ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নতুন যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার নেতাদের বড় অংশই বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলের নেতা।
যেসব নেতা বিএনপি জামায়াত জোট ছেড়ে গেছেন, বা জামায়াতের কট্টর সমালোচক, নতুন কমিটিতে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করা খেলাফতে মজলিসের একাংশের কয়েকজন নেতা স্থান পেয়েছেন এই কমিটিতে। তবে ওই জোট ভেঙে তারা আগেই বিএনপি জোটে ফিরে গেছেন।
এদের একজন মাওলানা তাফাজ্জল হক আজিজ। তিনি ২০০৭ সালে সুনামগঞ্জের একটি আসনে নৌকা প্রতীকে ভোটে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরে ছয় দফা চুক্তি বাতিলের পর আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থানে ফিরে যান।
রোববারের জাতীয় সম্মেলনের আগের দিন প্রয়াত আমির শাহ আহমেদ শফীর অনুসারীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, হেফাজতকে বিএনপি-জামায়াত জোটের দখলে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
হেফাজতের নতুন কমিটিতে বিএনপি-জামায়াত জোট সংশ্লিষ্টদের স্থান পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী বিষয়টি অস্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মীয় বিষয় আর রাজনৈতিক বিষয়কে মেলানো যায় না। পার্থক্য আছে। যেমন আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী বললেও তার সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থে জোট হতে পারে।’
ইউসুফী নিজেও বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা। তিনি বলেন, ‘আলেম ওলামাদের মধ্যে মুখরোচক শব্দ হলো, জামায়াত ঢুকে পড়েছে। খাওয়ার সঙ্গে যেমন কাঁচামরিচ খায়, আচার খায়, এটা মুখরোচক; ক্ষুধা মেটানোর জন্য না। জামায়াত ঢুকে পড়েছে, এটাও এমন শব্দ। তবে এটা আন্দোলন সংগ্রামের ভাষা হতে পারে না।’
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে হেফাজত?
ইউসুফীর দাবি, কাউকে দায়িত্ব দলীয়ভাবে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটা আলেম ওলামাদের সংগঠন, বিভিন্ন জেলায় সামাজিকভাবে যারা এগিয়ে তাদেরকেই পদ দেয়া হয়েছে।’
হেফাজতের নতুন তথ্য ও প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী নিউজবাংলাকে বলেন, '২০ দলীয় জোটে নেই, এমন অনেককেও কমিটিতে নেয়া হয়েছে। লালবাগ মাদ্রাসার যোবায়ের সাহেবকে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে। এ রকম আরও কয়েকজন আছেন।’
তাহলে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়া নেতারা কেন বাদ পড়লেন- এমন প্রশ্নে হেফাজত নেতা বলেন, ‘যাদের নিয়ে সাংগঠনিক বিতর্ক আছে, তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে অন্য কিছু নেই।’
সম্মেলনের পর ঘোষিত কমিটির মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব।
১৫১ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে কাসেমীর জমিয়তেরই ৩২ জনের মতো নেতা আছেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক খেলাফতে মজলিসের একাংশ থেকে নেয়া হয়েছে আরও ছয় জনকে। এদের একজন এককালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
জামায়াতবিরোধী বা ২০ দল ছেড়ে আসারা বাদ
যাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন জামায়াতের কট্টর সমালোচক চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম। তিনি আগের কমিটির নায়েবে আমির ছিলেন।
চরমোনাইয়ের পীরের রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজত নির্ভেজাল অরাজনৈতিক সংগঠন ছিল। তাই চরমোনাই পীর তাতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। পরে অনেক নেতা হেফাজতকে রাজনীতিতে টেনে আনেন। যেসব ইসলামিক রাজনৈতিক দলের গণভিত্তি নেই, জনসমর্থন নেই, তারা টিকে থাকতে এখন হেফাজতকে আঁকড়ে ধরছেন। একটি দলেরই কেন্দ্রীয় কমিটির ২০/২৫ জন নেতা হেফাজতের কমিটিতে এসেছেন। এটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।’
হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ‘চরমোনাইয়ের পীর সাহেব গত চার পাঁচ বছর ধরে হেফাজতের কর্মসূচিতে ছিলেন না। তিনি নিজের মতো করে কর্মসূচি পালন করেন। তাই তাকে রাখা হয়নি।’
বিবেচনায় নেয়া হয়নি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ও কওমি সদনের স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করা ফরিদউদ্দিন মাসউদকে।
গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মাওলানা রুহুল আমিন দুটি কওমি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাকেও কোনো পদে রাখা হয়নি, যদিও বাকি চারটি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের রাখা হয়েছে।
রুহুল আমিন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আলেম হিসেবে পরিচিত। তিনিও কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
বাদ পড়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোটর মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। তিনি আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
তবে ২০ দল ছাড়ার পর ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বের হয়ে অন্য দলে যোগ দেয়া জুনায়েদ আল হাবিবকে ঠিকই কমিটিতে রাখা হয়েছে।
এসব বিষয়ে হেফাজতের নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ‘ওনারা বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন গত আন্দোলন থেকেই।’
কোন আন্দোলন?
ইউসুফী বলেন, ‘শাপলা চত্বরের আন্দোলনের সময় তারা তাদের কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন।’
ইউসুফী বলছিলেন লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আলেমদের কথা, যারা ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান নিয়ে ভূমিকা রাখেন। তবে ২০১৬ সালের শুরুতে তারা বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে বের হয়ে আসেন।
তারা কেন বিতর্কিত, সেটা অবশ্য বলতে চাননি ইউসুফী। বলেন, ‘ওই সময় মিডিয়াতে এসেছে। আমি যদি বিতর্কিত হয়ে যাই আমারই দায়িত্ব ব্যাখ্যা দেয়া। কিন্তু তারা তা দেননি। তাদের কিছু ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে জনগণ ও মাদ্রাসার মধ্যে।’
এতদিনে কেন এসব কথা বলছেন- এমন প্রশ্নে ইউসুফী বলেন, ‘কথা বলিনি ঠিক আছে, তবে মিডিয়ায় অনেক কিছু এসেছে।’
বাদ পড়েছেন আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী, প্রচার সম্পাদক প্রয়াত আমির আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানী, সিনিয়র নায়েমে আমির মাওলানা সলিমুল্লাহ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ বছরের আমির শাহ আহমেদ শফীর মৃত্যুর আগে থেকেই হেফাজতে নানা বিষয়ে বিরোধ ছিল।
শফীর পরে সংগঠন কাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে এ নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ ছিল। কওমি মাদ্রাসার সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত শোকরানা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করার আয়োজনের বিরোধী ছিলেন বাবুনগরী। পরে হেফাজতে তাকে কোণঠাসা করা হয়। যদিও আল্লামা শফীর মৃত্যুর দুই দিন আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় যে হাঙ্গামা হয়, তখন শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তার অনুসারীদের মাদ্রাসা ও হেফাজত থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি বাবার জানাজাতেও যেতে পারেননি আনাস।
ওই ঘটনার পর বাবুনগরী হেফাজতে অবস্থান শক্ত করেন। ফিরে আসেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়।
শফীর মৃত্যুর দুই মাস পর হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য যে সম্মেলন ডাকা হয়, তার বিরোধিতা করে একটি অংশ। ৫০ জনের মতো নেতাকে বাদ দিয়েই পরে করা হয় সম্মেলন।
যাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে, তারা নতুন কমিটি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বলে প্রচার আছে। এমনকি নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা করা সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসও অভিযোগ করেছেন, হেফাজত গঠতন্ত্র লঙ্ঘন করে এই কমিটি করেছে। এটা তিনি মানেন না।
হেফাজত নেতা মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাই বলেন, এবারের কমিটি ব্যাপক হয়েছে, সুবিন্যস্ত হয়েছে।’
বিএনপি-জামায়াতের শরিক জমিয়তের যেসব নেতা
সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীতে জায়গা পেয়েছেন মাওলানা জিয়াউদ্দীন, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
নায়েবে আমির পদে জমিয়তের ছয় জন নেতা জায়গা পেয়েছেন। এরা হলেন: মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুর) মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা আনোয়ারুল করিম (যশোর) ও মাওলানা নুরুল ইসলাম খান (সুনামগঞ্জ)।
নতুন চার যুগ্ম মহাসচিবের দুজন জমিয়তের। এরা হলেন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ও মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির।
সহকারী মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি।
সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা মাসউদুল করীম টঙ্গী, মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী ও মাওলানা তাফহিমুল হক।
অর্থ সম্পাদক হয়েছেন মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী ও সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী।
সহকারী প্রচার সম্পাদক হয়েছেন জমিয়তের তিন নেতা। তারা হলেন−মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব ওসমানী, মুফতি শরীফুল্লাহ ও মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান।
আইন বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ নির্বাচন করেছেন।
দাওয়াহ সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা নাজমুল হাসান, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, সহকারী দফতর সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম তোফায়েল।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জামিল আহমদ চৌধুরী, বশির আহমদ, তাফাজ্জল হক আজিজ, আলী আকবর সাভার, আবু আব্দুর রহিম, আব্দুল কুদ্দুস মানিকনগর, মুহাম্মদ উল্লাহ জামি, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী।
খেলাফতে মজলিসের দুই অংশের যারা
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের ছয়জন নেতা স্থান পেয়েছেন। এদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে আছেন দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক। নায়েবে আমির হয়েছেন আহমাদ আবদুল কাদের, যিনি ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ‘আহমদ আবদুল কাদেরকে নিয়ে তো সমমনা ইসলামী দল করা হয়েছে। তিনি খেলাফতে মজলিসে নায়েবে আমির ছিলেন। ইসলামী ঐক্যজোটেও ছিলেন। তখনও তার আগের শিবির-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। এখন কেন উঠবে?’
এই দলের মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন হয়েছেন নায়েবে আমির।
সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা আবদুল কাদের সালেহ ও আহমদ আলী কাসেমী।
২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের আরেক অংশের আমির মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী হয়েছেন উপদেষ্টা। নায়েবে আমির হয়েছেন সাবেক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী ও মাওলানা জালালুদ্দিন হয়েছেন সহকারী মহাসচিব। যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন হয়েছেন সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক। মওলানা ফয়সাল আহমদ হয়েছেন সহ প্রচার সম্পাদক।
দলটির বেশ কয়েকজন ভক্ত ও অনুসারী আলেম জায়গা পেয়েছেন হেফাজতের বিভিন্ন পদে।
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য