× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
An expedition to the bottom of the sea in search of the source of life
google_news print-icon

প্রাণের উৎসের সন্ধানে সমুদ্রের তলদেশে অভিযান

প্রাণের-উৎসের-সন্ধানে-সমুদ্রের-তলদেশে-অভিযান
সমুদ্রের তলদেশে প্রাণের উৎস। ছবি সংগৃহীত
১৯৭৭ সালে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যাক করলিসের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্তে ডুবো নৌকায় চড়ে ১.৫ মাইল গভীর তলদেশে। গবেষক দল দেখতে পায় পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে উষ্ণ ঝরনাধারা। অসংখ্য ছিদ্রপথ দিয়ে খনিজ সমৃদ্ধ ঘন গরম তরল প্রবাহিত হচ্ছে। অবাক কাণ্ড হলো, এইসব গরম তরল জ্বালামুখের আশপাশে কিছু অদ্ভুত জলজ প্রাণীর প্রচুর আনাগোনা। সেখানে বিপুল পরিমাণ ঝিনুক, শামুক, টিউব-ওয়ার্ম, কোরালের ঘনবসতি। এই এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়ায় সয়লাব। সব প্রাণীই গরম তরল জ্বালামুখ থেকে উৎসারিত শক্তি ব্যবহার করে বেঁচে আছে। 

বিবিসি আর্থ-এ প্রকাশিত মাইকেল মার্শালের দ্য সিক্রেট অফ হাউ লাইফ অন আর্থ বিগ্যান অবলম্বনে এই লেখা। এবার থাকছে চতুর্থ পর্ব।

১৯৬০ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির বিষয়ে তিনটি চিন্তাধারায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। একপক্ষ মনে করেছিলেন প্রাণের সূচনা হয়েছিল আরএনএ অণুজীব থেকে।

কিন্তু শুধু মতামত দিয়েই তারা ক্ষান্ত ছিলেন না, তারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন কীভাবে আরএনএ বা তার সমগোত্রীয় অণুজীব স্বতঃস্ফূর্তভাবে পৃথিবীর প্রথম দিকের পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেই আদি প্রাণ কীভাবে নিজেরা নিজেদের প্রতিলিপি সৃষ্টি করেছিল তা প্রমাণে।

শুরুর দিকে তাদের প্রচেষ্টা যথেষ্ট আশা জাগানিয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের শ্রম হতাশায় পর্যবসিত হয়। যাই হোক, প্রাণ সৃষ্টির গবেষণা এগিয়ে চলছিল কিন্তু সেই সময়ে আরেক দল বিজ্ঞানী যারা প্রাণের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গবেষণা করছিলেন তারা বুঝতে পারলেন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উপায়ে।

আরএনএ ওয়ার্ল্ড তত্ত্বনির্ভর করে একটি সাধারণ ধারণার ওপর; আর সেটা এই যে, কোনো জীবন্ত প্রাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তা নিজের পুনরুৎপাদন করতে সক্ষম। বেশির ভাগ জীববিজ্ঞানী এই ধারণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। ক্ষুদ্র কোষের ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে সুবিশাল নীল তিমি পর্যন্ত সব জীবিত প্রাণীই বংশ বৃদ্ধি করতে তৎপর।

তবে অনেক ‘প্রাণের উৎস সন্ধানী’ গবেষক বংশ বিস্তারই প্রাণীর প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে করতেন না। তাদের যুক্তি ছিল বংশ বিস্তারের আগে সেই সকল প্রাণকে প্রথমে টিকে থাকার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই জীবিত থাকতে হবে।

আমরা আমাদের বাঁচিয়ে রাখি খাবার খেয়ে। একইভাবে সবুজ উদ্ভিদ বেঁচে থাকে সূর্যালোক থেকে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তি আহরণ করে। আপনার এ রকম চিন্তা করার সুযোগ নেই যে একজন মানুষ নিজের শক্তির জোগানের জন্য পত্রপল্লবিত একটা ওক গাছের শাখায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে, যেমনভাবে নেকড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুস্বাদু রসালো মাংসের হাড়ের ওপর। কিন্তু আপনি যদি গভীরভাবে চিন্তা করেন তো দেখবেন মানুষ আর নেকড়ে উভয়ই বেঁচে থাকার শক্তি আহরণ করছে একই পদ্ধতিতে।

খাবার খেয়ে তা থেকে শক্তি উৎপাদনের এই প্রক্রিয়াকেই বলে বিপাক প্রক্রিয়া। প্রথমে আপনাকে শক্তি আহরণ করতে হবে। এরপর সেই শক্তি থেকেই তৈরি হবে নতুন দেহকোষ। শক্তি আহরণের এই প্রক্রিয়াকেই অনেক বিজ্ঞানী প্রাণ গঠনের জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এবং প্রথম প্রাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল এই প্রক্রিয়া দিয়েই, এমন সিদ্ধান্তও দেন তারা।

শুধু খাদ্য গ্রহণ আর বিপাকনির্ভর আদি অণুজীব দেখতে কেমন ছিল? ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে জার্মান বিজ্ঞানী গুন্টার ভাস্টারশাওজার এ ব্যাপারে সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারকারী প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন। জার্মান রসায়নবিদ গুন্টার ভাস্টারশাওজার ধারণা করেন, প্রথম অণুজীব ছিল বিস্ময়করভাবে নতুন কোনো অণুজীব, যেটা আমাদের জানাশোনার বাইরে। তিনি বলেন, প্রথম অণুজীব কোনো কোষ দিয়ে গঠিত ছিল না। তাদের এনজাইম, ডিএনএ বা আরএনএ বলে কিছু ছিল না।

গুন্টার ভাস্টারশাওজারের ধারণা, আদি পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল গরম লাভামিশ্রিত পানির স্রোত। লাভামিশ্রিত সেই পানিতে ছিল অ্যামোনিয়া গ্যাস, খনিজ উপাদান। যখন লাভামিশ্রিত খনিজ পানি পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলো, তখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে শুরু করল। বিশেষত, লাভামিশ্রিত পানির মধ্যে দ্রবীভূত খনিজ ও ধাতব উপাদান প্রথম দিকের জৈবকণা গঠনে সাহায্য করেছিল যারা বিভাজন প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর জৈবকণায় পরিণত হয়।

বিপাক ক্রিয়ার চক্রের সৃষ্টি হওয়া ছিল প্রাণ বিকাশের প্রথম বড় ঘটনা। এই প্রক্রিয়ায় একটি রাসায়নিক উপাদান কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে পরিণত হয়। মূল রাসায়নিক উপাদানটিও পুনরায় সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। এই প্রক্রিয়া চলাকালে শক্তি উৎপন্ন হয়ে পুরো সিস্টেমে সঞ্চারিত হয়। আর সেই শক্তি থেকেই আরএনএ, ডিএনএ এবং অন্যান্য উপাদানসহ একটি প্রাণকোষ সৃষ্টি হয়।

বিপাক প্রক্রিয়া ঠিক প্রাণ না হলেও গুন্টার ভাস্টারশাওজার একে প্রাণ সৃষ্টির পূর্ব শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করলেন এবং লিখলেন ‘বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রায় জীবন্ত কর্মকাণ্ড বলা যায়।‘

শক্তি উৎপাদনের এই বিপাক প্রক্রিয়া প্রতিটি প্রাণীদেহেরই মৌলিক কাজ। আপনার দেহের কোষগুলো একেকটা রাসায়নিক প্রসেসিং প্লান্টের মতো, যেখানে প্রতিনিয়তই একটি রাসায়নিক থেকে আরেকটি নতুন রাসায়নিক তৈরি হচ্ছে। শুধু এই বিপাক প্রক্রিয়াকেই হয়তো প্রাণ বলা যায় না, কিন্তু তা প্রাণের ভেতরকার মৌলিক কর্মকাণ্ড। বিপাক প্রক্রিয়াকে ভাস্টারশাওজার প্রাণ সৃষ্টির পূর্ব শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করলেন এবং বললেন ‘বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রায় জীবন্ত কর্মকাণ্ড বলা যায়।‘

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ভাস্টারশাওজার তার নিজের তত্ত্বের ওপর বিস্তারিত কাজ করেছেন। তিনি রীতিমতো খাতা-কলমে দেখিয়ে দিলেন ভূমির উপরিভাগের জন্য কোনো খনিজ উপাদান ভালো কাজ করে এবং সেখানে কোনো রাসায়নিক চক্র বিক্রিয়া করে। তার উদ্ভাবিত তত্ত্ব সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলো। কিন্তু তার গবেষণা এখন পর্যন্ত তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভাস্টারশাওজারের দরকার ছিল তার তত্ত্বের বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা আবিষ্কার যা তার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তবে আশার কথা হলো, প্রায় এক দশক আগেই তার তত্ত্বের সপক্ষে কিছু আবিষ্কার ঘটে গেছে।

১৯৭৭ সালে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যাক করলিসের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্তে ডুবো নৌকায় চড়ে ১.৫ মাইল গভীর তলদেশে যান। তারা গালাপোগাসের উষ্ণ উর্বর অঞ্চলে জরিপ পরিচালনা করেন, যেখানে মহাসাগরের তলদেশের বুক চিড়ে বেরিয়ে এসেছে দীর্ঘ পাথুরে পাহাড়ের খাঁড়ি। খাঁড়িগুলো ছিল জীবন্ত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। প্রতিটি জ্বালামুখই ছিল এক প্রকারের প্রাচীন গরম ঘন তরল উদগিরণের আধার।

জ্যাক করলিস এবং তার গবেষক দল দেখতে পেল পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে উষ্ণ ঝরনাধারা। অসংখ্য ছিদ্রপথ দিয়ে খনিজসমৃদ্ধ ঘন গরম তরল প্রবাহিত হচ্ছে। অবাক কাণ্ড হলো, এইসব গরম তরল জ্বালামুখের আশপাশে কিছু অদ্ভুত জলজ প্রাণীর প্রচুর আনাগোনা। সেখানে বিপুল পরিমাণ ঝিনুক, শামুক, টিউব-ওয়ার্ম, কোরালের ঘনবসতি। এই এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়ায় সয়লাব। সব প্রাণীই গরম তরল জ্বালামুখ থেকে উৎসারিত শক্তি ব্যবহার করে বেঁচে আছে।

এই গরম তরল জ্বালামুখ আবিষ্কারকে করলিসের নামে নামকরণ করা হয়। গরম তরল জ্বালামুখের আবিষ্কার তাকে নতুন চিন্তার দিকে টেনে নিয়ে গেল। ১৯৮১ সালে তিনি তত্ত্ব দিলেন ৪০০ কোটি বছর আগের পৃথিবীতেও একই ধরনের গরম তরল জ্বালামুখের অস্তিত্ব ছিল এবং ঠিক সেখানেই প্রাণের সূচনা ঘটেছিল।

করলিস দাবি করেন, গরম তরলের জ্বালামুখ অনেক রাসায়নিকের জটিল যৌগ সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিটি জ্বালামুখ আদি পৃথিবীর সে গরম স্যুপের মতো থকথকে বস্তু বের করে দিচ্ছিল। ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা লাভা মিশ্রিত গরম তরল পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড তাপ এবং চাপে সরল জৈবকণা ভেঙে জটিল-যৌগ থেকে ক্রমাগত জটিলতর অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটায়েড এবং সুগার তৈরি হয়। এরপর সেই তরল সমুদ্রসীমার কাছাকাছি এসে আরও ঠান্ডা হলে শর্করা, প্রোটিন এবং ডিএনএ তৈরি হয়।

সমুদ্রের পানিতে গিয়ে সেটি আরও ঠান্ডা হয়ে পূর্ণ প্রাণকোষ সৃষ্টি হয় এবং সরল এককোষী প্রাণী সৃষ্টি হয়। করলিসের এই প্রস্তাবনা অনেক নিখুঁত এবং সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।

কিন্তু স্ট্যানলি মিলার এতে আপত্তি তুললেন। ১৯৮৮ সালে তিনি লিখলেন, জ্বালামুখ যে পরিমাণ গরম থাকে তাতে সেখানে অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হলেও তা আবার ধ্বংসও হয়ে যাওয়ার কথা। প্রচণ্ড তাপে অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রধান উপাদান চিনিজাতীয় শর্করা বড়জোর কয়েক সেকেন্ড টিকে থাকতে পারবে। তদুপরি এইসব সরল জৈবকণা নিজেদের মাঝে বন্ধন তৈরি করতে পারে না। কারণ, গরম তরল জ্বালামুখের চারপাশের পানি এত গরম যে জৈব-কণার বন্ধন মুহূর্তে ভেঙে দেয়।

ঠিক সেই সময়ে প্রাণের উৎসের সন্ধানে গবেষণার যুদ্ধে যোগ দিলেন ফ্রান্সের গ্রেনোবল ইউনিভার্সিটির গবেষক মাইকেল রাসেল। তার কাছে মনে হলো, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পরিবেশই ভাস্টারশাওজারের জৈবকণা উৎপন্ন হওয়ার সূতিকাগার। এই অনুপ্রেরণা থেকেই রাসেল প্রাণের উৎপত্তির রহস্য সমাধানে গবেষণার সর্বজন স্বীকৃত একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে ফেললেন। রাসেল তত্ত্ব দিলেন প্রাণের বিকাশ ঘটেছে সমুদ্রের তলদেশে।

মাইকেল রাসেল তার জীবনের শুরুর দিকে ব্যথানাশক এসপিরিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান নিয়ে গবেষণায় সময় কাটিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ১৯৬০ সালে ঘটে গেল এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই সময়ে রাসেল একটা আগ্নেয়গিরির সম্ভাব্য অগ্ন্যুৎপাত মোকাবিলাকারী দলের সমন্বয় করছিলেন, যদিও অগ্ন্যুৎপাত মোকাবিলা করার জন্য তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না।

কিন্তু তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ কীভাবে বদলে যায় সে বিষয়টি। ভূতত্ত্বের এই পরিবর্তনের আঙ্গিকেই তিনি পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হলো তার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিলেন।

১৯৮০ সালে তিনি অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পাশ থেকে জীবাশ্ম পেয়ে গেলেন, যেখানকার তাপমাত্রা ছিল ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। রাসেল যুক্তি দেখালেন, অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার কারণেই আরও বেশি সময় ধরে জৈব-কণার টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও মুলার ধারণা করেছিলেন সেখানে জৈব-কণার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকবে কম সময় ধরে।

এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার জ্বালামুখের কাছে প্রাপ্ত ফসিলে কিছু অদ্ভুত জিনিসের সন্ধানও পাওয়া গেল। ফসিলে লোহার আকরিক পাইরাইট এবং সালফার দিয়ে গঠিত এক মিলিমিটার দীর্ঘ গোলাকার খনিজের উপস্থিতি ছিল। রাসেল তার ল্যাবরেটরিতে ফসিল পরীক্ষা করে দেখতে পেলেন পাইরাইট নিজেই গোলাকার ঘন খনিজ তরলের বুদবুদ তৈরি করতে পারে। তিনি পরামর্শ দিলেন প্রথম জটিল জৈব-কণা গঠিত হয়েছিল এইসব সাধারণ পাইরাইট আকরিকের মধ্যে।

একই সময়ে ভাস্টারশাওজার প্রাণের উৎপত্তির গবেষণায় তার ধারণা প্রকাশ করতে লাগলেন। তার মতবাদ ছিল, খনিজের ওপর প্রবাহিত রাসায়নিক পদার্থসমৃদ্ধ গরম স্রোতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এমনকি তিনি প্রস্তাব করেন যে প্রাণের সূচনায় পাইরাইটের ভূমিকা ছিল।

রাসেল এখানে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছেন। তিনি বলেন, সমুদ্রের গভীরে গরম তরল জ্বালামুখের চারপাশের সহনীয় গরম পানিতে নরম জেলিসদৃশ বস্তু পাইরাইটের কাঠামো গঠনের জন্য উপযুক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভাস্টারশাওজারের প্রস্তাবিত জৈবকণা সৃষ্টির জন্য পাইরাইট বুদবুদ পূর্বশর্ত। যদি রাসেলের গবেষণা সঠিক হয় তাহলে প্রাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল সমুদ্রের গভীর তলদেশে এবং সেখানেই প্রথম জৈব-কণার পরিপাকতন্ত্র বা বিপাক প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

মিলারের সেই ঐতিহাসিক (উরে-মিলার) পরীক্ষার ৪০ বছর পরে ১৯৯৩ সালে রাসেল তার গবেষণা প্রকাশ করেন। যদিও গণমাধ্যমে রাসেলের গবেষণার ফলাফল নিয়ে উরে-মিলার পরীক্ষার মতো তেমন মাতামাতি হলো না, কিন্তু তার গবেষণা প্রাণের উৎস সন্ধানের আলোচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রইল। ভাস্টারশাওজারের বিপাক ক্রিয়ার চক্র এবং করলিসের গরম তরলের জ্বালামুখের মতো দুটো দৃশ্যত ভিন্ন ধারণাকে রাসেল একসঙ্গে সমন্বয় সাধন করেন, যার ফলে বিষয়টা আরও বোধগম্য হলো।

রাসেল গবেষণাকে আরও হৃদয়গ্রাহী করতে তার পরীক্ষণের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, কীভাবে প্রথম জৈবকণা শক্তি সঞ্চার করেছিল। অন্যভাবে বলা যায়, তিনি দেখান কীভাবে জৈবকণার পরিপাকক্রিয়া কাজ করে। তার এই ধারণা আধুনিক বিজ্ঞানের ভুলে যাওয়া মেধাবীদের একজনের কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

১৯৬০ সালের দিকে জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী পিটার ডেনিস মিচেল অসুস্থ হয়ে পড়লে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তার পরিবর্তে কর্নওয়ালের এক নীরব অঞ্চলের ম্যানর হাউসে ব্যক্তিগত গবেষণাগার স্থাপন করেন। তখন বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের সংস্পর্শের বাইরে থাকতেন তিনি। তার গবেষণার খরচের বিরাট অংশ আসে একপাল গরুর দুধ বিক্রির টাকা থেকে। অনেক জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী, যেমন, লেসলি ওরগেল, যার আরএনএ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে আগে আলোচনা করা হয়েছে, তিনি মিশেলের গবেষণার কাজকর্মকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন।

কিন্তু এখন আমরা জানি, পিটার মিশেল যে প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকুল সেটাই ব্যবহার করে। দুই দশকেরও কম সময়ের মধ্যে মিচেল চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করলেন। ১৯৭৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কারেও ভূষিত হন তিনি। মিশেলের নাম হয়তো দৈনন্দিন গৃহস্থালি জীবনে কখনও দেখা পাওয়া যায় না, কিন্তু তার নাম লেখা আছে জীববিজ্ঞানের প্রতিটি পাঠ্যবইতে।

পিটার মিশেল তার পেশাগত জীবন কাটালেন কোনো প্রাণ খাদ্য থেকে যে শক্তি সঞ্চয় করে তা দিয়ে সে আসলে কী করে, সে বিষয়ের অনুসন্ধানে। তার একটাই জিজ্ঞাসা ছিল, কীভাবে আমরা প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকি?

তিনি জানতেন প্রতিটি দেহকোষ তাদের শক্তি সঞ্চিত রাখে একটি মলিকিউলের মধ্যে; যাকে আমরা এডেনোসাইন ট্রাইফসফেট (এটিপি) বলি। ফসফেটের তিনটি রাসায়নিক অণুর মেলবন্ধনে একত্রিত হয়ে আছে এডেনোসাইন। এদের মধ্যে ফসফেটের তৃতীয় অণুটি বেশি শক্তি গ্রহণ করে এটিপির সঙ্গে মিলিত হয়।

যখন কোনো একটা কোষের শক্তি প্রয়োজন হয়- ধরে নিই, যদি মাংসপেশির কোনো কাজ করার প্রয়োজন হয় তখন এটিপি থেকে ফসফেটের তৃতীয় অণু ভেঙে যায়, ফলে বাকি দুটি অণু মিলে এডেনোসাইন ডাইফসফেট (এডিপি) তৈরি হয় এবং শক্তি উৎপাদিত হয়।

মিশেল জানতে চাইলেন প্রাণীদেহের কোষ কীভাবে প্রথমে এটিপি তৈরি করেছিল। কীভাবেইবা কোষের শক্তি এডিপিতে সঞ্চিত হলো, যার ফলে ফসফেটের তৃতীয় অণুটি কোষে যুক্ত হয়?

মিশেল জানতেন, যে এনজাইম এটিপি গঠন করেছে সেটা কোষের পাতলা আবরণের ওপরে অবস্থান করে। তাই তিনি প্রস্তাব করেন, কোষ এনজাইমের পাতলা আবরণের ওপর থেকেই চার্জযুক্ত অণু প্রোটন কণা থেকে শক্তি সঞ্চার করে। সুতরাং আবরণের একপাশে থাকে প্রচুর প্রোটন-কণা এবং অপর প্রান্তে হয়তো কিছুই থাকে না।

কোষের উভয় দিকে প্রোটন-কণার সমতা আনার জন্য প্রোটন-কণার প্রবাহ তখন আবরণের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রোটন-কণাগুলোকে এনজাইম ভেদ করে যেতে হয়। এনজাইমকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় প্রোটন-কণার প্রবাহ এনজাইমকে এটিপি গঠনের প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে যায়।

মিশেল কোষের শক্তি সঞ্চয়ের ধারণাকে প্রকাশ করেন ১৯৬১ সালে। পর্যাপ্ত প্রমাণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এরপরের ১৫ বছর তিনি ব্যয় করেন কোষ কীভাবে কাজ করে, তার ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে। এখন আমরা সকলেই জানি প্রতিটি জীব কোষ কীভাবে বেঁচে আছে যেটা মিশেল সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। ঠিক এই মুহূর্তে আপনার শরীরের প্রতিটি কোষে একই প্রক্রিয়া চলছে। ঠিক যেমন আমরা সবাই জানি ডিএনএ প্রাণের মূল উপাদান।

যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা মাইকেল রাসেল উত্থাপন করেন, সেটা হলো- পিটার মিশেলের প্রোটন গ্র্যাডিয়েন্ট। কোষের গায়ে ঝিল্লির মতো পাতলা আবরণের এক প্রান্তে প্রচুর প্রোটন থাকে আর অপর প্রান্তে প্রোটন সংখ্যায় প্রায় নগণ্য। শক্তি সঞ্চয় করে রাখার জন্য প্রতিটি কোষেরই প্রোটন গ্র্যাডিয়েন্ট দরকার হয়।

এখনকার আধুনিক কোষগুলো পাতলা ঝিল্লির মতো আবরণের ভেতর দিয়ে প্রোটন প্রবাহিত করে তা থেকে গ্র্যাডিয়েন্ট গঠন করে। কিন্তু এর জন্য জটিল প্রাণ-রাসায়নিক প্রক্রিয়া দরকার, যা হুট করেই প্রাণের মধ্যে উঁকি দেয়নি। এই পর্যায়ে মাইকেল রাসেল প্রাণ বিকাশের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তির ধাপ অতিক্রম করলেন। তিনি বললেন, প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক কোনো স্থানের প্রোটনের গ্র্যাডিয়েন্ট থেকে।

প্রাকৃতিক সেই স্থানটা হতে পারে গরম তরল প্রবাহের জ্বালামুখের এলাকা। কিন্তু সেই জ্বালামুখ ছিল বিশেষ এক ধরনের, যখন পৃথিবী সবে সদ্যোজাত শিশু এবং তার সমুদ্রগুলোর পানি ছিল তীব্র ক্ষারযুক্ত। আমরা জানি, ক্ষারযুক্ত পানিতে প্রচুর প্রোটন কণা ভাসতে থাকে। প্রোটন গ্র্যাডিয়েন্ট সৃষ্টির জন্য জ্বালামুখ থেকে প্রবাহিত পানিতে অবশ্যই পরিমাণে অল্প প্রোটনের উপস্থিতি থাকতে হবে; এবং সে পানিকে হতে হবে স্বল্প ক্ষারযুক্ত।

কিন্তু এ জন্য জ্যাক করলিসের আবিষ্কৃত গরম তরল প্রবাহের জ্বালামুখ আশানুরূপ কার্যকর ছিল না। তার আবিষ্কৃত জ্বালামুখের এলাকা ছিল খুব উত্তপ্ত আর অত্যধিক ক্ষারযুক্ত। কিন্তু ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ওশেনোগ্রাফির অধ্যাপক দেবরাহ কেলি ২০০০ সালে প্রথম স্বল্প ক্ষারযুক্ত জ্বালামুখের সন্ধান পান।

কেলিকে বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য প্রথম দিকে প্রচণ্ড সংগ্রাম করতে হয়েছে। হাইস্কুলে লেখাপড়া চলাকালে তার বাবা মারা যান, ফলে কলেজের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য তাকে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হতো। কিন্তু তার পরিশ্রম সফল হয়েছিল এবং তিনি সমুদ্রের তলদেশের আগ্নেয়গিরি আর উত্তপ্ত তরল প্রবাহের জ্বালামুখের গবেষণায় আকৃষ্ট হন। এই দুটো আগ্রহের প্রতি ভালোবাসা তাকে নিয়ে গেল আটলান্টিক মহাসাগরের অতল গভীরে, যেখানে ভূ-পৃষ্ঠ বিচ্ছিন্ন হয়ে সরে যাচ্ছে পরস্পর থেকে দূরে এবং সমুদ্রের তল থেকে জেগে উঠছে পর্বতের খাঁড়ি।

পাহাড়ের খাঁজগুলোতে দেবরাহ কেলি পেয়ে গেলেন উত্তপ্ত পানি প্রবাহের জ্বালামুখের ক্ষেত্র, যাকে তিনি ‘লুপ্ত নগরী’ হিসেবে অভিহিত করলেন। এই জ্বালামুখগুলো করলিসের আবিষ্কৃত জ্বালামুখের মতো নয়। এখানের জ্বালামুখ দিয়ে প্রবাহিত পানির উষ্ণতা মাত্র ৪০ থেকে ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এবং পানিতে ক্ষারের উপস্থিতিও খুব সহনীয় মাত্রায়। সেখানের পানিতে কার্বনমিশ্রিত খনিজ স্তূপ ক্রমশ খাড়া হয়ে ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়, যেগুলো দেখতে অনেকটা চিমনির সাদা ধোঁয়ার মতো। সমুদ্রের তলদেশের পর্বতের খাঁড়ি থেকে উত্থিত সাদা ধোঁয়াকে মনে হচ্ছিল যেন গোলাকার জীবন্ত কোনো পাইপসদৃশ বস্তু। সেই পাইপের চেহারা অদ্ভুত এবং যেন মনে হয় ভূতের মতো। যদিও এটা ছিল বিভ্রান্তিকর। কারণ, এখানেই, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের এই ঘন তরলেই জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য ক্ষুদ্র অণুজীব।

স্বল্প ক্ষারসমৃদ্ধ আগ্নেয়গিরির এইসব জ্বালামুখই ছিল মাইকেল রাসেলের তত্ত্ব প্রমাণের জন্য উপযুক্ত স্থান। তিনি বুঝতে পারলেন লুপ্ত নগরীর আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখগুলোর উত্তপ্ত তরল প্রবাহের এলাকাতেই প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল।

কিন্তু তার একটি সমস্যা ছিল। যেহেতু রাসেল ছিলেন মূলত ভূতাত্ত্বিক, সেই কারণেই তার তত্ত্বকে বোধগম্য এবং প্রমাণ করার জন্য কোষ কীভাবে কাজ করে সেটা হাতে-কলমে দেখানোর মতো জীববিজ্ঞানের পর্যাপ্ত জ্ঞান তার ছিল না। সুতরাং রাসেল তার গবেষণা দলে ডাকলেন আমেরিকান জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম মার্টিনকে।

উইলিয়াম মার্টিন একজন অতি উৎসাহী গবেষক, যিনি তার পেশাজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন জার্মানিতে উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং অণুজীববিজ্ঞানের পঠন পাঠনে। বর্তমানে তিনি জার্মানির ডুসেলডর্ফে হাইনরিখ হাইনে ইউনিভার্সিটির মলিকিউলার ইভোল্যুশন ইনস্টিটিউটের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০০৩ সালে রাসেল এবং মার্টিন মিলিতভাবে রাসেলের পূর্বের তত্ত্বকে আরও উন্নতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করলেন। এখন পর্যন্ত প্রাণের উৎস সন্ধানে যত গবেষণা হয়েছে এবার যেন সেই গবেষণার কঙ্কালে রক্তমাংসের ছোঁয়া লাগল। তাদের তত্ত্ব বিজ্ঞানী সমাজে প্রাণের উৎস গবেষণায় এযাবৎকালের অন্যতম গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হিসেবে মর্যাদা পেয়ে গেল।

দেবরাহ কেলিকে ধন্যবাদ, রাসেল এবং মার্টিনের গবেষক দল এখন দেবরাহ কেলির কল্যাণে জানতে পেরেছেন স্বল্প ক্ষারসমৃদ্ধ পাথরের জ্বালামুখে ছিল অসংখ্য ছিদ্রবিশিষ্ট চুনাপাথরের স্তর, যেখান দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারত। পাথরের গায়ে ছোট ছোট ছিদ্রে পানি পূর্ণ ছিল। পানি-পূর্ণ এইসব ছোট ছোট ছিদ্র প্রাথমিক কোষের কাজ করত বলে ধারণা করেন তারা। প্রতিটি ছিদ্র প্রয়োজনীয় রাসায়নিক এবং পাইরাইট খনিজ উপাদানে পূর্ণ ছিল। এর সঙ্গে ছিল জ্বালামুখ থেকে আসা প্রোটন গ্র্যাডিয়েন্ট। এ রকম পরিবেশই হলো প্রাণকোষের শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিপাক ক্রিয়া শুরু হওয়ার উপযুক্ত স্থান।

রাসেল এবং মার্টিন বললেন, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পানি থেকে রাসায়নিক শক্তি সংগ্রহ করে প্রাণ যখন সবে যাত্রা শুরু করে, তখনই আরএনএ অণুজীবের সৃষ্টি প্রক্রিয়াও শুরু হয়। এমনকি তখনই ঝিল্লির মতো পাতলা আবরণ সৃষ্টি করে একটা সত্যিকারের জীবকোষ বা প্রাণ হয়ে ওঠে। কোষের জন্ম সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ পাথরের ছিদ্র ছেড়ে পানিতে যাত্রা শুরু করে।

এই তত্ত্ব এখন প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কিত নেতৃস্থানীয় তত্ত্বগুলোর একটি হিসেবে গণ্য হয়।

রাসেলের গবেষণার কিছু আলোচ্য বিষয় ঘষেমেজে মার্টিন ২০১৬ সালে নতুন করে ‘প্রথম সর্বজনীন পূর্বপুরুষ’ শিরোনামের আর্টিকেলটি প্রকাশ করেন। চারিদিকে হইচই পড়ে যায় এবং বিশাল সমর্থনও অর্জন করেন মার্টিন। প্রকৃতির গর্ভ থেকে শত শত কোটি বছর আগে জন্ম নেয়া সেই অণুজীব থেকেই পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্ম হয়েছে।

কিন্তু প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য সম্ভবত আমরা কোনোদিনই ‘প্রথম সর্বজনীন পূর্বপুরুষ’ অণুজীবের ফসিল উপস্থাপন করতে পারব না। তবে আমরা আমাদের ইতিপূর্বের পঠন-পাঠন দিয়ে বর্তমানে জীবিত অণুজীব দেখে অনুমান করতে পারব কেমন ছিল দেখতে সেই প্রাচীন অণুজীব আর কেমন ছিল তাদের আচরণ। মার্টিন তাই করলেন।

উইলিয়াম মার্টিন ১ হাজার ৯৩০টি আধুনিক অণুজীবের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখেন এবং এমন ৩৫৫টি জিন শনাক্ত করেন যেগুলো তাদের সবার মধ্যেই আছে। মার্টিন বলেন, এই ৩৫৫টি জিন বংশপরম্পরায় একই বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে এবং ১ হাজার ৯৩০টি অণুজীবের পূর্বপুরুষ ‘প্রথম সর্বজনীন পূর্বপুরুষ’ অণুজীব থেকেই এসেছে।

এই ৩৫৫টি জিন আরও কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রোটন গ্র্যাডিয়েন্ট আহরণ করার জন্য। তদুপরি, ‘প্রথম সর্বজনীন পূর্বপুরুষ’ অণুজীব মিথেনের মতো রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়। এর থেকে প্রমাণিত হয়, অণুজীব জন্ম নিয়েছিল জীবন্ত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পরিবেশে।

আরএনএ তত্ত্ব সমর্থকগোষ্ঠী বললেন, সমুদ্রতলে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে এই তত্ত্বের দুটো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটার হয়তো সম্ভাব্য সমাধান বের করা সম্ভব, কিন্তু অন্যটি খুবই গুরুতর।

রাসেল এবং মার্টিনের প্রস্তাবিত তত্ত্বের প্রথম সমস্যা হলো, তাদের তত্ত্ব শুধু ব্যাখ্যা, সেখানে গবেষণাগারে কোনো পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ নেই। তাদের আছে শুধু ধাপে ধাপে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাব্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। কিন্তু কোনো বিশ্লেষণই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত নয়।

প্রাণের উৎস সন্ধানী বিজ্ঞানী আরমেন মালকিদজানিয়ান বললেন, যেসব বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন কোষ নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে তারা প্রতিনিয়ত ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল তথ্য আকারে প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যারা প্রাণের উৎস গবেষণায় বিপাক ক্রিয়া প্রথম শুরু হয়েছিল মনে করেন, তারা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছিলেন না।

রাসেল এবং মার্টিনের গবেষণার এই পর্যায়ে এগিয়ে এলেন মার্টিনের সহকর্মী ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর নিক লেন। তিনি গবেষণাগারে ‘অরিজিন অফ লাইফ রিয়েক্টর’ বানালেন, যা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের স্বল্প ক্ষারযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তিনি অণুজীবের বিপাক ক্রিয়ার চক্র পর্যবেক্ষণ করার আশাও করেন এবং সম্ভবত আরএনএ অণুজীবও।

দ্বিতীয় সমস্যা হলো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের অবস্থান গভীর সমুদ্রের তলদেশে। ১৯৮৮ সালে মিলার যেমন দেখিয়েছিলেন, অণুজীবের দীর্ঘ শৃঙ্খল আরএনএ এবং প্রোটিন পানিতে এনজাইমের সাহায্য ছাড়া গঠিত হতে পারে না। প্রাণের উৎস গবেষণার অনেক বিজ্ঞানীদের কাছেই এই যুক্তি অনেক গ্রহণযোগ্য মনে হলো এবং সেখানে রাসেল এবং মার্টিনের তত্ত্ব প্রায় ধরাশায়ী।

আরমেন মালকিদজানিয়ান বললেন, ‘যদি আপনি রসায়ন বিষয়টা একটু পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি গভীর সমুদ্রের তলদেশের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের গরম ঘন তরল প্রবাহ থেকে প্রাণের উৎপত্তি এই তত্ত্ব মেনে নিতে পারবেন না। কারণ, আপনি জানেন এইসব অণুজীবের রসায়ন পানিতে টিকতে পারে না।‘

এত সমালোচনা সত্ত্বেও রাসেল এবং মার্টিনের গবেষক দল তাদের তত্ত্বে অটল থাকলেন। কিন্তু গত এক দশকে ক্রমাগত কয়েকটি অনন্য গবেষণার ফলাফল তৃতীয় আরেকটি তত্ত্ব সামনে নিয়ে এলো। তৃতীয় তত্ত্বটি বলছে, আরএনএ ওয়ার্ল্ড বা সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের গরম তরলে সৃষ্ট শক্তি উৎপাদনের বিপাক ক্রিয়া থেকে প্রাণের যাত্রা শুরু হয়নি; প্রাণের যাত্রা শুরু হয়েছে শূন্য থেকে সৃষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কোষ থেকে।

লেখক: সাংবাদিক

[email protected]

পরের পর্বে থাকছে, পূর্ণাঙ্গ প্রাণকোষ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম বিষয়ে

আরও পড়ুন:
নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টিতে সক্ষম প্রথম অণুজীবের সন্ধানে
ডিএনএ আবিষ্কারে যেভাবে পাল্টাল বিজ্ঞানীদের চিন্তার জগৎ

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Inaugurated the sky defense radar in Bogra
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর র‌্যাডার ইউনিট

বগুড়ায় আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার উদ্বোধন

বগুড়ায় আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার উদ্বোধন

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর র‌্যাডার ইউনিট বগুড়ায় বুধবার (১৮-৬-২০২৫) নব স্থাপিত জিএম ৪০৩এম আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মানিত বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার এর উদ্বোধন করেন।

বিমান বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নতুন নতুন স্থাপনা ও যুদ্ধোপকরণ সংযোজন চলমান রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডারটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলো। ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’ এই অঙ্গীকারে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। নতুন অন্তর্ভুক্ত র‌্যাডারটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, অত্যাধুনিক এ র‌্যাডারটি বিমান বাহিনীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
What did the Eid come to the Apor Hut to enhance the joy of Eid?

ঈদের আনন্দ বাড়াতে এলো অপোর ‘হাটে কী?’

ঈদের আনন্দ বাড়াতে এলো অপোর ‘হাটে কী?’

এ বছর ঈদুল আজহায় তরুণ নির্মাতা, পরিবার ও ভ্লগারদের জন্য দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপো। ঐতিহ্যবাহী গরুর হাটের প্রাণবন্ত ও উষ্ণ পরিবেশকে আরও বেশি উৎসবমুখর করে তুলতে নিয়ে আসা হয়েছে ‘অপো হাটে কী?’ ক্যাম্পেইন।

৩০ মে থেকে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে কাছাকাছি যেকোনো গরুর হাটে গিয়ে বিশেষ মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েছে অপো। হোক সেটা নিখুঁত গরু খোঁজা, দরকষাকষি, হাস্যরসাত্মক কোনো ঘটনা বা পছন্দের গরু বা ছাগলের সাথে মজার কোনো মুহূর্ত! যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রয়োজনে অংশ নিতে আপনার নিকটস্থ ‘হাটে’ যান। ঈদুল আজহা উপলক্ষে নিয়ে আসা স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করতে, টিকটকের ফিল্টার অপশন থেকে ‘অপো হাটে কী’ সার্চ করে অপোর এক্সক্লুসিভ ঈদ এআর ফিল্টার ব্যবহার করুন। হাটে আপনার অভিজ্ঞতা ছবি, রিল বা স্টোরি আকারে ধারণ করুন। আপনার পছন্দের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #HaateKi ব্যবহার করুন এবং @OPPOBangladesh ট্যাগ করে পোস্ট দিন।
আপনার ঈদের আনন্দ উদযাপনকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে সবচেয়ে সৃজনশীল, আবেগঘন ও বিনোদনপূর্ণ এন্ট্রিটি জিতে নিবে অপোর আকর্ষণীয় স্মার্টফোন।

এটি কেবল কনটেন্ট তৈরির ব্যাপার নয়; একইসাথে, ঐতিহ্যকে আধুনিকতার সাথে যুক্ত করার একটি প্রচেষ্টা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসা অপোর এই ক্যাম্পেইনে সবাই তাদের সংস্কৃতি, গল্প ও উৎসবকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাবে।

এ বিষয়ে অপো বাংলাদেশ অথোরাইজড এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড্যামন ইয়াং বলেন, “ঈদুল আজহার প্রকৃত অনুভূতি তুলে ধরতেই ‘অপো হাট ডায়েরিজ’ নিয়ে আসা হয়েছে, যেন আনন্দ, ঐতিহ্য ও স্মরণীয় মুহূর্তগুলো মানুষ তাদের প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারে। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা তরুণদের সৃজনশীল অভিজ্ঞতাকে বিকশিত করতে চাই, যেখানে সংস্কৃতি আর প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটবে। স্মৃতিময় মুহূর্ত ও একসাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ নিয়ে এসেছে এ উৎসব।”

তাই, এবারের ঈদুল আজহায় আনন্দ উদযাপনকে আরও বেশি রঙিন করে তুলুন অপো’র সাথে। ক্যামেরা হাতে সৃজনশীলতাকে বিকশিত করুন, আর ঐতিহ্যকে রাখুন প্রাণবন্ত; কারণ, অপো’র সাথে প্রতিটি মুহূর্তই যেন হয়ে ওঠে অনন্য সৃষ্টি!

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Servicing Smart IT Solution to reduce costs up to 5 percent

৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে সার্ভিসিং২৪-এর স্মার্ট আইটি সল্যুশন

৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে সার্ভিসিং২৪-এর স্মার্ট আইটি সল্যুশন

ডিজিটাল যুগে পণ্য কিংবা সেবা খাতে দেশের অন্যতম বৃহৎ থার্ড পার্টি মেইনটেন্যান্স প্রতিষ্ঠান ‘সার্ভিসিং২৪’ নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক ও সমন্বিত আইটি অবকাঠামো সমাধান—‘ইনফ্রাস্ট্যাক’ ও ‘এইচসিআই’। আরে এতে খরচ কমবে প্ইরায় ৭০ শতাংশ। ইনফ্রাস্ট্যাক হচ্ছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও স্ট্যাক এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যেটির মাধ্যমে সম্পূর্ণ ও সমন্বিত অবকাঠামোগত আইটি সেবা প্রদান করা হবে। আর ‘এইচসিআই’ এর অর্থ হাইপার কনভারজড ইনফ্রাস্টাকচার এটি স্টোরেজ ও নেটওয়ার্কিং এর সমন্বয়ে সফ্টওয়্যার-ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউটেড ও কম্পিউট ফ্রেমওয়ার্ক।
সার্ভিসিং২৪ বলছে, এই ইনফ্রাস্ট্যাক এইচসিআই সল্যুশনে গ্রাহকরা মোট ৪টি মডেলে ‘সার্ভিসিং২৪’-এর এর কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এগুলো হচ্ছে- সার্ভার রেন্টাল সার্ভিস, হার্ডওয়্যার রেন্টাল সাপোর্ট, ম্যানেজড আইটি সার্ভিস এবং বান্ডেল রেন্টাল সার্ভিস।
গ্রাহকদের জন্য আরো সুখবর হলো- পুরো সল্যুশনটি সম্পূর্ণ ওপেন সোর্স হওয়ায় কোনো ধরনের অতিরিক্ত লাইসেন্সিং খরচ প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি মাসিক ভাড়া-ভিত্তিক সেবার ফলে বড় অংকের প্রাথমিক বিনিয়োগও লাগবে না। এই সাশ্রয়ী প্রাইভেট ক্লাউড সল্যুশনটি বিশেষভাবে উপযোগী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ, মূলধন সীমাবদ্ধ সরকারি সংস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বড় শহরের ডেটা সেন্টার এবং পরিবেশবান্ধব আইটি প্রকল্পগুলোর জন্য।
এ বিষয়ে সার্ভিসিং২৪ এর সিইও নাসির ফিরোজ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী, টেকসই ও আধুনিক আইটি সল্যুশন নিশ্চিত করা। ইনফ্রাস্ট্যাক এইচসিআই এর মাধ্যমে তা সম্ভব। এটি গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ৭০% পর্যন্ত খরচ সাশ্রয় করবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর হতে ‘সার্ভিসিং২৪’ বাংলাদেশের আইটি সাপোর্ট সার্ভিস ল্যান্ডস্কেপের অন্যতম শীর্ষ উদ্ভাবক-এ পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তিখাতে বেড়ে চলা চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে থার্ড-পার্টি মেইনটেন্যান্স(টিপিএম), ম্যানেজড আইটি সার্ভিসেস, এন্টারপ্রাইজ আইটি সাপোর্ট ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। কোম্পানিটি হার্ডওয়্যারের লাইফ বর্ধিত করে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ কার্বন ইমিশন কমিয়ে আনার পাশাপাশি টেকসই ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
‘সার্ভিসিং২৪’-এর প্রধান প্রধান সেবাগুলো হচ্ছে, থার্ড-পার্টি মেইনটেন্যান্স(টিপিএম), এন্টারপ্রাইজ সার্ভার অ্যান্ড স্টোরেজ সাপোর্ট, ম্যানেজড আইটি সার্ভিসেস, আইটি ইনফ্রাস্ট্র্যাকচার মনিটরিং, এএমসি অ্যান্ড স্পেয়ার পার্টস লাইফসাইকেল ম্যানেজমেন্ট, ক্লাউড সল্যুশন্স অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি, আইটিএসএম সফ্টওয়্যার অ্যান্ড মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস, অটোমোবাইলস, এফএমসিজি, হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এবং অন্যান্য কোম্পানিকে আইটি সেবা দিয়ে থাকে।

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
New Chapter of Smart Battery Infinix Note 1

স্মার্ট ব্যাটারির নতুন অধ্যায় ইনফিনিক্স নোট ৫০-এ

এআই প্রযুক্তিতে ব্যাটারি
স্মার্ট ব্যাটারির নতুন অধ্যায় ইনফিনিক্স নোট ৫০-এ ইনফিনিক্স নোট ৫০

স্মার্টফোন এখন আর শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং কাজ, বিনোদন ও স্বাস্থ্যসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত একটি অপরিহার্য প্রযুক্তি। এসব কাজে নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবহার নিশ্চিতে স্মার্টফোনের ব্যাটারি পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ডিভাইস যেন অতিরিক্ত গরম না হয়, হ্যাং না করে এবং দীর্ঘক্ষণ কার্যকর থাকে—এই সবকিছু মাথায় রেখেই বাজারে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্মার্ট ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
স্মার্ট ব্যাটারি: আধুনিক চাহিদার সমাধান
আগে ভালো ব্যাটারি মানে ছিল উচ্চ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ক্ষমতা। কিন্তু এখন ব্যাটারি মূল্যায়নে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়। অ্যাডাপটিভ পাওয়ার এলোকেশন, ইউজার বিহেভিয়ার অ্যানালাইসিস এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ—এই আধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যাটারির পারফরম্যান্সকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যারা বাইরে দীর্ঘ সময় থাকেন, ভিডিও কল, সোশ্যাল মিডিয়া বা নেভিগেশনের মতো ব্যাটারি-নির্ভর কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এসব প্রযুক্তি কার্যকর সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।
এআই: শক্তির নতুন চালিকাশক্তি
বর্তমান বাজারের বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। এটি অ্যাপ প্রিডিকশন, ব্যাকগ্রাউন্ড টাস্ক সীমিতকরণ এবং স্ক্রিন-অফ অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় শক্তি খরচ কমিয়ে দেয়। ব্যবহারকারীরা চাইলে নির্দিষ্ট অ্যাপকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন কিংবা ব্যাটারি কমে গেলে ‘আল্ট্রা পাওয়ার সেভিং মোড’ চালু করতে পারেন। ফলে ব্যাটারি ব্যাকআপ যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি ডিভাইস ব্যবহারে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণও বাড়ে।
চার্জিং প্রযুক্তিতে বিপ্লব
শুধু ব্যাটারি ব্যবস্থাপনাই নয়, স্মার্ট চার্জিং প্রযুক্তিতেও এসেছে দারুণ অগ্রগতি। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ইনফিনিক্সের নতুন নোট ৫০ সিরিজ। এই সিরিজের প্রতিটি মডেলে রয়েছে ৫২০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি, যার চার্জিং ক্ষমতা ৪৫ ওয়াট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০০ ওয়াট পর্যন্ত। সেই সঙ্গে রয়েছে ম্যাগচার্জ প্রযুক্তি-ভিত্তিক ৫০ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা।
চার্জিং প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হয়েছে এআই, যা চার্জিং স্পিড ও ব্যাটারির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
স্মার্টফোন ব্যবহারে নতুন মাত্রা
নোট ৫০ সিরিজে যুক্ত হয়েছে ইনফিনিক্সের নিজস্ব এআই♾️ প্রযুক্তি, যা ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করে ডিভাইস পারফরম্যান্স ও অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ফিচারের মধ্যে রয়েছে ডিপ সিক এআই, ওয়ান-ট্যাপ এআই ক্যামেরা এবং এআই নয়েস মিউট।
এছাড়া রয়েছে বায়ো-এক্টিভ হ্যালো লাইট নোটিফিকেশন—যা কাজের বিঘ্ন না ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দেয়।
সব মিলিয়ে ইনফিনিক্স নোট ৫০ সিরিজ শক্তিশালী ব্যাটারি, কার্যকর চার্জিং প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারে নতুন এক অভিজ্ঞতা উপহার দিচ্ছে, যা ব্যবহারকারীর আধুনিক চাহিদা পূরণে সক্ষম।

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Aston Martin Formula One Team Strategic Partnership Co branded Realmy GT 5 Dream Edition

অ্যাস্টন মার্টিন ফরমুলা ওয়ান টিমের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব, কো-ব্র্যান্ডেড রিয়েলমি জিটি ৭ ড্রিম এডিশন উন্মোচন

অ্যাস্টন মার্টিন ফরমুলা ওয়ান টিমের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব, কো-ব্র্যান্ডেড রিয়েলমি জিটি ৭ ড্রিম এডিশন উন্মোচন

অ্যাস্টন মার্টিন ফরমুলা ওয়ান টিমের সাথে আজ যুগান্তকারী তিন বছর মেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিলো রিয়েলমি। আর এই সহযোগিতার মাইলফলক হিসেবে জিটি ৭ ড্রিম এডিশনের আকর্ষণীয় কো-ব্র্যান্ডেড সংস্করণ নিয়ে এসেছে ব্র্যান্ডটি।

এ বিষয়ে রিয়েলমি’র সিইও স্কাই লি বলেন, “অ্যাস্টন মার্টিন আরামকোর মতো কিংবদন্তি রেসিং টিমের সঙ্গে সহযোগিতা, আমাদের জন্য উদ্ভাবনের সীমানা অতিক্রম করে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কেবল আমাদের নিখুঁত পণ্যগুলোই টিকে থাকার মতো সক্ষমতা অর্জন করে। আমরা আমাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের কাছে অসাধারণ ডিজাইন ও প্রিমিয়াম কারিগরি দক্ষতা নিয়ে যেতে চাই।”

এ বিষয়ে অ্যাস্টন মার্টিন আরামকো ফর্মুলা ওয়ান টিমের হেড অব লাইসেন্সিং অ্যান্ড মার্চেন্ডাইজ ম্যাট চ্যাপম্যান বলেন, “আমাদের প্রথম কো-ব্র্যান্ডেড ফোন উন্মোচনের পাশাপাশি, রিয়েলমিকে টিমে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত। জিটি ৭ ড্রিম এডিশনে উচ্চ সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী ডিজাইনের সমন্বয় রয়েছে; আগামীর মডেলগুলোতে একযোগে কাজ করার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে রয়েছি।”

বৈশ্বিকভাবে দ্রুতবর্ধনশীল স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে রিয়েলমি, বিশ্বজুড়ে তরুণ ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্ভুল প্রকৌশল, অসাধারণ কর্মদক্ষতা ও অনন্য ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত অ্যাস্টন মার্টিন ফর্মুলা ওয়ানের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে রিয়েলমি আগামী প্রজন্মের জন্য অনবদ্য প্রযুক্তি অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করছে।

এই সহযোগিতার মাধ্যমে রিয়েলমি জিটি ৭ ড্রিম এডিশনের মতো একটি অসাধারণ কো-ব্র্যান্ডেড সিরিজ উন্মোচন করা হয়েছে। এই স্মার্টফোনটি কেবল রিয়েলমি’র জিটি সিরিজের ফ্ল্যাগশিপ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতাই নয়; একইসাথে, এতে আইকনিক দুই পাখার ডিজাইন ও অ্যাস্টন মার্টিনের বিশেষ গ্রিন কালার রয়েছে। এ সহযোগিতার অংশ হিসেবে, দু’পক্ষ প্রতিবছর দুইটি মডেল একযোগে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে, যা এই অংশীদারিত্বকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও প্রত্যাশিত করে তুলেছে।

রিয়েলমি জিটি ৭ সিরিজের বৈশ্বিক উন্মোচন অনুষ্ঠান আজ ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে জিটি ৭ সিরিজ ও ড্রিম এডিশন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত সব তথ্য উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Realmies Eid Campaign is a sure prize with cash cash

রিয়েলমির ঈদ ক্যাম্পেইনে থাকছে লাখ টাকা ক্যাশসহ নিশ্চিত পুরস্কার

রিয়েলমির ঈদ ক্যাম্পেইনে থাকছে লাখ টাকা ক্যাশসহ নিশ্চিত পুরস্কার

তরুণদের প্রিয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড রিয়েলমি বাংলাদেশে তাদের বিশেষ ঈদ ক্যাম্পেইন ঘোষণা করেছে। ব্যবহারকারীদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়াতে প্রস্তুত ব্র্যান্ডটি। সীমিত সময়ের এ ক্যাম্পেইনটি কেবল বড় কিছু জেতার সুযোগই দিচ্ছে না, বরং প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জন্যই নিশ্চিত করছে আকর্ষণীয় উপহার।


লটারির মাধ্যমে সৌভাগ্যবান বিজয়ীদের জন্য ৪টি গ্র্যান্ড প্রাইজ নিয়ে এসেছে রিয়েলমি। এতে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী পাবেন ১,০০,০০০ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী পাবেন ৬০,০০০ টাকা। তৃতীয় পুরস্কারে রয়েছে নির্দিষ্ট রিয়েলমি পণ্যের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় বাই ওয়ান গেট ওয়ান (বোগো) অফার এবং চতুর্থ পুরস্কার হিসেবে থাকছে রিয়েলমি টি২০০ লাইট এয়রবাডস।


