২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিল। ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামীর নেতারা বারবার বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এলে সরকারের পতন ঘটিয়ে ফেলবেন তারা।
আয়োজন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধানকে ঠেকাতে সংগঠনটি দেশের নানাপ্রান্তে যে তাণ্ডব দেখাচ্ছিল, সে সময় তাদের নেতাদের বক্তব্য ছিল ভীষণ গরম।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগের দিন ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমের সামনে সংগঠনটির সে সময়ের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির আগমনই হবে সরকারের পতনের ক্ষেত্র, যদি সরকার আমাদের দাবি না মানে।’
এই সফর চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে তাণ্ডবের পর ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে সংগঠনটি। আগের দিন বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশে আরেক যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, ‘হরতালে বাধা দিলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা করে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় হেফাজত সমর্থকরা। ফাইল ছবি
৩১ মার্চ হরতালে তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়া ১১ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তুলাধুনা করে হেফাজত বিবৃতিতে বলে, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করার চক্রান্ত আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে নস্যাৎ করে দেব, ইনশাআল্লাহ।… কোনো অপশক্তির হুমকি-ধমকিকে নায়েবে রাসুল ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা পরোয়া করে না।’
তবে গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে পরে সবই পরোয়া করেছে হেফাজত। সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট সবাইকে। বারবার নেতারা বলছেন, রাজনীতি নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
হেফাজত নিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই এখন হতাশ। সংগঠন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়।
এই যেমন সাবেক নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসূফী। হেফাজতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
হেফাজতের চরিত্রে পরিবর্তন হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক। আপনাদের মন্তব্য তো সব সময় যথার্থ হয়। তবে এ বিষয়ে যারা এখন সংগঠনের দায়িত্বে আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন। আমি তো এখন সংগঠনের দায়িত্বে নেই।’
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘আমরা এখন রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত আছি। কারণ আমরা তো অরাজনৈতিক সংগঠন। আগে দিয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু এখন আমাদের দেয়ার সুযোগ নেই।’
গ্রেপ্তারের পর থেকেই চুপচাপ, ‘রাজনীতি থেকে দূরে’
গত বছরের এপ্রিলে প্রথমে মামুনুল হক, এরপর হেফাজতের আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে ওই বছরের মার্চ ও এপ্রিলের শুরুর দিকে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের পুরোনো মামলাগুলো সচল হয়।
এরপর থেকে রাজনৈতিক কোনো ইস্যু দূরে থাক, ধর্মীয় কোনো বিষয়েও দেশজুড়ে কোনো কর্মসূচি নেই সংগঠনটির।
হেফাজত নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা সামনে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেবে না।
সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম শুরু থেকেই অরাজনৈতিক সংগঠন। রাজনীতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
কোনো কর্মসূচি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতা এখনও জেলে আছেন। আমরা যদি এই মুহূর্তে কর্মসূচি দেই, তাহলে ওদের বের হওয়াটা আরও মুশকিল হয়ে যাবে। আর আমাদের আমির তো বলেছেন, সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো আমাদের কাজ না।’
সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু দেশে সামনে নির্বাচনের বিষয় আছে। এ সময় আমরা কর্মসূচি দিলে আমাদের রাজনৈতিক বলা হবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি না। তবে আমাদের সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতার বিষয় নেই।’
ধর্মীয় কর্মসূচিও কেন নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভক্তের অভাব নেই। কিন্তু আমাদের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অনেকে জেলে রয়েছেন। এ অবস্থায় যদি আমরা কর্মসূচি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে তো সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ জন্য আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি না।’
হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালী নেতারা মৃত্যুর কারণে সংগঠন দুর্বল হয়েছে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘১৪ মাসের মধ্যে আমাদের চারজন মুরব্বি, দুজন আমির ও দুজন মহাসচিব মারা গেছেন। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। এটি কাটিয়ে উঠতে আমাদের সময় লাগবে।
‘আমাদের নেতারা সবাই জেল থেকে বের হয়ে এলে, আশা করি আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ফাইল ছবি
তাণ্ডব, হুমকির পর গ্রেপ্তার অভিযান
গত বছরের ২৬ মার্চ ও এর পরবর্তী সময়ে নানা কর্মসূচি দেয় হেফাজত। এর মধ্যে ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজত সমর্থকরা।
