হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি শিক্ষকতা করেন ওই মাদ্রাসায়।
গ্রেপ্তারের পর মামুনুলকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রিসোর্ট-কাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দুটি মামলা হয় মামুনুলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
মামুনুলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর আমার অফিসে আনা হয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মামুনুল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে মামুনুল হককে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
৩ এপ্রিল রিসোর্ট-কাণ্ডের পরদিন ওই মাদ্রাসায় হেফাজত নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মামুনুল হক। এরপর আর তাকে সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।
সোনারগাঁয় রিসোর্ট-কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে মামুনুল হকের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেপ্তার হতে থাকেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকটি সূত্র সে সময় জানায়, মামুনুল হকও যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।
আরও পড়ুন: লকডাউনেই গ্রেপ্তার মামুনুল?
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান মামুনুল হক সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক দেখলেন তার কথায় তো অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, অনেক সমর্থক তার, উনি যা বলছেন তারা তাই করছেন। ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে তিনি যা বলেছেন, তাই হয়েছে। তখন তিনি ভাবলেন জামায়াত-বিএনপি তার সঙ্গে আছে, তিনি তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন।
‘সমমনাদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার একটা চিন্তা তার মধ্যে চলে এসেছিল। বড় নেতা হতে চেয়েছিলেন, তাই তার বক্তব্যের ধরন পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় যারাই করেছেন তারা কেউ ছাড় পাবে না, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
আরও পড়ুন:সকলের সহযোগিতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জাহাঙ্গীর চৌধুরী আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে।
মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষক যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এ সময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত বিনিময় করেন।
উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
এরআগে উপদেষ্টা বিজিবি’র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাল্লারপার এলাকার একটি ধানখেত থেকে ৭ ফুট লম্বা একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেটিকে উদ্ধার করে লাউয়াছড়ার জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছে। সাপটি আঘাতপ্রাপ্ত থাকায় অবমুক্ত করা হয়নি। গত রোববার (সাপ-সংরক্ষক ও ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের সংরক্ষণ কর্মী চঞ্চল গোয়ালা অজগরটি উদ্ধার করেন।
চঞ্চল গোয়ালা জানান, দুপুরের দিকে স্থানীয়রা ফোন দিয়ে জানান ধান কাটতে গেলে একটি অজগর তারা দেখতে পান। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন সাপটির শরীরে আঘাত রয়েছে। স্থানীয়রা সাপটিকে কাঁচি দিয়ে আঘাত করে। সেখান থেকে অজগরটিকে উদ্ধার করে প্রথমে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেসকিউ সেন্টারে নেওয়া হয়। কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে সেটিকে উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সাপটি বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানিতে ভেসে আসছে। সাপটার ওজন প্রায় ১০ কেজির মতো।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হক জানান, সাপ-সংরক্ষক ও ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের সংরক্ষণ কর্মী চঞ্চল গোয়ালা ধানক্ষেত থেকে অজগরটি উদ্ধার করেন। সাপটি কিছুটা আঘাত প্রাপ্ত। সুস্থ করে নিরাপদে অবমুক্ত করা হবে। তিনি বনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এবং সাপ দেখলে হত্যা না করে বনবিভাগ বা সংরক্ষণ কর্মীদের খবর দেওয়ার আহ্বান জানান।
মেহেরপুরে একটি মাদক মামলায় ৪ আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার মেহেরপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম নাসিম রেজা আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলো- গাংনী উপজেলার করমদি মধ্যপাড়ার মুসলিম আলীর ছেলে জুয়েল হোসেন, সাবেদ আলীর ছেলে স্বপন আলী, আইবুদ্দিনের ছেলে আবেদ আলী এবং জামরুল ইসলামের ছেলে টিপু।
মামলার নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাংনী থানা পুলিশ মেহেরপুর কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের আকুবপুর এলাকায় একটি ট্রাক আটক করে। পরবর্তীতে ট্রাক তল্লাশি চালিয়ে ৪৬০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩১ (১) সারণী ও ৩৮ ধারায় গাংনী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
দীর্ঘ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষে আদালত চার আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর দণ্ড প্রাপ্তদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন মো. আতিকুর রহমান। তার যোগদানের মধ্যদিয়ে ১ বছর ৩ মাস ১৯ দিন পর এসিল্যান্ড পেলেন উপজেলাবাসী। তিনি ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।
গত রোববার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নবাগত এসিল্যান্ড আতিকুর রহমানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান। এসিল্যান্ডের যোগদানে এ উপজেলায় নাগরিক সেবাতে আরও গতি বাড়বে বলে মনে করছেন উপজেলাবাসী।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৩ মে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ কুমার বসাক পদোন্নতিজনিত বদলি হয়ে অন্যত্র যাবার পর দীর্ঘদিন যাবত সারিয়াকান্দি উপজেলায় শূন্য ছিল এ পদটি। পদটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান।
উল্লেখ্য, এসিল্যান্ড আতিকুর রহমান এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (রাজস্ব শাখা ও রাজস্ব মুন্সিখানা শাখা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের অন্তারমোড় এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত অর্থে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান ভাঙনস্থলে এসে জিওব্যাগ ফেলা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
টেন্ডারের মাধ্যমে বালু ভর্তি জিওব্যাগ কাজের তদারকি করছেন মেসার্স মল্লিক এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মো. আতিকুর রহমান বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছি। অন্তারমোড় ভাঙন রোধে ৫৫০ বস্তা জিওব্যাগ ফেলা হবে। প্রতি ব্যাগে ২৫০ কেজি করে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কেজি বালু ফেলা হবে ভাঙন এলাকায়।
এ বিষযে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে জরুরি আপৎকালীন কাজের অংশ হিসেবে অন্তারমোড় ভাঙনকবলিত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত অর্থে আপাতত ৫৫০ বস্তা বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা কাঠিগাঁও গ্রামে মেধাসিড়ি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কোটালীপাড়া যুবদলের সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা মানিকুজ্জামান হাওলাদারের উদ্যোগে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ষিয়ান মুরুব্বি আনোয়ার হোসেন ফকিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলমত নির্বিশেষে কাঠিগাঁও ও চিতশী গ্রামের শতাধিক মুরুব্বিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়।
আলোচনা সভায় কোটালীপাড়া পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদার, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এইচ এম শহীদ, পল্লী চিকিৎসক মনিরুজ্জামান শেখ, মতিউর রহমান মুকুল, আবুল বাশার হাওলাদার বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মাদক এখন আর শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির বিষয় নয়—এটি পুরো সমাজ, জাতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। একদিকে যেমন এটি পরিবারে অশান্তি তৈরি করছে, অন্যদিকে অপরাধের বিস্তারেও এর বড় ভূমিকা রয়েছে।
যুব সমাজকে খেলার মাঠে ফেরাতে হবে, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যদি আমরা সকলে মিলে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসি, তাহলে মাদকমুক্ত, নিরাপদ এবং শান্তিময় এলাকা গড়ে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
একইসঙ্গে নির্দোষ ব্যক্তিরা যেন পুলিশি হয়রানিসহ কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে চলতি মৌসুমে আউশ ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। আগাম বৃষ্টিতে জমির লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার জেলায় আউশ ধানের ফলন অনেক বেশি। জেলায় ৩ হাজার ৯ শ ৩৭ হেক্টর জমিতে মোট আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১হাজার ৪শ ৯৬ মেট্রিক টন।
জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। আজ পর্যন্ত ৩২ শতাংশ জমির আউশ ধান কর্তন হয়েছে।
এরমধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৯ হেক্টর জমির ধান কর্তন করে উৎপাদন ৪১ মেট্রিক টন, ফকিরহাট উপজেলায় ১৭৭ হেক্টর জমির ধান কর্তন করে উৎপাদন ৫০৯.২৫ মেট্রিক টন, মোল্লাহাট উপজেলায় ২৩০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৬১৮ মেট্রিক টন, কচুয়া উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন ৪১৫.৮ মেট্রিক টন, মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় ২০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৫৫৪.৪ মেট্রিকটন এবং শরনখোলা উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদন ১৫৩৭.৫ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১২৫২ হেক্টর জমি থেকে ৩৬৭৫.৯৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
কচুয়ার চাষি সুন্দর আলী বাসসকে বলেন, এসময়ে শ্রমিক সংকট প্রকট। স্থানীয় শ্রমিকরা অধিক মজুরি লাভের আশায় ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ধান কাটতে যায়। এ কারণে মৌসুমি ফসল কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়তে হচ্ছে। এজন্য খরচও বেশি করতে হচ্ছে। একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মজুরি ও দুপুরের খাবার দিতে হয়।
কচুয়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরীক্ষিত জোয়ার্দার বাসসকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় মাঠে থাকা ধানের কোন ক্ষতি হবে না। বাকি আউশ ধান কর্তন চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, কচুয়ায় প্রতিবছর আউশ ধানের আবাদে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। এবছর কচুয়া উপজেলায় ১১৫০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪১৫.৮ মেট্রিক টন চাল।
তিনি বলেন, এখানকার বলেশ্বর নদীর পানি মিষ্টি বলে দিনে দিনে আউশের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে আউশের ব্যাপক ফলনে এলাকার চাষিরা খুবই খুশি। তাদের মুখে হাসির ঝিলিক লেগে আছে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বাসসকে বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে আউশ চাষে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয় এবং উৎপাদিত ধান ও খড়সহ প্রায় ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এ ধানে সেচের প্রয়োজন হয়না এবং সার কম লাগে। তাই ফলন একটু কম হলেও লাভ বেশি। আবার আউশ আবাদের পর চাষিরা একই জমিতে আমন ও বোরো ধানের চাষ করতে পারে। এতে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
বাগেরহাট খামারবাড়ির কৃষি কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বাসসকে বলেন, পানি বাড়ার সাথে সাথে ‘আউশ ১০৬’ জাতের ধান গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে অতি বৃষ্টিতে ধানের চারায় পচন ধরে না। তাই এ বছর আগাম বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানির লবণাক্ততা হ্রাস পেয়ে গত মৌসুমের তুলনায় আউশ ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাগেরহাট জেলায় ৪ হাজার ৮ শত ২৭ হেক্টর জমিতে আউশ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৩ শত ৭৫ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৯ শত ৩৭ হেক্টর জমিতে আউশ উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪ শত ৯৬ মেট্রিক টন চাল।
কৃষি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন আরও জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে মাটির লবণাক্ততা কেটে গেছে। এর ফলে আগামী এক বছর পর্যন্ত কৃষিতে উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শীত ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির পাশাপাশি সব ধরনের ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে চাষিরাও লাভবান হবে।
কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করতে চাষিদের বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও ধানবীজ বিতরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও সহায়তা দিতে কৃষকদের পাশে রয়েছে।
বাগেরহাটের কৃতি সন্তান কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। স্বাধীনতা লাভের পর যখন দেশে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের বসবাস ছিল তখন মান্ধাতার আমলের চাষের কারণে কৃষিতে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এদেশে কৃষি বিপ্লব ঘটে। এরপর থেকে ক্রমশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলশ্রুতিতে কৃষকরা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে।
মন্তব্য