বিএনপির নিখোঁজ এক নেতার বাসায় যাওয়ার পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে ঘিরে যে ঘটনাপ্রবাহ হয়েছে, তাতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসার যে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, সেটিরও কোনো শঙ্কা নেই বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস)-এ এক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ কোনো চাপে নেই।’
আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বছর ১৬টি বৈঠক হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। আমাদের সম্পর্ক ভালো বলেই তারা আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। এটি ভালো। আমাদের আতঙ্কের কারণ নাই, আশঙ্কারও কারণ নেই।’
বাংলাদেশ সফরে ১০ ডিসেম্বরের আগে আমেরিকা যে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি তাদের দায়িত্ব। যদি তাদের লোক এখানে আসে এবং আহত হয়, তাহলে দূতাবাসের দায়িত্ব নিতে হয় না। এটি ভুল নয়।
‘আর বিষয়টি আপনারা বরং তাদেরই জিজ্ঞাসা করেন। আপনি (সাংবাদিক) কি দেশে কোন আতঙ্ক দেখেন? তাহলে আপনি এটা নিয়ে এত আতঙ্কিত কেন?’
পিটার হাসের সঙ্গে কী হয়েছে
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পিটার হাস যান বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায়।
২০১৩ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে নিখোঁজ সুমনের বোন গড়ে তুলেছেন মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন। গত কয়েক বছরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া স্বজনদের নিয়ে এই সংগঠনটি সরকারের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এনে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
পিটার হাস সুমনের বাসায় যাওয়ার পর কী নিয়ে কথা হয়েছে, তা নিয়ে কোনো পক্ষ কিছু জানায়নি। তবে তিনি সেখানে যাওয়ার পর যা হয়, সেটি গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্র।
সুমনের বাসায় হাস যাওয়ার পর সেখানে যান ‘মায়ের কান্না’ নামে আরও একটি সংগঠনের সদস্যরা। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনা ও বিমান বাহিনীতে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা গড়ে তুলেছেন এই সংগঠন। তারা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
পিটার হাসকে এই সংগঠনের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসাররা তাদের কাছে ঘেঁষতে দেননি। তারা হাসকে নিয়ে দ্রুত ত্যাগ করেন ঘটনাস্থল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের দূত সোজা চলে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
মোমেন তখন তার কাছে জানতে চান, কোনো হামলা হয়েছে কি না। ‘না’ জবাব আসার পর তিনি প্রস্তাব দেন নিরাপত্তা বাড়াতে। তবে এটি জানিয়ে দেন, কোনো সংগঠনের কর্মসূচি তারা আটকাতে পারেন না।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সেদিন হাসের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক সংগঠন, নাগরিক সমাজের বিবৃতিও আসে, তাতে অভিযোগ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপি আছে পিটার হাসের পাশেই। তারা মনে করে এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে। সরকার এখন বিদেশিদেরও ভয় দেখাচ্ছে, এমন বক্তব্যও এসেছে দলটির পক্ষ থেকে।
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেখিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ঘটনার পরের দিনই ওয়াশিংটনে ঢাকার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। সেই বৈঠকে পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান দেশটির কর্মকর্তা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সেই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ডোনাল্ড লুকে ঢাকার অবস্থান ও ওই দিনের ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়। রাষ্ট্রদূত জানান, পিটার হাস চাইলে ঢাকায় তাকে অধিকতর নিরাপত্তা দেয়া হবে।
‘নতুন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা নেই’
মোমেন কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন নিয়েও। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার কোনো শঙ্কা নেই। ধনী দেশগুলো প্রায়শই নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা যাদের ওপর চাপ দিতে চায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। মনে আছে না, মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলো, আবার উঠিয়ে নিল।
‘তারা অনেক নিষেধাজ্ঞা দেয়। বড়লোকেরা অনেক নিষেধাজ্ঞা দেয়। এগুলো একদিকে আসে, অন্যদিকে চলে যায়। আমরা এগুলো নিয়ে মোটেই আতঙ্কিত নই।’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র্যাব এবং বাহিনীটির কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা। যাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন বিদায়ী পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদও।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে দলটির কর্মী-সমর্থকরা আরও একটি নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে প্রচার করতে থাকেন। সমাবেশের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আসা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে আরও একটি নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের ব্যর্থতা ও অপকর্মের জন্য র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবার যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে সেটার জন্যও দায়ী থাকবে সরকার।
মানবাধিকার প্রসঙ্গ
মন্ত্রী কথা বলেন ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফা নিয়েও। এ বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা মানবাধিকারে বিশ্বাসী নয়, তাদের মুখে মানবাধিকারের বুলি হাস্যকর, ভাঁওতাবাজি।’
বিএনপি শাসনামলে দেশের পরিস্থিতি স্মরণ করিয়ে মোমেন বলেন, ‘যারা সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তারা কীভাবে মানবাধিকারের কথা বলে? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। এমনকি আদালতের জজ সাহেবও শান্তিতে থাকতে পারেননি।
‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা হয় এবং ৬৩ জেলায় বোমাবাজি হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা একটি র্যালি করেন নিজের অফিসের সামনে। সেই র্যালিতে গ্রেনেড হামলা হয়, ২৪ জন মারা যায় এবং অনেকে জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।’
মোমেন বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) আগে সামাল দেয়া দরকার। এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তারা নাকি এখন সব ঠিক করে দেবেন। এটি হাস্যকর।’
আরও পড়ুন:বগুড়ার শিবগঞ্জে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাইভেটকারের যাত্রী ভাই ও বোন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় বোনের স্বামী হুমায়ূন আহত হয়েছেন।
শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মোকামতলা চকপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সিয়াম ও তার বোন কুহেলী আক্তার। তারা লালমনিরহাটের বাসিন্দা। আর হুমায়ূন বরিশালের হিজলা উপজেলার হোসেন আহম্মেদের ছেলে।
ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই রাসেল আহম্মেদ জানান, প্রাইভেট কারে তিনজন ছিলেন। তারা রংপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। মহাসড়কের চকপাড়া এলাকায় আসার পর প্রাইভেট কারের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারালে বিপরীত দিক থেকে আসা বগুড়াগামী এক ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়৷
দুর্ঘটনার পর তিনজনকে উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক ভাই ও বোনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বোনের স্বামী হুমায়ূনের চিকিৎসা চলছে।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দুর্ঘটনাকবলিত কার ও ট্রাক পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:কয়লা সংকটে বন্ধ থাকা বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী সপ্তাহে পুনরায় চালু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রনয় ভার্মা ।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিদর্শনে এসে শনিবার সকালে সাংবাদিকদের তিনি এমনটি জানান।
প্রনয় ভার্মা বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সব ধরনের পরিবেশগত বিষয় বিবেচনা করে প্লান্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। যার কারণে সুন্দরবনের কেন ক্ষতি হবে না।
বাংলাদেশে-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ একরাম উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় রামপাল কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। ডলার রিলিজ করতে কিছুটা সময় লাগার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে সমস্যা সমাধান হওয়ায় নতুন করে কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ সেখান থেকে রওনা দিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কয়লাবাহী জাহাজটি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌঁছাবে।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে নিয়মিত কয়লা আসবে। ফলে জুন মাস থেকে আবারও কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ ছাড়া দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জোরেশোরে কাজ চলছে। সবমিলিয়ে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কোনও সমস্যা হবে না।
গত ১৪ জানুয়ারি ডলার সংকটের জেরে কয়লা আমদানি না হওয়ায় রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় কয়লার আমদানি বন্ধ আছে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদী থেকে জেলের জালে ধরা পড়েছে ৫৫ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ। পরে স্থানীয় বাজারে মাছটি ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন বাবলু হালদার।
শনিবার দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী বাজারে বাগাড় মাছটি বিক্রির জন্য আনেন বাবলু হালদার। এদিন সকালে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি এলাকায় যমুনা নদী থেকে এক জেলের কাছ থেকে মাছটি কেনেন তিনি।
গোবিন্দাসী মাছ বাজার সমিতির সভাপতি বাবলু হালদার পরে গোবিন্দাসী বাজারে বাগাড় মাছটি ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। মাছটি কিনে নেন মধুপুর উপজেলার গারোবাজারের সুজন নামে এক ব্যক্তি।
ক্রেতা সুজন জানান, বিশাল আকৃতির বাগাড় মাছটি কিনে তারা কয়েকজন মিলে ভাগ করে নিয়েছেন।
বাবলু হালদার বলেন, ‘বেলকুচির যমুনা নদীতে এক জেলের জালে ধরা পড়ে মাছটি। বিক্রির উদ্দেশ্যেই সেখান থেকে মাছটি কিনে আনি আমি। পরে মাছটি ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জন প্রাণ হারিয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, বিগত মাসে যাত্রাপথে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল বা বাইক আরোহীরা।
সংবাদমাধ্যমে শনিবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত ও ৮৯৯ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ প্রাণহানি ও ৭৮ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নৌপথে ১৩ দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু, একজন আহত ও ছয়জন নিখোঁজ হয়।
সংস্থাটির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২০৫ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত জন ১১৪ বাইক আরোহী।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক সংবাদপত্র ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারির চেয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনা ৫.৩ শতাংশ এবং আহত ১০.০৪ শতাংশ বেড়েছে, তবে প্রাণহানি ৪.৬ শতাংশ কমেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারিতে সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৯.৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮.৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে ও ২৪.৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে।
সারা দেশে মোট দুর্ঘটনার ৫.২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং ১.০১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে ঘটেছে।
গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয় ১৭ জানুয়ারি। ওই দিনে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২ জানুয়ারি, যেদিন ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:দেশের দুই জেলার ওপর দিয়ে শুক্রবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও শনিবার কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসেও শৈত্যপ্রবাহের কোনো বার্তা দেয়া হয়নি।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি রাতের তাপমাত্রা বাড়ার আভাস দিয়েছে, যার অর্থ হলো দেশজুড়ে কমতে পারে শীতের অনুভূতি।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চতাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে বলা হয়, এ সময়ের শেষের দিকে রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ ৩০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৩ সালের জন্য জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের (পিবিসি) সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এর আগে ২০২২ সালে কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কমিশনের সদস্যরা ২০২৩ সালের জন্য ক্রোয়েশিয়াকে সভাপতি এবং বাংলাদেশ ও জার্মানিকে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রাষ্ট্রদূত মুহিত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে কমিশনের সভাপতির দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন।
শুক্রবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ সংবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত কমিশনে সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশের প্রতি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মুহিত আগামীতে কমিশনের কাজে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য