বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘…আপন পাপের বাটখারা দিয়ে; অন্যের পাপ মাপি’

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৫০

যে মুসলিমরা আজকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররের বিরোধিতা করেন, তারা কি কবি নজরুল ইসলামকে গ্রহণ করতে পারতেন? কবি নজরুল আজকের দিনে যদি এই দেশে বেঁচে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তাকে ‘মুরতাদ’ বলে আখ্যায়িত করা হতো। সেই সময়েও কবিকে ধর্মদ্রোহী বলা হয়েছিল। কিন্তু কবি থামেননি। ক্রমাগত বিরোধিতা করে গেছেন ধর্মান্ধদের।

রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে টক-শোতে মুফতি ফয়জুল্লাহ হাফি যে বয়ান দিয়েছেন, তা শুনে মনে হলো- ওনার এই বক্তব্যের বিপক্ষে কিছু কথা না বললে একজন বাঙালি হিসেবে আমি নিজেকে অসম্মানিত করব। তিনি বললেন যে, বটমূলে সূর্য ওঠার অপেক্ষায় মানুষজন বসে থাকে। এরপর রবীন্দ্রনাথের গান ‘অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা’ গান গেয়ে নববর্ষকে বরণ করে। এগুলোতো হিন্দুদের প্রার্থনার মতো শোনায়।

মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব কি জানেন না যে, ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি দিনের শুরু হয়? শুধু মানুষ নয়, জগতের সব প্রাণী জেগে ওঠে নিজের কাজ শুরু করে। মুসলমানদের ফজর নামাজের সময় সুবহে সাদিক হতে এই সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত। রোজা শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে এবং শেষ হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে।

তিনি কি জানেন না চাঁদ-সূর্য, পৃথিবী, মহাকাশ, মহাবিশ্ব সব আল্লাহর সৃষ্টি। এখানে কোনো কিছুকে আহ্বান করা মানে আল্লাহরই গুণগান করা। মুফতি সাহেবকে খামোখা বিতর্কে না জড়িয়ে হামদ শোনার আহ্বান জানাই- ‘এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, মিঠা নদীর পানি, খোদা তোমার মেহেরবানি’…।

মানুষের জন্য দিনের আলো সবসময় শুভ সময়। রোদে ফসল উৎপন্ন হয়, গাছগাছালি বেঁচে থাকার রসদ তৈরি করে, পশুপাখি ঘর ছেড়ে খাবারের সন্ধানে বের হয়। রোগ-শোক দূর হয়ে ঝরঝরে দিনের শুরু হয়। সূর্যের আলো এক ধরনের ওষুধ। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অন্ধকারের জীবন কারো কাম্য হতে পারে না। তাই আলোকে আহ্বান করা হয়।

রাতের অন্ধকারে মানুষের মনে যে ভয় সৃষ্টি হয়, তা দূর হয়ে যায় সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই কবিতায় বলা হয়েছে- ‘অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা’। অর্থাৎ আলোর মধ্য দিয়ে কাটুক আঁধার। নতুন বছরে ধরণী পবিত্র হয়ে উঠুক। প্রকৃতির এই ধর্ম কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বীর জন্য নয়, এ আল্লাহর তৈরি প্রতিটি জীবকুলের জন্য প্রযোজ্য।

এবারে আসি যারা মনে করছেন নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে আছে হিন্দু ধর্মের যোগ। কিন্তু ব্যাপারটা একদম বিপরীত। নববর্ষ উৎসব আর সাল গণনা একসঙ্গে মেলাবারও দরকার নেই। এই অঞ্চলে নববর্ষের উৎসবের ধারণাটাই এসেছে পারস্যের নওরোজ (ইরানি নববর্ষ) থেকে। সেখানে নববর্ষের উৎসবটা শুরু হয় বসন্তে। বসন্ত মানেই প্রাণের শুরু, সেটা কীটপতঙ্গ, প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদ বা কৃষি সবক্ষেত্রেই প্রয়োজ্য।

যেহেতু পদ্ধতিগত কৃষি সভ্যতা ওই এলাকা থেকে এসেছে তাই কৃষি-সংক্রান্ত উৎসবটা সেখান থেকেই এসেছে। সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন সেটা সাল গণনা ও কর আদায়ের সুবিধার জন্য। সেটা যে সর্বত্র উৎসবের সঙ্গে মিলতে হবে তেমন কোনো কথা নেই।

মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং বলকান দেশগুলো নববর্ষ পালন করে থাকে বসন্তের মাঝামাঝি। এটি ৩ হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান নওরোজ নামে পরিচিত। দুনিয়াজুড়ে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন পার্সিয়ান, কুর্দি, আফগান, বলকান মুসলিম এই উৎসব পালন করে থাকে।

উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো চাহরাশানবে সুরি বা আগুনের ওপর লাফ খেলা (বিশ্বাস যে এর মধ্য দিয়ে অগ্নিশুদ্ধ হবে নতুন বছর), গান ও বাদ্য সহকারে প্যারেড, সবজি-পোলো-মাহি (সবজি-মাছ সহকারে পোলাও রান্না), পরস্পরকে নওরোজ মোবারক বলে শুভেচ্ছা জানানো ইত্যাদি।

আফগান মুসলিমরা এই উৎসব উপলক্ষে সবচেয়ে বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠান বুঝতেসি আয়োজন করে। তুরস্ক, ইরাক ও সিরিয়ার কুর্দিদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো নওরোজ। মালয়েশিয়া, জাভা ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা নববর্ষ পালন করে চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী। এ সময় ঐতিহ্যবাহী সিংহ নৃত্য নিয়ে প্যারেড বের করা হয়। তুর্কমেনিস্থান, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও লুনার নিউ ইয়ার বা নওরোজ পালন করে থাকে জাঁকজমকের সঙ্গে।

বিশিষ্ট ইসলামি সুফি চিন্তাবিদ, স্পিরিচুয়াল গাইড সৈয়দ নাকভিকে জিজ্ঞেস করা হয়- এভাবে নেচে গেয়ে মিছিল করে নওরোজ পালন করা কি হারাম কিনা? জবাবে তিনি বলেন- ‘‘It is not haraam under any Quranic or Hadith injunction. It is cultural celebration of the advent of spring celebrated all across Central Asia, Turkish, Persian, Kazakh, Kirghiz, Tajik, Azeri, Afghan, and Pakistani celebrate it.

Please try to understand. All Muslims are not necessarily Arabs, and many hail from far more civilized and proud cultures with their own traditions that are not necessarily unislamic even if they are nonarabic. It is just myopic Wahhabi propaganda.’’

আমাদের এই এলাকার নববর্ষ উৎসব যে ইরান থেকে এসেছে সেটা আমাদের এখানকার মুসলমান আলেমরা কি জানেন? জানলে বলেন না কেন? আমরা কি তাহলে ধরে নেব যে “নববর্ষ হিন্দুদের থেকে এসেছে” এবং “বাংলা সংস্কৃতিও তাই হিন্দুদের তৈরি” এই কথা বলার জন্যই প্রকৃত ইতিহাস লুকিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

বর্ষবরণ নিয়ে ইসলামকে জড়িয়ে আমরা যারা বিতর্ক করছি, তাদের আরও অনেক বেশি বিতর্ক করা উচিত হারাম আয় নিয়ে, সৎ পথে চলা নিয়ে, মানবতার মঙ্গল কামনা করে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, রমনা বটমূলে গান গাওয়া বা ট্যাপা পুতুল নিয়ে মিছিল করার মাধ্যমে ইসলাম চলে যায় না। কারণ এগুলো আমাদের সংস্কৃতি।

এর চাইতে অনেক বেশি ধর্ম অবমাননা হয় অসৎ হলে, মিথ্যা বললে, মোনাফেকি করলে, দুর্নীতি করলে। এর সব কিছুই আমরা করি। কারণ আমাদের কাছে- ইসলামের মূল আদর্শ-কর্তব্যের চেয়ে, তুচ্ছ বিষয়গুলো বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে।

যারা মিশরে গেছেন, তারা দেখেছেন সেখানে দোকানিরা ফারাওদের বিভিন্ন স্ট্যাচু, বিভিন্ন পশুপাখির দেবতাসহ অনেক ধরনের ফিগার বিক্রি করেন। দেশজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসকেন্দ্রিক স্থাপত্য, শিল্প, স্ট্যাচু, মিনার, মসজিদ, চার্চ।

