বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভুল থেকে বিএনপি শিক্ষা নিয়েছে কি?

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:৩৭

৪৩ বছর বয়সেই কারো কারো মনে প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির কি আর উত্থানের সম্ভাবনা নেই? অথবা বিএনপি কি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করবে? আমরা সবাই জানি, মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালির স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়ে মুসলিম লীগ দ্রুতই এই ভূখণ্ডে নিজের কবর রচনা করে। তারপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

দেশে যে বিএনপি নামক একটি বড় রাজনৈতিক দল আছে সেটা দেশের মানুষ কীভাবে বুঝতে পারছে? দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিন কোনো না কোনো উপলক্ষে কথা বলছেন এবং তা গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। আবার সরকারি দল আওয়ামী লীগের উপস্থিতিও গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ। মাঠপর্যায়ে কোনো রাজনৈতিক দলের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। এমনকি নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম যেমন কমিটির মিটিং বা সদস্য সংগ্রহ, গণসংযোগ ইত্যাদি কিছুই হয় না। তবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলোর মধ্য কয়েকটি দল তাদের মতো করে সক্রিয় আছে বলে শোনা যায়। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী নামের ধর্মভিত্তিক দলটি প্রকাশ্যে কোনো হৈচৈয়ে না থাকলেও নীরবে তলা গোছানোর কাজ করছে বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া যায়। সরকারের নেকনজরে না থাকায় সবার চোখ এড়িয়ে জামায়াত তার কৌশলে তৃণমূল পর্যায়ে দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নানা উপায়ে সমর্থকগোষ্ঠী বাড়ানোর কাজটিতে তারা এক ধরনের দক্ষতাও অর্জন করেছে। মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও কর্মকাণ্ড গুটিয়ে না নিয়ে সরকারের মনোভাব বুঝে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। সংগঠনের নতুন আমিরকে নিয়ে পথচলার কৌশলও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি গত ১ সেপ্টেম্বর ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা কেমন বোঝার জন্য একটি খবরের উল্লেখ করছি। একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় ‘কমিটি নেই, বিরোধ আছে’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।

খবর থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, ‘অতিসত্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। দুই বছর হয়ে গেলেও বিএনপির জেলা কমিটি আর হয়নি। তবে কমিটি না হলেও ফরিদপুর জেলা বিএনপির মধ্যে বিরোধ কিন্তু ঠিকই আছে। দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপির দুই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক দুই মন্ত্রী ও প্রয়াত নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান ও চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ দুই ধারায় জেলা বিএনপিকে পরিচালিত করায় বিএনপি এক ধরনের স্থবিরতার মধ্যে চলছে।

শুধু ফরিদপুরেই বিএনপির ভেতরে বিরোধ আছে তা নয়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সারা দেশেই বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকলেও বিরোধ আছে সর্বত্র। কিন্তু দলের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তেমন গরজ দেখা যায় না। সম্ভবত কেন্দ্রীয় পর্যায়েও দলের ঐক্য সংহত না থাকায় বিএনপি তৃণমূলের সংকট সমাধানে আগ্রহ দেখায় না। নিজদলের সমস্যা কীভাবে দূর করা যাবে তা নিয়ে ভাবনা না থাকলেও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের মাথাব্যথার শেষ নেই।

৩ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমলারা এখন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাদের আচরণও হয়ে উঠছে রাজনীতিবিদের মতো। সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এই আমলারা। এখন তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করছে। বিভিন্ন জেলায় ডিসি অফিসের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের চেয়ে আমলারা বেশি দায়িত্ব পালন করে। আওয়ামী লীগ নাই তো এখন। এখন সব আমলা লীগ’। কেউ যদি প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ না হয় আমলা লীগ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বিএনপি কী হয়েছে?

খ.

মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত শতায়ু কামনা করা হয়। কারণ সাধারণত খুব কম সংখ্যক মানুষই শত বছরের বেশি বাঁচে। কিন্তু রাজনৈতিক দল শত বছরের বেশি বাঁচতে পারে, বাঁচে সে তথ্য আমাদের জানা। কমিউনিস্ট পার্টির বয়স শত বছরের বেশি। ভারতের কংগ্রেসও শত বছর অতিক্রম করছে। মুসলিম লীগও তাই। তবে এই দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে মুসলিম লীগ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবং মানুষের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে না পারার কারণেই সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলো প্রাসঙ্গিকতা হারায়, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আমাদের দেশের অন্যতম দুটি জনপ্রিয় দল। আওয়ামী লীগ বয়সে বিএনপির চেয়ে প্রবীণ। বিএনপি আওয়ামী লীগের তুলনায় নবীন। তবে ৪৩ বছর একটি রাজনৈতিক দলের জন্য একেবারে কম সময় নয়।

৪৩ বছর বয়সেই কারো কারো মনে প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির কি আর উত্থানের সম্ভাবনা নেই? অথবা বিএনপি কি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করবে? আমরা সবাই জানি, মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালির স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়ে মুসলিম লীগ দ্রুতই এই ভূখণ্ডে নিজের কবর রচনা করে। তারপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মুসলিম লীগ নামে দল বাংলাদেশে এখনও আছে কিন্তু একেবারেই নাম ও সাইনবোর্ড-সর্বস্ব।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালির শীর্ষ এবং খ্যাতিমান নেতারা এই দলের গৌরবের পতাকা বহন করছেন। সব থেকে বড় কথা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই দলের নাড়িপোঁতা হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ এখন অবিভাজ্য নাম ও সত্ত্বা। আওয়ামী লীগের বিকাশ ও উত্থান অনেক বন্ধুর পথ ধরেই হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশর রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের নাম মুছে ফেলার যে ঘৃণ্য নীলনকশা তৈরি করা হয়েছিল তা প্রতিহত ও বানচাল করা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এবং দেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন নতুন প্রাণশক্তিতে বলীয়ান এক উত্থিত রাজনৈতিক শক্তির নাম। তার মানে অবশ্যই এটা নয় যে, আওয়ামী লীগের ভেতরে কোনো সমস্যা নেই। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকায় দলটি সরকারের মধ্যে ঢুকে গেছে। সরকার পরিচালনায় দলের যে নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা তা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না।

১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি যেন এখন এক হতোদ্যম ন্যুব্জ রাজনৈতিক দল। বিএনপি রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিকভাবে এখন যে দুঃসময় অতিক্রম করছে অতীতে এত খারাপ সময় আর আসেনি। দলের প্রধাননেত্রী দুর্নীতির মমলায় শাস্তি পেয়ে কারাগারে দুই বছর থাকার পর বিশেষ বিবেচনায় জামিনে মুক্তি পেলেও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রয়েছেন । দ্বিতীয় প্রধান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। আইন-আদালতে তিনি ‘পলাতক'। দণ্ডিত। তিনি অনলাইনে দল চালান। তার বক্তব্য দেশের গণমাধ্যমে ছাপা হয় না। খালেদা জিয়া অসুস্থ, স্বাভাবিক হাঁটাচলাও করতে অসুবিধা হয়। নেতৃত্বশূন্য, বহুধাবিভক্ত কোন্দল-জর্জরিত একটি দলকে আবার ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। তবে রাজনীতির নতুন প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণের জন্য আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিএনপি যদি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করতে পারে তাহলে শতবর্ষী বটবৃক্ষ হলেও হতে পারে বর্তমানে বিপর্যস্ত-পর্যুদস্ত বিএনপি।

বিএনপি সরকার পতনের স্বপ্ন যতটা দেখে, দলকে উপযুক্ত করে তোলার চেষ্টা ততটা করে না। নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো নিয়েও বিএনপির কোনো আত্মসমালোচনা ও পর্যালোচনা নেই। রাজনীতি হলো একটি কৌশলের খেলা। এই কৌশলের খেলায় বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে পেরে ওঠার প্রমাণ রাখতে পারেনি। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার সাহস থাকতে হবে বিএনপির। কিন্তু তারা যদি মনে করে তাদের কোনো ভুল নেই, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শত্রু-মিত্র তারা সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছিল বা করেছে তাহলে তাদের আরও হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সময় বদলছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা বিএনপি অর্জন করতে না পারলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

এ বিভাগের আরো খবর