হেফাজতে ইসলামের নতুন যে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক নেতা আছেন আগের মতোই। তবে বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলগুলোর কোনো নেতাই স্থান পাননি।
হেফাজতের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটির আকারও ছোট করা হয়েছে। ১৫১ সদস্যের কমিটিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৩৩ সদস্যে।
এর পাশাপাশি ৯ সদস্যের একটি খাস কমিটি করা হয়েছে, যার কাজ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে। এই কমিটিতে আছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।
অরাজনৈতিক দাবি করা হেফাজতের এই কমিটিরও সব নেতা রাজনীতি থেকে মুক্ত নন। তবে পার্থক্য হলো, প্রথমবারের মতো এই কমিটির নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক দলের কেউ নন।
এই কমিটির যে নেতারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগই খেলাফত আন্দোলনের নেতা। এটি হাফেজ্জী হুজুর নামে পরিচিত মোহাম্মদ উল্লার দল। তার নাতি আতাউল্লাহ হাফেজ্জীকে নায়েবে আমির বা সহসভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিকদের বাদ দেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, যিনি গত কয়েক বছরে উগ্র বক্তব্য দিয়ে দেশজুড়ে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তার পাশাপাশি তার দল খেলাফত মজলিসেরও কোনো নেতাকে রাখা হয়নি এই কমিটিতে।
কেবল কেন্দ্রীয় কমিটি নন, জেলা কমিটিতেও এই পরিবর্তনগুলো আসবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ স্থানীয় কমিটিগুলো থেকেও বিএনপি-জামায়াতের শরিকদের বাদ দেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর কমিটি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এখানেও রাজনৈতিকভাবে পরিচিত কাউকে রাখার সম্ভাবনা কম।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক বাদ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী সরাসরি এভাবে বক্তব্য দিতে নারাজ।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাদ দেয়ার প্রশ্নই নেই। আমাদের এখানে আজকে যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাই হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ১৫১ জন। এখন আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট পরিসরে কমিটি করেছি। এর পরে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কাদের রাখা হবে, না রাখা হবে।’
যারা কারাগারে আছেন, তাদের অপরাধী মনে করে কমিটিতে রাখা হয়নি কি না- এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাউকে অপরাধী মনে করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অপরাধী মনে করতে পারে আদালত।’
অরাজনৈতিক হেফাজতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার
সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকারের বিরোধিতার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবমুক্ত হলো কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই সংগঠনটি।
হেফাজত বরাবর নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করলেও এর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা আর হাতে গোনা দুই-এক জন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক।
যে কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হেফাজত নানা সময় বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সে জন্য একটি কমিটি করে আল্লামা শফীকেই করা হয় প্রধান। কিন্তু বিএনপি জোটের শরিক মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসরা সেই উদ্যোগকে ভণ্ডুল করে দেন।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে হেফাজতের কারও বিচারের দাবি ওঠেনি। তার পরেও মঞ্চের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করে ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি।
এই আন্দোলনে হেফাজত সফল হলে জামায়াতের মানবতাবিরোধী অপরাধী নেতারা বেঁচে যেতে পারতেন। কিন্তু হেফাজতের কী লাভ হতো, তা তর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
ওই ঘটনার পর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেফাজতের নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে কাজ করেছেন প্রকাশ্যেই। শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালানো হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলে তাদের আবেগী বক্তব্য ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে বলে ধারণা করা হয়। আর সে সময় আলোচিত হয়ে ওঠা সেই নির্বাচনে সবগুলো এলাকাতেই আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়, যদিও তার পাঁচ বছর আগে সবগুলো এলাকাতেই জিতেছিল ক্ষমতাসীন দল।
তবে পরে সেই গণহত্যার প্রমাণ দিতে পারেনি হেফাজত আর প্রাথমিকভাবে যারা নিহত হন বলে দাবি করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই জীবিত ফিরে আসেন। আর সরকারের সঙ্গে দূরত্বও কমিয়ে আনে হেফাজত।
শাপলা চত্বরের সেই ঘটনাপ্রবাহের পর অবশ্য আল্লামা শফী আওয়ামী লীগ সরকারের কাছাকাছি আসতে পারেন আর ২০১৭ সালে তার হাতেই কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত তুলে দেয়া হয়।
তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আবার ঘুরে যায়। ওই মাসের শেষ দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর নভেম্বরে হেফাজতের যে সম্মেলন করা হয়, তাতে শফীর অনুসারীদের বাদ দেয়া হয়। ১৫১ সদস্যের যে কমিটি করা হয়, তাদের শতাধিক নেতাই বিএনপি-জামায়াতের শরিক দলের নেতা।
১৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিরোধিতা করে শফীপন্থিরা আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করেই অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াতের দখলে যাচ্ছে হেফাজত। আর কমিটি গঠনের পর তাদের এই অভিযোগ প্রকারান্তরে সত্য বলেই প্রতিভাত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে আসছিল হেফাজত। তবে সফরের তিন দিন আগে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নেতারা ঘোষণা করেন, তাদের কোনো কর্মসূচি থাকবে না সেদিন।
তবে ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ করে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘মোদি ঢাকায় এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে’।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে হেফাজতের কী সম্পর্ক সে ব্যাখ্যা কখনও সংগঠনটি দেয়নি। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু হওয়ার পর থেকে আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বারবার বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কে থাকবে না থাকবে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দুই দফা দেখা করে সমঝোতার চেষ্টা করেন হেফাজত মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী। আর ১৫ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক নেতায় পরিপূর্ণ কমিটি ভেঙে দেন বাবুনগরী। সেই রাতেই অবশ্য গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি।
এরপর থেকেই বলাবলি হচ্ছিল, হেফাজত এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবমুক্ত হবে। হলোও তাই।
নতুন কমিটিতে কারা
৩৩ সদস্যের কমিটিতে আমির ও মহাসচিব পদে নতুন মুখ নেই। দুই শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদী সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না আগেও।
নায়েবে আমির হয়েছেন আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মীযানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মুফতি জসিমুদ্দীন।
যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আব্দুল আউয়াল, (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর), মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।
সহকারী মহাসচিব হযরত মাওলানা জহুরুল ইসলাম (মাখজান), মাওলানা ইউসুফ মাদানী (আল্লামা শফীর ছেলে)।
তবে ইউসুফ মাদানী এই পদ ও কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম)কে।
অর্থ সম্পাদক হয়েছেন মুফতি মুহাম্মদ আলী (মেখল), সহ-অর্থসম্পাদক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট)।
প্রচার সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী (সাভার) সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা জামাল উদ্দীন (কুড়িগ্রাম)।
দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (উত্তরা, ঢাকা), সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফরুক (নোয়াখালী)।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন মোবারাকুল্লাহ, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ফয়জুল্লাহ্ (মাদানীনগরের পীর), ফোরকানুল্লাহ খলিল (দারুল মা'আরেফ, চট্টগ্রাম), মোশতাক আহমদ, (খুলনা দারুল উলুম), রশিদ আহমদ, (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাহমুদল হাসান (ফতেহপুরী) ও মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।
হেফাজত নতুন কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীরও রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
নতুন খাস কমিটির সদস্য মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী একসময় ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি থাকলেও, ২০১৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। মীযানুর রহমান চৌধুরী গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাদ্রাসা দাওয়াতুল হকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও, বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর আর রাজনীতি করেননি। তিনি কাপাসিয়ার শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
নতুন কমিটির নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী খেলাফত আন্দোলনের আমির। দলটি বিএনপি-জামায়াতের জোটে নেই। এ ছাড়াও নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি এখন রাজনীতিতে নেই।
বিএনপি-জামায়াতের যে সঙ্গীরা বাদ
২০ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুর), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা আনোয়ারুল করিম (যশোর) ও মাওলানা নুরুল ইসলাম খান (সুনামগঞ্জ) জায়গা পাননি।
যদিও সংগঠনটির সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর হেফাজতের আনাসপন্থিদের দলে যোগ দিয়েছেন। গত ২ জুন তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
মামুনুল হক ছাড়াও বাদ পড়েছেন জমিয়ত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব ও নাসির উদ্দিন মুনির।
এ ছাড়াও দলটির ফজলুল করীম কাসেমী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীও কমিটিতে স্থান পাননি।
জমিয়ত নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ছিলেন হেফাজতের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনিও এবার কমিটিতে নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের ছয়জন নেতা স্থান পেয়েছিলেন গত নভেম্বরের সম্মেলনে। এদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে থানা দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, নায়েবে আমির হওয়া আহমাদ আবদুল কাদেরকেও বাদ দেয়া হয়। কাদের ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
এ ছাড়া জমিয়ত নেতা মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী, মাওলানা তাফহিমুল হক, মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী ও মাওলানা লোকমান মাজহারীও এবারের কমিটিতে স্থান পাননি।
জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হেফাজতের গত কমিটি দাওয়াহ সম্পাদক হওয়া মাওলানা নাজমুল হাসানও বাদ পড়েছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন বাদ দিল, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গতকালকেও শুনলাম আমার নাম আছে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২ জুলাই বুধবার সকাল ১০ টায় পটুয়াখালী ব্যায়ামাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পটুয়াখালী জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলন সফল করতে জোরে সোরে চলছে সকল ধরনের প্রচার- প্রচারণা ও প্রস্তুতি।
উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, সহ- প্রচার সম্পাদক মোঃ আসাদুল কবির শাহীন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান মামুন, সদস্য মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য ইঞ্জিঃ একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার, সদস্য মোঃ দুলাল হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া ও সঞ্চালনা করবেন সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি।
এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ তৃণমূল বিএনপির নেতা- কর্মীদের মাঝে এক ধরনের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৩০ জনসহ ৮টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার প্রায় ১৪০০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন (কমিটি নির্বাচন) বিকেলে পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে বলে জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ তিনটি শীর্ষ পদে এক ডজন প্রার্থীর নাম নেতা-কর্মীদের মুখে চাউর হচ্ছে। এ তিনটি পদের মধ্যে সভাপতি পদে যাদের নাম উঠেছে, তারা হলেন বর্তমান জেলা বিএনপি কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও অন্যতম সদস্য মাকসুদ আহমেদ বায়জীদ পান্না মিয়া।
সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পিপি এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান টোটন, সদস্য মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান নান্নু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ্যাডঃ মোহসীন উদ্দীন, জেলা বিএনপির সদস্য জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ মৃধা, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম লিটন ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ তৌফিক আলী খান কবির।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সদস্য জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ইমাম হোসেন নাসির, সাবেক জিএস আলমগীর হোসেন বাচ্চু, জেলা মৎস্য দলের সভাপতি ভিপি শাহীন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মশিউর রহমান মিলন ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ মাকসুদুর রহমান মাকসুদ।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী সভাপতি ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেয়াদউত্তীর্ন হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক এবং স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এন নাসির উদ্দীনের বৈঠকের পর বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের দিন নির্ধারণ ও সময়সূচি ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’
শনিবার (২৮ জুন) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন রিজভী।
প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের পর বিএনপি কি নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ প্রত্যাশা করে—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই তা আশা করি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিইসি নাসির উদ্দীন। বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ও আলোচনার বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করে, অধ্যাপক ইউনূস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই কাজ করবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারাও বিশ্বাস করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে জনগণ তাদের জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২। এবার সেটি হয়েছে ৩.৯। আমরা সরকারকে সেটি দেখার জন্য বলব। আমরা তো সমালোচনা করবই। অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি— নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে— যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনও প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে, ড. ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, ‘মব জাস্টিস’ বা জনতার উচ্ছৃঙ্খল বিচার সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি বলেছেন, ‘গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সকল নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক, বিচার হতে হবে আইনের মাধ্যমেই, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা এবং মব জাস্টিসের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
মব জাস্টিসের সাথে দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে আসামিরা হেনস্তা হন?
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সাবেক তিন সিইসি দায়ী থাকলেও আইনসম্মতভাবেই তাদের অপরাধের বিচার চায় বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশে আবারও করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে, কিন্তু সরকার কোনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া,নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ মাহমুদ হোসেন শ্যামল,সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ,সহ-সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, যুগ্ম-সাধারণ বেলাল উদ্দীন সরকার তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)।
সোমবার (২৩ জুন) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো সদস্য ও জাতীয় গণকংগ্রেস স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লি হংঝং ও অন্যান্য সিনিয়র সিপিসি নেতাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতে সিপিসি নেতারা বিএনপি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বৈঠককালে লি হংঝং আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভবিষ্যতে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, সিপিসি নেতারা আশা করেন যে, এই বৈঠক চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
তারা সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে নিয়মিত আলোচনা এবং অব্যাহত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন বলে জানান শায়রুল কবির।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের নেতৃত্বের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। চীন বৃহত্তর বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে তার ইতিবাচক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে, দিনের শুরুতে বিএনপির প্রতিনিধিদল চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন এবং তারা অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই সফরকে বিএনপি ও সিপিসির মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্কের লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, উভয় দল ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশা করছে।
এর আগে রবিবার রাতে সিপিসির আমন্ত্রণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে।
তারা বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (বেইজিং সময়) ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে পৌঁছান।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য আট সদস্য হলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের দল গণপিটুনির সংস্কৃতিকে সমর্থন করে না। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার গণপিটুটির ঘটনায় তাদের কোনো কর্মী জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৩ জুন) তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা গণপিটুনির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করে আসছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় স্বচ্ছতার সঙ্গে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হোক। নূরুল হুদার গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া আশাও করে তার দল।
তিনি বলে, ‘কিন্তু আমরা তার উপর যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে—তা সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী এতে জড়িত থাকে—তাহলে আমরা তদন্তের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব...এটি আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় প্রতিটি ব্যক্তি, সে যত গুরুতর অপরাধীই হোক না কেন, তিনি তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করুক। ‘সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়।’
রবিবার(২৩ জুন) রাতে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরার বাসভবনে একদল জনতা তাকে আক্রমণ করার পর গ্রেপ্তার করা হয়। নুরুল হুদার কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হুদা সাদা টি-শার্ট এবং লুঙ্গি পরে ছিলেন এবং তার গলায় জুতার মালা ছিল। এক পর্যায়ে একজন ব্যক্তি জুতা দিয়ে হুদার মুখে আঘাত করেন। ভিডিওটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার জন্য হুদার ভূমিকার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নুরুল হুদা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য দায়ী কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন।’
সালাহউদ্দীন বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধ্বংসের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মতো আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভেঙে ফেলার জন্যও দায়ী। ‘কিন্তু আমরা এই ধরনের বিষাক্ত সংস্কৃতি বা জনতার বিচারে বিশ্বাস করি না,’ বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী টুকু।
গণতন্ত্র মঞ্চ লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
কোনো এক ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা উচিত না বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (২২জুন) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমন কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে প্রস্তাব করেছিলাম—একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়্ত্বি পালন করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদের ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই। তিনটি দল ছাড়া সবাই এই প্রশ্নে এক জায়গায় এসেছি।’
‘অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সেটা যত বারই হোক। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা, আমি মনে করি। এটিই আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে, বলেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির।
তিনি বলেন, ‘এমন নজির বহুদেশে আছে। এটা বাংলাদেশেও জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ নিয়ে আমরা প্রায় ঐকমত্যে এসেছি। বিকালে আরও দুটো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হবে।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এরআগে গেল ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর পরেরদিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল তারা।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
মন্তব্য