গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ওয়াজ মাহফিল করতে এসে আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান এবং তার তিন সহকারীকে অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। একজনকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ত্ব-হা ও তার তিন সহকারী মাওলানা শায়েক আবদুল আলিম, মাওলানা মোজাহিদ ও মাওলানা ফিরোজকে ঘিরে রেখেছে স্থানীয়রা।
ত্ব-হার ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ তাদের প্রায় আধা ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে মাওলানা মোজাহিদকে রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তাকে মারধরও করা হয়।
স্থানীয় মুসল্লি, মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী জানায়, ঘটনাটি ঘটে শনিবার। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের মোকন্দপুর জামে মসজিদের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে প্রধান বক্তা করা হয় ত্ব-হাকে।
গত ৮ নভেম্বর প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা নেন ত্ব-হার ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শায়েক আবদুল আলিম। বাকি টাকা ওয়াজ শেষে দেয়ার কথা ছিল।
শনিবার সকালে আবদুল আলিম মসজিদ কমিটিকে জানান, পুরো টাকা ছাড়া তারা ওয়াজে উপস্থিত থাকবেন না। পরে বাধ্য হয়ে আরও ২০ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠায় আয়োজক কমিটি। পরে ওয়াজে আসার পর দেয়া হয় আরও ১০ হাজার টাকা।
মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার সাখাওয়াত হোসেন শাহিন জানান, গত ৮ নভেম্বর ত্ব-হা ও তার সহকারী আবদুল আলিমের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হয় তাদের। কথা হয় ওয়াজ করতে হবে পুরো দুই ঘণ্টা।
শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ত্ব-হার ওয়াজ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পৌনে ৫টায় বক্তব্য শুরু করে সোয়া ৫টায় শেষ করে চলে যাচ্ছিলেন।
তখন কথামতো আরও দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দিতে বলা হয় ত্ব-হাকে। কিন্তু বগুড়ার সোনাতলায় আরেকটি মাহফিল থাকার কথা বলে তিনি চলে যেতে চান।
এ সময় ত্ব-হার তিন সহকারীর কথায় ক্ষিপ্ত হন স্থানীয়রা।
মাওলানা মোজাহিদ এক মুসল্লিকে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকায় আর কতক্ষণ বক্তব্য দিতে হবে?’
এটা বলার পর লোকজন তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তাকে মারধরও করা হয়।
সাখাওয়াত হোসেন শাহিন বলেন, 'এত টাকা দিলাম; ৩০ হাজার শ্রোতাকে ত্ব-হা ফাঁকি দিলেন। আধা ঘণ্টা বক্তব্য শোনার জন্য কি সকাল থেকে এত মানুষ বসে ছিল?'
তবে তিনি মাওলানা মোজাহিদকে হেনস্তা ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
আয়োজক কমিটি ও মসজিদ কমিটির সদস্য বোরহান উদ্দিন লেলিন বলেন, 'ত্ব-হার সাথে চুক্তি ছিল দুই ঘণ্টায় ৫০ হাজার। কিন্তু তিনি ওয়াজ করলেন ৩০ মিনিট। একটা টাকাও তো কম নেননি। এটা নিয়ে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে গেছিল। কিন্তু আমরা মারতে দিইনি। হাজার হলেও তো তিনি (ত্ব-হা) সম্মানী মানুষ।'
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোচাশহর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, 'ত্ব-হা তো কথা দিয়ে কথা রাখেননি। তাই লোকজন ক্ষিপ্ত হয়েছিল। আমি লোক পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করি।'
ত্ব-হার সঙ্গী মাওলানা মোজাহিদকে হেনস্তার কথা শিকার করলেও মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ক্রিকেটার থেকে ইসলামি বক্তা মনে যাওয়া ত্ব-হাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা হয় গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। ঢাকা থেকে গত ১০ জুন রাতে নিখোঁজ হন তিনি।
তখন স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকার মিরপুরের একজন সংবাদ সম্মেলনে এসে দাবি করেন, ত্ব-হাকে তুলে নেয়া হয়েছে।
পরে জানা যায়, রংপুরে ত্ব-হার আরও একজন স্ত্রী আছেন। আর তার মা আজেদা বেগম সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ত্ব-হা দুই স্ত্রীর সংসার নিয়ে খুব অশান্তিতে ছিলেন।
ত্ব-হাকে গুম করা হয়েছে, এমন দাবির মধ্যে গত ১৮ জুন প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি রংপুর মহানগরীর আবহাওয়া অফিস মাস্টারপাড়ায় পাওয়া যায় ত্ব-হাকে।
পরে জানা যায়, আট দিন গাইবান্ধার গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামে ছোটবেলার বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফের বাড়িতে ছিলেন তিনি।
শরীফের মাও পরে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন:পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় বুধবার বিকেলে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে এই প্রাণহানি ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।
পাহাড়ি সড়ক ধরে ছুটে চলার পথে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আর এর যাত্রী শ্রমিক সড়কের পাশের ঢালে ছিটকে পড়েন। কেউ কেউ ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও আটজন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হতাহত শ্রমিকদের বাড়ি রংপুর অঞ্চলে। তারা উদয়পুর-বাঘাইছড়ি সীমান্ত সড়কের ১৭ কিলোমিটার নামক স্থানে হারিজাপাড়া সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন তারা।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে গাড়িটিতে থাকা সবাই সীমান্ত সড়কের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ছিলেন। এই সড়কে অনেক স্থানে উঁচু নিচু পাহাড় আছে। উদয়পুর সড়কের ৯০ ডিগ্রি নামক স্থানে গাড়ি নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের কাজ শেষে খাগড়াছড়ির দিকে ফেরার পথে একটি ডাম্প ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। গাড়িটিতে মোট ১৭ জন শ্রমিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আহতদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। আগামী তিন বছরের জন্য এই পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এর ধারা-৭ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেয়া হয়। বিকেলে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এই পদে যোগদান করেন।
মোহাম্মদ ইউনুছ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সদস্য সচিব।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (২৪ এপ্রিল)। ২০১৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে টানা পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই পদে চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম টানা ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে।
চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ কে যুগোপযোগী করে ২৯ জুলাই ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে- চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য হিসেবে কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগলাভের জন্য বলে বিবেচিত হবেন না। জহিরুল আলম দোভাষ ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম মেয়াদে দুই বছরের জন্য ও ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
সিডিএ’র উপ-সচিব অমল কান্তি গুহ বলেন, ‘দুপুরে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান মহোদয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এরপর সিডিএ কার্যালয়ে আসবেন।’
মোহাম্মদ ইউনুছ প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইউনুছ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য।
ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলহাজারা স্টেশনে একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ট্রেনটি আটকা পড়ে। তবে কোনো হতাহতের ঘটে ঘটেনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের চকরিয়া রেলস্টেশনের ইনচার্জ মো. ফরহাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ট্রেনটির কয়েকটি বগি কেবল লাইন থেকে সরে গেছে। ট্রেনে আসনের বিপরীতে ৫০০ যাত্রীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা আরও ৮০ জন যাত্রী ছিলেন। সবাই নিজ ব্যবস্থাপনায় গন্তব্য রওনা হয়েছেন।
ডুলাহাজারা স্টেশনের ইনচার্জ আবদুল মান্নান বলেন, ঈদ স্পেশাল-৯ ট্রেনটি সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পৌনে ১০টার দিকে ডুলাহাজারা স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, লাইনচ্যুত কোচগুলো লাইনে তুলতে সময় লাগবে। তবে বিকল্প থাকায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে না।
পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বেশ কয়েকদিন ধরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের পর গত দুদিন কিছুটা কমে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছিল চুয়াডাঙ্গা জেলায়। তবে আবারও তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহের রূপ নিয়েছে।
বুধবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এর মধ্যে জেলার কয়েকটি জায়গায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে বেশ কিছু সময় ধরে (৪০ মিনিট) গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডে তা ১ দশমিক ৬ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়ায় ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
তাপদাহে স্বস্তি মিলছে না কোথাও। গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে সেখানেও মিলছে না শান্তি।
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল। দাবদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রমও।
দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘এই তাপে ধানের খেত শুকিয়ে যাচ্চি, বেশি বেশি সেচ দিতি হচ্চি। দিনের বেলায় পাম্পে খুব একটা পানি উটচি না। রাতি পানি দিতি হচ্চি। তাছাড়া আম, লিচু, কলা সব নষ্ট হয়ি যাচ্চি। গরমে আমারও মাটে টিকতি পারচি নি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবারের তুলনায় আজ (বুধবার) তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি বেড়েছে। এপ্রিল মাসজুড়ে এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য