একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বিএনপি কাছাকাছি এসে জোটের শরিকে পরিণত হলেও সম্প্রতি দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
নানা সময় বিএনপিকে উদ্দেশ করে পত্রিকায় খোলা চিঠি ও নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসা জাফরুল্লাহ যখন নেতৃত্ব থেকে তারেক রহমানকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিতে শুরু করেন, তখন থেকেই দেশের অন্যতম বৃহৎ দলটির সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে।
গত ২৬ জুন জাফরুল্লাহ প্রথমবার তার পরামর্শটি দেয়ার পর থেকে বিএনপির বা দলটির সমর্থক কোনো সংগঠনের আয়োজনে জাফরুল্লাহকে না ডাকতে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়। এর মধ্যেও গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে তাকে আমন্ত্রণ করে বসে সংগঠনটি।
এই আয়োজনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে আবার তারেক রহমানকে সরিয়ে তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন জাফরুল্লাহ।
২৬ জুনের বক্তব্যের পর জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথমে সোচ্চার হয় ছাত্রদল নেতারা। পরে এতে যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নাম উল্লেখ না করে জাফরুল্লাহর কড়া সমালোচনা করেন।
তবে মির্জা ফখরুল এবার রাখঢাক না রেখে বলে বসেন, ‘জাফরুল্লাহর বয়স হয়ে গেছে বলে উল্টাপাল্টা বকেন।’
এমন বক্তব্যের পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তা বিএনপির জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বিব্রতকর। জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলকে ‘চাকর-বাকর’ বলে বসেন তিনি।
পরে এক অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ ক্ষমা চাইলেও তিনি তাতে যে ভাষা ব্যবহার করেন, তা বিএনপির জন্য আরও বিব্রতকর হয়। তিনি বলেন, ‘আমি চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি।’
কেন বিএনপির ওপর অসন্তোষ জাফরুল্লাহর
১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা জাফরুল্লাহর ফাঁসি চেয়ে পোস্টার প্রকাশ করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের দ্বিতীয় মেয়াদ থেকে বিএনপি ও জাফরুল্লাহ কাছাকাছি আসেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক বিস্তারের আগে একটি জাতীয় দৈনিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এক পাতার খোলা চিঠি লেখেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এমন চিঠি পরে তিনি আবার লেখেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের এক বছর পূর্তির দিন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকার পর যখন অকার্যকর কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসতে পারছিলেন না, তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন সে সুযোগ করে দেয়। অবরোধের সময় বিএনপিকে ভোটে আনতে যারা ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের একজন ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়ার পেছনেও ভূমিকা রাখেন জাফরুল্লাহ। তিনি নিজেও যোগ দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। তবে নিজে ভোটে অংশ নেননি।
তবে গত বছরের শেষ মাস থেকেই দুই পক্ষে সন্দেহ-অবিশ্বাস শুরু হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর মুক্তাঙ্গনে সরকার পতনের দাবিতে হঠাৎ অবস্থান নেয় বিএনপি ও তার জোটের শরিকদের একটি অংশ। তবে এমন কর্মসূচির কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না বিএনপির। তখন যুক্তরাজ্য থেকে তারেক রহমানের কাছ থেকে আসে জরুরি নির্দেশ। মুক্তাঙ্গন থেকে নেতা-কর্মীদের সরে যেতে বলা হয়।
এ ঘটনায় বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। তারা সে নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তবে বিএনপিতে আগের অবস্থান আর ফিরে পাননি।
বিএনপির ধারণা, হঠাৎ এই কর্মসূচির পেছনে ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে যে কর্মসূচি শেষ করে নেতা-কর্মীরা মুক্তাঙ্গনে অবস্থান নেন, সেখানে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাও। তবে তিনি নিজে মুক্তাঙ্গনে যাননি।
এর আগে থেকেই জাফরুল্লাহ বিএনপিকে বারবার আন্দোলনে নামতে তাগাদা দিয়ে এসেছেন, যেমনটি এখনও বারবার বলছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সে সময় নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, জাফরুল্লাহর সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে দলের নেতা-কর্মীদের বলে দেয়া হয়েছিল।
ওই নেতা এমনও জানান, তারেক রহমানের নির্দেশ ছিল জাফরুল্লাহর কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা যাবে না।
কেন বিএনপিকে আন্দোলনে নামাতে চান জাফরুল্লাহ?