এরপর চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলা হয়। সেখানে গুলিতে প্রাণ হারায় কয়েকজন। এরপর কয়েক দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও পরে নারায়ণগঞ্জে চলে তাণ্ডব।
এরপর গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পর তাকে উদ্ধার করতে গিয়েও তাণ্ডব চালান হেফাজত কর্মীরা।
হেফাজতে ইসলামের তখনকার যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফাইল ছবি
সোনারগাঁ তো বটেই, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, সুনামগঞ্জের ছাতকেও ত্রাস তৈরি করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সেই সঙ্গে অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুক লাইভে চলতে থাকে হুমকি-ধমকি।
তবে সরকারপ্রধান পার্লামেন্টে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিক স্থানে যখন হেফাজতকে সতর্ক করে দিয়ে কড়া বক্তব্য দেন, সেই সঙ্গে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়, তখন হেফাজতের বক্তব্য নরম হয়ে আসে।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা মামুনুল গ্রেপ্তার
বিভিন্ন মামলায় শীর্ষস্থানীয় ৩০ নেতাসহ সারা দেশে এক হাজার ২৩০ জনেরও বেশি কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এই গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে বিএনপির সঙ্গে জোট ভেঙে দেয় দুটি ধর্মভিত্তিক দল, যাদের নেতারা ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
এরপর থেকে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা আর উত্তেজক কোনো বক্তব্য না দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন তাদের নেতাদের মুক্তির দাবি নিয়ে।
সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন হেফাজত নেতারা। অনুরোধ করেন তাদের সংগঠনের নেতাদের মুক্তি দিতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরের মতো বলেন, যারা নিরপরাধ তাদের সরকার আটকে রাখবে না, কিন্তু যারা অপরাধে সম্পৃক্ত, তাদের বিচার চলবে।
পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই গত বছরের সহিংসতার মামলাগুলো তদন্ত করছে। পাশাপাশি ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের মামলাগুলো সচল হয়েছে।
কমিটি বিলুপ্ত, শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু
নেতাদের মুক্তির জন্য দেনদরবারের মধ্যে ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বাবুনগরী। বাদ দেয়া হয় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়, তাতে সিংহভাগকেই বিএনপি জোটের শরিক বিভিন্ন ইসলামী দল থেকে নেয়া হয়।
এই কমিটি বিলুপ্ত করার মাস দেড়েক পর ৭ জুন বাবুনগরী ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির কেউ সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত নন।
সে সময় হেফাজতের বলিষ্ঠ কোনো অবস্থান না নেয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠনে হতাশা দেখা দেয়। বিভিন্ন ফেসবুক পেজে কর্মী-সমর্থকরা নানাভাবে সমালোচনা করতে থাকেন।
এর মধ্যে গত ১৯ আগস্ট মারা যান বাবুনগরীও। ২৯ নভেম্বর মারা যান মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীও।
পরে হেফাজতের আমিরের দায়িত্ব পান জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বরাবর স্বল্পভাষী। কওমি অঙ্গনে পরিচিত হলেও সারা দেশে সেভাবে তাকে নিয়ে আলোচনা কখনও ছিল না।
কার্যক্রম কীভাবে চলছে?
শুরু থেকেই সংগঠনটির চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পরিচালিত হতো। তবে ঢাকার মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
গত ২৯ নভেম্বর নূরুল ইসলাম জিহাদী মারা যাওয়ার পর তার স্থলাভিষিক্ত হন মাওলানা সাজিদুর রহমান। তিনি সংগঠনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার আমির ছিলেন। এরপর থেকে আবার হাটহাজারীতেই কেন্দ্র চলে যায়।
জাতীয় রাজনীতি বা কওমি অঙ্গনে সাজিদুর তেমন ‘প্রভাবশালী’ হিসেবে পরিচিত নন। আল্লামা আহমদ শফী ও বাবুনগরীর সময়ে মূল নেতৃত্বেও ছিলেন না তিনি।
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
বেশ কয়েক মাস পর বুধবার চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছেন সংগঠনের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুহিউদ্দিন রাব্বানী নিউজবাংলাকে বলেন, আসলে দীর্ঘদিন আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয় না। তবে কী বিষয়ে আলোচনা হবে সেটার আলোচ্যসূচি এখনও নির্ধারণ হয়নি।’
যেভাবে আলোচনায় হেফাজত
২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে নারী নীতিমালার বিরুদ্ধে সংগঠনটির যাত্রা।
তবে সংগঠনটি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করে ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। শাহবাগ থেকে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল সংগঠনটি ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে।
তাদের এই শোডাউন ব্যাপক নজর কাড়ে বিভিন্ন মহলের। তবে এর ঠিক এক মাস পর ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে পালাতে বাধ্য হন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। এরপর সংগঠনটি অনেকটা চুপসে যায়।
পরে সরকারের সঙ্গেও দেশের শীর্ষ এই আলেমের যোগাযোগ বাড়ে। কওমি মাদ্রাসা দাওরায়ে হাদিসের সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হয়। এতে কৃতজ্ঞ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধিও দেয়া হয়।
তবে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজত বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ আলেমদের নিয়ন্ত্রণ চলে আসায় সংগঠনটি সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়।
আরও পড়ুন:এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
মন্তব্য