বাঙালি মুসলমানের মন নিয়ে পথের পাশের এক দোকানিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘তোমরা যে এত মূর্তি বানাচ্ছ, বিক্রি করছ, তাতে কি তোমাদের গুনাহ হচ্ছে না?’ বলল, ‘না। কারণ মুসলিম হিসেবে আমি যা করি সেটা আমার ধর্ম। আর এইগুলো হচ্ছে আমার কালচার। ধর্মের সঙ্গে কালচারের কোনো বিরোধ নেই আমাদের কাছে।’ একজন সাধারণ দোকানির কাছ থেকে এই উত্তর পেয়ে অনুভব করলাম, আমাদের মূল সমস্যাটা কোথায়? কেন আমরা ধর্ম গেল, ধর্ম গেল করি। আমাদের মূল সমস্যা আমাদের দুর্বল ঈমান ও ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি ও ব্যবসা।

বাংলা নববর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে, জেলায় জেলায় অনুষ্ঠান হয় বছরের পর বছর ধরে। মেলা হয়, প্রতিযোগিতা হয়, খেলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। যার যেমন ইচ্ছা সেভাবেই নববর্ষ পালন করে। নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নেচে গেয়ে, রং খেলে উৎসব করে।

যাদের ইচ্ছে হবে তারা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন, যাদের পছন্দ নয়, তারা যাবেন না। ব্যস হয়ে গেল। জগতে বা দেশে অনেক কিছুই হয়, যা অনেকেই পছন্দ করেন না বা সেসব উৎসবে যান না। তাতে কি ওই উৎসবগুলো থেমে যাবে? এটা কোথাকার, কোথা থেকে এল, কবে থেকে শুরু, হিন্দুদের নাকি বৌদ্ধদের- এত বাহাসের দরকার আছে কি?

একজন তরুণ রাজনৈতিক নেতা খুব প্রণিধানযোগ্য পরামর্শ দিয়েছেন, যিনি মনে করেন “পয়লা বৈশাখ উদযাপনে আপনার দ্বীন তহরীন হচ্ছে, তিনি এত উত্তেজনা না দেখিয়ে, কাল মসজিদে এত্তেকাপে থাকুন। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আপনি যেমনটি চান। আর ফেসবুকে লোকের লেখা বা ছবি দেখে বার বার অনুভুতিতে আঘাত পেয়ে গালাগালিতে নেমে পড়ার চেয়ে এত্তেকাপে থাকা উত্তম।”

হঠাৎ করে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা নিয়ে যেমন ওয়াজ-নসিহত চলছে, ঠিক তেমনি বাংলা নাম পরিচয় নিয়েও চলছে হিন্দুয়ানির বয়ান। কেন ভুলে যান, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষা অর্জনের জন্য কত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। আচানক এই বাংলা ভাষাকে কেন হিন্দুদের ভাষা বলা হচ্ছে? বাংলা কালচার ও রীতিনীতিকে কেন হিন্দুয়ানি বলা হচ্ছে? কাদের মাথা থেকে এই উদ্ভট ধারণা বের হচ্ছে?

ফেইসবুক থেকে জানলাম এদেশের বাঙালির জীবনে প্রচলিত প্রায় ১৯টি বিষয় নাকি ‘হিন্দুয়ানি’ ব্যাপার বা কালচার বলে এদেশের বাঙালি মুসলমানদের একটা বড় অংশ মনে করে। এর মধ্যে আছে বাংলা নাম রাখা, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শাড়ি পরে নববর্ষ পালন করা, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা, টিপ দেয়া, দই-চিড়া খাওয়া, লুচি-নিরামিষ খাওয়া, ‘গোশত’ না বলে মাংস' বলা, স্ট্যাচু বানানো ইত্যাদি হরেকরকম।

যে মুসলিমরা আজকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররের বিরোধিতা করেন, তারা কি কবি নজরুল ইসলামকে গ্রহণ করতে পারতেন? কবি নজরুল আজকের দিনে যদি এই দেশে বেঁচে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তাকে ‘মুরতাদ’ বলে আখ্যায়িত করা হতো। সেই সময়েও কবিকে ধর্মদ্রোহী বলা হয়েছিল। কিন্তু কবি থামেননি। ক্রমাগত বিরোধিতা করে গেছেন ধর্মান্ধদের। কবি লিখেছিলেন-

“এ পাপ-মুলুকে পাপ করেনি করেনিক’ কে আছে পুরুষ-নারী?

আমরা ত ছার; পাপে পঙ্কিল পাপীদের কান্ডারী

তেত্রিশ কোটি দেবতার পাপে স্বর্গ সে টলমল,

দেবতার পাপ-পথ দিয়া পশে স্বর্গে অসুর দল!

