বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুদ্ধ হচ্ছে অনেক দূরে, প্রভাব কেন দেশের বাজারে?

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২২ ১৫:১৫

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার এখনও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়নি। কারণ কদিন আগেই একবার বাড়িয়েছে। তবে দাম না বাড়ালেও সরকারের ওপর চাপ তো পড়ছেই। আর ভোজ্য তেলের বাস্তবতা শঙ্কা বাড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ মাঠে যতটা হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি হচ্ছে অর্থনীতির ময়দানে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দেন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে এবং শুরু হয় নতুন এক যুদ্ধ। কিন্তু রাশিয়ার বোমা কিয়েভে পড়ার পাশাপাশি মনে হয়, একটি বোমা দিক ভুলে ‘বাংলাদেশের মতিঝিলেও পড়েছিল’! যে যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই, তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাবও নেই; সেই যুদ্ধ তছনছ করে দিয়েছে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার।

মাত্র আট কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক প্রায় ৬০০ পয়েন্ট কমে গেছে। পথে বসার জোগাড় হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর। যুদ্ধ শুরুর দিনে তাৎক্ষণিক আতঙ্কে বিশ্বের অনেক দেশেই শেয়ার বাজারে সূচক কমেছিল। কিন্তু পরদিনই সেটা আবার ফিরেও আসে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছয় হাজার মাইল দূরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে ঢালাও পতন হচ্ছে যুদ্ধের চেয়েও দ্রুতগতিতে।

আতঙ্ক যতটা ইউক্রেনে আটকেপড়া মানুষদের, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তার চেয়ে কম নয়। কিয়েভে মানুষ মরছে অস্ত্রের আঘাতে, আর ঢাকায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মরতে বসেছে আতঙ্কে। আমার খালি ভয়, আতঙ্কেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বাংলাদেশে যখন যুদ্ধের সত্যিকারের প্রভাব পড়বে, তখন কী অবস্থা হবে!

“শেয়ারবাজারে যখন ইচ্ছাপতন, কাঁচাবাজারে তখন উল্টোরথ। নিত্যপণ্যের মূল্যের যেন আকাশ ছোঁয়ার সাধ হয়েছে। ভোজ্য তেলের বাজার যেন ‘যেমন খুশি তেমন দাম’ খেলা চলছে। শুধু ভোজ্য তেল নয়, বাজারে সবকিছুর দামই চড়া। যে কারো মনে হতে পারে, যুদ্ধ ইউক্রেনে নয়, বাংলাদেশে চলছে। ইউক্রেনের পাশের দেশ এস্তোনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘একটা বিষয় আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারছি না। যুদ্ধ হচ্ছে আমার ঠিক পাশের দুই দেশে। আর বাংলাদেশে সব কিছুর দাম আকাশ-পাতাল বেড়ে গিয়েছে মুহূর্তেই! আমার অবশ্য বুঝতে পারার কথাও না। কারণ আমি অর্থনীতি সেই অর্থে বুঝি না। এর চাইতে বরং আমি তুলনামূলক চিত্রটা তুলে ধরি। যার যেভাবে ইচ্ছা বুঝে নিক। আমার এখানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশি টাকায় এই মুহূর্তে ৩৯ টাকা থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। আর বাংলাদেশে শুনেছি এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হয়েছে এখন! আমার এখানে মানুষের গড় মাসিক আয় হচ্ছে বাংলাদেশি টাকায় এই মুহূর্তে এক লাখ বিশ হাজার টাকার মতো। কারো হয়ত এর চাইতে বেশি। কারো হয়ত কম। আর বাংলাদেশে গড় মাসিক আয় কতো? আমার ঠিক জানা নেই। ধরে নিচ্ছি বাংলাদেশে মানুষের গড় আয় ২৫ হাজার টাকা। কারো হয়ত এর চাইতে বেশি। কারো এর চাইতে কম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা এখানে এক লাখ ২০ হাজার টাকা গড় আয় হবার পরও পেঁয়াজ কিনছি ৪০ টাকা কেজিতে। এই দেশ একটা পেঁয়াজও নিজেরা উৎপাদন করে না। করবে কী করে? এখানে তো পুরো বছর বরফ পড়ে! সামারে হয়ত দুই মাস কিছু চাষাবাদ হয়। সেটাও তেমন কিছু না। আর বাংলাদেশে তো জানি পেঁয়াজ আমরা নিজেরাও চাষাবাদ করি। এরপরও দাম এতো বেশি হয় কি করে?”

“যুদ্ধ কি শুধু আপনাদের একার জন্য লেগেছে? অন্য দেশগুলোতে তো আপনাদের চাইতে বেশি প্রভাব পড়ার কথা। তারা কি করে দাম মানুষের নাগালের মাঝে রাখছে? আলু-দুধ, ডিম এই সব কিছুর দাম আমার এখানে বাংলাদেশের চাইতে কম। আমার ঠিক জানা নেই অর্থনীতিতে এর কোনো আলাদা ব্যাখ্যা আছে কি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারি- কিছু সংস্থা আর ব্যবসায়ীরা মিলে ইচ্ছামতো লাভ করছে আর ধনী হচ্ছে। সেই সাথে দেশের জিডিপি বাড়ছে! শহরের খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষ কিংবা গ্রামের কৃষক, এদের অবশ্য চাল-ডাল কিংবা পেঁয়াজ কিনতেই পুরো মাসের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

অর্থনীতি না বোঝা আমিনুল ইসলামের এই তুলনামূলক চিত্রের ব্যাখ্যা কী? এরপরও যদি বাঙালিকে আপনি হুজুগে না বলেন, তাহলে অন্যায় হবে।

কেউ মনে করবেন না ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো প্রভাব বাংলাদেশে বা বিশ্বের অন্য কোথাও পড়বে না; এমনটি বলার চেষ্টা করছি আমি। বিশ্বের যে প্রান্তেই যুদ্ধ হোক, তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সব প্রান্তেই। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার এখনও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়নি। কারণ কদিন আগেই একবার বাড়িয়েছে। তবে দাম না বাড়ালেও সরকারের ওপর চাপ তো পড়ছেই। আর ভোজ্য তেলের বাস্তবতা শঙ্কা বাড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ মাঠে যতটা হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি হচ্ছে অর্থনীতির ময়দানে।

পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি অস্ত্র নিয়ে ইউক্রেনের পাশে না দাঁড়ালেও নানামুখী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়াকে চাপে ফেলতে চাইছে। বৈশ্বিক ব্যাংকিং যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাশিয়া। যুদ্ধ যত লম্বা হবে, তার প্রভাব তত দীর্ঘ হবে। এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতি করোনার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সংগ্রাম করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সংগ্রামকে আরও দীর্ঘ এবং কঠিন করে তুলবে। বিশ্ব অর্থনীতি এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর নিম্ন প্রবৃদ্ধির শঙ্কায় আছে।

সরাসরি না হলেও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার জন্য তৈরি পোশাক পাঠানো যাচ্ছে না। আগে রপ্তানি করা পণ্যের টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে বিশ্বের আর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু সত্যি সত্যি প্রভাব পড়ার আগেই যারা শেয়ারবাজারে সুনামি আর কাঁচাবাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, তারা দৃর্বৃত্ত। এদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শেয়ারেবাজারে ধস আর কাঁচাবাজারে আগুন দেখে আমার ভারতীয় বাংলা সিনেমার একটি সংলাপ মনে পড়ছে, ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে।’

লেখক: সাংবাদিক-কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর