গাইবান্ধার এক তরুণীর সঙ্গে সিলেটের এক তরুণীর প্রেম গত ডিসেম্বরে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। প্রেমের টানে সিলেটের তরুণীটি চলে যান গাইবান্ধার তরুণীর বাড়িতে। পরিবারকে দিয়ে ফেলেন বিয়ের প্রস্তাব। এতে ‘আকাশ ভেঙে পড়ে’ পরিবারের বাকি সদস্যদের মাথায়।
অভিমানে এক তরুণী ছুরি দিয়ে হাত কেটে ও অপরজন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেন। দুজনকেই গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সিলেটের তরুণীকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তার পরিবার।
সেই দুই তরুণী কেমন আছেন, ঘটনার তিন মাস পর জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। জানা গেছে, দুই তরুণীই এখন ঘরছাড়া। এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের চাপের কারণে দুজনেই আছেন দুর্বিষহ জীবনে। দুই তরুণীর যোগাযোগ এখন শিথিল, প্রেমের সম্পর্কের জায়গায় জন্ম নিয়েছে তিক্ততা। দুজনের মধ্যেই তৈরি হয়েছে নানান অভিযোগ।
দুই পরিবার গত ডিসেম্বরে জানায়, দুই মাস আগে খেলার সুবাদে ঢাকায় দেখা হয় এ দুই তরুণীর। তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিছুদিন পর সিলেটের তরুণী ফুটবল খেলতে যান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। সে সময় সদর এলাকায় অপর তরুণীর বাড়িতে ওঠেন তিনি। এভাবে পরস্পরের প্রতি ভালো লাগা তীব্র হতে থাকে। তারা নিয়মিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেন।
আরও পড়ুন: দুই তরুণীর প্রেম, বিয়েতে পরিবারের ‘না’
এরপর হঠাৎ গাইবান্ধার তরুণীটি মোবাইল ফোনে কথা বলা বন্ধ করে দিলে অস্থির হয়ে সিলেটের তরুণীটি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে চলে যান গাইবান্ধায়। পরিবারকে জানান বিয়ের সিদ্ধান্ত। পরিবার বাধা দিলে দুই তরুণী চেষ্টা চালান আত্মহত্যার।
২ তরুণীই হারিয়েছেন ঘর
গাইবান্ধা থেকে ফেরার পর নিজের ঘরে আর উঠতে পারেননি সিলেটের তরুণী। এখন নগরের অদূরে ভাড়া বাসায় একা থাকছেন, আছেন অর্থকষ্ট আর মানসিক যন্ত্রণায়।
সিলেটের তরুণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দুজনের কিছু ভিডিও কেউ ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এতে দুই পরিবারেই অশান্তি তৈরি হয়। থানা-পুলিশও হয়।
‘আম্মু চলে আসার পর ওই মেয়েকে তার পরিবারের লোকজন অন্যত্র বেড়াতে নিয়ে যায়। এরপর আমি সিলেট চলে আসি। মাস দেড়েক ধরে আমি সিলেটেই আছি।’
সিলেট নগরে মা আর ভাইদের সঙ্গে থাকতেন ওই তরুণী। তবে গাইবান্ধার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সিলেটে তাকে বাসায় তুলতে রাজি হননি ভাইয়েরা।
ওই তরুণী বলেন, ‘সিলেটে আসার পর ভাইয়েরা আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। বাসায় উঠতে দেননি। আমার কারণে বড় বোনের বিয়েও একবার ভেঙে যায়। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়েছে, কিন্তু আমি সেখানে যেতে পারিনি। পরিবারের সবচেয়ে আদরের মেয়ে ছিলাম আমি, অথচ এখন কেউ দেখতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমি একটি ভাড়া বাসায় থাকি। একটি সুপারশপে কাজ করতাম। তবে ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সুপারশপের চাকরিও চলে গেছে।’
আরও পড়ুন: স্কুলছাত্রীর প্রেমে নোয়াখালী থেকে টাঙ্গাইলে তরুণী
সিলেট জেলা নারী ফুটবল টিমে খেলতেন দাবি করে ওই তরুণী বলেন, ‘আমি শেখ রাসেল একাডিমেতে খেলতাম। কিন্তু গাইবান্ধার ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর আমারে আর খেলায় নেননি কোচ। ফলে এখন আর খেলি না।’
ওই তরুণীর মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বড় শরমের কথা। বেটিনতে বেটিনতে (নারীতে নারীতে) একটা ভেজাল হইছিল। তার ভিডিও ছেড়ে দিছে। আমরা খুব শরমের মাঝে আছি।
‘ওর ভাইয়েরা তাকে ঘরে তুলতে চায় না। তাই আলাদা বাসায় থাকে। তবে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে মাঝে মাঝে কিছু টাকাপয়সা দেই। মায়ের মন তো, মেয়ের জন্য কাঁদে।
‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার ভাতা পাই আমি। সেই টাকা থেকে কিছু ওকে দিই। পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে গেলে তারে ঘরে নিয়ে আসব।’
গাইবান্ধার তরুণীও পরিবারের মাঝে ফিরতে পারেননি। এমনকি ঘটনার পর থেকে প্রতিবেশী ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন তার পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই তরুণীর রিকশাভ্যানচালক বাবা থাকেন অন্যের জমিতে, ঝুপড়ি ঘরে। লোকলজ্জার পাশাপাশি তিনি উচ্ছেদ আতঙ্কেও ভুগছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ওই তরুণী হাসপাতাল থেকে বাড়িতে গেলে প্রতিবেশীরা একত্র হয়ে তাকে বিতাড়িত করেন। পরে তিনি আশ্রয় নেন গোবিন্দগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এরপর থেকে মেয়েটির পড়ালেখাসহ ফুটবল খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ফের বিচ্ছিন্ন সেই ২ তরুণী, যোগাযোগ বন্ধের নির্দেশ প্রশাসনের
তরুণীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাড়াবাসী আমাক বেটির এটি থাকা (আমার মেয়ের এখানে থাকা) নিষিদ্ধ করি দিছি। জনগণের চাপোতে (চাপ) বেটিটাক শালির বাড়িত থুয়ে আসছি। আমার এক ছটাক জমিও নাই। আমি তো এখন নিরুপায় হয়া গেছি।’
তরুণীর মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকজন ছোলটেক (ওই তরুণী) এটি থাকপের দিল না। এখন হামাকও থাকপের দিতিছে না।’
প্রতিবেশী নবেজ আলী বলেন, ‘এগলের পর তো ওর পড়া বন্ধ। ফুটবল খেলা বন্ধ হয়া গেছে। বাড়িতও তাক মানষে থাকপের দিল না।’
বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া তরুণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকজন আমাকে বলছে, তুই এখানে থাকতে পারবি না। তুই এখানে থাকলে তোর বাবা-মাকে মারধর করব। পরে বাধ্য হয়ে মানুষের চাপ আর লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে চলে আসছি।’
গাইবান্ধা এএফসি নারী ফুটবল দলের সদস্য দাবি করা এই তরুণী বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। ফুটবলও খেলি না।’
কারা বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কয়জনের কথা বলব। আমার প্রতিবেশী, এমনকি রক্তের মানুষও আমাকে থাকতে দেয়নি। আমি নাকি খারাপ। মেয়ে এনে ব্যবসা করি। পরিবারের কথা ভেবে কষ্টে বাড়ি ছেড়েছি।’
সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা
বিচ্ছেদের পর দুই তরুণীর মধ্যে তৈরি হয়েছে তিক্ততা। গাইবান্ধার তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, সিলেটের তরুণী নারী পাচারকারী দলের সদস্য। গাইবান্ধার তরুণীকে পাচারের উদ্দেশ্যে প্রেমের ফাঁদ পেতেছিলেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেটের তরুণী। তার দাবি, গাইবান্ধার তরুণীই তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন।
গাইবান্ধার তরুণীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেলাটু (খেলোয়াড়) মহিলাটা (সিলেটের তরুণী) এক দিনের জন্যে হামার বাড়িত প্রশ্রয় (আশ্রয়) নিছে। এরপর এক সপ্তাহ থাকল। বান্ধবী সাজি কী কী রটাল। বাড়ি থাকি বাহিরও করি দিবের পাই নে।
‘পরে চেয়ারম্যানকে বিচার দিছি। তারা আসি মহিলাটাক গাড়িত তুলি দিল। আবার হুট করি চলতি গাড়িত থাকি ঝাঁপ মারি ফির আমার বাড়িত আসিল। কয়, হামার মেয়েকে বিয়ে করবো। পরে পুলিশ ডাকছি। পুলিশের সামনেও বিয়ে করবার চায়। মহিলা হয়া, বেটিক মহিলার কাছে কীভাবে বিয়ে দেই!’
গাইবান্ধার তরুণীর মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে ওই মেয়েটা বাড়িতে আসছিল। কয়দিন এটি (এখানে) ছিল। এরপর এই দুর্ঘটনা ঘটাছে। বল খেলার কথা কয়া আমার মেয়েক নিয়ে যাবার ধরছিল। আমি যাবার দিই নেই। এখন শুনতেছি ওই মেয়েটা নাকি মানব পাচারকারী। ফির (আবার) নাকি ঘটনা ঘটাছে সিলেটত একটা।’
বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া গাইবান্ধার তরুণীও জানিয়েছেন ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘শুনতেছি ও (সিলেটের তরুণী) নাকি পাচারকারী। কয়দিন আগে ওর একটা পিক (ছবি) ফেসবুকে দেখছিলাম, আরেক মেয়ের সঙ্গে ধরা পড়ছে। লোকজন ওকে মারধর করছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেটের তরুণী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওই জায়গা থেকে (গাইবান্ধা) আসার পর অনেক দিন হসপিটালে ছিলাম। এরপর এক দিন মাত্র ওর সঙ্গে কথা হইছিল। ও তো আমার ফিউচার-লাইফ সব নষ্ট করে দিছে।’
আরও পড়ুন: সঙ্গিনী থেকে বিচ্ছিন্ন নোয়াখালীর সেই তরুণী কেটেছেন হাত
দুজনের পরিচয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। ঢাকা থেকে গোবিন্দগঞ্জ খেলতে গিয়ে এক বান্ধবীর মাধ্যমে গাইবান্ধার ওই মেয়ের সঙ্গে পরিচয়। কিছুদিন আলাপের পর আমাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। এরপর আমি ওই মেয়ের বাসায় গিয়ে উঠি।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আমি সিলেট চলে আসতে চাই। তখন ওই মেয়ে বলে আমি চলে আসলে সে হাত কাটবে। এরপর আমি তাদের বাসায় থেকে যাই।’
নারী পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি আগে ওকে (গাইবান্ধার তরুণী) প্রস্তাব দেইনি। ওই আগে আমাকে প্রস্তাব দেয়। আর আমি কেন পাচারকারী হব! আমি ওর ফাঁদে পড়ে প্রেমে পড়েছিলাম মাত্র।’
ফুটবল টিমে থাকার তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি
সিলেটের তরুণীর দাবি, তিনি সিলেট জেলা নারী ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন। তবে এ তথ্য অস্বীকার করছেন সিলেট মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম চৌধুরী মাম্মি। ওই তরুণীকে চেনেন জানিয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগও তুলেছেন মাম্মি।
মাম্মি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আমার একটা ফুটবল একাডেমি আছে। ওই একাডেমির মেয়েদের সে বিভিন্ন সময়ে প্রেমের প্রস্তাব দিত। একদিন রাতে নগরের শাহপরান এলাকার এক মেয়ের বাসায় চলেও গিয়েছিল সে। এ নিয়ে বেশ ঝামেলাও হয়। পরে তাকে ওই বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।’
ওই তরুণী সিলেট জেলা দলের ফুটবলার নয় বলে জানান তিনি।
তবে মাম্মির বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করছেন সিলেটের ওই তরুণী। তিনি বলেন, ‘মাম্মির একাডেমিতে নয়, আমি শেখ রাসেল একাডেমিতে খেলতাম। আর তার কোচ ছিলেন বাদল।’
তবে সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিপুল সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শেখ রাসেল একাডেমি নামে আমাদের তালিকাভুক্ত কোনো একাডেমি নেই। আর বাদল নামে একজন সাবেক ফুটবলার আছেন, তবে তিনি কোচিং করান না।’
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার আসামি সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন বাতিল করেছে আদালত।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী জামিন আবেদন বাতিল করেন।
অবন্তিকার আইনজীবী সৈয়দ নুরুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
এদিকে অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মানের দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাকে কুমিল্লার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে আম্মানকে কুমিল্লা জেল হাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী অবন্তিকাকে ১৫ মার্চ রাতে মৃত ঘোষণা করেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা নামের ওই ছাত্রী জবির আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মো. জুবায়ের বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার (অবন্তিকা) গলায় একটি দাগ দেখতে পাই। তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’
মৃত্যুর আগে জবির এ ছাত্রী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও জাবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
জবির এ ছাত্রী কুমিল্লা নগরের শাসনগাছা এলাকার প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার বাবা কুমিল্লা সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক।
কুমিল্লায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বেলা তিনটার দিকে অবন্তিকার প্রথম জানাজা ও বেলা পৌনে চারটার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:দেশের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা।
এতদিন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, আচিক ও সাদ্রি- এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ হলেও প্রথমবারের মতো এবার গারো শিক্ষার্থীদের জন্য আচিক ভাষায় পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পেয়ে আনন্দিত সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার গারো শিশুরা।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত আচিক ভাষার পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মধ্যনগরে ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঙালভিটা মিশন প্রাইমারি স্কুল, কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাইটাকোনা মিশন প্রাইমারি স্কুল ও ইছামারী মিশন প্রাইমারি স্কুল- এই পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত গারো শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৮৪ জন গারো শিক্ষার্থীর মধ্যে আচিক ভাষার পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে।
কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তূর্ণা মানকিন বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আচিক ভাষায় প্রণীত বই বিতরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মনে নতুন আলোর সঞ্চার হলো। আমরা আমাদের অর্থাৎ গারো আদিবাসীর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার একটা উপায় পেয়েছি।’
এতে আচিক ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ধারণা লাভ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়ূস দাজেল বলেন, ‘আমি নিজেও একজন গারো। দেরিতে হলেও এই প্রথম শিশুদের হাতে মাতৃভাষায় সরকারি পাঠ্যবই তুলে দিতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গারোদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর গারো শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে সরকারি পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আমার নিজ খরচে জেলা শহর থেকে এসব বই এনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেছি।’
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদ মোল্লা নামে এক প্রকৌশলীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন এক নারী। স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে এখানেই আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত আহাদ মোল্লা কোটালীপাড়া উপজেলার সিতাইকুন্ড গ্রামের মোস্তফা মোল্লার ছেলে। তিনি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের প্রকৌশলী বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে ওই নারী প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বাড়ির উঠোনে একটি গাছের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।
ওই নারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রেম করার পর ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আমার সঙ্গে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকি। এ খবর দুই পরিবারে জানাজানি হলে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুনরায় সামাজিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়।
‘কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ করে আহাদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সে কোনো যোগাযোগ করছে না। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদের বাড়িতে এসে উঠেছি। সে আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে এ বাড়িতেই আত্মহত্যা করব।’
এদিকে ওই নারী বাড়িতে এসে ওঠার খবর পেয়ে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে যান।
প্রতিবেশী নেয়ামুল ফকির ও খলিল শেখ বলেন, ‘আহাদ মোল্লার সঙ্গে ওই নারীর সামাজিকভাবে যে বিয়ে হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। বিয়ের পর আহাদ মোল্লা তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করত। এখন তাদের মাঝে কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আহাদ মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। আর আহাদ মোল্লা ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।
রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
শারীরিক বৈশিষ্ট্যে ওরা আর দশটা মানুষের মতোই। আছে স্ত্রী-সন্তান। তারপরও নিজেদেরকে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় দিয়ে ওরা চাঁদাবাজি করে আসছিল। অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে।
শনিবার রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে এই প্রতারক চাঁদাবাজ চক্রের আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হোসেন ওরফে শিলা হিজড়া, হৃদয় ওরফে পিয়া হিজড়া, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, ইয়াহিয়া, নয়ন, বেলাল ও মিজানুর রহমান।
মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে হিজড়া সেজে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে আসছিল। আর পাপ্পু হিজড়া নামের একজন ওদের গুরুমাতা হিসেবে কাজ করে।
‘পাপ্পু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এদেরকে ঢাকায় এনে হিজড়া সাজিয়ে চাঁদাবাজিতে যুক্ত করে। বিনিময়ে প্রতিজনকে প্রতিদিন ৬শ’ টাকা করে দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কারও বাড়ি লক্ষ্মীপুর, কারও সিরাজগঞ্জ আবার কারও বাড়ি পাবনা। কাউকে আবার আনা হয়েছে ময়মনসিংহ থেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার ৮জনের মধ্যে কয়েকজন বিবাহিত এবং তাদের স্ত্রী-সন্তান আছে।’ ট্রান্সজেন্ডার সেজে একদল চাঁদাবাজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টেকনিক্যাল মোড়ে তাওহীদ আলী নামের এক মোটরসাইকেল আরোহীর গতিরোধ করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ধস্তাধস্তি করে তার কাছ থেকে ২০০ টাকা কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স বেঞ্চ বুক লঞ্চ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেখানে দেয়া বক্তব্যে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা একটি বদ্ধমূল সমস্যা এবং এর প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির ‘প্রোমোটিং পিস অ্যান্ড জাস্টিস অ্যাকটিভিটি’।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও পরিবার, সম্প্রদায় এবং সামগ্রিকভাবে জাতিকে প্রভাবিত করে। এ সহিংসতা কেবল শারীরিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করে, পারিবারিক কাঠামোকে ব্যাহত করে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রগতিতে বাধা দেয়।’
আইনমন্ত্রী জানান, বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা এবং প্রশমনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদালত এ ধরণের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যাতে তারা প্রতিকার পায় এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক মামলার জটিল বিষয়গুলোর সহজ সমাধানে বিচার বিভাগীয় বেঞ্চ বুক দুটি বিচারকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সব স্তরের মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক পরিসরে আইনি, প্রশাসনিক এবং নীতিগত সংস্কার করেছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে সু-দৃষ্টি দিয়েই তার সরকার ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেছে। ২০১২ সালে পর্নোগ্রাফি (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করেছে। এই আইনগুলো সহিংসতা এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’
নারী ও শিশুরা মানব পাচারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। এ ঘৃণ্য অপরাধ দমনে কৌশলগতভাবে সাতটি বিভাগীয় সদরে সাতটি মানবপাচার বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী ১০১টি বিশেষায়িত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দূরদর্শী পদক্ষেপগুলো নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য