হেফাজতে ইসলামের নতুন যে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক নেতা আছেন আগের মতোই। তবে বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলগুলোর কোনো নেতাই স্থান পাননি।
হেফাজতের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটির আকারও ছোট করা হয়েছে। ১৫১ সদস্যের কমিটিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৩৩ সদস্যে।
এর পাশাপাশি ৯ সদস্যের একটি খাস কমিটি করা হয়েছে, যার কাজ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে। এই কমিটিতে আছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।
অরাজনৈতিক দাবি করা হেফাজতের এই কমিটিরও সব নেতা রাজনীতি থেকে মুক্ত নন। তবে পার্থক্য হলো, প্রথমবারের মতো এই কমিটির নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলের কেউ নন।
এই কমিটির যে নেতারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগই খেলাফত আন্দোলনের নেতা। এটি হাফেজ্জী হুজুর নামে পরিচিত মোহাম্মদ উল্লার দল। তার নাতি আতাউল্লাহ হাফেজ্জীকে নায়েবে আমির বা সহসভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিকদের বাদ দেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, যিনি গত কয়েক বছরে উগ্র বক্তব্য দিয়ে দেশজুড়ে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তার পাশাপাশি তার দল খেলাফত মজলিসেরও কোনো নেতাকে রাখা হয়নি এই কমিটিতে।
কেবল কেন্দ্রীয় কমিটি নন, জেলা কমিটিতেও এই পরিবর্তনগুলো আসবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ স্থানীয় কমিটিগুলো থেকেও বিএনপি-জামায়াতের শরিকদের বাদ দেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর কমিটি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এখানেও রাজনৈতিকভাবে পরিচিত কাউকে রাখার সম্ভাবনা কম।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক বাদ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী সরাসরি এভাবে বক্তব্য দিতে নারাজ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাদ দেয়ার প্রশ্নই নেই। আমাদের এখানে আজকে যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাই হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ১৫১ জন। এখন আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট পরিসরে কমিটি করেছি। এর পরে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কাদের রাখা হবে, না রাখা হবে।’
যারা কারাগারে আছেন, তাদের অপরাধী মনে করে কমিটিতে রাখা হয়নি কি না- এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাউকে অপরাধী মনে করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অপরাধী মনে করতে পারে আদালত।’
অরাজনৈতিক হেফাজতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার
সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকারের বিরোধিতার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবমুক্ত হলো কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই সংগঠনটি।
হেফাজত বরাবর নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করলেও এর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা আর হাতে গোনা দুই-এক জন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক।
যে কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হেফাজত নানা সময় বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সে জন্য একটি কমিটি করে আল্লামা শফীকেই করা হয় প্রধান। কিন্তু বিএনপি জোটের শরিক মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসরা সেই উদ্যোগকে ভণ্ডুল করে দেন।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে হেফাজতের কারও বিচারের দাবি ওঠেনি। তার পরেও মঞ্চের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করে ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি।
এই আন্দোলনে হেফাজত সফল হলে জামায়াতের মানবতাবিরোধী অপরাধী নেতারা বেঁচে যেতে পারতেন। কিন্তু হেফাজতের কী লাভ হতো, তা তর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
ওই ঘটনার পর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেফাজতের নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে কাজ করেছেন প্রকাশ্যেই। শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালানো হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলে তাদের আবেগী বক্তব্য ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে বলে ধারণা করা হয়। আর সে সময় আলোচিত হয়ে ওঠা সেই নির্বাচনে সবগুলো এলাকাতেই আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়, যদিও তার পাঁচ বছর আগে সবগুলো এলাকাতেই জিতেছিল ক্ষমতাসীন দল।
তবে পরে সেই গণহত্যার প্রমাণ দিতে পারেনি হেফাজত আর প্রাথমিকভাবে যারা নিহত হন বলে দাবি করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই জীবিত ফিরে আসেন। আর সরকারের সঙ্গে দূরত্বও কমিয়ে আনে হেফাজত।
শাপলা চত্বরের সেই ঘটনাপ্রবাহের পর অবশ্য আল্লামা শফী আওয়ামী লীগ সরকারের কাছাকাছি আসতে পারেন আর ২০১৭ সালে তার হাতেই কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত তুলে দেয়া হয়।
তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আবার ঘুরে যায়। ওই মাসের শেষ দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর নভেম্বরে হেফাজতের যে সম্মেলন করা হয়, তাতে শফীর অনুসারীদের বাদ দেয়া হয়। ১৫১ সদস্যের যে কমিটি করা হয়, তাদের শতাধিক নেতাই বিএনপি-জামায়াতের শরিক দলের নেতা।
১৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিরোধিতা করে শফীপন্থিরা আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করেই অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াতের দখলে যাচ্ছে হেফাজত। আর কমিটি গঠনের পর তাদের এই অভিযোগ প্রকারান্তরে সত্য বলেই প্রতিভাত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে আসছিল হেফাজত। তবে সফরের তিন দিন আগে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নেতারা ঘোষণা করেন, তাদের কোনো কর্মসূচি থাকবে না সেদিন।
তবে ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ করে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘মোদি ঢাকায় এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে’।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে হেফাজতের কী সম্পর্ক সে ব্যাখ্যা কখনও সংগঠনটি দেয়নি। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু হওয়ার পর থেকে আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বারবার বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কে থাকবে না থাকবে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দুই দফা দেখা করে সমঝোতার চেষ্টা করেন হেফাজত মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী। আর ১৫ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক নেতায় পরিপূর্ণ কমিটি ভেঙে দেন বাবুনগরী। সেই রাতেই অবশ্য গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি।
এরপর থেকেই বলাবলি হচ্ছিল, হেফাজত এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবমুক্ত হবে। হলোও তাই।
নতুন কমিটিতে কারা
৩৩ সদস্যের কমিটিতে আমির ও মহাসচিব পদে নতুন মুখ নেই। দুই শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদী সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না আগেও।
নায়েবে আমির হয়েছেন আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মীযানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মুফতি জসিমুদ্দীন।
যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আব্দুল আউয়াল, (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর), মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।
সহকারী মহাসচিব হযরত মাওলানা জহুরুল ইসলাম (মাখজান), মাওলানা ইউসুফ মাদানী (আল্লামা শফীর ছেলে)।
তবে ইউসুফ মাদানী এই পদ ও কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম)কে।
অর্থ সম্পাদক হয়েছেন মুফতি মুহাম্মদ আলী (মেখল), সহ-অর্থসম্পাদক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট)।
প্রচার সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী (সাভার) সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা জামাল উদ্দীন (কুড়িগ্রাম)।
দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (উত্তরা, ঢাকা), সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফরুক (নোয়াখালী)।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন মোবারাকুল্লাহ, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ফয়জুল্লাহ্ (মাদানীনগরের পীর), ফোরকানুল্লাহ খলিল (দারুল মা'আরেফ, চট্টগ্রাম), মোশতাক আহমদ, (খুলনা দারুল উলুম), রশিদ আহমদ, (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাহমুদল হাসান (ফতেহপুরী) ও মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।
হেফাজত নতুন কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীরও রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
নতুন খাস কমিটির সদস্য মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী একসময় ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি থাকলেও, ২০১৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। মীযানুর রহমান চৌধুরী গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাদ্রাসা দাওয়াতুল হকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও, বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর আর রাজনীতি করেননি। তিনি কাপাসিয়ার শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
নতুন কমিটির নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী খেলাফত আন্দোলনের আমির। দলটি বিএনপি-জামায়াতের জোটে নেই। এ ছাড়াও নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি এখন রাজনীতিতে নেই।
বিএনপি-জামায়াতের যে সঙ্গীরা বাদ
২০ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুর), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা আনোয়ারুল করিম (যশোর) ও মাওলানা নুরুল ইসলাম খান (সুনামগঞ্জ) জায়গা পাননি।
যদিও সংগঠনটির সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর হেফাজতের আনাসপন্থিদের দলে যোগ দিয়েছেন। গত ২ জুন তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
মামুনুল হক ছাড়াও বাদ পড়েছেন জমিয়ত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব ও নাসির উদ্দিন মুনির।
এ ছাড়াও দলটির ফজলুল করীম কাসেমী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীও কমিটিতে স্থান পাননি।
জমিয়ত নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ছিলেন হেফাজতের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনিও এবার কমিটিতে নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের ছয়জন নেতা স্থান পেয়েছিলেন গত নভেম্বরের সম্মেলনে। এদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে থানা দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, নায়েবে আমির হওয়া আহমাদ আবদুল কাদেরকেও বাদ দেয়া হয়। কাদের ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
এ ছাড়া জমিয়ত নেতা মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী, মাওলানা তাফহিমুল হক, মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী ও মাওলানা লোকমান মাজহারীও এবারের কমিটিতে স্থান পাননি।
জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হেফাজতের গত কমিটি দাওয়াহ সম্পাদক হওয়া মাওলানা নাজমুল হাসানও বাদ পড়েছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন বাদ দিল, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গতকালকেও শুনলাম আমার নাম আছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দিতে কোনো আইনগত বাঁধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির (উত্তরাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন কাউকে খুশি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের দেখাক কোন আইনে শাপলা প্রতীক এনসিপিকে দেওয়া যাবে না। রোববার দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সমন্বয় সভা শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, যে নির্বাচন কমিশন একটি রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রাপ্য মার্কা দেয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারে না, আমরা মনে করি সেই কমিশনের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এই বাংলাদেশে হতে পারে না। এনসিপি আমাদের জায়গা থেকে অবশ্যই প্রত্যাশা করি, যে আমরা শাপলা প্রতীক পেয়েই আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো। এটা যদি তারা আমাদের সাথে অন্যায় করে, তাহলে আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্বে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তাঘাটে নেমে হাহাকার করতো। কর্মসূচী দিয়ে হাহাকার করতো। আমরা অনেক অফিস দেখেছি যে, অফিসের সামনে ১০ জন লোক দাড়ানোর মতো ছিল না, বড় বড় রাজনৈতিক দলের অফিস। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জনগণ তখনই রাস্তায় নেমেছে, যাদের ওপর জনগণ আস্থা রেখেছে। এখন যদি জনগণের ওই আস্থার প্রতিদান কেউ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল না দেয়, জনগণ তাদের মতো করে আগামীতে যখন সুযোগ হবে জনগণ তার সুফল দেখাবে। আমরা স্পষ্ট করে বলি, আপনারা ইতিহাস থেকে দয়া করে শিক্ষা নেন। জুলাই সনদ আপনারাও চান, আমরাও চাই। আপনারা যদি জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণা পত্রের মতো নাম কাওয়াস্তে একটি পেপার চান, ওই সনদ আমরা চাই না।
এর আগে তিনি জেলা এনপিসির সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। জেলা এনপির প্রধান সমন্বয়কারী ফয়সনাল করিম সোয়েবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আতিক মুজাহিদ ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ডা. মো. আব্দুল আহাদসহ প্রমুখ নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির ১ নং সদস্য মানিকগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এস.এ জিন্নাহ কবির বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে ঘোষিত রাস্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ কীভাবে চলবে, শিক্ষিত যুবকদের চাকরি ব্যবস্থা করা হবে, চাকরী যতদিন না হবে তাদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সরকার ক্রয় করবে। ৩১ দফায় কৃষকদের কৃষি উপকরণ, কৃষক-শ্রমিক গ্রাম-গঞ্জে খেটে খাওয়া দিনমুজুর, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কথা রয়েছে। শনিবার রাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা কলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বিএনপির উদ্যোগে তালুকনগক ডিগ্রী কলেজ মাঠে তারেক রহমানের ৩১ দফার প্রচারণা সভা ও লিফলেট বিতরণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরের উন্নয়ন ও কৃষক শ্রমিক, দু:স্থ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করব।
তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে ও কলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক আব্দুস সামাদ এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার রবিউজ্জল রবির সঞ্চলানায় আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি লোকমান হোসেনসহ নেতারা।
শেরপুর-১ (সদর) আসনের বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলোচিত নেত্রী সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, আমি সংসদে যেতে পারলে শেরপুরের দেড় থেকে দুই লাখ বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, আমাকে আপনারা জাতীয় সংসদে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীরা যাতে শুধু ঘরে বসে না থাকে সে জন্য তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আমি সম্মানিত শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন করি এবং একাত্মতা প্রকাশ করছি। তাদের চাকরি জাতীয়করণের জন্য আমি চেষ্টা করব।
ডা. প্রিয়াঙ্কা গত শনিবার সন্ধায় শহরের ৫নং ওয়ার্ডের খরমপুর মহল্লার ডা. সেকান্দর আলী কলেজ মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজিত এক নারী সমাবেশে এসব কথা বলেন।
জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুলতানা রাজিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ নারী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সদস্য সচিব ও অধ্যক্ষ এবিএম মামুনুর রশিদ পলাশ, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. হযরত আলী, সদস্য সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো. জাফর আলী. বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপন, প্রভাষক শফিউল আলম চান, রেজাউল করিম রুমি, শ্রমিক দল নেতা মো. শওকত হোসেনসহ আরও অনেকে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আমাকে পরাজিত করা হয়। তারপরেও এ আসনের সকল নারীরা আমার সাথে ছিলেন সে জন্য আমি এই নারীদের ছেড়ে কখনোই চলে যাব না। আমি আপনাদের ঋণের কথা কখনোই ভুলতে পারব না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার পর দেশে নির্বাচন নিয়ে আর কোন সমস্যা নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপি প্রত্যাশা করে।
শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা প্রসঙ্গে দুদু বলেন, সবার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। সকলের ভিন্নমত পোষনের সুযোগ আছে। যেসব দল ভিন্নমত পোষণ করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি আমাদের ধারণা তারা ভবিষ্যতে স্বাক্ষর করবে। কেননা, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, যেসব দল স্বাক্ষর করেনি, তাদের জন্য ভবিষ্যতেও সুযোগ আছে।
বিএনপি সরকার গঠন করলে ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়ন গতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন শামসুজ্জামান দুদু।
নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শহীদ পরিবার অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হলেও, তাদের মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে বসিয়ে অমর্যাদা করা হয়েছে। আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে জুলাই সনদকে ‘পাওয়ার এলিট’-এর সেটেলমেন্ট বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতরা কিছু দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যবদ্ধ কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারের পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দিলেও, শুরুতে যদি বিষয়টি আমলে নেওয়া হতো তাহলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না।
তিনি বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে আহত যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।
এনসিপি সদস্য সচিব আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করেই এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা না দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। জুলাই সনদের কোনো আইনভিত্তি না দেওয়া, বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ না করা এবং পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে না আনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছি।
তিনি বলেন, এনসিপি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ৭২ সালের বন্দোবস্ত বিলোপ করে নতুন সাংবিধানিক অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিচার সংস্কারের অংশ হিসেবে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনগণ এই দাবিতে এনসিপিকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারে জোরালো ভূমিকা রেখেছি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। সনদের আইনিভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর উল্লেখ নেই। আমরা বলেছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনিভিত্তি থাকতে হবে। কিন্তু সনদে জনগণের সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতার প্রকৃত মৌলিক সত্যের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত বেসিক স্ট্রাকচারের আওতাভুক্ত। ফলে ৭২ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এতে জুলাই সনদ জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণায় পরিণত হবে।
এ কারণে এনসিপি সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে গণভোটের পূর্বে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির আহ্বান জানিয়েছে—যাতে এর আইনভিত্তি, বৈধতা ও জুলাই অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
শেষে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিয়ে আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় আমরা জনগণের পাশে থাকব। কোনো অবস্থাতেই জুলাই সনদকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনিভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্টে’ পরিণত করা যাবে না। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
