বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাঙালির সর্বোচ্চ অর্জন একাত্তরের বিজয়

  • কাজী শরীফ উদ্দিন   
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১২:০৯

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে তার ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। বাঙালির এই মুক্তিযুদ্ধে পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাষ্ট্রের সরকার ও মুক্তিকামী মানুষ। তবে কোনো কোনো পরাশক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সরাসরি নামে এবং পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্জন ও আত্মগৌরবের একটি দিন। ১৯৭১ সালের এদিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে।

বাঙালি জাতির ইতিহাস হাজার বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হলেও এই ভূখণ্ডের বাঙালির স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আসেনি।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয় এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তান নামে একটি অসম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ওপর চেপে বসে এবং শাসন-শোষণ ও নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে উপনীত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। এরই প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতেই তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত বাংলাদেশের সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগও সম্ভ্রমের এই বিজয় অর্জিত হয়। কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ল-বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণ-অভ্যুত্থান, ৬ দফাভিত্তিক ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে অবধারিত করে তোলে। এসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এর পর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’... যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’ খ্যাত কালজয়ী ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতিকে চূড়ান্তভাবে উদ্বুদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন প্রভূত ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে তার ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। বাঙালির এই মুক্তিযুদ্ধে পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাষ্ট্রের সরকার ও মুক্তিকামী মানুষ। তবে কোনো কোনো পরাশক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সরাসরি নামে এবং পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়।

শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে দোর্দণ্ড গতিতে এগিয়ে যায় বাঙালি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ শেষে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা (কর্নেল), নিরাপত্তা বিশ্লেষক, প্রবন্ধকার ও কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর