স্কুলছাত্রীর প্রেমের টানে নোয়াখালী থেকে টাঙ্গাইল যাওয়া সেই তরুণীকে তার পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে মেয়ে দুটির মধ্যে যেন আর যোগাযোগ না থাকে তা নিশ্চিত করতে দুই পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এই তথ্য দিয়েছেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম বিজু।
তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীনের নির্দেশে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার শর্তটি দিয়েছেন। তবে ইউএনও নিউজবাংলাকে জানান, এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তিনি চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের শর্তের বিষয়টি তার জানা নেই।
চেয়ারম্যান সামছুল জানান, নোয়াখালীর মেয়েটি বাসাইলে ওই স্কুলছাত্রীর কাছে চলে এলে এলাকায় শোরগোল শুরু হয়। স্কুলছাত্রীর পরিবারও বিব্রত হয়। সে খবর পেয়ে ইউএনও মেয়ে দুটির পরিবারের সঙ্গে বসতে বলেন।
ওই দুই মেয়ে আগে একবার ঢাকায় মিলিত হয়। সেখান থেকে তাদের বুঝিয়ে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। এরপর সোমবার নোয়াখালী থেকে টাঙ্গাইলের বাসাইলে স্কুলছাত্রীর বাসায় চলে আসে সেই তরুণী।
তিনি জানান, বাসাইলের ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর দুই বছর হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে। জড়িয়ে পড়ে প্রেমে। তবে তাদের এই সম্পর্ক মানতে পারছে না পরিবার।
নিউজবাংলাকে তরুণী বলে, ‘আমি ওকে ভালোবাসি, তাই চলে এসেছি। আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছিলাম, ওর কাছে যাব, কিন্তু ওনারা রাজি হয়নি। তারা আমাদের সম্পর্ক মানবে না, তাই বাড়ি থেকে নিরুপায় হয়ে পালিয়ে এসেছি। এখন ওর পরিবার না মানলে আমরা দুজনে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করব।’
আর নবম শ্রেণির ছাত্রী বলে, ‘ওকে নিয়ে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমরা ঢাকায় দেখা করেছি। ঢাকায় আমাদের ফ্যামিলি গিয়ে আমাদের আলাদা করে নিয়ে এসেছে। আমার ফোন নিয়ে নিয়েছিল। কয়েক দিন পর ফোন ফেরত দেয়। তখন আবার আমরা কন্টাক্ট করে ওকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি।
‘সামাজিকভাবে আমাদের মানবে না, কিন্তু আমি ওর সঙ্গেই থাকতে চাই। বাঁচলেও ওর সঙ্গে, মরলেও ওর সঙ্গে। পুলিশ বা তারা যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায়, তাহলে দুজনকে একসঙ্গেই মারবে। আর যদি বাঁচিয়ে রাখতে চায়, তাহলে দুজনকেই রাখতে হবে।’
এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্কুলছাত্রীর বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকে উৎসুক লোকজন।
চেয়ারম্যান সামছুল আলম বিজু বলেন, ‘ইউএনও মহোদয় আমাকে বিষয়টি সমাধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে দুই মেয়ের অভিভাবকের সঙ্গে বৈঠকে বসা হয়। সেখানে অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দুই মেয়ে যাতে আর যোগাযোগ করতে না পারে সে ব্যাপারে তাদের পরিবারকে নির্দেশ নেয়া হয়েছে।’
ইউএনও নাহিদা পারভীন বলেন, ‘নোয়াখালীর ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই মেয়ের পরিবারকে খুঁজে বের করা হয়। এরপর ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলা হয়। তিনি তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত রেখে দুই মেয়েকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।’
মেয়ে দুটির মধ্যে যোগাযোগ না রাখার নির্দেশের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যানকে বিষয়টা দেখতে বলেছি, আপনারা ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
দুই তরুণীর যোগাযোগে কোনো আইনি বাধা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলে, ‘তারা প্রাপ্তবয়স্ক, কারও স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নেই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা... নাগরিক হিসেবে কারও অধিকারে আমরা বাধা দিতে পারি না। তবে কেউ আইনবিরোধী বা সমাজবিরোধী কাজ করলে আমরা আইন অনুযায়ী দেখব। তারা বেআইনি বা অনৈতিক কাজ না করলে তো আর আমাদের কিছু বলার থাকে না।’
আরও পড়ুন:সঙ্গমের চরম মুহূর্তকে বলা হয় অর্গাজম। স্বর্গীয় এই অনুভূতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে সবার। তবে সবাই কি এই অনুভূতির স্পর্শে আসেন? নাকি কেউ কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন চরম সেই মুহূর্ত থেকে?
বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়ার আসলে উপায় নেই। কারণ অর্গাজম ছাড়া যৌনতায় পুরোপুরি তৃপ্তি আসে না। ড্রামা-সেক্স কমেডি ‘গুড লাক টু ইউ, লিও গ্র্যান্ড’ সিনেমায় এই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক সোফি হাইড। সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৬৩ বছরের ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমা থম্পসন।
সিনেমায় এমা একজন বিধবা শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি জীবনের শেষ দিকে অর্গাজমের জন্য একজন পুরুষ এসকর্ট নিয়োগ দেন! যুক্তরাজ্যে ১৭ জুন সিনেমাটি মুক্তি পাবে।
হলিউডের যৌন দৃশ্যগুলো অনেকটা একঘেয়ে। উষ্ণতা, কামুকতা আর কিছু ক্ষেত্রে আবেগ। নারীর উত্তেজনা, হতাশা বা কিছুটা বিরক্ত এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না হলিউডের সিনেমায়।
তবে বাস্তবে অনেক নারীই ভোগেন এ ধরনের অতৃপ্তিতে। তাই তো তারা সিনেমায় এমার চরিত্রে খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে।
চলতি সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে এমা দাবি করেন, ১৫ শতাংশ নারী কখনও প্রচণ্ডভাবে উত্তেজিত হননি।
সিনেমায় এমার চরিত্রটিকে দারুণ পছন্দ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী এবং ‘দ্য কেস অফ দ্য ফিমেল অর্গাজম’-এর লেখক অধ্যাপক এলিজাবেথ লয়েড বলেন, ‘আমি রোমাঞ্চিত, কারণ এমা থম্পসন এই সিনেমাটি করেছেন। বহু বছর ধরে সাধারণ জনগণকে সিনেমার মাধ্যমে নারীদের যৌন উত্তেজনা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে আসছে হলিউড। এ কারণেই সিনেমাটি বিশেষ।’
লয়েডের গবেষণায় গুরুত্ব পেয়েছিল ‘অর্গাজম গ্যাপ’। যেখানে তিনি দেখিয়েছেন, অর্গাজমের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক পিছিয়ে। লয়েডের গবেষণা বলছে, এ অতৃপ্তিতে ভোগা নারীর সংখ্যা ১০ শতাংশ।
এমা বলেন, ‘আমি মনে করি এই সংখ্যাটি এমন নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে যারা ইচ্ছা সত্ত্বেও সঙ্গীর কাছ থেকে পূর্ণ তৃপ্তি পাননি, অনেক নারী নিজেই অর্গাজম চাননি এবং যারা সেই চরম মুহূর্তে পৌঁছাতে শারীরিকভাবে অক্ষম।’
স্কটল্যান্ডের টেইসাইডের যৌন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লরা জার্ভিস বলেন, ‘আমি এমন রোগী দেখেছি যাদের অর্গাজম না হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
‘বেশির ভাগেরই স্নায়ু বৈকল্যের মতো শারীরিক কোনো সমস্যা থাকে না। এটা আসলে তাদের নিজস্ব যৌন অনুভূতির ওপর নির্ভর করে। তারা আদতে কি সেই আনন্দ পেতে চান?’
তিনি বলেন, ‘যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে যৌনতার ওপর ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার মতো নেতিবাচক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন অনেক নারী। এগুলো তাদের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলে। ফলে তারা যৌনতাকে উপভোগ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
‘এসব নারী প্রায়ই আমাকে বলে, জীবন থেকে কিছু হারিয়ে যাচ্ছে এই অনুভূতিটা তাদের মধ্যে কাজ করে। নেটফ্লিক্সে নাটকগুলোয় অহরহ অর্গাজমের দৃশ্য দেখা যায়। এসব দেখে তাদের মনে হয় তারা স্বাভাবিক জীবনে নেই। এটা তাদের হতাশায় নিমজ্জিত করে।’
হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে অনেক নারীই এক ধরনের ‘কলঙ্ক ও লজ্জা’ অনুভব করেন। জার্ভিস বলেন, “যখন এটা কোনো পুরুষ করেন, তখন বিষয়টাকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয় না। নারীরা করলেই আমরা তাদের ‘কিছুটা দুষ্টু’ ভাবি। সেই দৃষ্টিভঙ্গি দূর করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের শিখতে হবে কীভাবে নিজেকে আনন্দ দিতে হয়।”
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ বিশেষ করে এসএসআরআই- যৌনতায় প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া আরও অনেক জাগতিক কারণ আছে।
২০ জন ইরানি নারীর ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গৃহস্থালি কাজ, সন্তান, স্বামীর ব্যস্ততা, স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের মতো নানা কারণে তারা যৌনতা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
লয়েড বলেন, ‘নারীরা প্রচণ্ড উত্তেজনা অনুভব করে সিনেমায় এটা দেখানো হলো অবাস্তব প্রত্যাশা। কারণ প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে বা দুর্বল সঙ্গম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিষয়টা এমন না যে কীভাবে নারীর অর্গাজম হয়, এটি চরম উত্তেজনা পাওয়ার একটি ভয়ানক উপায়।’
