মাদারীপুরের কালকিনিতে চলছে স্থগিত হওয়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়।
প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রথমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ায় আগ্রহ দেখা গেছে তাদের মধ্যে।
নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পৌর এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পৌরসভায় ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে আছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ৯ জন করে পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন আছে।
প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় মোট ভোটার ৩৩ হাজার ৩০৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৮৬৬ ও নারী ভোটার ১৬ হাজার ৪১৬ জন।
কালকিনির মেয়র হতে লড়ছেন ৬ জন প্রার্থী। তারা হলেন আওয়ামী লীগের এস এম হানিফ, স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান সবুজ, স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা মিঠু, বিএনপির কামাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লুৎফার রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রুবেল রানা।
প্রথমবার ইভিএমে ভোট হচ্ছে এই পৌরসভায়
এর মধ্যে বিএনপি প্রার্থী কামাল হোসেন ২১ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘ভোট কারচুপি, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড, পৌরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন বর্জন ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি।’
এই পৌরসভায় ভোটের নির্ধারিত দিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এর আট দিন আগে ৬ ফেব্রুয়ারি স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজের নিখোঁজ হওয়ার জেরে কালকিনিতে তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।
সেদিন দুপুরে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন সবুজ। তখন কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন তাকে মেসেজ দেন, যাতে লেখা ছিল, ‘মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) তাকে (মশিউরকে) দেখা করতে বলেছেন।’
এসপির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর থেকে সবুজের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানায় পরিবার।
দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় সড়ক অবরোধ করা হয়
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা কালিকিনি থানা ঘেরাও করে। বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।
সবুজের সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় নৌকার প্রার্থী এসএম হানিফের সমর্থকরা। দুই পক্ষে শুরু হয় সংঘর্ষ, আহত হন অন্তত ৫০ জন।
ওই সংঘর্ষে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
১৩ ঘণ্টা পর কালকিনি পৌরসভার দক্ষিণ কৃষ্ণনগরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন সবুজ। সে সময় তিনি জানান, এসপি মাহবুব হাসানের সঙ্গে ফেরির কেবিনে ছিলেন তিনি।
পরের দিন সবুজ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘এসপি আমাকে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিয়ে যান। সেখানে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে আমাকে বলা হয়।’
এরপরই ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে কালকিনির ভোট স্থগিতের আদেশ দেয়া হয়।