বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পর্যটনশিল্পের বিকাশই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ

  • সম্পাদকীয়   
  • ১৬ আগস্ট, ২০২৫ ২৩:০৪

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য ভাগ সবুজের সমারোহ, অসংখ্য নদী, পাহাড়, সমুদ্রসৈকত, ম্যানগ্রোভ বন, প্রাচীন স্থাপত্য ও লোকজ ঐতিহ্য মিলিয়ে এ দেশ পর্যটনের জন্য এক স্বর্ণখনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অপরিসীম সম্পদকে এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। পৃথিবীর অনেক দেশ প্রাকৃতিক সম্পদ বা শিল্পের তুলনায় পর্যটনশিল্পকে প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ কিংবা নেপালের মতো দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান দিয়ে বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। অথচ বাংলাদেশেও সেই সম্ভাবনা বিদ্যমান, তবে তা কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রচারণা।

পর্যটনশিল্প কেবল বিদেশি মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রই নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং গ্রামীণ উন্নয়নের এক বড় মাধ্যম। এ শিল্পের প্রসার হলে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, হস্তশিল্প ও স্থানীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে, যা সরাসরি লাখো মানুষের জীবিকা গড়ে তুলবে। তাছাড়া পর্যটনের মাধ্যমে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে, যা বিনিয়োগ আকর্ষণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।

সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে হলে পর্যটনশিল্পকে অন্যতম কৌশলগত খাত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সঠিক বিনিয়োগ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি দেশের উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। এই প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়াই এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতির বৈচিত্র্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং অতিথিপরায়ণ মানুষের দেশ। আমাদের দেশের ভূপ্রকৃতি এমনভাবে বিন্যস্ত যে এখানে পর্যটনের অসীম সম্ভাবনা বিদ্যমান। সমুদ্র, পাহাড়, নদী, বনভূমি, দ্বীপ, চরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা—সবই এখানে ছড়িয়ে আছে। এই সম্পদগুলো শুধু দেশের মানুষের জন্য নয়, বিদেশি পর্যটকদের জন্যও এক বিরল অভিজ্ঞতার উৎস হতে পারে। অথচ পর্যটনশিল্পকে আমরা এখনও অর্থনীতির প্রধান খাতে রূপ দিতে পারিনি। উন্নত বিশ্বে পর্যটন এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি গঠনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও চাইলে এই খাতকে অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

আমাদের দেশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, পাহাড়পুরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদের অনন্য স্থাপত্য, মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সিলেটের চা বাগান—সবই পর্যটনের জন্য অসামান্য সম্পদ। এছাড়া বান্দরবান ও রাঙামাটির সবুজ পাহাড়, খাগড়াছড়ির জলপ্রপাত, কাপ্তাই হ্রদ, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও ইনানি সৈকত, ভোলা ও সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করতে পারে। নদীমাতৃক দেশের বৈশিষ্ট্য হিসেবে নদী ভ্রমণ, নৌকা বিহার, চরের জীবনযাপন এবং গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি পর্যটন সম্ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে পর্যটনশিল্প একটি বহুমুখী প্রভাব বিস্তারকারী খাত। প্রথমত, এটি সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, পরিবহন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অসংখ্য মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, এটি পরোক্ষভাবে কৃষি, মৎস্য, হস্তশিল্প, পরিবহন ও অন্যান্য সেবা খাতের চাহিদা বাড়ায়। তৃতীয়ত, বিদেশি পর্যটকদের আগমনে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা দেশের রিজার্ভকে শক্তিশালী করে। পর্যটনের মাধ্যমে একটি দেশের পরিচিতি বিশ্বমঞ্চে বিস্তৃত হয়, যা ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও সহায়ক হয়।

বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরারও এক দুর্দান্ত সুযোগ। এ খাতের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। পর্যটন উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ, অংশীদারিত্ব এবং উপকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা পর্যটনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে লাভবান হয়।

পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলার কারণে এই খাত দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি জাতীয় অর্থনীতির প্রধান আয় উৎসে পরিণত হতে পারে। পর্যটন আমাদের শুধু বৈদেশিক মুদ্রা ও কর্মসংস্থানই দেবে না, বরং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য পর্যটনশিল্প হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই আজই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—পর্যটনশিল্প হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি, যা দেশকে আরও সমৃদ্ধ, উন্নত ও বিশ্বে মর্যাদাবান করবে।

লেখক - সাংবাদিক ও কলামিস্ট

এ বিভাগের আরো খবর