প্রায় দুই যুগ ধরে চালিয়ে যাওয়া জোট ভেঙে গিয়ে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনাটি আবার হোঁচট খেল।
রাজধানীর গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশে দলগুলোকে অংশ নিতে আগের দিন বিএনপি উদাত্ত আহ্বান জানালেও কোনো দলের নেতারা তাতে যোগ দেয়নি। এই সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার যে কথা জানানো হয়েছিল, ঘোষণা হয়নি সেটিও।
এমনকি এই সমাবেশে যাবেন বলে গত ২৮ অক্টোবর ঘোষণা দেয়া মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও দেখা যায়নি সমাবেশে।
সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপির যে পরিকল্পনা, তাতে যত সম্ভব তত বেশি দলকে মাঠে নামাতে চায় দলটি। একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে যেন অন্য দলের কোনো আপত্তি না থাকে, সে জন্য এই জোটও ভেঙে দেয়া হয়েছে।
কয়েক মাস ধরে লুকোচুরির পর বিএনপির সমাবেশের দুই দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধির প্রশ্নে জোট ভেঙে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির এই বিভাগীয় সমাবেশ আগের ৯টি সমাবেশের ধারাবাহিকতা হলেও রাজধানীর এই জমায়েতকে ঘিরে রাজনীতিতে ছিল উত্তাপ। এখান থেকে কী ঘোষণা আসবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা তারা ঘোষণা করবেন।
সমাবেশ স্থল নিয়ে নানা ঘটনা শেষে শুক্রবার যখন গোলাপবাগ মাঠ চূড়ান্ত হয়, তার কিছুক্ষণ পর বিএনপির পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসে যা বলেন, তাতে যুগপতের সঙ্গীদেরকে জনসভায় যোগ দেয়ার ইঙ্গিত মেলে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে সকল নেতাকর্মী, সকল পর্যায়ের জনগণ ও আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যুগপৎ আন্দোলনে যে সব দল, ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।
‘আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আমরা সকাল ১১ টা থেকে শুরু করব। আমরা আমাদের সকল নেতাকর্মী, সমর্থক, এবং অন্যান্য দল যারা ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে, তাদের সকলকে এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা আগামীকাল শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ সফল করার জন্য উপস্থিত হবেন।’
গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যা বলেন, তাতে বোঝা যায়, যুগপতের সম্ভাব্য সঙ্গীরাও ১০ ডিসেম্বর সক্রিয় হবেন।
সেদিন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা বলেছি, অন্য দলগুলো গণতন্ত্রের জন্য তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচি পালিত হবে একই সঙ্গে, যাকে আমরা যুগপৎ বলে থাকি। সবাই নিজের পছন্দের এলাকা বা অফিসে কর্মসূচি পালন করবে।’
সমমনা যে দলগুলো তারা কি তাহলে ১০ ডিসেম্বর আলাদা আলাদা সমাবেশ করবে?- এমন প্রশ্ন রাখেন আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী।
ফখরুল জবাব দেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে মানেই এটা।’
গত ৪ ডিসেম্বরও মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির এক আলোচনায় সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা ন্যূনতম বিষয়ে একমত হয়েছি। আশা করি এই বিষয়গুলোকে আমরা সামনে নিয়ে আসব। আমাদের পুরো দাবিদাওবা, রূপরেখা জনগণের সামনে নিয়ে আসব।’
বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির জমায়েত দেখে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া মাহমুদুর রহমান মান্না দেখান উচ্ছ্বাস। গত ২৮ অক্টোবরও তিনি জানিয়ে দেন, বিএনপির ঢাকার সমাবেশে তিনি যোগ দিচ্ছেন।
গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতপন্থি সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম’এর একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে মান্না বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর সমাবেশ হবে। আর সেদিন কী হবে আমি তো কল্পনাই করতে পারি না। সত্যি সত্যি বলছি। কত মানুষ হবে! আর ওই খানে বলতে হবে আর যাব না, তুই যা তারপর যাব।’
তবে মান্না এদিন গোলাপবাগে যাননি। তার দল সেই কর্মসূচির দিন রাজপথে কোনো কর্মসূচিও রাখেনি।
২৪ ডিসেম্বরের গণমিছিলে ১১ দলের অংশ নেয়ার ঘোষণা
গোলাপবাগের সমাবেশে অংশ না নিলেও এই সমাবেশে ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে বিএনপি আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় যে মিছিলের ডাক দিয়েছে, তাতে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ১১টি দল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।
এসব দলগুলো বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক হিসেবে বছরের পর বছর এক সুরে কথা বলে গেছে এবং জোট আর নেই বলে বিএনপির পক্ষ থেকে আসা বক্তব্যের পর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
যে ১১টি দল এই মিছিলে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছে, তাদের মধ্যে আছে কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি বা এনপিপি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি বা জাগপা, বাংলাদেশ এলডিপি, ইসলামী ঐক্য জোটের একাংশ, এনডিপি, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়াতে ওলামা ইসলামের একাংশ এবং সাম্যবাদী দলের একাংশ।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার চীনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী চায়না সাদার্ন এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট আজ দুপুর একটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর চীনে এটি হলো অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন আর নেই।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এক সপ্তাহ ধরে ওই হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর তার জীবনাবসান হলো বলে পারিবারিক একটি সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সন্জীদা খাতুন ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। এর আগেও একই অসুস্থতায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
রাজধানীর ধানমণ্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সদ্যপ্রয়াত এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছে।
সন্জীদা খাতুনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। তার জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল।
তার বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী।
সন্জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষকতা দিয়েই তার কর্মজীবন শুরু। ঢাবির বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য