লয়েড ও তার সহকর্মীরা ৫২ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর একটি সমীক্ষা চালান। সঙ্গীর সঙ্গে যৌন উত্তেজনার চরমে পৌঁছানোর জন্য যৌনাঙ্গের উদ্দীপনা, গভীর চুম্বন এবং ওরাল সেক্সের সমন্বয়কে নারীদের জন্য ‘সোনার ত্রয়ী’ চিহ্নিত করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ বিষমকামী নারী সব সময় বা সাধারণত যোনিপথে মিলনের সময় উত্তেজনা অনুভব করেন। সে তুলনায় ৮০ শতাংশ বিষমকামী নারী এবং ৯১ শতাংশ সমকামী নারী বলেছেন, সব সময় বা সাধারণত যৌনাঙ্গের উদ্দীপনা, গভীর চুম্বন এবং ওরাল সেক্সের সংমিশ্রণে তাদের অর্গাজম হয়। যোনিপথে সঙ্গমের প্রয়োজন হয় না তাদের।
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক মিহায়েলা পাভলিচেভের মতে, যৌনতায় পুরুষের অসক্রিয়তার বিপরীতে নারীর যৌন আনন্দের বিষয়টি অপেক্ষাকৃত অবহেলিত থেকে গেছে। দীর্ঘ সময় বিষয়টি চিকিৎসক সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্ব পায়নি। তাদের চোখ ছিল বীর্যপাতের সমস্যায় আক্রান্ত পুরুষের দিকে।
‘সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, নারীরা যোনিপথের পরিবর্তে ভগাঙ্কুর (clitoris) থেকে বেশি আনন্দ অনুভব করেন। তিনি নারীদের যৌনতাকে ‘অন্ধকার মহাদেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি কয়েক প্রজন্ম ধরে নারীর যৌন উত্তেজনাকে কলঙ্কিত করেছিলেন।’
জার্ভিস মনে করেন, যৌন আনন্দকে আরও মূল্য দেয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে। অল্প বয়সী নারীদের যৌনতায় সক্রিয় ভূমিকায় আসতে দেখা যাচ্ছে। তবে উত্তেজনাপূর্ণ যৌনতা সবার অগ্রাধিকার নাও হতে পারে।
‘অর্গাজম হলো উত্তেজনা এবং চাপ থেকে মুক্তির একটি কার্যকর উপায়। সংশ্লিষ্ট হরমোনগুলো আপনাকে ভালো বোধ করাবে। আপনার রক্তচাপ এবং মনের উৎফুল্লতা বাড়াতে সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন:প্রতিবন্ধী ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর মানুষদের চাকরি দিলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ কর ছাড়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। সেই বাজেটেই এমন ঘোষণা দেন তিনি।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে অনুমোদনের প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি।’
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কর রেয়াতে ট্রান্সজেন্ডোরদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের বেশি কর্মী নিয়োগের শর্ত ছিল। এবার সেই সংখ্যা ২৫ জনের বেশির কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে গতবার শুধু মোট কর্মীর ১০ শতাংশের কথা বলা হয়েছিল। এবার উভয়ক্ষেত্রেই একই শর্ত আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে (২০২১-২২ অর্থবছরে) নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট জনবলের ন্যূনতম ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ করলে ওই করদাতাকে প্রদেয় করের ৫ শতাংশ কর রেয়াত প্রদান এবং যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের অধিক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে অনুমোদনের বিধান চালু রয়েছে।’
বর্তমান সরকার দেশের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সমাজ এবং অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি বৃহৎ অংশ হচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যদের চেয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে।
তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে। কর্মক্ষম ও পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর মানুষের কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আত্তীকরণের লক্ষ্যে আমি মহান এ সংসদে বর্তমানে চালুকৃত বিশেষ কর প্রণোদনাকে আরও প্রসারিত করার প্রস্তাব করছি।’
আরও পড়ুন:সিলেটের জৈন্তাপুরে অপহরণ চক্র নিয়ে ফেসবুকে ওসির সতকর্তার পোস্টকে পুলিশের অসহায়ত্বের প্রকাশ হিসেবে দেখছেন আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের নেতারা। ওই পোস্ট দেখার পর থেকে এলাকায় আতঙ্কও বেড়েছে।
তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পুলিশ ওই চক্রকে ধরতে সচেষ্ট ও তৎপর। ওই পোস্ট কেবলই সতর্ক করার জন্য, ভয়ের কোনো কারণ নেই।
‘ওসি জৈন্তাপুর সিলেট’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে মঙ্গলবার ওই পোস্ট দিয়েছেন থানার ওসি গোলাম দস্তগীর গাজী।
