আলোচিত ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন তার মা কমরের নেহার।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
কমরের নেহার রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমানের মুরিদ। সংবাদ সম্মেলনের সময় তার সঙ্গে ছিলেন বড় ছেলে আকতার ই কামাল, ছোট মেয়ে ফাতেমা আক্তার, কাঞ্চনের মামাতো ভাই শাকেরুল কবির ও তার দুই বোন।
৮৪ বছর বয়সী কমরের নেহারের পক্ষে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মেয়ে ফাতেমা আক্তার।
কমরের নেহার তার লিখিত অভিযোগে বলেন, তার স্বামীর মৃত্যুর পর কাঞ্চন সবার সম্পদ আত্মসাৎ করতে উঠেপড়ে লাগে। সম্পদ নিয়েই তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কাঞ্চন নানা সময় ভুয়া দলিল তৈরি করে মা ও অন্য ভাই-বোনদের সম্পদ দখল করার পাঁয়তারা করে। সম্পদের জন্য কাঞ্চন মায়ের বিরুদ্ধেই দুটি মামলা করে। এমনকি নিজের মায়ের নামের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে অন্য নারীকে মা বানিয়ে জাল দলিল তৈরি করে। এ ঘটনা সামনে আসার পর কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।
স্বামী ডা. আনোয়ার উল্লাহ ১৯৮৬ সালে রাজারবাগ পিরের মুরিদ হয়েছিলেন দাবি করে কমরের নেহার বলেন, ‘তিনি (স্বামী) জীবিত থাকার সময় আমি আমার বড় ছেলে ও মেয়ে রাজারবাগ পিরের মুরিদ হই।’
কমরের নেহার তার স্বামীর সম্পদের বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ছিলেন। তিনি অনেক জমিজমা ক্রয় করেন। তার ঢাকার শেওড়াপাড়া, শাহজাহানপুর থানার শান্তিবাগে বাড়ি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবাইলে ফ্যাক্টরি, তক্কার মাঠে জমি, পিলকুনিতে ৪টি প্লট রয়েছে। এ ছাড়া তিনি নোয়াখালীতে পৈতৃক সূত্রে অনেক জমিজমা লাভ করেন। তার মৃত্যুর পর এই সম্পত্তিগুলো কাঞ্চনসহ সবার মধ্যে বণ্টন হয়, যা প্রত্যেকের সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট।
‘আমার স্বামী আমার জন্যও আলাদা কিছু সম্পত্তি কিনেছিলেন। আমার ও স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী, কিছু জমি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করার নিয়ত করেছিলাম। কিন্তু আমার দানের বিষয়টি অন্য সন্তানরা মেনে নিলেও কাঞ্চন মানতে পারেনি। সে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যেন আমি আমার ভাগের সম্পত্তিটুকু পুরোটাই তাকে লিখে দিই; কোনোভাবেই যেন মাদ্রাসায় জমি দান না করি। কাঞ্চন সম্পত্তির ওপর লোভ সামলাতে পারে না পেরে অন্য এক মহিলাকে মা বানিয়ে আমার জমির জাল দলিল তৈরি করে। ওই জাল হেবা দলিলের জন্য আমরা ২০০৯ সালে একটি মামলাও করেছিলাম যার নং ১৩৯২৬।’
কমরের নাহার বলেন, ‘…এক যুগ আগে কাঞ্চন আমাকে মৃত দেখিয়ে এবং তার একমাত্র বোন ফাতেমা আক্তারকে বাদ দিয়ে সকল সম্পদের ওয়ারিশনামা তৈরি করে। কাঞ্চনের বানানো জাল দলিল বাতিল করতে এবং আমার মেয়ের ওয়ারিশসত্ব ফিরিয়ে আনতে আমি আদালতের দ্বারস্থ হই। তখন কাঞ্চন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা শুরু করে। আমি তার মা হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে দুটি, বড় ভাই আকতার ই কামালের বিরুদ্ধে সাতটি, বোনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং তার মামাতো ভাই শাকেরুল কবিরের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে।’
২০১৪ সালে নিজের অংশ থেকে মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসার নামে ৭৬ শতাংশ জমি দান করেন বলে উল্লেখ করেন কমরের নেহার।
তিনি বলেন, ‘এটা কাঞ্চন মেনে নিতে পারেনি। সে ওই জমিসহ আমার অংশের সম্পদ তার নামে লিখে দিতে আমাকে চাপ দিতে থাকে। সেই সাথে দানের জমি ফিরিয়ে দিতে রাজারবাগ দরবার শরিফ ও মুহম্মদীয়া জামিয়া শরিফ মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট লোকজনের ওপর মামলা-হামলা করতে থাকে। অনেককে সে রক্তাক্ত করে হাসপাতালে পাঠায়। এমনকি মাদ্রাসায় যাওয়া বোরকা পরিহিতা নারীদেরও সে উত্ত্যক্ত করত। এরপর সে রাজারবাগ পিরের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা বক্তব্য প্রচার করতে থাকে।
‘পির সাহেব নাকি আমাকে বাইয়াত করে ভুলভাল বুঝিয়ে আমার সব সম্পত্তি লিখে নিচ্ছেন। আমি নাকি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত করে পির সাহেবকে সব সম্পত্তি লিখে দিচ্ছি। এমন মিথ্যা সে মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকে। আমি কোনো সম্পত্তি পির সাহেবকে লিখে দিইনি। যতটুকু সম্পত্তি আমি দান করেছি, সেটা একটা মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য; পির সাহেব বা দরবার শরিফের নামে নয়। আমি স্বেচ্ছায় ওই সম্পদ দান করেছি।’
পিরের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাঞ্চন কুৎসা রটাচ্ছেন উল্লেখ করে কমরের নেহার বলেন, ‘সে প্রচার করে, আমি নাকি আমাদের শান্তিবাগের বাড়ি পির সাহেবকে লিখে দিয়েছি, পির সাহেবের মেয়ের বিয়েতে স্বর্ণের মুকুট দিয়েছি, জাপান থেকে তার পাঠানো একটা গাড়ি পির সাহেবকে দিয়ে দিয়েছি। এসবই ভিত্তিহীন, মিথ্যা কথা। কাঞ্চনের সাথে আমাদের পারিবারিক বিরোধ। সেটার সাথে পিরকে জড়িয়ে মাদ্রাসার জায়গাটা দখল করতে চায় সে।’
কাঞ্চনের মায়ের দাবি, জাপান থেকে ফিরে এসে তার ছেলে ১৯৯৫ সালে রাজারবাগ পিরের মুরিদ হন। এমনকি তার দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠানও রাজারবাগ দরবার শরিফে হয়।
ছেলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অভিযোগ পাঠ করার পর কমরের নেহার ও তার পরিবারকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে চাইলে তারা জানান, কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেননি। তারা শুধু তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এরপরও কাঞ্চনের জাল হেবা দলিল সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে সংবাদ সম্মেলনস্থল ছাড়েন।
পরিবারের সব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে একরামুল আহসান কাঞ্চন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মা-ভাই-বোন পির সাহেব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পিরের কয়েকজন সহযোগী মাদ্রাসার দানের বাইরেও আমাদের আরও জায়গা হাতিয়ে নিবার পাঁয়তারা করছিল, এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি বাধ্য হয়ে আমার মায়ের কাছ থেকে গোপনে স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জের ১৭১ শতাংশ জায়গার হেবা দলিল তৈরি করি। আর তাতে উল্লেখ করা হয়, আমার মায়ের মৃত্যুর পর আমার মায়ের অংশের ওই জমির মালিক হব আমি, আমার বড় ভাইয়ের দুই ছেলে ও আমার ছোট ভাই বাদল।
‘আমার মা, বড় ভাই ও বোন যেহেতু পিরের মুরিদ। আর তারা ওই সম্পদ পিরকে দিয়ে দিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাই আমি এই কাজ করেছিলাম। আমার যদি সম্পদের প্রতি লোভ থাকত তাহলে তো সব আমার নিজ নামেই নিতাম। আমার ছোট ভাই আর ভাতিজাদের নাম রাখতাম না।’
কাঞ্চনের দাবি, ‘পিরের লোকেরা যে আমাদের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছিল তার প্রমাণও মিলে ওই হেবা দলিল করার কিছুদিন পর। আমার মায়ের কাছ থেকে ওই ১৭১ শতাংশ জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে নেয় পিরের লোকজন। তখন তারা সেই অংশের কিছু জমি একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়।
‘তখন আমার তৈরি করা হেবা দলিল সামনে আসলে তারা বিপদে পড়ে যায়। তখন মাকে দিয়ে আমিসহ আমার ছোট ভাই ও দুই ভাতিজার নামে দুটি মামলা করানো হয়। একটি মামলায় জমি ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মায়ের সাথে আমাদের আপস হয়। অন্যটি এখনও চলছে।’
মাকে মৃত দেখিয়ে বোনের অংশ বাদ দিয়ে ওয়ারিশনামা তৈরির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাঞ্চন বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। যদি এমনটা হতো তাহলে তো আমার মা আমার বিরুদ্ধে মামলা করত। তাদের জিজ্ঞেস করেন মামলা কেন করল না।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের শেষ দিকে কমরের নেহার বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক এই বিরোধে কাঞ্চন একটি পক্ষে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে পুরো পরিবার এক আছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে কমরের নেহারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার বড় ছেলে, মেয়ে, ভাগ্নে, ভাগ্নিরা। তিনি দাবি করেছিলেন, ভিডিও কলের মাধ্যমে ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন ছোট ছেলে কামরুল আহসান বাদল ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে বাদল ও তার পরিবারের সদস্যদের সেখানে যুক্ত থাকার দৃশ্য চোখে পড়েনি।
নিউজবাংলা যোগাযোগ করে বাদলের পরিবারের সঙ্গে। টেলিফোনে কথা হয় বাদলের স্ত্রী তসলিমার সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলাম না। আমাদের কাছে তো ভিডিও কল করার মতো কোনো ফোনই নাই।’
ভিডিও কলে যুক্ত থাকার কথা কেন বলা হলো, তা জানতে চাইলে তসলিমা বলেন, ‘তা বলতে পারব না। আমরা কাঞ্চন ভাই বা আমার শাশুড়ির বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমাদের এসব থেকে দূরে রাখেন।’
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
গ্যাস পাইপলাইনে জরুরি কাজের জন্য শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর ইএনবির
তিতাস জানায়, যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে সেগুলো হলো- শনির আখড়া, বড়ইতলা, ছাপড়া মসজিদ, দনিয়া, জুরাইন, ধোলাইরপাড় ও কদমতলী।
এ সময় আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে চাপ কম থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে তিতাস। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কোম্পানি।
রাজধানীর মুগদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
মুগদার বড়বাজারের সামনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পরিবারের সঙ্গে উত্তর মুগদার মদিনাবাগে একটি বাসায় থাকত।
মাহিনের খলাত ভাই হিমেল জানান, মাহিনের বাবা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মাহিন দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল মাহিন, ওই সময় ময়লার গাড়িটি তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মাহিনের মৃত্যু হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি জব্দ করে চালককে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য