পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন উৎসাহী কর্মী। গোপালগঞ্জে স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তার সহজাত নেতৃত্ব গুণের কারণে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য নানা বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন। প্রতিবাদী চরিত্র তিনি পেয়েছেন স্বভাবগতভাবেই। সবার সঙ্গে থেকে সবার থেকে আলাদা কিছু করা ছিল তার স্বভাব বৈশিষ্ট্য।
কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে গিয়ে এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য পেয়ে তার ভেতরে থাকা গুণগুলো বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। কারো কারো কাছে মনে হতে পারে যে, শেখ মুজিব বুঝি আকস্মিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যখন যা খুশি তা-ই করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটু মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলেই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তিনি পরিকল্পিতভাবেই চলতেন। তিনি কী করতে চান, সেটা জেনেবুঝেই পা ফেলতেন।
মেধাবী ছাত্র বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝে থাকি শেখ মুজিব তা ছিলেন না। আবার তিনি ‘মস্তিষ্কহীন’ও ছিলেন না। তার প্রখর স্মৃতিশক্তি ছিল। একবার যার সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হতো তার নাম তিনি ভুলতেন না। অনেক মানুষের এই জ্ঞান থাকে না। তিনি ছিলেন কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন একজন বাস্তববাদী মানুষ। তাই তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন। হতে পেরেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই রাষ্ট্র ভাষার বিষয়টি সামনে আসে এবং পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃবৃন্দ উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমকালীন রাজনীতিবিদসহ ১৪ জন ভাষাবীর সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য দাবিসংবলিত ২১ দফা দাবি নিয়ে একটি ইশতেহার প্রণয়ন করেছিলেন। ওই ইশতেহারে ২১ দফা দাবির মধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ঐতিহাসিক এই ইশতেহারটি একটি ছোট পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল যার নাম ‘রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইশতেহার-ঐতিহাসিক দলিল।’ ওই পুস্তিকাটি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এই ইশতেহার প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য এবং তিনি ছিলেন অন্যতম স্বাক্ষরদাতা।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এই সংগঠনটির ভূমিকা খুবই স্মরণীয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা, সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের নিয়োগ এবং বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা।
১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তমুদ্দিন মজলিসের আহ্বানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তমুদ্দিন মজলিসপ্রধান অধ্যাপক আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে দলে দলে এ সমাবেশে যোগদান করে। এ ধর্মঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহসী ভূমিকা রাখেন। ওইদিন মিছিলের সমগ্র ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে তমুদ্দিন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। এই সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক, অলি আহাদ, মুহাম্মদ তোয়াহা, আবুল কাসেম, রণেশ দাশগুপ্ত, অজিত গুহ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সভায় গণপরিষদের সিদ্ধান্ত ও মুসলিম লীগের বাংলা ভাষাবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এতে গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, তমুদ্দিন মজলিস, ছাত্রাবাসগুলোর সংসদ প্রভৃতি ছাত্র ও যুব প্রতিষ্ঠানের দুজন করে প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। এই পরিষদ গঠনে শেখ মুজিব বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এটাই ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এ দেশে প্রথম সফল হরতাল। এই হরতালে তরুণ শেখ মুজিব নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন। ভাষাসৈনিক অলি আহাদ তার ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন-
“আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ হতে ১০ মার্চ ঢাকায় আসেন। পরের দিন হরতাল কর্মসূচিতে যুবক শেখ মুজিব এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, এ হরতাল তার জীবনের গতিধারা নতুনভাবে প্রবাহিত করে।”
১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে এক সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বানে নঈমুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় শেখ মুজিব অংশগ্রহণ করেন। ওইদিন দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, নইমুদ্দিন আহমদ, শওকত আলী, আবদুল মতিন, শামসুল হক প্রমুখ যুবনেতার কঠোর সাধনার ফলে বাংলা ভাষার আন্দোলন সমগ্র পূর্ব বাংলায় একটি গণ-আন্দোলন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। জনসভা, মিছিল আর স্লোগানে সমগ্র বাংলাদেশ যেন কেঁপে উঠতে লাগল। রাস্তায়, দেয়ালে-দেয়ালে পোস্টার : ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ ১৯৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েও বঙ্গবন্ধু দুবার গ্রেপ্তার হন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসে নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতেন।
এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন: “১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক ছিলেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই ’৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে জেলে থেকেই তিনি আন্দোলনকারী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।”
জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিবৃতি দেন। সোহরাওয়ার্দী এই অবস্থানে দৃঢ় থাকলে ভাষা আন্দোলন অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারত। এই ধারণা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দীর মত পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে তার সমর্থন আদায় করেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেন, “সে সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাষা সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা বেশ অসুবিধায় পড়েছি। তাই ওই বছর জুন মাসে আমি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য করাচি যাই এবং তার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বাংলা ভাষার দাবির সমর্থনে তাকে একটি বিবৃতি দিতে বলি। ফলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন।” ওই বিবৃতিটি ১৯৫২ সালের ২৯ জুন সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯৫২ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মওলানা ভাসানীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার পক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত পরিবর্তনে শেখ মুজিব সক্ষম না হলে শুধু ভাষা আন্দোলন নয়-আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।’ ২৭ এপ্রিল ১৯৫২ তারিখে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের জেলা ও মহকুমা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আতাউর রহমান খান ওই সভায় সভাপতিত্ব করার সময় অসুস্থতাবশত এক পর্যায়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এ পর্যায়ে সভাপতির লিখিত ভাষণ পাঠ করেন কামরুদ্দিন আহমদ। ওই প্রতিনিধি সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫২ সালের পরও বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে ছেড়ে যাননি। ভাষা আন্দোলনের সফলতার পর্বে তার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদান, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন, সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলি বাংলায় চালু প্রসঙ্গে তিনি আইনসভায় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৩ সালে একুশের প্রথম বার্ষিকী পালনেও বঙ্গবন্ধুর যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। সেদিন সব আন্দোলন, মিছিল এবং নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্ট প্রণীত ২১ দফার প্রথম দফা ছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সমকালীন রাজনীতি এবং বাংলা ভাষার উন্নয়নে অবদান রাখেন। ১৯৫৬ সালের ১৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু সংসদের দৈনন্দিন কার্যসূচি বাংলা ভাষায় মুদ্রণ করার দাবি জানান। ৭ ফেব্রুয়ারির অধিবেশনে তিনি খসড়া শাসনতন্ত্রের অন্তর্গত জাতীয় ভাষাসংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্ববঙ্গে আমরা সরকারি ভাষা বলতে রাষ্ট্রীয় ভাষা বুঝি না।
কাজেই খসড়া শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ভাষা সম্পর্কে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা কুমতলবে করা হয়েছে। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ৫৬ ভাগ লোকই বাংলা ভাষায় কথা বলে, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রশ্নে কোনো ধোঁকাবাজি করা যাবে না। পূর্ববঙ্গের জনগণের দাবি এই যে, বাংলাও রাষ্ট্রভাষা হোক। ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে আইনসভার অধিবেশনেও তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রথম সংবিধানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বাংলা ভাষার একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান প্রণীত হয়। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বাংলা ভাষায় প্রণীত সংবিধান। যে সংবিধানে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা তিনি পালন করেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অফিসের কাজে বাংলা ভাষা প্রচলনে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জারিকৃত এক আদেশে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, স্বাধীনতার তিন বছর পরও অধিকাংশ অফিস আদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালোবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক