দুই মাস আগেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর খুব কম কর্মকর্তাই গাজায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা ভাবতে পেরেছিলেন। তারা বারবার বলে আসছিলেন, ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ১০০০ মাইল দূরের ইরান কিংবা উত্তর সীমান্তের ওপারের লেবানন। তবে এই কয়দিনের মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা একসঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি করেছে বিস্ফোরক পরিস্থিতি। ফিলিস্তিনের বর্তমান সহিংসতার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। বাংলায় প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
চলতি সপ্তাহে গাজা থেকে প্রথম রকেট ছোড়ার ২৭ দিন আগের ঘটনা। একদল ইসরায়েলি পুলিশ জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ঢুকে ফিলিস্তিনিদের হটিয়ে চুনাপাথর দিয়ে বানানো বিশাল চত্বরটির দিকে যায়। পুলিশের এই দলটি পুরনো চারটি মিনার থেকে আজান ও প্রার্থনা প্রচারে ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের তারগুলো কেটে দেয়।
১৩ এপ্রিল অর্থাৎ মুসলিমদের জন্য পবিত্র রমজানের প্রথম রাতে এই ঘটনা ঘটে। দিনটি ইসরায়েলের জন্যেও বিশেষ, কারণ ওই দিন দেশের হয়ে যুদ্ধে শহিদদের স্মরণ করে তারা।
মসজিদের ঠিক নিচেই ইহুদিদের জন্য পবিত্র পশ্চিম দেয়ালে দিনটি উপলক্ষে ভাষণ দিচ্ছিলেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতা নিয়াহু। এ সময় উপরের মসজিদ থেকে প্রার্থনার ধ্বনিতে প্রেসিডেন্টের ভাষণ চাপা পড়ে যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন ইসরায়েলি পুলিশ অফিসাররা।
পুরো ঘটনাটির সাক্ষ্য দেন মসজিদের চার কর্মকর্তা। তিনজন ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। ইসরায়েলি পুলিশ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। বহির্বিশ্বে প্রায় কেউই ঘটনাটি নিয়ে কিছু জানতেন না।
তবে ইসলামের অন্যতম পবিত্র মসজিদে ওই হামলা আরও বেশ কয়েকটি ঘটনার অন্যতম, যার জের ধরে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গাজা উপত্যকা শাসনকারী হামাসের মধ্যে ফের যুদ্ধ ও ইসরায়েল জুড়ে আরব-ইহুদিদের মধ্যে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়।
‘এটাই টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তাদের ওই পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে’, বলেন জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ একরিমা সাবরি।
কেউ কল্পনাই করতে পারেননি যে, পরিস্থিতির এত দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও বিধ্বংসী অবনতি ঘটবে। এর জের ধরে বহু বছরের মধ্যে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহতম সহিংসতা ঘটেছে। এর মধ্যে গাজায় ১৪৫ জন ও ইসরায়েলে ১২ জন নিহত হওয়াই শুধু নয়, ইসরায়েলের আরব-ইহুদি অধ্যুষিত শহরের দাঙ্গাও অন্তর্ভুক্ত।
ইসরায়েল শাসিত পশ্চিম তীরের শহরগুলিতেও বিক্ষোভের কারণ ছিল এটি। শুক্রবার সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। যার ফলস্বরূপ লেবাননের এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে রকেট হামলা করা হয়। জর্ডানিয়ানরা ইসরায়েলের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যায় ও স্বল্প সময়ের জন্য লেবানিজ বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত অতিক্রম করে।
যে সময়টাতে ইসরায়েল সরকার টিকে থাকার সংগ্রাম করছে এবং তারা যাকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে দেখে সেই হামাস যখন ফিলিস্তিন আন্দোলনে নিজেদের ভূমিকা জোরদারের চেষ্টা করছে আর যখন নতুন ফিলিস্তিনি প্রজন্ম নিজস্ব মূল্যবোধ ও নতুন লক্ষ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে তখনই শুরু হয় এই সংকট।
একে গাজায় কয়েক বছর ধরে চলমান অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা, পশ্চিম তীরে কয়েক দশকের দখল ও ইসরায়েলে বসবাসকারী আরবদের বিরুদ্ধে কয়েক দশকের বৈষম্যের পরিণাম হিসেবে দেখছেন ইসরায়েল পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার ও ওয়ার্ল্ড জিওনিস্ট অরগানাইজেশনের সাবেক সভাপতি আভ্রাহাম বার্গ।
তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জায়গামতোই ছিল। শুধু একটা ট্রিগারের দরকার ছিল। আর সেই ট্রিগারটা হলো আল আকসা মসজিদ।’
হামাসের সঙ্গে শেষ বড় সংঘাতের পর সাত বছর ও শেষ বড় ফিলিস্তিনি আন্দোলন- ইন্তিফাদার পর ১৬ বছর পার হয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যখন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নিলেন, তখনও সেখানে বড় কোনো বিক্ষোভ হয়নি।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলো সন্ধি করবে না এমন ধারণা ত্যাগ করে যখন চার আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করে ফেলে তখনও সেখানে কোনো গণবিক্ষোভ বা প্রতিবাদ হয়নি।
দুই মাস আগেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর খুব কম কর্মকর্তাই এমনটা ভাবতে পেরেছিলেন। সামরিক বাহিনীর কর্তারা বারবার বলে আসছিলেন, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ১০০০ মাইল দূরের ইরান কিংবা উত্তর সীমান্তের ওপারের লেবানন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ বিদেশী কূটনীতিক বলেন, মার্চ মাসে যখন কূটনীতিকেরা গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক প্রশাসনের দুই জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন তারা ওই দুইজনকে বড় কোনো সহিংসতার সম্ভাবনা সম্পর্কে নিরুদ্বিগ্ন থাকতে ও তুলনামূলকভাবে লম্বা শান্তির সময় নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে দেখেছেন।
গাজা করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল। হামাসসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ছিল ১৫ বছর পর মার্চের ফিলিস্তিনি নির্বাচনের অপেক্ষায়। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় বেকারত্বের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। ফিলিস্তিনিরা যে কারণে যুদ্ধের চেয়ে অর্থনীতির উপর জোর দেয়ার দাবি জানাচ্ছিল, আর কমছিল হামাসের জনপ্রিয়তা।
তবে এপ্রিলে বদলাতে শুরু করে মনোভাব। রমজানের প্রথম রাতে ১৩ এপ্রিল আল আকসায় নামাজ পড়ছিলেন মুসলিমরা আর একই সময় কাছেই ভাষণ দিচ্ছিলেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রউভেন রিভলিন।
মসজিদের এক কর্মকর্তা বলেন, জর্ডান সরকার নিয়ন্ত্রিত মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের ভাষণ চলার সময় প্রার্থনা প্রচার না করতে ইসরায়েলের অনুরোধকে অসম্মানজনক বিবেচনা করে প্রত্যাখ্যান করে।
যে কারণে ওই রাতে মসজিদে অভিযান চালায় পুলিশ ও স্পিকারগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
শেখ সাবরি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই। এটা একেবারে স্পষ্ট যে ইসরায়েলি পুলিশ আকসা মসজিদ ও পবিত্র রমজান মাসকে অপমান করতে চেয়েছে।’
এ অভিযোগের বিষয়ে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দাবি করেন, স্পিকারগুলো বন্ধ করা হয়নি। পরে অবশ্য তারা জানায়, বিষয়টি ফের যাচাই করে দেখা হবে।
অন্য কোনো বছর হলে পুরো ঘটনাটি সবাই খুব দ্রুত ভুলে যেত। কিন্তু গত মাসে হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিতভাবে বেশ কয়েকটি ঘটনা একই সঙ্গে ঘটে যা এই ছোট বিষয়টিকে একটি বড় সংকটে পরিণত করে।
আল-আকসায় একাধিক অভিযান প্রতিহত করাই শুধু নয়, ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদের মাধ্যমে তরুণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটে।
কট্টর ডানপন্থিদের আশ্বস্ত রাখার উদ্দেশ্য থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরিস্থিতি শান্ত করতে খুব বেশি উৎসাহ দেখাননি।
ফিলিস্তিনে সৃষ্ট আকস্মিক রাজনৈতিক শূন্যতা ও তৃণমূলের প্রতিবাদ হামাসকে তার শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়।
ফিলিস্তিনে এই পরিবর্তনগুলো ইসরায়েলের অজান্তেই ঘটছিল। এক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের সমতা ও রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবির সমাধান নয়, বরং নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো সমস্যা হিসেবে দেখতে থাকা কট্টর ডানপন্থি সরকারের কারণে কিছুটা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক পরিচালক আমি আয়ালন বলেন, ‘আমাদের জেগে উঠতে হবে। বর্তমান অবস্থা যে স্থিতিশীল সে ধারণা থেকে শুরু করে আমরা যেভাবে সবকিছুকে দেখি সেটা বদলাতে হবে।’