এসব পুরস্কার ছাড়াও আরও কিছু নিশ্চিত উপহার নিয়ে এসেছে রিয়েলমি; যেন লটারি যারা জিতবেন না তারাও এ উদযাপনে অংশ নিতে পারেন। ক্রেতাদের মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে রিয়েলমি সি৭৫ বা রিয়েলমি সি৭৫এক্স কেনার ক্ষেত্রে ২ বছরের বাড়তি ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে।


রিয়েলমি ১২ স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ক্রেতারা পাবেন ২,০০০ টাকার ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক; ফলে, ২৭,৯৯৯ টাকার এই ডিভাইসটি পাওয়া যাবে মাত্র ২৫,৯৯৯ টাকায়।


রিয়েলমি ১৪ সিরিজ কেনার ক্ষেত্রে রিয়েলমি ব্র্যান্ডের আকর্ষণীয় টি-শার্ট পাবেন ক্রেতারা। পাশাপাশি, ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া সকল ক্রেতা বাংলালিংকের অংশীদারিত্বে বিশেষ অফার উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
কেবল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিশ্চিত করাই নয়, একইসাথে, ব্যবহারকারীদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কার ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রিয়েলমি’র ধারাবাহিক প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ এই ঈদ ক্যাম্পেইন। উৎসবের এ সময়ে প্রত্যেক ক্রেতাই যেন নিজেকে বিজয়ী মনে করেন, তা নিশ্চিত করতেই দুর্দান্ত সব পুরস্কার ও নিশ্চিত উপহার নিয়ে এসেছে ব্র্যান্ডটি।


ক্যাম্পেইন ও এতে কীভাবে অংশ নিবেন, তা আরও বিস্তারিত জানতে রিয়েলমি বাংলাদেশের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ ও ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

মন্তব্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
Realmies battery Monstersmartphone C1 will be charged in the market for 2 days

বাজারে রিয়েলমির ‘ব্যাটারি মনস্টার’স্মার্টফোন সি৭১, এক ঘণ্টা চার্জে চলবে ২ দিন

বাজারে রিয়েলমির ‘ব্যাটারি মনস্টার’স্মার্টফোন সি৭১, এক ঘণ্টা চার্জে চলবে ২ দিন
রিয়েলমি সি৭১-এর নান্দনিক ও প্রাণবন্ত ডিজাইন তরুণ ব্যবহারকারীদের পছন্দের সঙ্গে মানানসই। এর ‘লাইট পালস’ নোটিফিকেশন ফিচারটি বিশেষ করে, মিটিং বা গুরুত্বপূর্ণ আলাপ চলাকালে কল বা মেসেজ আসার সময় নিঃশব্দে চোখে পড়বে। ফোনটির ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লের ক্ষেত্রে আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক অনুভূতি নিশ্চিত করে। এই দামের অন্যান্য ফোনের ক্ষেত্রে এই রিফ্রেশ রেট সাধারণত দেখা যায় না; ফলে রিয়েলমি’র এই ফোনটি গেম খেলা, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা বা ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তরুণদের পছন্দের টেক ব্র্যান্ড রিয়েলমি বাংলাদেশের বাজারে তাদের সর্বশেষ স্মার্টফোন রিয়েলমি সি৭১ নিয়ে এসেছে। নিরবচ্ছিন্ন ব্যাটারি পারফরম্যান্স চাইছেন এমন ব্যবহারকারীদের জন্য এই ডিভাইসটি ডিজাইন করা হয়েছে। রিয়েলমি’র নতুন এই ফোনে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ, এআই-সক্ষম ফিচার ও প্রাণবন্ত ডিসপ্লেসহ আধুনিক ও স্টাইলিশ ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে।


রিয়েলমি সি৭১-এ রয়েছে সুবিশাল ৬,৩০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সুবিধা, যা সারাদিন নিরবচ্ছিন্ন সক্ষমতা প্রদান করে। মাত্র ১ ঘণ্টার চার্জেই ব্যবহারকারীরা দুই দিনের জন্য ফোনটি নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারবেন, যা এখনকার ব্যস্ত জীবনযাপনের সাথে মানিয়ে যাবে। একইসাথে, এই ব্যাটারি ও চার্জিং দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর সক্ষমতা নিশ্চিত করে ব্যবহারকারীকে নিশ্চিন্ত রাখতে সহায়তা করে।


রিয়েলমি সি৭১-এর নান্দনিক ও প্রাণবন্ত ডিজাইন তরুণ ব্যবহারকারীদের পছন্দের সঙ্গে মানানসই। এর ‘লাইট পালস’ নোটিফিকেশন ফিচারটি বিশেষ করে, মিটিং বা গুরুত্বপূর্ণ আলাপ চলাকালে কল বা মেসেজ আসার সময় নিঃশব্দে চোখে পড়বে। ফোনটির ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লের ক্ষেত্রে আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক অনুভূতি নিশ্চিত করে। এই দামের অন্যান্য ফোনের ক্ষেত্রে এই রিফ্রেশ রেট সাধারণত দেখা যায় না; ফলে রিয়েলমি’র এই ফোনটি গেম খেলা, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা বা ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।


রিয়েলমি সি৭১-এ এআই-সক্ষম একাধিক ফিচার রয়েছে, যা দৈনন্দিন কাজগুলো আরও সহজ ও সাবলীল করে। এর মধ্যে রয়েছে এআই নয়েজ রিডাকশন কল ২.০, যা কলের ব্যাকগ্রাউন্ডের নয়েজ কমায়। এআই ক্লিয়ার ফেস যা ক্যামেরা পারফরম্যান্সকে আরও সমৃদ্ধ করে। এআই ইমেজ ম্যাটিং, যা সহজেই ব্যাকগ্রাউন্ড এডিট করতে সহায়তা করে। এআই ইরেজার, যা ছবি থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয় অপসারণ করে। এছাড়াও, গুগল জেমিনি ও সার্কেল-টু-সার্চ ব্যবহারকারীদের জন্য এআই সার্চের সুবিধা নিশ্চিত করে। এসব ফিচার একত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করে।


ফোনটিতে রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেলের একটি এআই ক্যামেরা, যা ব্যবহারকারীদের নিখুঁত ও ঝকঝকে ছবি তুলতে সহায়তা করে। এই ডিভাইসে প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে রয়েছে- একটি ফ্লিকার লেন্স, যেটি পারিপার্শ্বিক আলো থেকে ফ্লিকার ফ্রিকোয়েন্সি নির্ণয় করে এবং ছবি তোলার সময় ফ্লিকার নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া- রিয়ার প্যানেলে আছে ‘পালস লাইট’ অর্থ্যাৎ আলোর ভিন্ন একটি প্যানেল, যার মাধ্যমে ভাইব্রেশন কিংবা শব্দ ছাড়াই এক ধরনের নোটিফিকেশন পাবেন গ্রাহকরা।


পাশাপাশি, স্মৃতিময় মুহূর্ত ধারণ করার জন্য রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা। অ্যান্ড্রয়েড ১৫ ভিত্তিক রিয়েলমি’র ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের জন্য অনবদ্য অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। এছাড়া, এর আইপি৬৪ রেটিংয়ের ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিজট্যান্স ও সনিকওয়েভ ওয়াটার ইজেকশন প্রযুক্তি ফোনটিকে যেকোনো পরিবেশের জন্য সহনীয় ও টেকসই করে তোলে।


রিয়েলমি সি৭১ দুটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাবে। ৪ জিবি র‌্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজের মূল্য মাত্র ১৪,৯৯৯ টাকা এবং ৬ জিবি র‌্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজের মূল্য মাত্র ১৫,৯৯৯ টাকা। স্মুথ মাল্টিটাস্কিং ও অনবদ্য পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে এতে ডায়নামিক মেমরি এক্সপানশন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ২ টেরাবাইট পর্যন্ত বৃদ্ধি করে নেয়া সম্ভব।

মন্তব্য

p
উপরে