বিশ্ব পাপস্থান

অর্ধেক এর ভগবান, আর অর্ধেক শয়তান্!

ধর্মান্ধরা শোনো,

অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো!”

আবার এই নজরুল ইসলামই তার হামদ ও নাতের মাধ্যমে বলেছেন আল্লাহকে পেতে হলে রাসূল (সা.) কে ভালোবাসতে হবে। গবেষকদের মতে, বাঙালি মুসলমানদের জন্য কবির ইসলামি গানের সংখ্যা তিনশ’র কাছাকাছি। তিনি লিখেছেন- ‘‘আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়, আমার নবী মুহাম্মদ যাঁহার তারিফ জগৎময়’, ‘আল্লাহ নামের বীজ বুনেছি এবার মনের মাঠে, ফলবে ফসল বেচব তারে কিয়ামতের হাটে’, এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি, খোদা তোমার মেহেরবানি।”

তাহলে তো দেখা যাচ্ছে এই বঙ্গভাণ্ডারে মুসলমানি কালচার নেই বললেই চলে। এরাই হয়ত একদিন বলবে নদীর, গাছের, ফুলের নামগুলো পরিবর্তন করে মুসলমানি নাম রাখুন। জাতীয় সংগীত কেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের? কাজেই বদলান। বাংলাদেশের নামটাও বদলে দেন।

কীভাবে বোঝাই মুলমানদের নিজস্ব কোনো ভাষা বা কালচার নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা নিজ নিজ দেশের ভাষা অনুযায়ী নাম রাখেন, কথা বলেন। কালচার অনুযায়ী উৎসব আয়োজন করেন। আমরা যাকে মুসলমানদের ভাষা বলে মনে করি, সেটা আরবি ভাষা। কারণ পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে আরবিতে। আমরা নামাজ, দোয়া-দরুদ পড়ি আরবিতে।

কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি কেন কোরআন আরবিতে নাজিল হয়েছে? আল্লাহ নিজেই বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি এটিকে কোরআনরূপে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।” [সুরা : হুদ, আয়াত : ২ (প্রথম পর্ব)]

মাওলানা কাসেম শরীফের গ্রন্থনাকৃত এক লেখায় দেখলাম, আল্লাহ বলেন, ‘আমি যদি এই কোরআনকে অনারবি ভাষায় অবতীর্ণ করতাম, তবে তারা বলত, এর আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হলো না কেন? এটি কেমন কথা যে কোরআন অনারবি ও রাসুল [মুহাম্মদ (সা.)] আরবীয়।” (সুরা : হা-মিম সিজদা, আয়াত: ৪৪)

“আমি একে আরবি ভাষায় কোরআনরূপে নাজিল করেছি।” অর্থাৎ তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বাস করো। কোরআনে ওহির মাধ্যমে বর্ণিত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনায় বিশ্বাস করো। সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। জাহান্নামের পথ থেকে সরে দাঁড়াও। মুহাম্মদ (সা.) যা তোমাদের সামনে তুলে ধরছেন, যে সত্যের দিকে আহ্বান করছেন, তা সবই তিনি ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশনার আলোকেই করছেন। তোমাদের ভাষা আরবিতেই তিনি সব বলছেন। কোরআন শরিফও আরবি ভাষায়ই নাজিল হয়েছে। এর পরও তোমরা তাঁকে বিশ্বাস না করলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।”

নবীজি আরবীয় বলেই তার কাছে আরবিতেই কোরআন এসেছে, যাতে উনি তা বুঝে প্রচার করতে পারেন। এর আলোকে বোঝা যায়, ইসলাম প্রচারে সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের মানুষের ভাষা ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু আমরা আদতে কী করি? বাংলায় না পড়ে, মানে না বুঝে শুধু আরবিতে পাঠ করে যাই।

তরুণ লেখক, অভিনেতা মারজুক রাসেলের কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, “আপনি পালন না করলেও বৈশাখ নিজেই পালিত হবে। হাওয়া দেবে, ঝড় দেবে, গরম দেবে, তরমুজ দেবে, বাংগি দেবে। আপনার আরবি, ফার্সি, উর্দু, ইংরেজি নামের অর্থও আপনি বাংলায়ই খুঁজবেন। নানান জায়গাতো লিখবেনই, পাসপোর্টেও লিখবেন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি।”

লেখক: সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

এ বিভাগের আরো খবর