লাউডস্পিকারের ওই ঘটনার পরপরই ওল্ড সিটি অফ জেরুজালেমে ঢোকার অন্যতম পথ এবং অন্যতম জনপ্রিয় একটি চত্বর দামাস্কাস গেট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। রমজানের রাতে তরুণ ফিলিস্তিনিরা সাধারণ সেখানে জমায়েত হন।
পুলিশের মুখপাত্র মিকি রোসেনফেল্ড জানান, বিপজ্জনক ভিড় ও কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতেই চত্বরটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফিলিস্তিনিদের জন্য এটা ছিল আরেকটা অপমান। যার কারণে শুরু হয় প্রতিবাদ। প্রতিরাতেই জায়গাটির দখল নেয়ার জন্য পুলিশ ও তরুণদের সংঘর্ষ হতে থাকে।
পুলিশের ভাষ্য, প্রতিবাদকারীরা বিশৃংখলা তৈরি করেন, যে কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার ছিল। কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনির কাছে চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়াটা ছিল একটি ছোট ঘটনা, যার অন্তরালে লুকিয়ে আছে আরও গভীর দুঃখদুর্দশা।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় দখল হওয়া ও পরে ইসরায়েলে সংযুক্ত পূর্ব জেরুজালেমের বেশিরভাগ বাসিন্দা ফিলিস্তিনি, নিজের ইচ্ছাতে তারা ইসরায়েলি নাগরিক নন। অনেকে মনে করেন, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে দখলদারদের বৈধতা দেয়া হবে। এ কারণে তারা ভোট দেন না।
অনেকের মতে, তাদের ধীরে ধীরে জেরুজালেম থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। বিল্ডিং পারমিট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যে কারণে অধিবাসীদের হয় শহর ছাড়তে হচ্ছে, নয়ত অবৈধ বসতি স্থাপন করতে হচ্ছে; যেগুলো যেকোনো সময় সরকার উচ্ছেদ করে দিতে পারে।
পুরো সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি চত্বর থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্তটি তাদের সবসময় বৈষম্যের শিকার হওয়ার অনুভূতিকে আরও প্রবল করে তোলে।
পূর্ব জেরুজালেমের ২৭ বছর বয়সী কসাই মাজেদ আল কেইমারি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, তারা শহর থেকে আমাদের উপস্থিতি মুছে ফেলতে চাইছে। তাদের সামনে প্রতিবাদ করা ও নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়া জরুরি ছিল আমাদের জন্য।’
দামাস্কাস গেটে সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় দ্রুত। ওই সপ্তাহে ঘটনার কয়েকদিন পর ফিলিস্তিনি তরুণেরা ইহুদিদের ওপর আক্রমণ শুরু করেন। অনেকেই ভিডিও করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইট টিকটকে পোস্ট করেন। এরপরই ইহুদিদের সংঘবদ্ধ প্রতিশোধ শুরু হয়।
পুলিশি অভিযানের এক সপ্তাহ পর, ২১ এপ্রিল চরম ডানপন্থি ইহুদি সংগঠন লেহাভার কয়েক শ সদস্য জেরুজালেমের কেন্দ্রে মিছিল বের করে। তারা ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দিতে দিতে ফিলিস্তিনি পথচারীদের আক্রমণ করে। এক ভিডিওতে দেখা যায় একদল ইহুদি ফিলিস্তিনিদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ও আরেক দল ফিলিস্তিনি ভেবে গাড়ি চালকদের মারধর করছে।
বিদেশি কূটনীতিক ও সম্প্রদায়ের নেতারা দামাস্কাস গেটের বাইরে চত্বরটি খুলে দিয়ে জেরুজালেমের উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, দেশটির সরকার পুরো বিষয়টিতে অনাগ্রহ দেখায় ও তাদের মনোযোগও সেদিকে ছিল না।
নেতানিয়াহু মার্চের নির্বাচনের পর জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। দুই বছরের মধ্যে এটি ছিল চতুর্থ নির্বাচন, যেটাতে কোনো সুস্পষ্ট বিজয়ী পাওয়া যায়নি। জোট গঠনের জন্য তার চরম ডানপন্থি কয়েকজন আইনজীবীকে রাজি করানো দরকার ছিল।
এদের একজন হলেন, ইতামার বেন জিভির। লেহাভার এই সাবেক আইনজীবী ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য নেই এমন আরব নাগরিকদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার পক্ষে সরব প্রচার চালিয়েছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে হেব্রনে ২৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা ইহুদি মৌলবাদী বারুচ গোল্ডস্টাইনের ভক্ত ও কিছুদিন আগেও তার শয়নকক্ষে বারুচের ছবি ঝুলত।
বেন জিভিরের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কূটপরামর্শ ও জেরুজালেমে উত্তেজনা বাড়তে দেয়ার মাধ্যমে সংঘাত সৃষ্টি করে ইসরায়েলিদের তার নেতৃত্বের অধীনে রাখার অভিযোগ আছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রীর জীবনী লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনশেল ফেফার বলেন, ‘ইহুদি ও আরবদের মধ্যে উত্তেজনা নেতানিয়াহু তৈরি করেননি। ইসরায়েল গঠনের আগে থেকেই তারা এখানে আছেন। তার দীর্ঘ শাসনামলে বারবার তিনি এই উত্তেজনাকে ইন্ধন দিয়েছেন ও নিজের সুবিধার জন্য কাজে লাগিয়েছেন। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে তখন নেতা হিসেবে তা সামাল দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।’
নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ পরামর্শক মার্ক রেগেভ অবশ্য এই বিশ্লেষণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। রেগেভ বলেন, ‘এর উল্টোটাই সত্য। শান্তি টিকিয়ে রাখতে উনি (নেতানিয়াহু) সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন।’
২৫ এপ্রিল ফিলিস্তিনিদের দামাস্কাস গেটের বাইরে জড়ো হতে দেয়ার বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হয় ইসরায়েলি সরকার। তবে পরবর্তী কিছু ঘটনায় পুরো পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে।
এর প্রথমটি হল পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি এলাকা শেখ জাররা থেকে ছয়টি পরিবারকে উচ্ছেদ। মে মাসের প্রথম ভাগে তাদের মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও এপ্রিল জুড়ে নিয়মিত প্রতিবাদ ও মিছিল হতে থাকে। বসবাসকারীদের দুর্দশা ও দামাস্কাস গেটের ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পান ফিলিস্তিনিরা। যার ফলে প্রতিবাদ আরও তীব্র হয়।
শেখ জাররায় নিজ বাড়িতে পুলিশি হামলায় পা ভেঙে যাওয়া স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের নেতা সাহাল দিয়াব বলেন, ‘আপনারা এখন শেখ জাররাহ, আল আকসা কিংবা দামাস্কাস গেটে যা দেখছেন এসব কিছুর উদ্দেশ্য আমাদের জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত করা। আমার এলাকার ঘটনাটি এর শুরু মাত্র।’
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা শেখ জাররায় বিক্ষোভকারীদের উগ্রতা থামাতে গিয়েছিল। কিন্তু ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায় পুলিশ নিজেই সেখানে আক্রমণ করছে। পুলিশি আগ্রাসনের ছবিগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে যাওয়ার পর এলাকাটি ইসরায়েল, দখলকৃত অঞ্চল ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল গঠিত হওয়ার পর উচ্ছেদ পরিবারগুলোর ফের উচ্ছেদ হওয়ার অভিজ্ঞতাকে লেবাননে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি কবি জেহান বিসেইসো বর্ণনা করেছেন ‘নানা দেশে বাস করা প্রতিটি ফিলিস্তিনির কাছে এটি নিজের অভিজ্ঞতা’ হিসেবে।
এ থেকে আইনি বৈষম্যের একটি উদাহরণ সামনে আসে: ইসরায়েলি আইনে আছে ১৯৪৮ সালের আগে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদিদের মালিকানাধীন জমি ইহুদিরা ফের দাবি করতে পারবেন। কিন্তু ওই বছর যে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে তাদের বংশধরদের পরিবারিক জমি দাবি করার কোনো আইনি উপায় নেই।
বিসেইসো বলেন, ‘মানুষকে তাদের ঘর থেকে উচ্ছেদ করতে দেখার মধ্যে একটা চক্রাকার ও উস্কানিমূলক বিষয় আছে। লক্ষ মাইল দূরে থাকলেও বিষয়টা খুবই উস্কানিমূলক ও সম্পর্কিত।’
লজ্জাজনক হারের ভয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২৯ এপ্রিল নির্বাচন বাতিল করে দেন। এতে তার দূর্বলতা প্রকাশ পায়। এই পরিস্থিকে হামাস সুযোগ হিসেবে নেয় ও জেরুজালেমের রক্ষাকারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে।
গাজা শহরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এমখাইমার আবুসাদা বলেন, ‘এর মাধ্যমে হামাস নিজেদের ফিলিস্তিনের জন্য যোগ্যতর নেতৃত্ব হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাশ মানি ট্রায়ালের অষ্টম দিনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এদিন ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ থাকা পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ট্রাম্পের কার্যালয়ে দেখেছেন বলে আদালতে দাবি করেছেন ট্রাম্পের সাবেক সহকারী রোনা গ্রাফ।
এবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের ফৌজদারি মামলার শুনানি কার্যক্রমে শুক্রবার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয় রোনা গ্রাফকে।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনে ৩৪ বছর কাজ করা গ্রাফ আদালতকে জানান, তার অস্পষ্টভাবে মনে আছে যে তিনি স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ট্রাম্প টাওয়ারের ২৬ তলার রিসেপশনে দেখেছেন।
ট্রাম্পের আইনজীবী অবশ্য এ দাবিকে খারিজ করে দিয়ে আদালতকে বলেন, ওই সময় ট্রাম্প রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নিয়ে কাজ করছিলেন। ওই শো-র জন্য অনেককেই নিজের অফিসে ডাকতেন ট্রাম্প।
গ্রাফের পর সাক্ষ্য দিতে আসেন ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের সিনিয়ন ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্যারি ফারো। তিনি জানান, ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে রেসোল্যুশন কনসালট্যান্টস এলএলসি নামে নতুন একটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে সাহায্য করেন তিনি।
সরকার পক্ষের আইনজীবীদের দাবি, ট্রাম্পের যৌন সম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে এই কোম্পানির মাধ্যমেই কোহেন ট্রাম্পের হয়ে ড্যানিয়েলসকে ১৩০ হাজার ডলার দিয়েছেন। এটিই ‘হাশ মানি’ হিসেবে পরিচিত।
এদিন শুনানির শুরুতে চতুর্থবারের মতো আদালতে হাজির হন ট্যাবলয়েড ন্যাশনাল এনকোয়্যারারের প্রকাশক ডেভিড পেকার। তাকেও নানাভাবে প্রশ্ন করেন দু’পক্ষের আইনজীবীরা।
পেকার জানান, ২০১৫ সালে ট্রাম্প টাওয়ারে এক আলোচনার পর তিনি এনকোয়্যারার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নেতিবাচক প্রতিবেদন সম্পর্কে আগে থেকেই কোহেনকে অবহিত করতে রাজি হন।
পেকার এও দাবি করেন যে ট্রাম্প টাওয়ারের ওই বৈঠকে তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন অর্থের বিনিময়ে না ছাপতে দেয়া বা ‘ক্যাচ অ্যান্ড কিল’ কৌশল নিয়ে আলোচনা করেননি।
তিনদিন বিরতি শেষে মঙ্গলবার পুনরায় এই মামলার শুনানি শুরু হবে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনারের কার্যালয়কে ৩০ ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাতার।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির ‘কল্যাণ ও সুরক্ষা’য় সহায়তার জন্য এ অর্থ দেয়া হচ্ছে বলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, শিশু, সহিংসতায় আক্রান্ত নাগরিকসহ ইউক্রেনের সর্বসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগে সহায়তার অংশ হিসেবে কাতার এ অর্থ দিচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে সংঘাতপীড়িত পরিবারগুলোকে সাহায্যের জন্য ক্রমবর্ধমান আইনি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এ অর্থ।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মানুষের মর্যাদাকে সম্মান করা হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকারের সুরক্ষা দেয়া হয়, এমন বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়াসের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থাটি।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি জানান, কাতারে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ইউক্রেনে ২০২২ সালে রুশ হামলার পর জোর করে রাশিয়ায় পাঠানো ইউক্রেনীয় ১৬ শিশু।
জেলেনস্কি বুধবার জানান, কাতারের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সুবাদে শিশুরা মুক্ত হয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছে।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় হামলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) দুই সদস্য নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার গভীর রাতে এ হামলা চালানো হয়, যেটি জঙ্গিরা করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিদের একটি দল নারানসেইনা গ্রামের পাহাড়ি অংশ থেকে উপত্যকা অঞ্চলের দিকে সিআরপিএফের চৌকি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এর জবাবে সিআরপিএফ সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। এরই মধ্যে চৌকিতে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন বাহিনীর চার সদস্য।
এ চারজনকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও দুজনের মৃত্যু হয়। অপর দুজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, মণিপুরে সংকট শুরুর প্রথম বার্ষিকীর ছয় দিন আগে এ হামলা হলো। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের হামলা আগামী দিনগুলোতে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাণ হারানো দুই সিআরপিএফ সদস্য ১২৮ ব্যাটালিয়নের হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন, যাদের কর্মস্থল ছিল নারানসেইনা এলাকায়। এ দুজন হলেন উপপরিদর্শক এন সরকার ও প্রধান কনস্টেবল অরূপ সাইনি।
আহত দুজন হলেন পরিদর্শক যাদব দাস ও কনস্টেবল আফতাব দাস।
হামলাকারীরা শুক্রবার মধ্যরাতে হামলা শুরু করে বলে খবর পাওয়া যায়, যেটি চলে রাত সোয়া দুইটা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:ভারতের ১৩ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৮টি আসনে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এর আগে ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট শুরু হয় ১৯ এপ্রিল।
দ্বিতীয় দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে কম সম্পদ নিয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তথ্য দিয়ে শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী হলেন কর্নাটকের কংগ্রেস প্রার্থী ভেঙ্কটরমন গৌড়া। জাতীয় নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, ৬২২ কোটি রুপি সমমূল্যের সম্পদ রয়েছে তার। তিনি এ নির্বাচনে এইচডি কুমারস্বামীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধনী প্রার্থী হলেন কংগ্রেসের ডিকে সুরেশ। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৯৩ কোটি রুপি। ডিকে সুরেশ বেঙ্গালুরু গ্রামীণ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন।
তৃতীয় ধনী প্রার্থী হলেন বিজেপি নেত্রী এবং অভিনেত্রী হেমা মালিনী। তিনি মথুরা লোকসভা আসন থেকে লড়ছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ২৭৮ কোটি রুপি। মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় শর্মা চতুর্থ ধনী প্রার্থী, তার সম্পদের পরিমাণ ২৩২ কোটি রুপি।
সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে কম যাদের
লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম সম্পদ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন নাগোরাও পাটিল। মহারাষ্ট্রের নান্দেদ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তার সম্পদ রয়েছে ৫০০ রুপি এবং তার কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নেই।
এরপরেই আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজেশ্বরী কেআর। তিনি কেরালার কাসারাগড় আসন থেকে লড়ছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ১০০০ রুপি।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
ভারতে এবার ১৮তম লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে, যার ব্যাপ্তিকাল ৪৪ দিন। দেশটিতে মোট সাত দফায় এ ভোট হবে। লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশের উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমাদের লজ্জা হয়।
দেশটির ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বুধবার মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
তিনি বলেছেন, “যে সময় বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল তখন তাদের বলা হতো, এই অংশটি ‘পাকিস্তানের ওপর একটি বোঝা’। কিন্তু ওই ‘বোঝাই’ এখন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপক উন্নতি করেছে। ফলে এখন বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমি লজ্জিত হই। কারণ বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও পাকিস্তান এখনও অনেক পিছিয়ে আছে।”
সময়ের পরিক্রমায় সেই ‘বোঝা’র জনপদ এখন উন্নতির নানান সূচকে ছাড়িয়ে গেছে পাকিস্তানকে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর বাঙালিদের এ ভূখণ্ড পাকিস্তানের একটি অংশ হয়ে শাসিত হতে থাকে, কিন্তু সবকিছুতে এ জনপদের মানুষের ওপর ছিল বৈষম্য। পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে একসময় মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গত বুধবার সিন্ধ সিএম হাউসে একটি মতবিনিময় সভা করেন শাহবাজ শরিফ।
সে সভায় মুক্তিযুদ্ধের আগের সময়ের প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ শরিফ বলেন, “আমি তখন অনেক তরুণ ছিলাম...তখন আমাদের বলা হতো ওই অঞ্চল (বাংলাদেশ) আমাদের জন্য বোঝা। আজ আপনারা জানেন, সেই ‘বোঝা’ কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তাদের দিকে তাকালে আমি এখন লজ্জিত হই।”
এদিকে শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গেও ব্যবসাবিষয়ক আলোচনা শুরুর তাগিদ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ। বেশ কিছু বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনীতি ধুঁকছে। মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, দুর্নীতিসহ নানা সঙ্কটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অনুষ্ঠানে শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দেশটির ব্যবসায়ীদের রপ্তানি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া দেশে ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার’ জন্য পিটিআই প্রধান ইমরান খানের প্রতি তার নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ করেন শাহবাজ।
মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। অপরদিকে রাশিয়া ও চীনের উত্থাপিত সংশোধনী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে পরিষদ।
মস্কো স্যাটেলাইট ধ্বংস করতে সক্ষম এমন একটি পারমাণবিক ডিভাইস তৈরির চেষ্টা করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সমর্থিত উদ্বেগের মধ্যে বুধবার এমন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল।
রাশিয়ার অ্যাম্বাসেডর ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া জাতিসংঘের খসড়াটিকে একটি ‘নোংরা প্রদর্শনী’ এবং প্রস্তাবের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তৈরি করা ‘খামখেয়ালি চাল’ বলে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ফেব্রুয়ারিতে নিশ্চিত করে বলেন, রাশিয়া স্যাটেলাইট বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন করছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে জড়িত তিনটি সূত্র পরে সিএনএনকে জানায়, এই অস্ত্র বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক শক্তির তরঙ্গ তৈরি করে স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করতে পারে।
জাতিসংঘে ভোটাভুটির আগে যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, ওই প্রস্তাবে ভেটো দিলে বুঝতে হবে রাশিয়া কিছু গোপন করার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বুধবার ভোটাভুটির পর তার বক্তব্যে এসব দাবির প্রতিধ্বনি করেন।
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘কেন? আপনি যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে কেন এমন একটি প্রস্তাব সমর্থন করবেন না? আপনি কী লুকাতে পারেন? এটা বিস্ময়কর এবং এটি লজ্জাজনক।’
ভোটাভুটির সময় চীনের অনুপস্থিতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বেইজিং দেখিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী বিস্তার রোধ ব্যবস্থাকে রক্ষা করার পরিবর্তে তারা বরং রাশিয়াকে তাদের অংশীদার হিসেবে রক্ষা করবে।’
থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘বুধবারের ভোটে অনুপস্থিতি বিদ্যমান অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতার ওপর অতিপ্রয়োজনীয় আস্থা পুনর্নির্মাণের একটি সত্যিকারের সুযোগ হারানো।’
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের খসড়া প্রস্তাব ৬০টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে আন্তঃআঞ্চলিক সমর্থন পেয়েছে।
জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপনের জন্য পরিকল্পিত পারমাণবিক অস্ত্র বা গণবিধ্বংসী অন্যান্য অস্ত্র তৈরি না করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। দেশের নাগরিকদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি।
দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে নাগরিকদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে অনেক কোম্পানি বিনামূল্যে খাবার থেকে শুরু করে ফ্রিতে ট্যাক্সি পর্যন্ত অফার করেছে।
প্রতিবারই কম ভোটার উপস্থিতির জন্য খবরের শিরোনাম হয় কর্ণাটক রাজ্যের শহর বেঙ্গালুরু। তাই ভোটারদের ভোটের মাঠে আকৃষ্ট করতে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি কোমর বেঁধে নেমেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। ভোট দেয়ার পুরস্কার হিসেবে সেখানে হোটেল, ট্যাক্সি পরিষেবা এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রণোদনা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসব সুবিধার মধ্যে ফ্রি বিয়ার, বিনামূল্যে ট্যাক্সি রাইড এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো সুবিধাকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিবিসি।
এছাড়া আঙুলে ভোটের কালি দেখাতে পারলে অনেক হোটেল ক্রেতাদের বিনামূল্যে খাবার খাওয়াবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন না করার শর্তে স্থানীয় হোটেল মালিক সমিতিকে ফ্রিতে বা বিশেষ ছাড়ে খাবার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে ব্যাঙ্গালুরুর হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি পিসি রাও ডেইলি মিররকে বলেন, ‘ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে হোটেলগুলো বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে কফি, ডোসা দেবে। আবার কেউ কেউ গরমে ভোটারদের জুস খাওয়াবে। কিছু হোটেল তো খাবারের ওপর বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটক রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে দক্ষিণ ব্যাঙ্গালুরুতে। সেবার ওই নির্বাচনি এলাকার মোট ভোটারদের ৫৩.৭ শতাংশ নাগরিক ভোট দিয়েছিলেন।
ব্যাঙ্গালুরুর জনপ্রিয় পার্ক ‘ওয়ান্ডারলা’ ভোটারদের জন্য টিকিটে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে ভোট দিয়ে আসা প্রথম পঞ্চাশ জন ক্রেতাকে বিনামূল্যে বিয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘ডেক অফ ব্রুস’ নামের একটি পানশালা।
স্থানীয় রাইড শেয়ার অ্যাপ ‘ব্লু-স্মার্ট’ ভোটকেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোটারদের রাইডে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। এছাড়া ‘র্যাপিডো’ নামের ট্যাক্সি শেয়ারিং কোম্পানি ভোটারদের বিনামূল্যে রাইড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মিস্টার ফিলি’স নামের একটি ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ প্রথম ১০০ জন ভোটারকে বার্গার ও মিল্কশেকের ওপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘এটি আসলে নাগরিকদের ভোটের গুরুত্ব বোঝানো এবং আমাদের গণতন্ত্র উদযাপনের উপায়।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এই উদ্যোগটি ব্যাঙ্গালুরুর নাগরিকদের মধ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও পরিবর্তন আনতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।’
উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রথম দফা নির্বাচনে সব রাজ্যে গড়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু-কাশ্মীরে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হবে।
এবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে সাত ধাপে, চলবে প্রায় দুই মাস ধরে। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হবে আগামী ১ জুন এবং ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা হবে।
মন্তব্য