বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আমাতুল বুশরাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পায়নি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রামপুরা থানার পুলিশও বলছে ফারদিন হত্যায় বুশরার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে বুশরা জামিনে মুক্তি পেলে ‘তদন্তকাজে বিঘ্ন ও পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা’ জানিয়ে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন জানিয়েছে ডিবি। বিচারক সেটি গ্রহণ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে কারাবন্দি আছেন বুশরা।
তদন্তে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত না হয়েও বুশরার কারাবাসে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে এ মাসের মধ্যে জামিন না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সেমিস্টার থেকে ছিটকে পড়বেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপের পাশাপাশি তার শিক্ষাজীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
বুয়েট ছাত্র ফারদিন ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। বর্তমানে হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি। পাশাপাশি র্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত ১০টা নাগাদ বুশরাকে নিয়ে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন ফারদিন। এরপর রামপুরায় বুশরা যে মেসে থাকেন তার কাছাকাছি তাকে পৌঁছে দেন। এরপর আর ফারদিন বুয়েট ক্যাম্পাস বা নিজের বাসায় ফেরেননি।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় ১০ নভেম্বর আমাতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও পরিকল্পিতভাবে লাশ গোপন করার অভিযোগ এনে রামপুরা থানায় মামলা করেন তার বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা।
ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে রামপুরা থানার পুলিশ। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে পুলিশ আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডে দেয়। মামলাটির তদন্তভার ডিবির কাছে যাওয়ায় রিমান্ডে বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বও পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে বুশরাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যায় তার কোনো যোগসাজশ পাননি গোয়েন্দারা। তদন্তে ফারদিনের সঙ্গে বুশরার নিছক পরিচয় ও বন্ধুত্বের তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দেয়ার পর ফারদিন যেসব জায়গায় গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বুশরা। এমনকি ফারদিন তা জানাতেও চাননি।
‘বুশরা ফারদিনকে সেই রাতে সবশেষ ১০টা ৫৯ মিনিটে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠান। এতে তিনি জানতে চায় ফারদিন বাসায় পৌঁছেছেন কিনা? জবাবে ফারদিন লেখেন, হ্যাঁ। এরপর আর তাদের আর কোনো কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রিমান্ডে থাকার সময় বুশরাকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে ফারদিন যতক্ষণ ছিলেন তার বর্ণনা লিখে দিতে বলা হয়েছিল। প্রতিবারই বুশরা একই জিনিস লিখেছেন। আমরা ফারদিন হত্যা মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা এখনও পাইনি।’
তবে রিমান্ডে শেষে ১৬ নভেম্বর বুশরাকে আদালতে পাঠিয়ে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন জানান মামলার তদন্তকারী ডিবি পরিদর্শক মজিবুর রহমান।
আদালতে আবেদনে তিনি লেখেন, ‘আমাতুল বুশরাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়ে উচ্চ আদালতের নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
‘আসামি জামিনে মুক্তি পেলে তদন্ত কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করছি।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন জানালেও ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল্লাহর আদালতে শুনানি শেষে তা নাকচ করে বুশরাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যায় গ্রেপ্তার বুশরার জামিন মেলেনি
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ফারদিন হত্যায় বুশরার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কি না, এমন প্রশ্নে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নেগেটিভ।’
সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলেও বুশরাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদনের কারণ জানতে চাইলে রাজিব আল মাসুদ বলেন, ‘বাদীর (ফারদিনের বাবা) ধারণা এই মেয়েই হত্যাকাণ্ডের জন্য একমাত্র দায়ী। যদিও আমরা এ রকম কিছু পাইনি। বাদীর অভিযোগ সম্পর্কে আমাকে সহানুভূতি দেখাতে হবে।
‘আর আদালতে করা আবেদনের বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, যদি সে (বুশরা) জামিন পায়ও তখন যাতে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে, তদন্ত কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়।’
আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার এমন আবেদনে হতাশ বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়ে রিমান্ডে থাকার সময় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। ফারদিনের মৃত্যুতে আমার মেয়ের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে তারা জানিয়েছেন। তারা বলেছিলেন রিমান্ড শেষেই বুশরা ছাড়া পাবে। তারাই বলেছেন ভালো উকিল ধরে জামিন আবেদন করতে, কিন্তু জামিন হয়নি।’
বুশরার শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ইউনিভার্সিটিতে ওর তৃতীয় সেমিস্টার চলছিল। অ্যারেস্ট হওয়ার পর আমরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এই সেমিস্টার ড্রপ করার আবেদন করেছি। তারা বলেছে, এই মাসে ও জামিন পেলে চলতি সেমিস্টারে থাকতে পারবে, নয়তো নতুন করে আবার ভর্তি হতে হবে।’
মেয়ের জামিনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান মঞ্জুরুল ইসলাম।
মঞ্জুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বানানো হয়েছে। আমার মেয়ে ফারদিন হত্যায় জড়িত নয়।
‘আমার মেয়েকে বিনা দোষে মামলার আসামি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফারদিন হত্যায় প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দেয়া হোক। আমার নির্দোষ মেয়েকে মুক্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
ফরদিনের সঙ্গে বিতার্কিক সূত্রে বুশরার পরিচয় হয়।
বুশরার মা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে জানান, স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বুশরা। সে জন্য যারা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বা পারদর্শী, তাদের সঙ্গে বুশরা নিজে থেকেই যোগাযোগ রাখতেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে বুশরার পরিচয় হয় ফারদিন নূর পরশের সঙ্গে। পরিচয়ের পর থেকে মেসেঞ্জার ও মোবাইলে কলে বিভিন্ন সময়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলত। আর এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’
মামলায় বুশরাকে আসামি করা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম এর আগে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার সেই ধরনের কোনো সম্পৃক্ততার তথ্য না পাওয়ায় মামলায় তার নাম উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা তাকে (মামলার বাদী) পরামর্শ দিয়েছিলাম, যেহেতু সেও (বুশরা) একজন শিক্ষার্থী, পরবর্তী অনুসন্ধানে তার সংশ্লিষ্টতা উঠে এলে আমরা আসামি হিসেবে তাকে যুক্ত করব।
‘তবে তিনি (বাদী) কোনো কথা মানতেই রাজি ছিলেন না। তার বক্তব্য ছিল, যেহেতু ওই মেয়ে শেষ সময়ে আমার ছেলের সঙ্গে ছিল তাই অবশ্যই তাকে মামলার আসামি করতে হবে।
‘অগত্যা তিনি এজাহারটি যেভাবে লিখে দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা নিয়েছি। মামলার একমাত্র আসামি হওয়ায় তাকে (বুশরা) সেদিনই গ্রেপ্তার করি।’
আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যায় বুশরার যোগসাজশ মিলছে না
ঘটনার সঙ্গে বুশরার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সন্দেহের কারণ জানতে চাইলে ফারদিনের বাবা নূরউদ্দিন রানা ১৭ নভেম্বর ডিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুশরা এ হত্যায় জড়িত না থাকলে তো অবশ্যই খুব খারাপ লাগবে। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাতে বুশরার সঙ্গে ফারদিনের ৫-৬ ঘণ্টা কাটানোর কথা নয়। আর তাকে বাসার পাশে নামিয়ে দেয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল ফারদিন। তাই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, বুশরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করছেন তদন্তে কোনো সম্পৃক্ততা না পেলে বুশরার জামিন হওয়া উচিত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি কিছু না পেয়ে থাকে, যতটুকু আমি পত্রপত্রিকায় পড়েছি, তার বিরুদ্ধে স্পেসিফিক এলিগেশন এনেছেন ফারদিনের বাবা। তার এলিগেশন হলো, সে (বুশরা) তার ছেলের সঙ্গে ছিল, সে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যেটা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। এ পর্যায়ে এসে একটা মেয়ের জামিন হওয়া উচিত। এটা হলো আমার অপিনিয়ন।’
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আগের দিন একই আদালত তাকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছিল।
একই মামলায় অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী দু দিনের রিমান্ডে আছেন।
কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন রিমান্ডের আদেশের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুজনকে গ্রেপ্তারের পর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল ডিএমপির কাছ থেকে দুজনকে রোববার রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসে।
গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাসায় অবন্তিকার ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি প্যাঁচানো ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়।
মৃত্যুর আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি, যাতে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
পাবনা বেড়া উপজেলায় রাতের অন্ধকারে কবরস্থান থেকে ১৫টি কঙ্কাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার আমিনপুরে সোমবার রাতে নতুন বাজার গোরস্থানে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা।
চুরি হওয়া এক মরদেহের স্বজন মাসুদ রানা বলেন, ‘এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। মহাসড়কের পাশে এই কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। আমাদের দাবি পুলিশ দ্রুত এই ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।’
আরেক স্বজন জাহিদ হাসান বলেন, ‘এতো দিন আমরা দেখে আসছি আমাদের দেশে বেঁচে থাকা অবস্থায় মানুষের নিরাপত্তা নেই। এখন দেখছি মরে গেলেও মানুষের লাশেরও নিরাপত্তা নেই।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে আমিনপুর থানার ওসি হারুন-উর-রশীদ বলেন, রাতের কোনো এক সময় কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আজকে সকালে স্বজনরা কবরস্থানে দোয়া করতে গেলে সেখানে কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পান।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে ও তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ওই দম্পতিকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছে আদালত। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।
তানভীর ও জেসমিন ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিযা, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক, আবদুল মতিন ও তসলিম হাসান।
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে লুটে নিয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, যা সোনালী ব্যাংকের মোট ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক।
২০১০-১২ সালের মধ্যে ঋণের নামে এই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়ে এখন কারাগারে আছেন জেসমিন ইসলাম ও তানভীর মাহমুদসহ আটজন।
এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কুমিল্লায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মেয়াদোত্তীর্ণ সফট ড্রিংকস পাউডার তৈরি ও বিক্রির অপরাধে মেসার্স সিয়াম ফুড প্রোডাক্টসকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিএসটিআই।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ অভিযানে অবৈধভাবে তৈরিকৃত মালামাল ধ্বংস এবং সিলগালা করা হয় কারখানা।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআইর যৌথ অভিযানে সোমবার কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর এলাকায় ওই কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
এ সময় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মেয়াদোত্তীর্ণ সফট ড্রিংকস পাউডার উৎপাদন ও বিক্রির অপরাধে মেসার্স সিয়াম ফুড প্রোডাক্টসকে বিএসটিআই আইন-২০১৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল ধ্বংস করা হয় এবং কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসন কুমিল্লার সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এ মোবাইল কোর্টে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসটিআই কুমিল্লার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম শাকিল।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ডাকাত সন্দেহে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহতদের পরিচয় মিলেছে। তাদের মরদেহগুলো মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে নিহতের কোনো স্বজন এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজে আসেননি।
নিহতরা হলেন- আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ঝাউকান্দী নিতাইটেক গ্রামের ৪৮ বছর বয়সী আব্দুল রহিম, একই উপজেলার জালাকান্দি গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী নবী হোসেন ও সোনারগাঁ উপজেলার মুছারচর গ্রামের ৪০ বছর বয়সী জাকির হোসেন।
আরও এক জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশের তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এছাড়া আহত অবস্থায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্ত্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে আড়াইহাজার উপজেলা জাঙ্গালিয়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলীকে।
পুলিশ জানায়, রোববার রাত একটার দিকে বাঘারী গ্রামের বিলের পাড়ে ৭/৮ জনের একটি দল ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান নেয়। এ সময় স্থানীয়দের কয়েকজন তাদের দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেন। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের ধরে পিটুনি দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। অন্যরা বিলে ঝাঁপ দেন। পরে বিল থেকে উঠিয়ে আরও দুজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহত দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর আরও একজন মারা যান।
সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহত চারজন ডাকাত দলের সদস্য বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নিহত তিনজনের পরিচয় মিলেছে, আরও একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করছে। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাদের সবার নামেই মামলা আছে।’
মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল।
ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আর জাকিরের মরদেহ ঢামেকের মর্গে আছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া নিহতের ঘটনায় থানায় মামলার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে, বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহতদের কোনো স্বজন যোগাযোগ করেছে বলে জানা যায়নি। নিহত তিনজনের কোনো আত্মীয়-স্বজন তাদের খোঁজে বা মরদেহ বুঝে নিতে আসেননি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ।
নানা অব্যবস্থাপনা ও সনদের মেয়াদ নবায়ন না করায় মেহেরপুরের গাংনীর হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ও গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীমের আদালত এ দণ্ড প্রদান করে। পরে দণ্ডিতকে পুলিশি প্রহরায় মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় দেবীপুর গ্রামের সেলিম রেজার স্ত্রী পান্না খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে গাংনীর হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
স্বাভাবিক প্রক্রীয়ায় সন্তান প্রসব না হওয়ায় অপারেশনের সিন্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। সেখানে ডাক্তার আবু সালেহ মো. ইমরান তার অপারেশন করেন। তবে অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই প্রসুতির মৃত্যু হয়।
প্রসুতির মৃত্যুর পর ঘটনাটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানায় তার পরিবার।
এরপর সোমবার দুপুরে গাংনী ইউএনও প্রীতম সাহা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম, মেহেরপুর সিভিল সার্জন মহিউদ্দীন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিদর্শনে যান।
সেখানে নানা অনিয়ম ও লাইসেন্স নবায়ন না করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫২ ধারায় হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করা হয়।
পরবর্তীতের দণ্ডিত হাফিজুর রহমানকে পুলিশের সহায়তায় মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশ বাতিল করেছে হাইকোর্ট।
তবে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূস ও অন্য তিনজনের করা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাজা ও জরিমানা স্থগিত করা হয়েছে।
ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিলগুলো বিচারাধীন রয়েছে।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশ সংশোধন করে চারটি নির্দেশনা দিয়ে সোমবার রায় ঘোষণা করেছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চ।
এর ফলে ইউনূসসহ চার আসামির ৬ মাসের দণ্ড বহাল থাকবে। তবে সাজাভোগ, জরিমানা ও কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা স্থগিত থাকবে।
ইউনূসের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রম আদালতের দেয়া দণ্ডের রায় ও আদেশ স্থগিত করেছিল শ্রম আপিলের ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু রায়ে সাজা ও দণ্ড দুটি বিষয়। সাজা স্থগিত করা যায়, দণ্ড স্থগিত করা যায় না।
‘রায়ে চারটি বিষয় আছে- দণ্ড স্থগিত হবে না, বহাল থাকবে এবং সাজাভোগ, জরিমানা ও কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা। হাইকোর্ট দণ্ড স্থগিতের অংশ বাতিল করে বাকি তিনটি বিষয় স্থগিত করেছে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) করা ফৌজদারি রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
হাইকোর্ট বলে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ইউনূস ও এর পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহান জামিনে থাকায় তাদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাজা স্থগিত থাকবে।
এতে আরও বলা হয়, শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় অভিযুক্ত ড. ইউনূসসহ তিনজন বিদেশে গেলে তাদের অবশ্যই শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে জানাতে হবে।
একইসঙ্গে এ মামলায় ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করে আদালত।
রুলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য