বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু: ভাষা আন্দোলনের নেপথ্য নায়ক

  • ড. কাজী এরতেজা হাসান   
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৫৮

১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভা বসে। সভায় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বায়কসহ অনেকেই তখন দোদুল্যমানতায় ভুগছে, আপস করতে চাইছে সরকারের সঙ্গে। একটা বজ্রকণ্ঠ সচকিত হয়ে উঠল সরকার কি আপস প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমউদ্দিন সরকার কি বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয় তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে। সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে। এই বজ্রকণ্ঠ ছিল শেখ মুজিবের। ছাত্রনেতা শেখ মুজিবকে সমর্থন দিলেন অলি আহাদ, তোয়াহা, শওকত আলী, শামসুল হক।

বাঙালির হাজার বছরের রাজনীতির আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চিরকালের উপেক্ষিত বাঙালি তার নেতৃত্বেই ইস্পাতকঠিন ঐক্যে সংঘবদ্ধ হয়েছে এবং লাভ করেছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র ও গৌরবদীপ্ত পতাকা। ভাষা-আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাংলা মায়ের তেজোদীপ্ত সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ৫৪-এর নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং সর্বোপরি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান করে তিনি হয়ে ওঠেন এ ভূ-খণ্ডের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ধর্মকে পুঁজি করে দেশ বিভাজিত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের হাজারও বৈষম্যের শিকার হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয় মহান ভাষা-আন্দোলনের মাধ্যমে। মাতৃভাষার এই অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পরবর্তীকালে রূপ নেয় স্বাধীনতা আন্দোলনে।

১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। বিরোধী কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ঐতিহাসিক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং জোরালোভাবে বাংলা ভাষার পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণপরিষদের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২ মার্চ ফজলুল হক হলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। কমরুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সভায় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ১১ মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খাজা নাজিমুদ্দিনের মুসলিম লীগ সরকার লাঠি, টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি বর্ষণে স্তব্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে।

১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভা বসে। সভায় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বায়কসহ অনেকেই তখন দোদুল্যমানতায় ভুগছে, আপস করতে চাইছে সরকারের সঙ্গে। একটা বজ্রকণ্ঠ সচকিত হয়ে উঠল সরকার কি আপস প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমউদ্দিন সরকার কি বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয় তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে। সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে। এই বজ্রকণ্ঠ ছিল শেখ মুজিবের। ছাত্রনেতা শেখ মুজিবকে সমর্থন দিলেন অলি আহাদ, তোয়াহা, শওকত আলী, শামসুল হক। অলি আহাদ উল্লেখ করেছেন-

“সেদিন সন্ধ্যায় যদি মুজিব ভাই ঢাকায় না পৌঁছাতেন তা হলে ১১ মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতো না। তরুণ শেখ মুজিব সেই রাতে গোপালগঞ্জ থেকে এসে ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদান করেন। ১১ মার্চে সচিবালয়ের পিকেটিং করার সময় শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। শেখ মুজিবসহ অন্য ছাত্রদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৩ মার্চ ছাত্র ধর্মঘট এবং ১৪ মার্চ প্রদেশব্যাপী দ্বিতীয় হরতাল পালিত হয়।

১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জেল থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পুকুরধারে একটি ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে অ্যাসেম্বলি হাউস অভিমুখে ছাত্রদের একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিচালিত হলো এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করল। ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকা সফরে আসেন।”

২১ মার্চ ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতার অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণা করলে জনগণ বিশেষ করে ছাত্ররা প্রচণ্ড হতাশ হয়। ২৪ মার্চ জিন্নাহ’র সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হবে ঘোষণা দিলে- কিছুসংখ্যক ছাত্র ‘নো’ ‘নো’ বলে প্রতিবাদ করে।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে পল্টনে জনসভায় ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তবে এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া ১৯৪৮ সাালের চাইতেই ব্যাপক ছিল। খাজা নাজিমউদ্দিনের ঘোষণায় জেলের অভ্যন্তরে তরুণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শেখ মুজিব এবং মহিউদ্দিন আহমদ তখন ঢাকা জেলে বন্দি ছিলেন। মহিউদ্দিন আহমদের ভাষ্যমতে, শেখ মুজিব অসুস্থতার ভান করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে অ্যাসেম্বলি ঘেরাও কর্মসূচির পরামর্শ দেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে আবারও জেলে ফেরত পাঠানো হয়।

১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জ স্টিমার ঘাটে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রনেতা শামসুদ্দোহাসহ কজন ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা হয়। শেখ মুজিব পুনরায় অনুরোধ করলেন ২১ ফেব্রুয়ারিতে হরতাল মিছিল শেষে আইনসভা যেন ঘেরাও করা হয় এবং বাংলা ভাষার সমর্থনে আইনসভার সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয়। শেখ মুজিব কারাগারে থাকা অবস্থায় বাংলা ভাষার সমর্থনে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনশন শুরু করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করেন।

ইতোমধ্যে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ বিকেল ৪টায় মাইকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বেলা ১০টা থেকে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে শুরু করে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই- ১৪৪ ধারা মানি না, নাজিম-নূরুল নিপাত যাক- প্রভৃতি স্লোগানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত হয়। ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ইটপাটকেল এবং কাঁদানে গ্যাস বিনিময় হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি চালায়।

ঘটনাস্থলেই রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার শহীদ হন এবং ১৭ জনের মতো গুরুতর আহত হয়। তাদের মধ্যে আবুল বরকত রাতে অপারেশন টেবিলে মারা যান। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই পরিস্থিতি অচিন্ত্যনীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। গুলি চালানোর সংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সারা বাংলা ফুঁসে ওঠে।

ঢাকা শহরের সব লোক তখন বিক্ষুব্ধ হয়ে মেডিক্যাল হোস্টেল প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি গায়েবি জানাজা ও শোক শোভাযাত্রার ওপর গুলিবর্ষণে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। ঢাকা শহরে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। ভাষা-আন্দোলনে শহীদের স্মৃতিকে ভাস্বর করে রাখার জন্য তৈরি হয় ‘শহীদ মিনার’। বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস শহীদ মিনার।

১৯৫২ সালের মহান ভাষা-আন্দোলনের রক্তস্নাত পথ বেয়েই এসেছিল ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাংলা ভাষা, মহান স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্ন এবং পরবর্তী সময় আইনসভার সদস্য হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে গেছেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এই সংগঠনটির ভূমিকা স্মরণীয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। এটাই ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এ দেশে প্রথম সফল হরতাল। এই হরতালে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন। ১১ মার্চ গ্রেপ্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক টার্নিং পয়েন্ট।

১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ-এর সঙ্গে তদানীন্তন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের সঙ্গে আট দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে সর্বপ্রথম বাংলাভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং চুক্তির শর্ত মোতাবেক বঙ্গবন্ধুসহ অন্য ভাষা সৈনিকরাও কারামুক্ত হন।

১৫ মার্চ আন্দোলনের কজন নেতৃবৃন্দকে মুক্তিদানের ব্যাপারে সরকার গড়িমসি শুরু করে। এতে শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষিপ্ত হন এবং তীব্র প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বানে নঈমুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ তারিখে দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং ওই দিনের ধর্মঘট অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাজউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, নঈমুদ্দিন আহমদ, শওকত আলী, আবদুল মতিন, শামসুল হক, আব্দুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, কামরুজ্জামান প্রমুখ নেতৃবৃন্দের কঠোর সাধনার ফলে বাংলা ভাষার আন্দোলন সমগ্র পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায়, দেয়ালে-দেয়ালে পোস্টার- ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ দাবি আদায়ের জন্য রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে থাকে। এই ভাষা সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে যারা নিরলস কাজ করেছেন সেই সব ছাত্রনেতার মধ্যে মুজিব ছিলেন অন্যতম। শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা-আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ১৯৪৯ সালে দুবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণপর্বে শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক ময়দানে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসেও নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতেন।

একুশের রক্তাক্ত সংগ্রাম মুসলিম লীগ সরকারকে কোণঠাসা করে ফেলে। সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্ত বঙ্গবন্ধু তার সব শক্তি নিয়োগ করলেন স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমুন্নত ও বিকশিত করার জন্য। তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে অসাম্প্রদায়িক ছাত্র প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের নির্দেশ দিলেন।

১৯৫৫ সালে তার নেতৃত্বে জয়পুরহাটে আওয়ামী মুসলিম লীগকর্মী সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ তার ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগে পরিণত হলো। বঙ্গবন্ধু ৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে এবং মিছিল শেষে সভায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন, তারই সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন মাত্র দু’বছরের মধ্যেই। সারা দেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্রোতধারার সৃষ্টি করেছিলেন, যার পরিণতি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, যার ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ; বাহাত্তর সালে বাংলাদেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি ঘোষণা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নির্বাসন।

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরিচালক, এফবিসিসিআই

এ বিভাগের আরো খবর