হেফাজতে ইসলামের নতুন যে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক নেতা আছেন আগের মতোই। তবে বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলগুলোর কোনো নেতাই স্থান পাননি।
হেফাজতের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটির আকারও ছোট করা হয়েছে। ১৫১ সদস্যের কমিটিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৩৩ সদস্যে।
এর পাশাপাশি ৯ সদস্যের একটি খাস কমিটি করা হয়েছে, যার কাজ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে। এই কমিটিতে আছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।
অরাজনৈতিক দাবি করা হেফাজতের এই কমিটিরও সব নেতা রাজনীতি থেকে মুক্ত নন। তবে পার্থক্য হলো, প্রথমবারের মতো এই কমিটির নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলের কেউ নন।
এই কমিটির যে নেতারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগই খেলাফত আন্দোলনের নেতা। এটি হাফেজ্জী হুজুর নামে পরিচিত মোহাম্মদ উল্লার দল। তার নাতি আতাউল্লাহ হাফেজ্জীকে নায়েবে আমির বা সহসভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিকদের বাদ দেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, যিনি গত কয়েক বছরে উগ্র বক্তব্য দিয়ে দেশজুড়ে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তার পাশাপাশি তার দল খেলাফত মজলিসেরও কোনো নেতাকে রাখা হয়নি এই কমিটিতে।
কেবল কেন্দ্রীয় কমিটি নন, জেলা কমিটিতেও এই পরিবর্তনগুলো আসবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ স্থানীয় কমিটিগুলো থেকেও বিএনপি-জামায়াতের শরিকদের বাদ দেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর কমিটি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এখানেও রাজনৈতিকভাবে পরিচিত কাউকে রাখার সম্ভাবনা কম।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক বাদ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী সরাসরি এভাবে বক্তব্য দিতে নারাজ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাদ দেয়ার প্রশ্নই নেই। আমাদের এখানে আজকে যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাই হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ১৫১ জন। এখন আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট পরিসরে কমিটি করেছি। এর পরে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কাদের রাখা হবে, না রাখা হবে।’
যারা কারাগারে আছেন, তাদের অপরাধী মনে করে কমিটিতে রাখা হয়নি কি না- এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাউকে অপরাধী মনে করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অপরাধী মনে করতে পারে আদালত।’
অরাজনৈতিক হেফাজতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার
সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকারের বিরোধিতার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবমুক্ত হলো কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই সংগঠনটি।
হেফাজত বরাবর নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করলেও এর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা আর হাতে গোনা দুই-এক জন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক।
যে কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হেফাজত নানা সময় বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সে জন্য একটি কমিটি করে আল্লামা শফীকেই করা হয় প্রধান। কিন্তু বিএনপি জোটের শরিক মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসরা সেই উদ্যোগকে ভণ্ডুল করে দেন।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে হেফাজতের কারও বিচারের দাবি ওঠেনি। তার পরেও মঞ্চের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করে ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি।
এই আন্দোলনে হেফাজত সফল হলে জামায়াতের মানবতাবিরোধী অপরাধী নেতারা বেঁচে যেতে পারতেন। কিন্তু হেফাজতের কী লাভ হতো, তা তর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
ওই ঘটনার পর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেফাজতের নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে কাজ করেছেন প্রকাশ্যেই। শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালানো হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলে তাদের আবেগী বক্তব্য ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে বলে ধারণা করা হয়। আর সে সময় আলোচিত হয়ে ওঠা সেই নির্বাচনে সবগুলো এলাকাতেই আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়, যদিও তার পাঁচ বছর আগে সবগুলো এলাকাতেই জিতেছিল ক্ষমতাসীন দল।
তবে পরে সেই গণহত্যার প্রমাণ দিতে পারেনি হেফাজত আর প্রাথমিকভাবে যারা নিহত হন বলে দাবি করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই জীবিত ফিরে আসেন। আর সরকারের সঙ্গে দূরত্বও কমিয়ে আনে হেফাজত।
শাপলা চত্বরের সেই ঘটনাপ্রবাহের পর অবশ্য আল্লামা শফী আওয়ামী লীগ সরকারের কাছাকাছি আসতে পারেন আর ২০১৭ সালে তার হাতেই কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত তুলে দেয়া হয়।
তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আবার ঘুরে যায়। ওই মাসের শেষ দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর নভেম্বরে হেফাজতের যে সম্মেলন করা হয়, তাতে শফীর অনুসারীদের বাদ দেয়া হয়। ১৫১ সদস্যের যে কমিটি করা হয়, তাদের শতাধিক নেতাই বিএনপি-জামায়াতের শরিক দলের নেতা।
১৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিরোধিতা করে শফীপন্থিরা আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করেই অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াতের দখলে যাচ্ছে হেফাজত। আর কমিটি গঠনের পর তাদের এই অভিযোগ প্রকারান্তরে সত্য বলেই প্রতিভাত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে আসছিল হেফাজত। তবে সফরের তিন দিন আগে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নেতারা ঘোষণা করেন, তাদের কোনো কর্মসূচি থাকবে না সেদিন।
তবে ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ করে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘মোদি ঢাকায় এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে’।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে হেফাজতের কী সম্পর্ক সে ব্যাখ্যা কখনও সংগঠনটি দেয়নি। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু হওয়ার পর থেকে আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বারবার বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কে থাকবে না থাকবে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দুই দফা দেখা করে সমঝোতার চেষ্টা করেন হেফাজত মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী। আর ১৫ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক নেতায় পরিপূর্ণ কমিটি ভেঙে দেন বাবুনগরী। সেই রাতেই অবশ্য গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি।
এরপর থেকেই বলাবলি হচ্ছিল, হেফাজত এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবমুক্ত হবে। হলোও তাই।
নতুন কমিটিতে কারা
৩৩ সদস্যের কমিটিতে আমির ও মহাসচিব পদে নতুন মুখ নেই। দুই শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদী সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না আগেও।
নায়েবে আমির হয়েছেন আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মীযানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মুফতি জসিমুদ্দীন।
যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আব্দুল আউয়াল, (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর), মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।
সহকারী মহাসচিব হযরত মাওলানা জহুরুল ইসলাম (মাখজান), মাওলানা ইউসুফ মাদানী (আল্লামা শফীর ছেলে)।
তবে ইউসুফ মাদানী এই পদ ও কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম)কে।
অর্থ সম্পাদক হয়েছেন মুফতি মুহাম্মদ আলী (মেখল), সহ-অর্থসম্পাদক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট)।
প্রচার সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী (সাভার) সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা জামাল উদ্দীন (কুড়িগ্রাম)।
দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (উত্তরা, ঢাকা), সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফরুক (নোয়াখালী)।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন মোবারাকুল্লাহ, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ফয়জুল্লাহ্ (মাদানীনগরের পীর), ফোরকানুল্লাহ খলিল (দারুল মা'আরেফ, চট্টগ্রাম), মোশতাক আহমদ, (খুলনা দারুল উলুম), রশিদ আহমদ, (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাহমুদল হাসান (ফতেহপুরী) ও মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।
হেফাজত নতুন কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীরও রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
নতুন খাস কমিটির সদস্য মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী একসময় ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি থাকলেও, ২০১৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। মীযানুর রহমান চৌধুরী গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাদ্রাসা দাওয়াতুল হকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও, বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর আর রাজনীতি করেননি। তিনি কাপাসিয়ার শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
নতুন কমিটির নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী খেলাফত আন্দোলনের আমির। দলটি বিএনপি-জামায়াতের জোটে নেই। এ ছাড়াও নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি এখন রাজনীতিতে নেই।
বিএনপি-জামায়াতের যে সঙ্গীরা বাদ
২০ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুর), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা আনোয়ারুল করিম (যশোর) ও মাওলানা নুরুল ইসলাম খান (সুনামগঞ্জ) জায়গা পাননি।
যদিও সংগঠনটির সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর হেফাজতের আনাসপন্থিদের দলে যোগ দিয়েছেন। গত ২ জুন তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
মামুনুল হক ছাড়াও বাদ পড়েছেন জমিয়ত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব ও নাসির উদ্দিন মুনির।
এ ছাড়াও দলটির ফজলুল করীম কাসেমী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীও কমিটিতে স্থান পাননি।
জমিয়ত নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ছিলেন হেফাজতের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনিও এবার কমিটিতে নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের ছয়জন নেতা স্থান পেয়েছিলেন গত নভেম্বরের সম্মেলনে। এদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে থানা দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, নায়েবে আমির হওয়া আহমাদ আবদুল কাদেরকেও বাদ দেয়া হয়। কাদের ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
এ ছাড়া জমিয়ত নেতা মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী, মাওলানা তাফহিমুল হক, মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী ও মাওলানা লোকমান মাজহারীও এবারের কমিটিতে স্থান পাননি।
জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হেফাজতের গত কমিটি দাওয়াহ সম্পাদক হওয়া মাওলানা নাজমুল হাসানও বাদ পড়েছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন বাদ দিল, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গতকালকেও শুনলাম আমার নাম আছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের অনেক নেতাকর্মীকে সরকার কারাগারে নিক্ষেপ করে আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করছে।
