধানিকভাবে সেক্যুলার দেশটিতে ভয়াবহভাবে উত্থান হয়েছে উগ্র ডানপন্থার। যার মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন মারিন লো পেন। যিনি ম্যাক্রোর বিরুদ্ধে দুবার লড়াই করে হেরে গেছেন। তবে এবার তার ভোট বেড়েছে ৮ শতাংশ। নির্বাচনে হেরে গেলেও হুংকার দিয়ে দাবি করেছেন, তিনিই মূলত বিজয়ী হয়েছেন। মাস চারেক পর পার্লামেন্ট নির্বাচনে যার বড় প্রমাণ দেখা যাবে। এবারের নির্বাচনে মুসলিমবিদ্বেষ, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিষোদগারে অন্য সবাইকে পেছনে ফেলেছিলেন টিভি-ব্যক্তিত্ব এরিক জেমুর। আগ্রাসী মনোভাব আর কথাবার্তায় তাকে অনেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তবে প্রথম দফার নির্বাচনে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বা প্রায় ২৫ লাখ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। ফলে চূড়ান্ত লড়াইয়ে যেতে পারেননি তিনি।

তৃতীয় হয়ে বাদ পড়েন বামপন্থি প্রার্থী জ লুক মেলেনচনও। তার থেকে মাত্র ৪ লাখ ভোট বেশি পেয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে ম্যাক্রোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন লো পেন। তবে, করোনার মতো ভয়াবহ দুর্যোগ কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকা অর্থনীতিকে কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সে সম্পর্কে নির্বাচনি প্রচারে সঠিক কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি পেন।

এছাড়া পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ও নির্বাচনি খরচের জন্য রাশিয়ার ব্যাংক থেকে ঋণ করার মতো ইস্যু তাকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দেয়। তার উত্থান নিয়ে চিন্তিত ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও। তাই ম্যাক্রোঁকে ভোট দিতে ফ্রান্সবাসীর প্রতি আহবান জানান জেলেনস্কি। ধর্মীয় স্বাধীনতা-বিষয়ক মার্কিন কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ইউরোপজুড়েই ঘৃণার সংস্কৃতি বেড়েছে।

বিশেষ করে ফ্রান্সের মুসলমান ও ইহুদিরা এই বৈষম্যের শিকার। ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি ৭৪ লাখ। এর মধ্যে ৬ শতাংশ বা ৪১ লাখ মুসলমান। তাদের নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রকাশ্যে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাকরিতেও বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এজেন্সি অব ফান্ডামেন্টাল রাইটসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে হেইট ক্রাইমের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ দায়ের করা হয় না। যার অন্যতম কারণ, বিচার না পাওয়ার শঙ্কা।

ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রে কখনই উগ্র ডানপন্থি কেউ প্রেসিডেন্ট হননি। এ যাত্রায় সেই ধারা অক্ষুণ্ণ থাকলেও, বামপন্থিদের ব্যর্থতা ও ডানপন্থিদের হঠকারিতায় সেই সুযোগের খুব কাছে চলে এসেছে উগ্র ডানপন্থিরা।

যাকে সাংবিধানিকভাবে সেক্যুলার দেশটির জন্য ঘুম ভাঙার ডাক মনে করা হচ্ছে। সামাজিক বৈষম্য কমানো, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পদক্ষেপ ও জনকল্যাণমুখী কাজ করতে পারলে, সিঁদুরে যে মেঘের দেখা মিলছে, তা দূরে চলে যেতে পারে। নয়তো আদর্শচ্যুত রাষ্ট্রের তালিকায় জায়গা হতে পারে ফ্রান্সের। নষ্ট হতে পারে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও উদার মনোভাবের নিরাপদ স্থানের সুনাম।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর