বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন

  • মোহাম্মদ শাহজাহান   
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:১৩

শেখ হাসিনা কত যন্ত্রণা আর ঝুঁকি নিয়ে খুনি নিয়ন্ত্রিত এই বাংলায় ফিরে আসেন তা এখন ভাবাই যায় না। বাবা-মা, তিন ভাই-দুই ভ্রাতৃবধূসহ অন্তত ১৬ নিকটাত্মীয়কে হারানোর পর জিয়াউর রহমান তখন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদরা ফ্রিডম পার্টির নামে রাজনীতি করছে। জিয়া তার শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করে। জিয়ার বাংলাদেশ ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ বছর বয়সে পা রাখলেন। টানা তিন বার নির্বাচিত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ১৩ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। বয়স, অভিজ্ঞতা সবদিক থেকে তিনি সমৃদ্ধ। করোনা মহামারিতে পৌনে দুবছর ধরে পৃথিবী বিধ্বস্ত। বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য যে দেশ ও জাতির এই কঠিন সময়ে একজন দূরদর্শী, সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক সরকারের নেতৃত্বে আছে।

মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ আরও অনেক দেশই লেজেগোবরে দশায় পতিত হয়। এমন কঠিন সময়ে অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। ১৮ বছরের শাসনকালে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ব্লুমবার্গ বলছে, বর্তমান সরকারের শেষ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ২০টি দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে। ওই বছর (২০২৩) বিশ্ব অর্থনীতিতে ১০০ ভাগের মধ্যে ১ ভাগ অবদান থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতির। এছাড়া উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বেশ কবছর ধরে উচ্চারিত হচ্ছে।

দেশের সীমানা পেরিয়ে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেত্রী। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’- বঙ্গবন্ধু অনুসৃত এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে বহু অসাধ্য সাধন করেন তিনি। বঙ্গকন্যার এ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য জাপান, চীন, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সবাই আগ্রহী। দূরদর্শী ও সাহসী শেখ হাসিনার দুর্দান্ত কীর্তি হচ্ছে বিশ্বব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষপর্যায়ে। কিছুদিনের মধ্যেই চালু হবে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ এই সেতু।

শেখ হাসিনার এই দৃপ্ত ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ আর সমগ্র বিশ্বের কাছে বিস্ময়! এর জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা বাহবার দাবিদার। নারীর ক্ষমতায়ন ও পুনর্জাগরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন তাও অতুলনীয়। পুরো বিশ্বে তিনি সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সমাদৃত। সেসঙ্গে বিশ্বজুড়ে টেকসই উন্নয়নেরও এক উজ্জ্বল প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের যোগ্য কাণ্ডারি বলা যায় তাকে।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের এই সাফল্যগাথা খুব সহজে আসেনি। তার পুরো রাজনৈতিক জীবনই ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ও বিপৎসংকুল। তিনি যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করছেন, বিশ্বের অন্য কোনো নেতা অতীতে বা বর্তমানে এমন অব্যাহত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করেনি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী সভানেত্রী হিসেবে স্বদেশে ফেরার সময় থেকে স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী-চক্র শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার নেত্রীকে হত্যা-ষড়যন্ত্রের কথা জানা যায়। আরও এমন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, যা এ পর্যন্ত জানা যায়নি।

সবাই জানে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব শীর্ষ নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪-এর ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এর মধ্যে ১৩টি গ্রেনেড নেত্রীকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করে। আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত ও কয়েক শ নেতাকর্মী আহত হয়। অলৌকিকভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে যান।

শেখ হাসিনা কত যন্ত্রণা আর ঝুঁকি নিয়ে খুনি নিয়ন্ত্রিত এই বাংলায় ফিরে আসেন তা এখন ভাবাই যায় না। বাবা-মা, তিন ভাই-দুই ভ্রাতৃবধূসহ অন্তত ১৬ নিকটাত্মীয়কে হারানোর পর জিয়াউর রহমান তখন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদরা ফ্রিডম পার্টির নামে রাজনীতি করছে। জিয়া তার শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করে। জিয়ার বাংলাদেশ ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।

কী পরিমাণ দেশপ্রেম আর জনগণের প্রতি দরদ-ভালোবাসা থাকলে একজন নেতা এমন নরককুণ্ডে আসতে পারে! শেখ হাসিনা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করতে চান এবং ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন।

এখন দেশে যতটুকু গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আছে তা শেখ হাসিনার সংগ্রামের ফসল। জিয়া-এরশাদ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাই আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। যদিও আশির দশকের শেষদিকে খালেদা জিয়াও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সংগ্রাম করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আদায় করেন। কিন্তু ২০০১ সালে সেসময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারচুপির নির্বাচন এবং সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের ক্ষমতা দখলের কারণে শেখ হাসিনা পরে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেন।

২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচন প্রতিহত করার নামে সন্ত্রাসী আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। ঘরের শত্রু এরশাদও ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনে খালেদার সঙ্গে হাত মেলায়। কিন্তু মুজিবের সাহসী কন্যা খালেদার সন্ত্রাসী আন্দোলন কৌশলে প্রতিহত করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখেন।

শেখ হাসিনার ত্যাগ, তিতিক্ষা, অনমনীয়তা, সাহস ও দূরদর্শিতার জন্যই সেনাসমর্থিত সরকার দুবছরের মাথায় নির্বাচন দিয়ে পশ্চাদপসরণ করে। এটা ঠিক, বর্তমানে নানা কারণে নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। দেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে চলেছে। তার টানা ১৩ বছরের শাসনামলে মানুষের গড় আয়ু, মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার হয়েছে অভাবনীয় উন্নতি।

তার সরকার দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। বছরের প্রথমদিকে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ২০৪১-এর মধ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার রূপকল্প হাতে নিয়েছেন। ২১০০ সালে বাংলাদেশের অবস্থা কী হবে, এ বিষয়ে হাতে নিয়েছেন ডেল্টা প্রকল্প।

শেখ হাসিনাও মানুষ। তার সরকারেরও ভুলত্রুটি আছে। তবে কটি বিশেষ কারণে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১. জিয়া, এরশাদ ও খালেদার ছিনতাই করা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধারকরণ। ২. একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির রায় কার্যকর। ৩. তিনি জাতির পিতা হত্যার বিচার ও সাজাপ্রাপ্তদের শাস্তি দিয়ে জাতিকে দায়মুক্ত করেছেন। ৪. বার বার ছিনিয়ে নেয়া গণতন্ত্রকে তিনি ফিরিয়ে এনেছেন এবং সাম্প্রদায়িকতা দূর করেছেন। ৫. নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন।

এমনসব সাফল্য এই বিশ্বে খুব কম রাষ্ট্রনায়কেরই আছে। জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সশ্রদ্ধ অভিবাদন। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন শেখ হাসিনাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন এবং ন্যায়ভাবে দেশ পরিচালনা করার তওফিক দান করেন।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক, সিনিয়র সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর