বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা বিনষ্টের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

  • সম্পাদকীয়   
  • ২০ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:৩৮

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের সদস্য অসামান্য অবদান রেখে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন ইতিহাসের পাতায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের সবাই সেনাবাহিনীরই সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই থেকে শুরু করে জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে জাতির ভরসা এই সেনাবাহিনী এগিয়ে এসেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সবার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। এখন কোথাও কোনো সমস্যা সংকট সৃষ্টি হলে সবাই সেখানে সেনবাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সেই সংকট নিরসনে সেই সংকট থেকে উত্তরণে তাদের শক্তিশালী ভূমিকা পালন প্রত্যাশা করে একান্তভাবে। ঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় , নৈরাজ্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অপরাধী, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনী সবসময় প্রশংসনীয় অবদান রেখে দেশের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এক গৌরবময় আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। প্রশংসা ও সুনাম বয়ে এনেছে দেশের জন্য। চব্বিশের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারী ছাত্র জনতাকে জোর করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমনের জন্য স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারি দুঃশাসনের প্রধান হোতা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার অন্যায়মূলক নির্দেশ উপেক্ষা করে ছাত্র জনতার আন্দোলনকে সফল করতে ঐতিহাসিক গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশ ও জাতির স্বার্থে বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন।

আজকাল সেই সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নানা ধরনের গুজব, অপপ্রচার, ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচার চালানো হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। যা দুঃখজনক। আমাদের সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে এমন সব খবর ছড়ানো হচ্ছে যার কোনো সত্যতা নেই। ভিত্তিহীন, বানোয়াট খবর প্রচার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। জনমনে সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে একটি মহল। এটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি, শৃঙ্খলা, সংহতি, স্থিতিশীলতা বিনষ্টের লক্ষ্যে সুগভীর চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের তাবেদারি করায় গণমাধ্যমের খবরের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতায় ভাটা পড়ে। মত প্রকাশ, কথা বলা এবং ভাবের আদান-প্রদানে সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ অনেকগুলো আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণায় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণায় দলমত নির্বিশেষে রাস্তায় নেমেছিল। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমাজ জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে এই প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহারও কম হচ্ছে না। যা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। এক শ্রেণির মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে অপপ্রচার, কুৎসা রটানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার, সহিংসতার ভুল তথ্য প্রচারে গুজব ছড়াচ্ছে। এতে সমাজে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় অসংখ্য ‘গুজব বাহিনী’ গড়ে তোলা হয়েছে। তারা কখনো পতিত স্বৈরাচার হাসিনার হয়ে কখনো দিল্লির হয়ে কখনো দেশের একাধিক রাজনৈতিক দলের হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক গুজব ছড়াচ্ছে। খুবই পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিতভাবেই কখনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের গুজব, কখনো অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে গুজব, কখনো প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের মধ্যে বিরোধের গুজব, কখনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে গুজব, কখনো মহামান্য প্রেসিডেন্টকে নিয়ে গুজব, বিভিন্ন সময় নানা ঢংয়ে ছড়ানো হয়। গুজববাজরা অনেকটা কবি শামসুর রাহমানের ‘কান নিয়েছে চিলে’ কবিতার মতোই গুজব ছড়াচ্ছে এবং এক শ্রেণির মানুষ সেটাকে ইস্যু করে প্রচার প্রচারণায় শরিক হয়ে লাইক, শেয়ার ও মন্তব্যজুড়ে দিচ্ছেন। এই ঘৃণ্য গুজব বাহিনীর সর্বশেষ টার্গেট হয়ে উঠেছে আমাদের গৌরব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেনাবাহিনীর সাবেক ১০ জন এবং বর্তমানে কর্মরত ১৫ জন মোট ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। চিহ্নিত কিছু গুজববাজ কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ইউটিউবার, বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন সাংবাদিক, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও দেশের একাধিক রাজনৈতিক দলের বট বাহিনী ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার, ইউটিউবার প্রচারণা চালায় অন্তর্বর্তী সরকার আর সেনাবাহিনী মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কয়েকজন সেনা সদস্যকে আসামি করায় সেনাবাহিনী ক্ষেপে গেছে। যে কোনো সময় দেশে অঘটন ঘটে যেতে পারে। ইত্যাদি, ইত্যাদি। বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির এজেন্ডায় ছড়ানো এ গুজব প্রচার করে শেষ পর্যন্ত গুজববাজরা ধরা খেয়েছে। তাদের মুখে ছাই দিয়ে ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। খোলাখুলি কথা বলে তারা সেনাবাহিনীর অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। এক আদেশের মাধ্যমে চাকরিরত ১৫ জন এবং এলপিআর ভোগরত ১ জনসহ মোট ১৬ কর্মকর্তাকে ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেনা হেফাজতে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলপিআর ভোগরত কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেনা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছেও। সেনাবাহিনীর এই স্মার্ট সিদ্ধান্তের ফলে তথাকথিত গুজববাজদের দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।

সেনাবাহিনী একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ। দেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে বারবার সেনাবাহিনী এগিয়ে এসেছে। বিশাল সংখ্যার সেনাবাহিনীতে কয়েকজন কর্মকর্তার অপরাধের দায় কখনো সেনাবাহিনী নেয়নি। এবারও নিচ্ছে না। সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেছেন, সংবিধান স্বীকৃত বাংলাদেশের সব আইনের প্রতি সেনাবাহিনী শ্রদ্ধাশীল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও সেনা আইন মুখোমুখি নয়। একটা বনাম আরেকটা এই দৃষ্টিভঙ্গিতে এটা দেখা উচিত হবে না। সেনাবাহিনী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিচারের পক্ষে অবস্থান করে। সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

আধিপত্যবাদী প্রতিবেশী দেশ ভারতের অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নে ভার্চুয়াল এ মিডিয়াগুলো এখন যেন গুজবের কারখানায় পরিণত হয়েছে। পতিত স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনা যেমন ১৪০০ ছাত্রজনতাকে হত্যা করে পালিয়ে দিল্লি যাওয়ার পর থেকে তার এবং দোসরদের পাচার করা অর্থ ব্যয়ে বট বাহিনী গঠন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে; তেমনি ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অন্তর্বর্তী সরকার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যেতে পারবে না দেশের এমন রাজনৈতিক দল। তারা কখনো আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে দিল্লির এজেন্ডা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, গণভোট ইত্যাদির ইস্যুতে মাঠ গরম করছে। পাশাপাশি তারাও দেশ-বিদেশে বিশাল বট বাহিনী তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের পক্ষে এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। এটা করতে গিয়ে তারা কার্যত আইনের শাসন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

এই মুহূর্তে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে নিরাপদে থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, তার দোসর এবং দেশের কিছু জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক শক্তি আসন্ন নির্বাচনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধার সৃষ্টি, সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তী সরকার এমনকি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে বিশেষ কিছু গোষ্ঠীকে মাঠে নামিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে একের পর এক গুজব ছড়াচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন বিলম্বিত করতে নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করছে এবং সেটা নিয়ে দেশি-বিদেশে অবস্থানরত ষড়যন্ত্রকারী বাহিনীকে গুজব ছড়ানোর প্রচারণায় নামাচ্ছেন। আবার পাশাপাশি এই গুজব বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রচারণা চালাচ্ছে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে একাধিক নেটিজেন লিখেছেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি মাঠে মারা যাওয়ায় অনেকেই নির্বাচন পেছাতে আইন-শৃংখলার অবনতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টায় উদ্দেশ্যমূলক ভাবে গুজব ছড়াতে পারে। কেউ লিখেছেন, নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে এবং মানবতা বিরোধী শত শত মামলার কার্যক্রম শুরু হয়নি তখন ভোটের আগে সেনাবাহিনী বিক্ষুব্ধ হতে পারে এমন মামলাকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার রহস্য কি? কেউ লিখেছেন, কুড়িগ্রামের বড়াই বাড়ির ঘটনার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ভারত ভালো চোখে দেখে না। ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা হত্যা তার প্রমাণ। তাছাড়া আরাকান আর্মিকে করিডোর দেয়ার বিরোধিতা করেছে সেনাবাহিনী; এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত পছন্দ করেনি। অন্যদিকে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্য ও গোপনে একের পর এক বৈঠক করছেন। আবার অন্যদিকে রিফাইন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। এ সবই কি আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা? নেটিজেনদের কেউ কেউ এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলামের মামলার আসামি সেনাসদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি, বিএনপির বিবৃতি এবং একদিন পর জামায়াতের বিবৃতি নিয়েও মন্তব্য করেন। ১১ জুলাই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ন্যায়বিচার শুধু অতীতের ঘটনাগুলোর শাস্তির নিশ্চয়তা দেয় না, বরং ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি না ঘটায়, সেই নিশ্চয়তাও দেয়। আইন ও মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধাই হতে পারে একটি শান্তিপূর্ণ, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি। একটি দেশের চলা উচিত ‘ল অফ দ্যা ল্যান্ড’ অনুযায়ী। কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির দায় যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর চাপানো উচিত নয়, তেমনি তাদের অপকর্মের কারণে সেই প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও অনুচিত। আজকাল কেউ কেউ সারাক্ষণ বলে চলেছেন, তারা বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান চায় না। এরাই মূলত জনগণকে উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে সামরিক অভ্যুত্থান তৈরির বা অতীতের মতো ১/১১ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তেমন পটভূমি সৃষ্টি করতে চাইছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার পেছনে কাজ করছে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি সুসংগঠিত চক্র। তারা এমনভাবে খেলছে যে, খালি চোখে মনে হতে পারে, এরা দেশের মঙ্গলের পক্ষে কথা বলছে। কিন্তু এরা বাস্তবে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে আত্মঘাতী কাজ করিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চায়। এটাই তাদের মাস্টারপ্ল্যান। সুতরাং কারও পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে, নিজেই সত্যমিথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে আমাদের সবাইকে। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, অপরাধ যেই করুক তার বিচার হওয়া উচিত। বিগত দিনে সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যের বিচার সিভিল আদালতে হয়েছে। এবারও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত সাবেক ও বর্তমান সেনা সদস্যদের বিচার হবে। নানা গুজবের মধ্যেও সেনাবাহিনী অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি নেয়ায় সহায়তা করছে। এতে সেনাবাহিনীর সম্মান বাড়বে এবং সেনাপ্রধান হিসেবে অবশ্যই জেনারেল ওয়াকার উজ জামান প্রশংসিত হবেন। সেনাবাহিনীর উজ্জ্বল ইমেজ অক্ষুন্ন রাখতে ষড়যন্ত্রকারীদের সব অশুভ তৎপরতা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। ধ্বংস করে দিতে হবে তাদের সব নেটওয়ার্ক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্য মর্যাদা ও সন্মান অটুট রাখতে আমাদের মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী সচেতন হবেন, সতর্ক থাকবেন, এটা আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর