পুলিশের হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ভাইস-চ্যান্সেলরের (ভিসি) নির্দেশেই পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
রোববার রাত ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছে। এতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এর আগে রাত ৮টার দিকে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন ভিসি। সোমবার বেলা ১২টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
তিন দফা দাবিতে রোববার বিকালে আন্দোলনকারীরা ভিসিকে অবরুদ্ধ করলে সন্ধ্যায় অ্যাকশনে যায় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অভিযোগ ভিসির নির্দেশেই পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
এই বিক্ষোভের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার নির্দেশনা আসে। এমন নির্দেশনার পরপরই বিক্ষোভ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘পরীক্ষা কেন বন্ধ, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হল কেন বন্ধ, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কেন বন্ধ, প্রশাসন জবাব চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শাহপরান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের কিছু আবাসিক শিক্ষার্থীও এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। পরে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে চলে যান।
রাত ৯টার পর বিক্ষোভকারীরা প্রধান ফটক ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরাও এসে যোগ দেন এই বিক্ষোভে। তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
রাত ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সায়েম আহমদ বলেন, ‘উপাচার্যের নির্দেশেই আজ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও হল ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আচমকা হল ছাড়ার নির্দেশে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত, তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমরা এসব অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানি না।’
শিক্ষার্থী মেহরাব হােসেন কায়েস বলেন, ‘আজকের ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে যে এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অযোগ্য। যিনি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নির্দেশনা দিতে পারেন, তিনি কোনোভাবেই উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, ‘‘উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরাই সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবাইকে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়তে হবে।’
প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন
প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলনে নামে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা। রোববার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে এসে তা সহিংস রূপ নেয়।
উপচার্যকে ধাওয়া ও অবরুদ্ধ, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলার পর পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এর জের ধরে রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। একইসঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
যার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন সিরাজুন্নেসা হলের সেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন বলেও জানান উপাচার্য। তার স্থলে বিশ্বদ্যিালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরীকে নতুন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ
শাবি ছাত্রীদের আন্দোলনের তৃতীয় দিনে শনিবার সন্ধ্যায় হামলার অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। যদিও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
এই হামলার প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবি আদায়ে রোববার সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসের গোল চত্বর ও প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। কিছু ছাত্রও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
দুপুরের দিকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ভিসি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রক্টর আলমগীর কবীরসহ কয়েকজন শিক্ষক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
শিক্ষকরা জানান, উপাচার্য তাদের সব দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন। তবে এ জন্য এক সপ্তাহের সময় চেয়েছেন তিনি।
তবে ছাত্রীরা এমন আশ্বাস না মেনে স্লোগান শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর তারা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন।
অবরুদ্ধ উপাচার্য
ছাত্রীরা যখন মিছিল করছিলেন তখন বাসভবনে যাওয়ার জন্য নিজ কার্যালয় থেকে বের হন ভিসি। তিনি বের হয়ে যাচ্ছেন এমন খবর আন্দোলনকারীদের কাছে পৌঁছার পর তারা সেখানে ছুটে যান। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা ভিসিকে ঘিরে ধরে ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ভেতরে নিয়ে যান।
শিক্ষকদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা ভিসিকে ধাওয়া করলে তিনি আইআইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন।
তবে ছাত্রীদের দাবি, ধাওয়া নয় বরং ভিসির সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু উপাচার্য তাদের কথা না শুনে দৌড়ে আইআইসিটি ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
ভিসি আইআইসিটি ভবনের ভেতরে প্রবেশের পর ওই ভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টার দিকে তারা ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ভিসি। শিক্ষার্থীরা ওই ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনস্থলে পুলিশের অবস্থান, উত্তেজনা
বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে যায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য আইআইসিটি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলা এড়াতে এ সময় আন্দোলনকারীরা হাতে ফুল নিয়ে পুলিশকে স্বাগত জানায়।
দীর্ঘক্ষণ পুলিশ নীরব অবস্থানেই ছিল।
শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ
শিক্ষকরা আলোচনার মাধ্যমে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ভিসিকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হলে অ্যাকশনে নামে পুলিশ। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে এগিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় দুই পক্ষে ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়। পরে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশের লাঠিচার্জে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক পিছু হটলেও পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ পর্যায়ে পিছু হটে পুলিশ। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এ সময় ক্যাম্পাসজুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তখন গুলির ঘটনাও ঘটে।
গুলিতে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহর আলী শেখসহ ১০ পুলিশ সদস্যও আহত হন। আহত হন শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ৫০ জন। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরও লাঠিপেটা করে পুলিশ। তাদেরও কয়েকজন আহত হন।
আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার পর ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে নিজ বাসভবনে নিয়ে যান পুলিশ ও শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহর আলী শেখ বলেন, ‘আমরা হামলা করিনি। আমরা উপাচার্যকে মুক্ত করে আনতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরাই আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
‘সংঘাত থামাতে পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।’
এই অবস্থার জন্য শিক্ষার্থীদেরই দায়ী করেছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাকে ধাওয়া করে অবরুদ্ধ করার মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা শান্তিপূর্ণ আলোচনার সব প্রস্তাব নাকচ করেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সংঘর্ষের পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে নিজ বাসভবনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকেন উপাচার্য।
সিন্ডিকেট বৈঠক শেষে রাত ৮টার দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল সেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন। তার পরিবর্তে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা হলেও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম চলবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় আমরা বিপাকে পড়েছি। হুট করে ১২টার মধ্যে কোথায় যাব? করোনার কারণে এমনিতেই আমাদের শিক্ষাজীবন সংকটে। এখন হল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে আরও সমস্যায় পড়ব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সামিউল ইসলাম জানান, এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত; তাদের কিছু করার নেই।
সিদ্ধান্ত না মেনে কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আশড়ন্ড গ্রামের আম চাষি রবিউল ইসলাম ১০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছেন। গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আমের গুটি ঝড়ে পড়েছে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও মিলছে না সুফল।
শুধু রবিউল নয়, নওগাঁর সব আম বাগানগুলোতে বর্তমানে একই অবস্থা।
আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আম চাষিরা জানান, টানা দুই সপ্তাহ ধরে গরম ও তাপপ্রবাহে কারণে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানি সেচসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঝরে পড়া থেকে ঠেকানো যাচ্ছে না আমের গুটি। তাই চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
এমন অবস্থায় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বাড়তি যত্ন নিলে গুটি পড়া রোধ অনেকটাই সম্ভব।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৪ দশমিক ২৪ টন হিসেবে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, এবার আশানুরূপভাবে আমের দেখা নেই। আমের গুটি ঝরে পড়ে আছে রোদের তীব্রতায়।
চাষিরা জানান, খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে।
বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে নওগাঁ। শনিবার বেলা ১১টায় নওগাঁয় তাপমাত্রার পারদ উঠে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানায় জেলার বদলগাছী স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
আম চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১২ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে আমার। এবার সব গাছে মুকুল কম এসেছিল। যেটুকু ছিল, তা নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে তীব্র গরমে অধিকাংশ গাছের গুটি ঝরে গেছে। অনেক গাছ গুটিশূন্য হয়ে আছে। এতে উৎপাদন অনেক কম হবে বলে ধারণা করছি।’
পোরশা উপজেলার আম চাষি মোজাম্মেল ইসলাম বলেন, ‘এবার ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। গাছে গুটি কম থাকায় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। গত বছর প্রচুর আম হয়েছিল। সে তুলনায় এবার অনেক কম পাব। অধিকাংশ গুটি ঝরে গেছে। ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে মনে করছি।’
নিয়ামতপুর উপজেলার আম চাষি বিজন ঘোষ বলেন, ‘এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছি। গুটি পড়া রোধে পানি, ওষুধ দেয়ার পরও তীব্র গরম আর রোদের কারণে আমগুলো ঝরে পড়ছে। গাছে আম টেকানো যাচ্ছে না। আবার কালবৈশাখি ঝড় হলে আম নষ্ট হতে পারে মারাত্মকভাবে।’
সাপাহার উপজেলার স্থানীয় বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ‘এ এলাকা এমনিতেই পানি সংকটাপন্ন এলাকা। এর মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ, কোনো বৃষ্টি নেই। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে যাবে।
‘যে সব বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা আছে সে সব বাগানগুলোতে সেচ দেয়া হচ্ছে। আর যে সব বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই, সে সব বাগানগুলো থেকে আম ঝরে যাচ্ছে।’
এমন অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে বাগানগুলোতে যেন সেচের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় তার দাবি জানান।
এ বিষয়ে নিয়ে কথা হলে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মেহেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই স্বাভাবিকভাবে এমন সময় গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ে, তবে এই সময়ে গাছে বাড়তি পরিচর্যা করলে অস্বাভাবিকভাবে গুটি ঝরে পড়া বন্ধ হবে।
‘আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচের পাশাপাশি প্রয়োজনে গাছের পাতায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের আমের গুটি ঝরা রোধে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ আমের গুটি ঝরে যাওয়ার পরও যে পরিমাণ আম থাকবে তা দিয়েই আমাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব, তবে এমন পরিস্থিতিতে আমরা আম চাষিদের মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:বরিশালের বাকেরগঞ্জে শনিবার পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়ে থাকা তারে স্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশু সন্তানসহ এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আফজাল হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
প্রাণ হারানো তিনজন হলো উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের ঢালমারা গ্রামের রিয়াজ মোল্লার স্ত্রী সনিয়া বেগম (২৫), তার ৯ বছর বয়সী ছেলে সালমান ও ১২ বছরের মেয়ে রেজবীনা।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মা ও তার দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পানির মধ্যে পড়ে রয়েছে। পাশে লেবু গাছ রয়েছে।
‘প্রথমে শিশু ছেলে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়। তাকে রক্ষা করতে মা ও বোন গিয়ে তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।’
ইউএনও জানান, ঘটনাস্থলে তিনিসহ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম রয়েছেন। তারা ঘটনার তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় দায়িত্বের অবহেলার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিয়ামতি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তফা কামাল হাওলাদারের স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান, বাড়ির পাশে বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ডোবায় পড়ে ছিল। দুই ভাই-বোন লেবু ছিঁড়ে খেলছিল। ওই সময় লেবু ডোবায় পড়ে যায়। ওই লেবু আনতে ছেলে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তখন মেয়ের চিৎকারে মা এসে তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তখন মাকে ধরে মেয়েও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।
তার কীভাবে ছিঁড়ে পড়ে ছিল, তা কেউ জানাতে পারেনি জানিয়ে মমতাজ বেগম বলেন, ‘বিদ্যুতের লোকদের বলা হয়েছিল বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়া তার যেকোনো সময় ছিঁড়ে পড়তে পারে, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি।’
পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ বাকেরগঞ্জ জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে পৃথক দুইটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পেলে বিষয়টি বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য