কথার লড়াই, এরপর সংঘাত সহিংসতার পথ মাড়িয়ে রাজধানীতে বিভাগীয় সমাবেশের জায়গা চূড়ান্ত হওয়ার পর বিএনপি সেখান থেকে সরকারকে বিদায়ের ১০ দফা ঘোষণার কথা জানিয়েছে। জোট ভেঙে গিয়ে যাদেরকে নিয়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন করতে চাইছে তাদেরকেও সেই সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সেই দলগুলো যেন নিজেরাও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে, সে অনুরোধও করা হয়েছে।
নয়াপল্টন নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এ নিয়ে বিরোধের মধ্যে বুধবারের সংঘর্ষের দুই দিন পর শুক্রবার বিএনপির প্রস্তাবেই গোলাপবাগ মাঠ তাদেরকে বরাদ্দ দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলটির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য।
বিএনপির হয়ে সেখানে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি গোলাপবাগে সমমনা দলগুলোকেও যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে সকল নেতাকর্মী, সকল পর্যায়ের জনগণ ও আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যুগপৎ আন্দোলনে যে সব দল, ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।
‘আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আমরা সকাল ১১ টা থেকে শুরু করব, আমরা আমাদের সকল নেতাকর্মী, সমর্থক, এবং অন্যান্য দল যারা ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে, তাদের সকলকে এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা আগামীকাল শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ সফল করার জন্য উপস্থিত হবেন।’
রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণকেও সমাবেশে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। মোশাররফ বলেন, ‘ঢাকার যারা জনসাধারণ আছে, আমাদের দলের নেতা কর্মী নয়, সেই সকল পর্যায়ের জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই স্বৈরাচরি ও গায়ের জোরের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে অপচেষ্টা করেছে, তার প্রতিবাদ ও জবাব চাওয়ার জন্য এবং নিজেদের মনের কথা বলার জন্য সমাবেশে উপস্থিত হোন।’
এই সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের নিন্দাও জানানো হয়। অভিযোগ করা হয়, বিএনপি যেন তার সমাবেশকে করতে না পারে, সে জন্যই জনসভাস্থল নিয়ে এত কিছু করা হয়েছে। তবে বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও বিএনপির এই সমাবেশ সফল হবে।
গোলাপবাগ তাদের নিজেদের চাওয়াই ছিল উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘এত গড়িমসি করে এই গোলাপবাগ মাঠ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। এর একটিই উদ্দেশ্য আমরা মনে করি যে, এই ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে যেন সকল জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে না পারি, সেজন্য শুধুমাত্র আমাদের এই ভেন্যু নিয়ে এত লুকোচুরি....।’
সমাবেশে সরকার বিদায়ের দফা ঘোষণা
১০ ডিসেম্বর সমাবেশে কী হবে- এটা নিয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে অভিযোগ করে মোশারফ বলেন, ‘আমাদের দলের মহাসচিব বলেছেন, বারবার বলেছেন যে, জনগণ বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যে রায় দিয়েছে, যে মতামত ব্যক্ত করেছে...যেই আমাদের এখনকার যে দাবিগুলো, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করা, লোডশেডিংকে কন্ট্রোলে আনা, ভবিষ্যতে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন, এসব দাবিগুলোতে কিন্তু আমরা আমাদের সমাবেশগুলো করেছি।
'কালকেও এই দাবি নিয়েই সমাবেশ হবে। যে সমাবেশ থেকে আমরা আগামী দিনের এই সরকারের বিদায়ের জন্য কতগুলো চার্টার্ড ডিমান্ড বা দফা ঘোষণা করব।’
যাদেরকে সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তারাও যেন বিএনপির এই দফার পক্ষে মাঠে নামে, সেই আহ্বানও জানান মোশাররফ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি সেই, যুগপৎভাবেই আমাদের এই যে ১০ দফা প্রণয়ন করেছি, সেটাকে ঘোষণা করবেন এবং যার যার অবস্থান থেকে ভবিষ্যতে যুগপৎভাবে এই দফাগুলো আদায়ের জন্য আমাদের আন্দোলনকে শানিত করার জন্য যার যার অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন এবং এই দফাগুলোর সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করবেন।’
গোলাপবাগে যাওয়া বিএনপির পরাজয় কি না
সংবাদ সম্মেলন শেষে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর সরকারের কথাতে বিএনপি যে গোলাপবাগে সমাবেশ করছে, সেটি দলটির পরাজয় কি না।
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘না’ ‘না’ বলতে থাকেন একসঙ্গে।
সেই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা নানা সময় বলে দিয়েছেন যে খোলা জায়গায়ই সমাবেশ করতে হবে, সড়কে নয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের কথাতেই সমাবেশ করছে। আর প্রধান অতিথি ও প্রধান উপদেষ্টাকে ছাড়া এই সমাবেশ..সবকিছু মিলিয়ে নেতাকর্মীরা কীভাবে দেখছেন। বিএনপি কীভাবে এটি সফল করবেন।
জবাবে মোশারফ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার এই স্থানটি আমাদের দেয়নি। এটা আমাদেরই প্রস্তাব। আমরা কালকে রাতে তা জানিয়েছি এবং মির্জা আব্বাস সাহেব নিজেই এই প্রস্তাব দিয়ে গেছেন পুলিশ কমিশনারকে। আর সেই প্রস্তাব নিয়েই আজকে আমাদের দুজন প্রতিনিধি এই প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। তাদের সামনেই পুলিশ কর্মকর্তা এই সম্মতি দিয়েছেন।
'আমরা চিঠিতে তাদের বলেছি যে, আমরা কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। যেহেতু আপনারা সেটিকে আমাদের সমাবেশের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না, সেক্ষেত্রে গোলাপবাগ মাঠে আমরা সমাবেশ করতে চাই। সেখানে মাঠ, মাইক ও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
‘দ্বিতীয়ত এই যে আপনারা প্রশ্ন করেছেন যে মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা গ্রেপ্তারে পর তাদের অনুপস্থিতিতে সমাবেশ করছি...। আমি বলব, এই সমাবেশ এখন আর দলীয় কোনো সমাবেশ না, এটা হচ্ছে জনগণের সমাবেশ। তাই আমরা কেউ থাকলাম না থাকলাম আমরা মনে করি এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নয়, এই সমাবেশটিই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আর সরকার এসব করছেই আমাদের সমাবেশ যেন না করি, তাই আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ এই সমাবেশ জনগণের সমাবেশ জনগণই করবে।’
এ সময় পাশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সমাবেশে উপস্থিতি যাতে কম হয় সেজন্য সরকার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আর একটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছে তারা। সেটি হলো, আলোচনার কথা বলে তাদের (মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস) নিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে আগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আজকে এই সারিতে আমাদের যাদেরকে দেখছেন, কালকে সমাবেশের মঞ্চে গেলে আপনারাও হতাশ হতে পারেন। অনুরূপ কাণ্ড সরকার আমাদের সঙ্গে করতে পারে এই আশঙ্কাও আছে। তারপরও জনগণের জনসভা তারাই সফল করবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, আবদুল মইন খান, স্বাস্থ বিষয়ক সম্পাদক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:যুবসমাজের জন্য সার্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি), যাতে দেশের প্রতিরক্ষায় যুবসমাজ অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ওসমানী মিলনায়তনে মঙ্গলবার ডিসি সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সংক্রান্ত অধিবেশনে তারা এ প্রস্তাব দেন।
অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘সিভিল মিলিটারি কোঅপারেশন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা প্রশ্ন করেছিলেন। সিভিল প্রশাসনের অফিসাররা যে অরিয়েন্টেশন করেন, ডিভিশন পর্যায়ে এই অরিয়েন্টেশনগুলা করা সম্ভব কি না, যাতে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়।’
‘আর একটা প্রশ্ন ছিল, আমাদের যুব সমাজের জন্য একটি ইউনিভার্সেল মিলিটারি (সর্বজনীন সামরিক) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কি না, যেখানে যুবসমাজের যারা আছেন, তারা মিলিটারি ট্রেনিং পেতে পারেন এবং দেশের প্রতিরক্ষায় তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘তারা নিজ নিজ কয়েকটি জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে চান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। রিমোট জায়গায় বা চরাঞ্চলে যেখানে হয়তো বেশি পরিমাণ ফোর্স দরকার বা লজিস্টিক নিয়ে যেতে হবে এই ধরনের এলাকায় তারা অভিযান পরিচালনা করতে চান। সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নেভির কাছে প্রশ্ন ছিল কীভাবে জাটকাবিরোধী অভিযানের বা আমাদের নদীতে যে সম্পদ আছে, সেই সম্পদ রক্ষায় তারা আরও কীভাবে ওতপ্রোতভাবে সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারেন।
‘আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য প্রশ্ন ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফন্ট যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তার কারণে কয়েকটি জেলায় পর্যটন শিল্প ব্যাহত হচ্ছে। এ পর্যটন শিল্প ব্যাহত হওয়ার কারণে সেখানকার ইয়াং জেনারেশন কাজ হারাচ্ছে, চাকরি হারাচ্ছে এবং তারা সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে পারি সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল।’
আবদুল হাফিজ বলেন, ‘দুই-একটি জেলায় অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো কীভাবে ধ্বংস করা যায়, সে বিষয়ে প্রশ্ন ছিল। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তারা উত্থাপন করেছিলেন।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমি উল্লেখ করেছি, স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হচ্ছে এবং কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা দেশকে একটা অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সে ব্যাপারে তাদের সজাগ থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের দাবি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারাও এ মতের পক্ষে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় জনপ্রতিনিধিরা নেই। তাদের দায়িত্বগুলো বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা পালন করছেন।
‘সেই জায়গা থেকে তাদের যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, আজকের ডিসি সম্মেলনে আমরা সেগুলো শুনেছি এবং এগুলো অ্যাড্রেস করেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যেকেই মূল দায়িত্বের বাইরে কিছু না কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একজন অফিসার যখন নিজ দায়িত্বের বাইরে আরও দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করেন, তার পক্ষে কোনোটাই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যে কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে নিয়ে আসা উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনও চলমান আছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও সরকার নেয়নি।
‘আশা করছি খুব দ্রুতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। হয় আমরা দ্রুতই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করব, অন্যথায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, চলতি মাসেই শতভাগ স্কুলে বই পৌঁছে যাবে।
ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান গণশিক্ষা উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের ৮৫ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। এ মাসেই বাকি স্কুলগুলোতেও বই পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা যুক্ত রয়েছেন। ডিসিরা প্রাথমিক শিক্ষার নানান সমস্যা চিহ্নিত করেছেন, যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ যেন সঠিকভাবে হয়, সে বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধন নেই, সেগুলোকে দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছেও বলে জানান উপদেষ্টা।
ওই সময় প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগের আন্দোলনে বিষয় জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা জানান, সুপারিশপ্রাপ্তদের প্রতি তার সহমর্মিতা আছে, তবে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার এক বৈঠক শেষে এমন দাবি করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। আরও ভালো করার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। যতদিন ডেভিলরা থাকবে, ততদিন অপারেশন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। সব লেভেলে যেন দুর্নীতি কমে, সে জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’
ওই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। গাজীপুর জিএমপি, শিল্প পুলিশে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবও সংশ্লিষ্ট ডিসি দিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বৃদ্ধি করার জন্য বলেছেন।
‘নৌ পুলিশ বৃদ্ধি করার জন্য বলেছেন। গাজীপুরে জনবল বৃদ্ধির কথা বলেছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের জনবল বৃদ্ধির জন্য বলেছেন।’
পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র না দেওয়া এবং এসপি ও ওসিদের এসিআর লেখার প্রস্তাব করেছিলেন ডিসিরা। এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ আলোচনার সময় ছিল খুব কম।’
আরও পড়ুন:গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকসহ ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে মঙ্গলবার তাদের হাজির করা হয়।
সকাল ১০ টার পর ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখন রয়েছেন আত্মগোপনে।
এদিকে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন:আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি হস্তান্তর করা হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের দ্বাদশ অধ্যায়ে রয়েছে অংশটি।
কমিশনের প্রতিবেদনে জনপ্রশাসনে কার্যকারিতার লক্ষ্যে সংস্কারের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে নাগরিক পরিষেবা প্রদানে জনপ্রশাসনের ভূমিকা, নাগরিক পরিষেবার কার্যকারিতা, আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছে।
সুপারিশে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার বিষয়ে বলা হয়, ‘নাগরিক সেবা প্রদানের বিষয়ে প্রশাসনিক পদ্ধতি তথা আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান সহজতর ও ডিজিটাল করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে জনপ্রশাসনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সঠিক নীতি-নির্ধারণের স্বার্থে তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা এবং নীতি-নির্ধারকদের কাছে তা পেশ করার নীতি চালু করা যেতে পারে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ প্রদান টার্গেট জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে। নাগরিকদের বিবিধ সরকারি পরিষেবা প্রদানের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা এবং সেখানে তাদের অভিগম্যতা সহজতর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
‘একটি গতিশীল ও কার্যকর পদ্ধতি চালু করতে হবে যাতে নাগরিকদের মতামত দেয়ার সুযোগ থাকে এবং তারা যেন স্বস্তি বোধ করে যে তাদের কথা শোনা হয়।’
কার্য সম্পাদনে প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রয়োগ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, ‘কার্যবিধিমালা, মন্ত্রণালয়/বিভাগের কর্মবণ্টন ও সচিবালয় নির্দেশমালা পর্যালোচনা করে তা সংশোধন বা বিয়োজন এবং অনলাইনে তা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিতে হবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে পাঁচটি ক্লাস্টারে ভাগ করা যেতে পারে।
‘সরকারি পরিষেবা সহজতর করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টাল স্থাপন করা। সরকারি পরিষেবা পদ্ধতি গতিশীল করার জন্য ই-গভর্ন্যান্স কৌশল বাস্তবায়ন করা। ডিজিটাল টুল ও ডাটা ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অধিকতর দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ খাতে বেশি বিনিয়োগ করা।’
সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ‘নাগরিকদের সেবা প্রদান ও সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারী ও পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক জায়গায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান জেলা প্রশাসকরা।
‘জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) অধ্যাদেশ পরিবর্তন হচ্ছে। তারপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখাতে বরাদ্দ নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাযথভাবে যেন পুনর্বাসন কার্যক্রম চলে। এখন থেকে ইউএনওরা টিনসহ কিছু সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কিনবেন।’
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যত্থানের পর সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে মনে করি। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
‘এ মাসের মধ্যেই জুলাই অধিদপ্তর গঠন হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করা সবাই জুলাই শহীদ। আর আহতরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত হবেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য