যুব ও নারী সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ঢাকসু, জাকসু ও চাকসুতে যুব সমাজ ছাত্রশিবিরের ওপর আস্থা রেখেছে। সব জায়গায় একই চিত্র। মেয়েদের ও তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে। এর প্রতিচ্ছবি জাতি আগামীতে দেখবে ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ঢাকা-১৫ নির্বাচনী আসনের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন বক্তব্যজুড়ে।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করছি, দুটো সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে—একটি আমাদের যুবসমাজ, আরেকটি আমাদের মায়েদের সমাজ। আজ পর্যন্ত তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়ে গেছে। সব জায়গায় একই চিত্র—মেয়েদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর; তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। এরই প্রতিচ্ছবি আগামীতে বাংলাদেশ দেখবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে আমাদের মায়েদের সম্মান ঘরে-বাইরে কোথাও নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের জীবনী থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছে যে আমাদের মায়ের জাতিকে মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এই রাষ্ট্রে বাস্তব প্রয়োজনে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখবেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইমান, ধর্মবিশ্বাস—এসবের হিসাব নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা এই রাষ্ট্রের মানুষকে সম্মান করব। তারা এ দেশের নাগরিক। আমরা দেখব না সে কোন ধর্মের, কোন দলের, তার গায়ের রং কী, মুখের ভাষা কী, সে পাহাড়ে থাকে নাকি সমতলে থাকে। সে আমার ভাই, সে আমার বোন, সে এই দেশের নাগরিক—সেই হিসেবে আমরা তাদেরকে পরিচালনা করব।’
শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো প্রাধান্য আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে। এ দেশের অর্থনীতি ভাঙাচোরা, উল্টে পড়া, ধসে যাওয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে প্রকৃত সেবকদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই লোকটা আমাদের দলের হতে পারে, না-ও হতে পারে। সেই লোকটা মুসলমান হতে পারে, অন্য ধর্মেরও হতে পারে। যে এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত, তার হাতে এই দায়িত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে। এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাইছি, যেখানে শাসকেরা জনগণের কাছে তাদের ত্রুটি ও ঘাটতির জন্য মাফ চাইবে। তারা কারও কাছ থেকে প্রশংসা চাইবে না, বাহবা চাইবে না, কোনো স্লোগান চাইবে না, যেমন “অমুক ভাই, তমুক ভাই জিন্দাবাদ”—এটা চাইবে না। তাদের অন্তর ভয়ে কাঁপবে, জনগণের এই বোঝা “আমার কাঁধে যেটা দেওয়া হয়েছে, আমি তা বহন করতে পারছি কি না”—এই ভেবে।
তিনি বলেন, যে সমাজে যুব সমাজ সিদ্ধান্ত নেয় এবং নারীরা এগিয়ে আসে, সেই সমাজ ও জাতি কখনো পরিবর্তন না হয়ে পারে না।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রথম অঙ্গীকার, একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। শিক্ষা ভালো না হলে জাতি কখনো ভালো হতে পারে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।
দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতি বাসা গেঁড়ে বসে আছে। এই দুর্নীতি থাকবে না। এজন্য যত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, করবো ইনশাআল্লাহ। লড়াই করবো, হিমালয়ের মতো পর্বত সমান বাধা আসলেও দুর্নীতির অস্তিত্ব যেন আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারি।
তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার প্রাপ্ত হক বা ন্যায়বিচার পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এজন্য যেন আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা, নারী ও শিশু কাউকে চেষ্টা করতে না হয়।
জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে করার বিষয়ে আবারও জোরালো মত দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ গণভোট আগে হলে জাতীয় নির্বাচনে বিলম্ব হবে। আর জনগণের নির্বাচিত সরকার দ্রুত না এলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই এমন এক জায়গায় উপনীত হবেন যাতে আমাদের পরবর্তী গণতন্ত্রের অভিযাত্রার পথে আমাদের যেন বিঘ্ন না ঘটে। তা না হলে কালো ঘোড়া প্রবেশ করতে পারে, কালো ঘোড়া ঢুকে যেতে পারে।
রিজভী বলেন, উন্নত দেশ দীর্ঘদিনের গণতন্ত্র চর্চার দেশেও এখন কথা উঠেছে, এই পদ্ধতিতে (পিআর) জনমতের ট্রু রিফ্লেকশন হয় না। এ নিয়ে সেইসব দেশে আলাপ-আলোচনা, বির্তক চলছে। আপনি জানেন যে, জাপান গণতন্ত্রের দিক থেকে অতি উন্নত একটি দেশ এবং সেখানেও ৩৭ শতাংশ পিআর পদ্ধতি চালু আছে। যেখানে সারাবিশ্বেই পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, কোথাও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি, সেখানে হঠাৎ করে আমাদের এখানে কেনো চালু করতে চাইবেন?
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আপনি হঠাৎ করে পিআরের কথা বলেন, এতে জনমনে বিভ্রান্ত তৈরি করবে। আমি এ পর্যন্ত যত জরিপ দেখেছি, বিশেষ করে গণমাধ্যমে- সেখানে অধিকাংশ মানুষের আনুপাতিক হারে ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। অনেকেই কনফিউজড অবস্থায় আছেন।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ যেগুলো অতি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ যেমন ব্রিটেন, আমেরিকা যদি আমরা বলি বা আরও অন্য দেশে প্রতিনিধি নির্বাচনের যে পদ্ধতিটা চালু আছে- সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া। আমাদের এখানে কী এমন ঘটনা ঘটলো যে পিআর উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের মডেল? এটা আমার মনে হয়, অবান্তর কথা তারা (জামায়াতে ইসলামী) বলছেন। এটা বলে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করছেন অথবা তাদের অন্য কোনো মাস্টার প্ল্যান আছে কি না আমি জানি না।
মন্তব্য