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে রিজভী এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
তিনি আরও বলেন, বিনা কারণে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দি থাকতে থাকতে কারাগারগুলো বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবের মতো শীর্ষ নেতারা তিন-চার মাস ধরে কারাভোগ করে মুক্তি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর নীতি এখনো শেষ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে ভয় পান এবং জানেন যে তার পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই।
জনগণের সমর্থনহীন সরকার স্বৈরাচারী হয়ে যায় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জনগণ যখন অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলে তখন তারা দমন করে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তারা দমন-পীড়নের সব উপায় অবলম্বন করে, যেমন- আটকে রাখা, নির্যাতনের জন্য আয়না ঘর তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা এবং বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করা।
তিনি দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। আর কয়েকজন ৩ থেকে ৪ মাস কারাভোগের পর বের হতে পেরেছেন।
বিএনপির এত সদস্য কেন কারাগারে, তার কোনো সদুত্তর সরকারের কাছে আছে কি না জানতে চান রিজভী।
অবৈধভাবে অর্জিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এসব করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই রাজনৈতিক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও দুর্নীতির মতো সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরাই এ সংক্রান্ত মামলার আসামি হয়েছেন।
তিনি বলেন,“আজকে তারা (বিএনপি) সব জায়গায় কান্নাকাটি বলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা। তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে মামলাগুলো কীসের মামলা? অগ্নিসন্ত্রাস, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটাই তো বাস্তবতা।”
এসব মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে এগুলোর শাস্তি দিয়ে দেয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের
২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, বাস, লঞ্চ ও রেল পুড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো কি হবে।
তিনি বলেন, ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাইতো পলিটিক্যাল মামলা না, প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা। তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে। নির্বাচন ঠেকাতে যেয়ে তারা রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না?
“যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না? তাদেরকে কি মানুষ পূজা করবে,” সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কান্নাকাটি করে তারা সব জায়গায় বলছে এত লাখ লোক তাদের গ্রেপ্তার। সারা দেশে যত জেলখানা আছে সেগুলোর একটা ধারণ ক্ষমতা রয়েছে, তারা যত লক্ষ গ্রেপ্তার হয়েছে বলছে জেলখানাগুলোর তত ধারণ ক্ষমতা নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “তারা (বিএনপি) যেভাবে বলছে তাদের ৬০ লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়েছ, ৬০ লাখ লোক ধারণ করার ক্ষমতাও নাই এসব জেলে। তারপরও যতটুকু ধারণ ক্ষমতা আছে সবই বিএনপির লোক এটাই তো তারা বলতে চাচ্ছে। তার মানে বাংলাদেশে যত অপরাধ সব অপরাধ করে বিএনপি।”
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভাগ্য ভালো আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ না, তাই তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারাদিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে, তারপর বলবে কথা বলার সুযোগ পায় না।
বিরোধী দলে থাকার সময়কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসেতো আমরা ঢুকতেই পারতাম না। কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর, আমরা তো তার কিছুই করি নাই। আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমরা আমাদের সব শক্তি-মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সমবায় ভিত্তিক কৃষি নিশ্চিত করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায় ভিত্তিক কৃষি চালু করে জমির আইল দূর করে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি রক্ষা করা যেতে পারে। কৃষিতে গবেষণার পাশাপাশি কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল। আমাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উদ্যোগে কৃষিখাতের উন্নয়ন এবং খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থানার পদক্ষেপ সমূহের চুম্বকাংশ তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি উন্নত হয়েছে, কারণ সরকার কৃষিখাতের গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কৃষি খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি বলেন, “একসময় যারা নুন-ভাত বা ডাল-ভাতের কথা ভাবতেন, তারা এখন মাছ-মাংস-ডিমের কথা ভাবেন। তাই যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে কি না।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বৃহস্পাতবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনায় আপনি লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বর্ণিত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখিত প্রতিবেদন ও পত্রিকান্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। এরূপ ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেলোয়ার হোসেনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আহত অবস্থায় তাকে তার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী প্রার্থীর পরিবার এ ঘটনার জন্য আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লুৎফুল হাবীব ছিলেন একক প্রার্থী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য