তাতে লেখা হয়েছে, ‘একটি অপহরনকারী চক্র জৈন্তাপুর থানা এলাকায় অবস্থান করতেছে। পুরুষ ও মহিলা নিয়ে চক্রটি গঠিত। তাদের টার্গেট স্কুল / কলেজের মেয়েদের অপহরণ করে পাচার করে দেওয়া। এমতাবস্থায় স্কুল /কলেজের সম্মানিত শিক্ষকগনকে এই ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের সতর্কত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী স্কুল /কলেজেগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের পুলিশিং তৎপরতা অব্যাহত আছে। এই ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য জৈন্তাপুরবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ (মূল পোস্টে বানান অপরিবর্তীত)।
এ বিষয়ে আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজই হচ্ছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা। কোনো এলাকায় যদি অপরাধ বেড়ে যায় তাহলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা হিসেবেই ধরা হয়।
‘জৈন্তাপুরে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এর সঙ্গে জড়িতদের এখন পর্যন্ত ধরতে পারেনি। উল্টো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ওসি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। ওসির এমন স্ট্যাটাসে পুলিশের অসহায়ত্বই প্রকাশ পাচ্ছে। একইসঙ্গে মানুষজনও এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে।’
তবে ওসি গোলাম দস্তগীর জানিয়েছেন, মানুষকে সচেতন করতে এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অপহরণকারীদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ যেন আতঙ্কিত না হন সেই প্রচারও আমরা চালাচ্ছি। পুলিশ তার কাজ করছে। মানুষকে সচেতন করাও আমাদের কাজ। মানুষ সচেতন হলে অপরাধ অনেকটা কমে আসে। পুলিশের কাজ তখন অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তাই মানুষকে সচেতন করতেই এমন স্ট্যাটাস দিয়েছি।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপহরণকারীদের ধরতে আজ থেকে পোষাকে ও সাদা পোষাকে আমাদের সাতটি টিম জৈন্তাপুরে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই উপজেলায় অপহরণের একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমাদের গোয়েন্দা টিমও মাঠে কাজ করছে।’
ওসির স্ট্যাটাসে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাস আমিও দেখেছি। মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই এটি দেয়া হয়েছে। এতে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই। পুলিশ যে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে, সেটিও স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন ওসি। ফলে ওই স্ট্যাটাস পড়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
তবে উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা হলেও এমন স্ট্যাটাসে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মত জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শাহেদ আহমদের।
তিনি বলেন, ‘তার (ওসির) উদ্দেশ্য খারাপ নয়। তবে এতে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটায় এলাকায় এমনিতেই আতঙ্ক রয়েছে। ওসির এই স্ট্যাটাসে আতঙ্ক আরও বেড়ে যেতে পারে।’
শাহেদের আশঙ্কার সত্যতাও পাওয়া গেল কয়েক অভিভাবকের সঙ্গে আলাপ করে।
জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকার নেছার আহমদ বলেন, ‘আমার একটি মেয়ে স্কুলে পড়ে। এলাকায় শুনেছি অপহণকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। পুলিশ ফেসবুকে এমনটি জানিয়েছে। ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাস দেখার পর থেকে মেয়েকে নিয়ে ভয়ে আছি। তাকে স্কুলে একা ছাড়তে ভয় করছে।’
উপজেলার ফতেহপুর এলাকার আতাউর রহমানের মেয়ে স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
ওসির ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ার পর থেকেই ভয়ে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অপহরণকারীচক্র নিশ্চয়ই খুব দক্ষ। তাই পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। না পেরে ফেসবুকে সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলেছে।
‘মেয়ের স্কুল তো বন্ধ করা যাবে না। তবে এখন আর একা স্কুলে ছাড়ি না। নিজে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করি।’
ওসির ওই স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্টবক্সে অনেকেই সচেতন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মেহেদী হাসান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেখানে লিখেছেন, ‘আপনারা অপহরণকারী চক্রের নাম প্রকাশ করে গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম না দিয়ে উল্টো সাধারণ মানুষকে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন! অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য চিরুনী অভিযানের ঘোষণা দিলেই তো হয়। নাকি এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা ব্যর্থ?!’
এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের কাজ অপরাধী ধরা। সেটি না করে যদি তারা মানুষকে সচেতন আর সতর্ক করার কাজে নেমে পড়েন তাহলে এটা তাদের অসহায়ত্ব হিসেবেই প্রকাশ পাবে।’
‘মানুষকে সচেতন করা অবশ্যই ভাল কাজ। তবে খেয়াল রাখতে হবে সচেতন করতে গিয়ে যেন মানুষকে আতঙ্কিত করে ফেলা না হয়। অপহরণের যে অভিযোগগুলো এসেছে তার সুরাহা না করে মানুষকে সচেতন হওয়ার কথা বলা হলে তো পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।’
এ পর্যন্ত অপহরণের কতগুলো ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে ওসি গোলাম দস্তগীর জানান, গত মাসে দুই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। আর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে একটি।
জৈন্তাপুর থানা সুত্রে জানা গেছে গত ২০ মে চিকনাগুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরদিন তার পরিবার থানায় অভিযোগ করে। এরপর ২৯ মে সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির আরেক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। তাদের এখনও পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ৭ মে সিলেট ক্যান্টমেন্ট বোর্ড স্কুলের এক ছাত্রী জৈন্তাপুর থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর অপহরণের অভিযোগে থানায় সাধারন ডায়েরি করে ওই ছাত্রীর পরিবার। ২৪ মে তাকে টাঙ্গাইল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের অভিযোগে আটক করা হয় এক তরুণকে।
ওসি জানান, ওই ঘটনাটি অবশ্য অপহরণ নয় বলে পরে জানা গেছে। মেয়েটি স্বেচ্ছায় ওই তরুণের সঙ্গে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, সবশেষ গত মঙ্গলবার সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে দুই নারী অপহরণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল আমার মেয়ে। ছৈয়া এলাকার রাস্তায় দুজন অপরিচিত নারী তাকে একটি কাগজ পড়ে দেয়ার জন্য বলে। কাগজটি মেয়ে হাতে নেয়ার জন্য এগিয়ে গেলে তারা ওই কাগজ তার মুখে গুঁজে একটি ইজিবাইকে তুলে নেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে আমার মেয়ে লাফ দিয়ে নেমে পালিয়ে আসে।’
ওসি গোলাম দস্তগীর জানান, এ খবর জানার পরই মূলত অপরণকারীদের ধরতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে অপহরণ চক্রের বিষয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চক্রটির লক্ষ্য এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা। চক্রের সদস্যদের ধরতে উপজেলায় পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সেইসঙ্গে সবাইকে সতর্ক করতে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
ওসির ওই পোস্ট দেখে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। কিশোরীদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
‘ওসি জৈন্তাপুর সিলেট’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে মঙ্গলবার ওই পোস্ট দেয়া হয়েছে।
তাতে লেখা হয়েছে, ‘একটি অপহরনকারী চক্র জৈন্তাপুর থানা এলাকায় অবস্থান করতেছে। পুরুষ ও মহিলা নিয়ে চক্রটি গঠিত। তাদের টার্গেট স্কুল / কলেজের মেয়েদের অপহরণ করে পাচার করে দেওয়া। এমতাবস্থায় স্কুল /কলেজের সম্মানিত শিক্ষকগনকে এই ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের সতর্কত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী স্কুল /কলেজেগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের পুলিশিং তৎপরতা অব্যাহত আছে। এই ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য জৈন্তাপুরবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ (মূল পোস্টে বানান অপরিবর্তীত)।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর গাজী বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জৈন্তাপুরে একটি অপহরণকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে আমরা এমন তথ্য পেয়েছি। অপহরণের একাধিক অভিযোগও পেয়েছি। সবগুলো ক্ষেত্রেই স্কুল ছাত্রীদের অপহরণ করা হয়েছে।
‘সবাইকে সর্তক থাকার জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। তবে কোনো আতঙ্ক ছড়ানো আমার উদ্দেশ্য নয়। কেউ যেন আতঙ্কিত না হন। পুলিশও অপহরণকারীদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা জুড়ে সর্তকতামুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির ও হাটবাজারে লোকজনকে সর্তক করতে প্রচার চালানো হচ্ছে বলেও জানান ওসি।
এ পর্যন্ত অপহরণের কতগুলো ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে ওসি জানান, গত মাসে দুই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। আর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে একটি।
জৈন্তাপুর থানা সুত্রে জানা গেছে গত ২০ মে চিকনাগুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরদিন তার পরিবার থানায় অভিযোগ করে। এরপর ২৯ মে সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির আরেক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। তাদের এখনও পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ৭ মে সিলেট ক্যান্টমেন্ট বোর্ড স্কুলের এক ছাত্রী জৈন্তাপুর থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর অপহরণের অভিযোগে থানায় সাধারন ডায়েরি করে ওই ছাত্রীর পরিবার। ২৪ মে তাকে টাঙ্গাইল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের অভিযোগে আটক করা হয় এক তরুণকে।
ওসি জানান, ওই ঘটনাটি অবশ্য অপহরণ নয় বলে পরে জানা গেছে। মেয়েটি স্বেচ্ছায় ওই তরুণের সঙ্গে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, সবশেষ গত মঙ্গলবার সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে দুই নারী অপহরণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল আমার মেয়ে। ছৈয়া এলাকার রাস্তায় দুজন অপরিচিত নারী তাকে একটি কাগজ পড়ে দেয়ার জন্য বলে। কাগজটি মেয়ে হাতে নেয়ার জন্য এগিয়ে গেলে তারা ওই কাগজ তার মুখে গুঁজে একটি ইজিবাইকে তুলে নেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে আমার মেয়ে লাফ দিয়ে নেমে পালিয়ে আসে।’
ওসি গোলাম দস্তগীর জানান, এ খবর জানার পরই মূলত অপরণকারীদের ধরতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
ওসির সতর্কবার্তার পোস্ট দেখে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকার নেছার আহমদ বলেন, ‘আমার একটি মেয়ে স্কুলে পড়ে। এলাকায় শুনেছি অপহণকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। পুলিশ ফেসবুকে এমনটি জানিয়েছে।
‘ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাস দেখার পর থেকে মেয়েকে নিয়ে ভয়ে আছি। তাকে স্কুলে একা ছাড়তে ভয় করছে।’
আরও পড়ুন:ভারতে যৌতুক প্রথা খুব সাধারণ বিষয়। মেয়ের বিয়েতে প্রায়শই মোটা অঙ্কের অর্থ যৌতুক দিয়ে থাকেন ভারতীয় বাবা-মায়েরা। সেই যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন সইতে না পেরে সন্তানসহ তিন বোনের একসঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ভারতের সমাজ ব্যবস্থাকে।
রাজস্থানের জয়পুরের কাছের একটি গ্রামের তিন বোন কালু, কমলেশ ও মমতা মীনার বিয়ে হয়েছিল একই বাড়ির তিন ভাইয়ের সঙ্গে। কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে একসঙ্গে ‘আত্মহত্যা’ করেন তারা। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে এ সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছিলেন বলে হোয়াটঅ্যাপে একটি বার্তা রেখে যান তিন বোন।
“আমাদের মৃত্যুর জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনই দায়ী। আমরা একসঙ্গে মরছি, কারণ এটা প্রতিদিন মারা যাওয়ার চেয়ে ভালো।”
তিনজনকেই মে মাসে তাদের শ্বশুরবাড়ির কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সঙ্গে কালুর চার বছরের ছেলে এবং সদ্য জন্মানো আরেক সন্তান। আর কমলেশ ও মমতা দুজনেই ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা।
বিয়ের পর তিন বোন একই ছাদের নিচে বাস করতেন। তাদের স্বজনরা জানান, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের নিয়মিত নির্যাতন করত।
“ওদের বাবা আরও অর্থের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায়, তারা প্রতিদিন নির্যাতিত হয়েছে।”
জয়পুর পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা একে আত্মহত্যা বলে বিবেচনা করছি।
হতভাগ্য তিন বোনের বাবা সরদার মীনা। তিনি বলেন, ‘ স্বামীর সংসার মেয়েদের জন্য একটি জীবন্ত নরক ছিল। ওদের পড়াশুনা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। আরও অর্থের জন্য তাদের হয়রানি করা হতো।
‘আমরা তাদের (মেয়ের স্বামীদের) অনেক কিছু দিয়েছি। আপনি তাদের বাড়িতে দেখতে পারেন। বিছানা, টেলিভিশন এবং ফ্রিজ সবই দিয়েছিলাম।
‘আমি ৬ মেয়ের বাবা। আমারও-তো সীমাবদ্ধতা আছে। একজন কৃষকের আর কত আয় থাকতে পাড়ে। আমি তাদের শিক্ষিত করেছিলাম, তবে এটা ছিল বেশ কঠিন।’
এ ঘটনায় তিন জনের স্বামী, তাদের মা এবং বোনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
‘পরিবারের মর্যাদা’
ভারত ৬০ বছরেরও বেশি আগে যৌতুক প্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটির আইনে একে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
তবে আইন করেও থামানো যাচ্ছে না যৌতুক প্রথা। ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় নারীদের বোঝা মনে করা হয় এখনও। তাই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ক্ষতিপূরণ (যৌতুক) দাবি করে ছেলে পক্ষ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় নিয়মিত দাম্পত্য সম্পত্তির বিরোধের খবর প্রকাশ হয়, যেগুলোর শেষ হয় প্রাণনাশের মধ্য দিয়ে।
কেরালার দক্ষিণাঞ্চলে গত বছর এক স্বামী যৌতুকের দাবি এবং সম্পত্তির একক নিয়ন্ত্রণ পেতে স্ত্রীকে বিষাক্ত সাপ দিয়ে হত্যা করিয়েছিল। পরে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। সম্পত্তির মধ্যে ছিল ৫ লাখ রুপির একটি গাড়ি, যা যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়েছিল।
ভারতের আইনে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়াকেও অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। কেরালার এক ব্যক্তিকে গত মাসে যৌতুক চাওয়ার অপরাধে ১০ বছরের জেল দেয় আদালত। রায়ে বিচারক জানান, এ ধরনের আচরণে ওই ব্যক্তির স্ত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হতো।
ভারতে বিয়েবিচ্ছেদের হার একেবারেই কম। সামাজিক নানা কারণে এ পদক্ষেপ নিয়ে আগ্রহী না নারীরা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ১০০ দম্পতির মধ্যে কেবল একজনের ক্ষেত্রে বিয়েবিচ্ছেদ হয়।
মীনা বোনদের এই পরিণতির পরও তাদের স্বজনরা কোনো বিকল্প দেখছেন না! তাদের বাবা সর্দার বলেন, ‘বিয়ের পর পারিবারিক মর্যাদার খাতিরে তাদের শ্বশুর বাড়িতেই থাকা উচিত। অন্য বাড়িতে বিয়ে দিলে, সেখানেও যে এমন ঘটবে না তার নিশ্চয়তা দেবে কে?’
পরিশেষে
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসাবে, ২০২০ সালে অন্তত ৭ হাজার যৌতুক সংক্রান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ভারতে; দিনে গড়ে প্রায় ১৯ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছিলেন। এ ছাড়া যৌতুক সংক্রান্ত ইস্যুতে ওই বছর এক হাজার ৭০০ জনের বেশি নারী আত্মহত্যা করেছেন।
এসব তথ্য অবশ্য পুলিশের কাছ থেকে নেয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক সহিংসতার অন্যান্য তথ্যের মতো মামলার প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।
ভারতের পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের কর্মী কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩০-৪০ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। এগুলো কেবল নথিভুক্ত (মামলা)। প্রকৃত সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হবে।
‘মীনা বোনদের সঙ্গে জড়িত যৌতুক বিরোধ তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। তারা স্বাধীনতা হারিয়েছিল। এগুলো নির্যাতনকারীদের প্রচেষ্টার একটি অংশ কেবল।’
এসবের আসল কারণ সামাজিক ট্যাবু বলে মনে করেন কবিতা শ্রীবাস্তব। তার ভাষ্য, ভারতে পারিবারিক সহিংসতা অনেকটায় স্বাভাবিক।
‘একজন নারী তখনই আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ নেয়, যখন সে অনুভব করতে থাকে তার বৈবাহিক জীবনে আর কোনো আশা নেই। আমি মনে করি, রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ।’
আরও পড়ুন:
বোরকা বা হিজাব পরা সাংবিধানিক অধিকার বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে দেশের ১৫টি জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীরা বোরকা পরায় হেনস্তার যে ঘটনা ঘটেছে, সেসব তদন্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
এ-সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ধর্মসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ইলিয়াছ আলী মণ্ডল, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এমন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেন আইনজীবী ইলিয়াছ আলী মণ্ডল। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেয়।
বোরকা ও হিজাব পরায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হয়রানি করাকে কেন বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে এর আগে ২০১৯ সালের ১ জুলাই রুল জারি করেছিল হাইকোর্টের আলাদা একটি বেঞ্চ।
একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ/প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
ওই রিটেরই একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন:স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করা থেকে আটকাতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন ভারতের এক মুসলিম নারী। পিটিশনে ওই নারী বলেছেন, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে তার স্বামীকে। এ ঘটনা ভারতীয় মুসলমানদের বহুবিয়ের প্রথাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
২৮ বছরের ওই নারীর নাম রেশমা (নিরাপত্তার খাতিরে পুরো নাম প্রকাশ হয়নি)। দিল্লি হাইকোর্টের কাছে রেশমার প্রত্যাশা, বহুবিয়ে নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার কোনো আইন প্রণয়ন করবে।
আদালতের নথি বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শোয়েব খান নামে এক যুবককে বিয়ে করেন রেশমা। পরের বছর নভেম্বরে এই দম্পতির একটি সন্তান হয়।
রেশমা তার স্বামীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা, হয়রানি এবং যৌতুকের দাবির অভিযোগ এনেছেন।
রেশমার আরও অভিযোগ, শোয়েব তাকে এবং তার সন্তানকে ছেড়ে দিয়েছে এবং দ্বিতীয় বিয়ে করার পরিকল্পনা আঁটছেন।
শোয়েবের এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক, শরিয়াবিরোধী, অবৈধ, স্বেচ্ছাচারী, কঠোর, অমানবিক এবং বর্বর হিসেবে বর্ণনা করেন রেশমা।
রেশমা বলেন, ‘মুসলিম নারীদের দুর্দশা নিয়ন্ত্রণে এই চর্চার নিয়ন্ত্রণ দরকার।’
পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ মানুষ বহুবিয়ে করেন। তুরস্ক, তিউনিসিয়ার মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এই চর্চা নিষিদ্ধ। আর যেসব দেশে এই ব্যবস্থার অনুমতি আছে, সেসব দেশে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়ন্ত্রণ করে।
বহুবিয়েকে ‘নারীর প্রতি একটি অগ্রহণযোগ্য বৈষম্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি এই প্রথাকে ‘অবশ্যই বাতিল’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি অভিন্ন সিভিল কোড (ইউসিসি) প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই আইনে বিয়ে, বিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকার নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো ধর্মীয় আইনে পরিচালিত করা যাবে না। ভারতের সব নাগরিকের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে।
সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে ভারত বেশ স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে সরকারের এই ধর্মীয় সংস্কার ইসলামের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে মুসলিমরা।
ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ইসলাম ধর্মের পণ্ডিত এস ওয়াই কোরেশি বলেন, ‘সাধারণ ধারণা হলো, একজন মুসলমানের চারজন স্ত্রী এবং অসংখ্য সন্তান রয়েছে। এতে এক পর্যায়ে সংখ্যার দিক থেকে হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে মুসলিমরা। তবে এটি সত্যি না। (ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ মুসলিম, ৮০ শতাংশ হিন্দু।)
‘ইসলাম ধর্মের অনুসারে ভারতে মুসলিম পুরুষের সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করার অনুমতি আছে। তবে এর শর্তগুলো বেশ কঠিন, পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।
‘ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একজন পুরুষ দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। তবে কেবল এতিম এবং বিধবাদের মধ্য থেকে। অবশ্যই তাদের সবার সঙ্গে সমান আচরণ করতে হবে। তবে প্রত্যেককে সমানভাবে ভালবাসা প্রায় অসম্ভব। এটা এমন না যে তাদের সবাইকে আপনি একই জামাকাপড় কিনে দিলেন। বহুবিয়ে এর চেয়েও বেশি কিছু।’
কোরেশি আরও বলেন, ‘বহুবিয়ের নির্দেশিকাটি সপ্তম শতাব্দীতে আরবে উপজাতীয় যুদ্ধের সময় কোরআনে যুক্ত হয়েছিল। সে যুদ্ধে অনেক পুরুষ-যুবক মারা গিয়েছিল। বহুবিয়ের উদ্দেশ্য ছিল বিধবা এবং এতিমদের সাহায্য করা। অন্যথায়, কোরআন এই অনুশীলনকে নিরুৎসাহিত করে।’
নারী অধিকার কর্মী জাকিয়া সোমন বলছেন, “আজ ভারতে কোনো যুদ্ধ নেই। তাই বহুবিয়ের মতো ‘দুর্বৃত্ত ও পুরুষতান্ত্রিক’ প্রথা নিষিদ্ধ করা উচিত।”
মুম্বাইভিত্তিক ভারতীয় মুসলিম নারী আন্দোলনের (বিএমএমএ -ভারতীয় মুসলিম নারী আন্দোলন) প্রতিষ্ঠাতা সোমান আরও বলেন, ‘বহুবিয়ে নৈতিক, সামাজিক এবং আইনগতভাবে ঘৃণ্য। এটার বৈধতা সমস্যা তৈরি করে।
‘আপনি কীভাবে বলতে পারেন যে একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকতে পারে? সম্প্রদায়কে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের যুগে এটি নারীর মর্যাদা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
বিএমএমএ- বহুবিয়ে নিয়ে ২০১৭ সালে একটি জরিপ চালিয়েছিল। ২৮৯ জন নারীকে তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
সোমান বলেন, ‘ ৫০ জন নারীর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম তারা এমন পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছে যেগুলো ভীষণ অন্যায্য ছিল। তাদের সবার কাছে এটি (স্বামীর বহুবিয়ে) কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল। অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল।’
বহুবিয়ে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল বিএমএমএ। ইসলামে তাত্ক্ষণিক বিয়ে বিচ্ছেদের বিতর্কিত অনুশীলনের বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল তারা। কয়েক বছর আগে তাত্ক্ষণিক বিয়ে বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ হয় ভারতে।
বহুবিয়ে নিয়ে আইনি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আইনজীবী এবং নেতা অশ্বিনী কুমার দুবের এসব চ্যালেঞ্জর একটি করেছেন।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনালের নারী শাখার প্রধান আসমা জোহরা দুবেরের চ্যালেঞ্জের বিরোধীতা করেছেন। তার দাবি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর শাসনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী এজেন্ডা এসব চ্যালেঞ্জ।
আসমা বলেন, ‘ইসলামে আইন ঐশ্বরিক। আমরা নির্দেশের জন্য কোরআন এবং হাদিসের দিকে তাকাই। আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা পরিবর্তন করার অধিকার কোনো মানুষের নেই।
‘আপনি কি কখনও এমন একজন মুসলিম পুরুষের সঙ্গে দেখা করেছেন, যার চারজন স্ত্রী আছে? এ প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ পুরুষ জানান, একজন স্ত্রী রাখায়ই কঠিন, সেখানে চারজনের তো প্রশ্নই আসে না। আর বহুবিয়ের হার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে কম।’
জরিপ অবশ্য আসমার দাবির পক্ষে। ভারতের প্রায় সব ধর্মের মানুষের ওপর ১৯৬১ সালে একটি জরিপ চালানো হয়। এক লাখ বিয়ে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যসব সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের বহুবিয়ের হার সবচেয়ে কম; ৫.৭ শতাংশ।
পরবর্তী আদমশুমারি এই ইস্যুতে নীরব ছিল। বহুবিয়ে সম্পর্কিত সাম্প্রতিক তথ্য ২০০৫-২০০৬ সালের জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য জরিপে উঠে এসেছে। এতে সব ধর্মেই বহুবিয়ের প্রবনতা কমে এসেছে বলে দেখা গেছে।
কোরেশি বলেন, ‘যেহেতু তথ্যটি বেশ পুরোনো, তাই আমাদের প্রবণতাগুলো খেয়াল করতে হবে। আমরা যদি ১৯৩০ থেকে ১৯৬০ সালের আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করি, তবে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুবিয়ের ধারাবাহিক পতন দেখতে পাব।’
কোরাশির লেখা দ্য পপুলেশন মিথ: ইসলাম, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিটিক্স ইন ইন্ডিয়া প্রকাশ হয় ২০২১ সালে। সেখানে তিনি বহুবিয়ে নিষিদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘যদি ব্যাপকহারে এটির চর্চা না করা হয়, তবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আপনি কি করতে পারবেন?’
মন্তব্য