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এই প্রশ্নে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যা বলেছি, তা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি তাদের পরামর্শ দিয়ে এসেছি, তাদের ভালোর জন্য বলেছি। আর সামনেও বলব।
‘আমি তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। তারা অ্যাপ্রিশিয়েট (প্রশংসা) না করলেও আমি তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। ভালো চাইতে গেলে অনেক সময় অপ্রিয় সত্য কথাও বলতে হয়। তাতে তাদের মনে কষ্ট লাগলে আমি দুঃখ প্রকাশ করতে পারি। তবে তাদের ভালো চাই যেহেতু, এমন তেতো সত্য আমি বরাবরই বলব।’
বয়স নিয়ে তার প্রতি বিএনপির খোঁটা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে এটা তো সত্য। তবে আমার তো আলজাইমার হয় নাই। আমি এখনও দূরের সব দেখতে পারি। বিএনপি না করেও বিএনপির অবস্থান বুঝতে পারি।’
জাফরুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়, বিএনপি তো আপনার পরামর্শ নিচ্ছে না। তাও কেন বারবার তাদের উদ্দেশ করে একই ধরনের বক্তব্য রাখছেন?
এর জবাবে বলেন, ‘সে জন্যই আমি চাকর-বাকর বলেও আবার চাকর-বাকরদের কাছেই ক্ষমা চেয়েছি। কারণ চাকর-বাকররাও বিরক্ত হয়ে একসময়ে প্রতিবাদ করতে পারে। কিন্তু এই রাজনৈতিক কর্মীরা নড়েচড়েও বসেন না। আমি আমার পরামর্শ জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে দিই। সেটা আমি দেবই।’
তারেককে কেন নেতৃত্ব ছাড়তে হবে?
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি কী এমন ভুল বলেছি? তারেক রহমান কি দেশে আছেন? হাওয়াতে বসে থেকে তিনি কী করতে পেরেছেন? তিনি তার মাকে পর্যন্ত বের করতে পারেননি। তাই আমি বলেছি, জাইমাকে দেশে এনে নতুন নেতৃত্ব বানান।’
বিএনপি নেতারা কথা বলতে চান না
জাফরুল্লাহর প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা নিউজবাংলাকে এড়িয়ে গেছেন। তারা বলেছেন, দলের মহাসচিবের প্রতিক্রিয়াই তাদের বক্তব্য।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে এগুলো তো কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য না। তাই এ নিয়ে আলাদা কোনো প্রতিক্রিয়া আসলে নেই। তবে আমাদের মহাসচিব তো দিয়েছেন প্রতিক্রিয়া। ব্যাপারটা অমনই, বয়স হয়েছে, কখন কী বলছেন, তা তো বোঝাই যাচ্ছে না। আবার কেন বলছেন, তাও বোঝা যাচ্ছে না।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মহাসচিব যা বলার বলেছেন। ওনার বয়সটা ওনার মাথায় রাখা উচিত। ওনার এখন ঘরে বিশ্রাম নেয়ার সময়।’
বাকযুদ্ধের শুরু
বিএনপি ও জাফরুল্লাহর মধ্যকার ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ উত্তেজনায় রূপ নেয় গত ২৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক আলোচনায়।
বিএনপিপন্থি একটি সংগঠনের আলোচনায় সেদিন তিনি বলেন, ‘বিএনপির ওহি আসে লন্ডন থেকে। তারেক রহমানের দুই বছর চুপ করে থাকা উচিত। তার যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা উচিত।’
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের এক নেতা তাকে থামিয়ে দিয়ে সতর্ক করেন, তিনি (জাফরুল্লাহ) যেন বিএনপি নেতার সমালোচনা না করেন। আর করলে যদি তার কিছু হয়ে যায়, তবে তারা দায়ী থাকবেন না।
এ ঘটনার পরে বিএনপির অঙ্গসংগঠন থেকে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করে বিবৃতি দেয়া হয়। এমনকি স্থায়ী কমিটির এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও জাফরুল্লাহর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।
পরে জাফরুল্লাহ নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিএনপি গোঁয়ার।’
তারপরে দীর্ঘদিন বিএনপির বা সহযোগী সংগঠনের কোনো আয়োজনে জাফরুল্লাহকে দেখা যায়নি। তবে ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনায় মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে আবারও তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
মির্জা ফখরুল সেদিন কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও ৬ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে কথা বলেন জাফরুল্লাহ প্রসঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন… তার আসলে বয়স হয়ে গেছে। উনি অত্যন্ত সম্মানিত লোক, অত্যন্ত গুণী লোক, কিন্তু বয়স হয়ে গেলে মানুষ কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলতেই পারেন। এটা স্বাভাবিকভাবে বলেছেন আরকি।
‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার (জাফরুল্লাহ) মন্তব্যটা যুক্তিসংগত না। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, কথা বলছেন। কিন্তু তিনি একবারও ভাবছেন না, এসব কথা বললে ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলন কিছুটা ব্যাহত হবে।’
এরপর জাফরুল্লাহর ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বেচারা বাড়ির চাকর-বাকরের মতো আছে। ভাবছে, চাকরি চলে যাবে৷ তার বক্তব্যে আমার হাসি পেয়েছে।’
গত শুক্রবার শহীদ মিনারে এক আয়োজনে মির্জা ফখরুলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে আমার স্নেহাস্পদ ব্যক্তিদের চাকর-বাকর হিসেবে তুলনা করায় তারা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। কষ্ট পেয়েছেন। আমি এসব চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি।
‘এসব রাজনৈতিক কর্মীর চাকর-বাকরের গুণাবলিও নেই। তাদের না কবজিতে জোর আছে, না মাথা ঘোরানোর অধিকার আছে। চাকর-বাকর ভাইরা, আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাই।’
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়েতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি। বিএনপি ও এনসিপির মাঝে জামায়াতের জন্য সংরক্ষিত আসনটি মধ্যাহ্নভোজের আগ পর্যন্ত ছিল ফাঁকা।
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়ায় নানা রাজনৈতিক দল নানা মত দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াতের বনিবনা না হওয়ায় মঙ্গলবারের আলোচনায় তারা যোগ দেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন জামায়াত আলোচনায় যোগ দেয়নি সেই উত্তর কমিশনই ভালো দিতে পারবে।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি জামায়াত আজকের বৈঠক প্রতীকী বয়কট করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াত হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই আলোচনায় অংশ নেয়নি।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকের আলোচনায় জামায়াতের থাকা উচিত ছিল। তারা এই আলোচনা বয়কট করেছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি। যদি মধ্যাহ্নভোজের পরেও জামায়াত আলোচনায় না আসে তাহলে পুরো ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা বেশিরভাগ বিষয়েই একমত হয়েছি। কিন্তু নারীদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার প্রয়োজন দেখি না। নারীর ক্ষমতায়ন আমরাও চাই, কিন্তু কোনো বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না।’
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করছে, নারী আসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনার প্রথম পর্যায়ে জামায়াত যোগ দেয়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের সভার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই একমত বলে জানিয়েছে তিনি।
বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
‘এছাড়া সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত,’ বলেন তিনি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না এমন মত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’
নারীদের ১০০ সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। আশা করছি, আজকের আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সমাধানে আসা যাবে ‘
এছাড়া জুলাই সনদের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ইশতেহার গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
মন্তব্য