শুরুটা ছাত্রদলের এক নেতাকে দিয়ে। ‘বিএনপি লন্ডন থেকে আসা ওহিতে চলে। তারেক রহমানের দুই বছর চুপ করে থাকা উচিত। তার যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা উচিত’- জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছিলেন এ কথা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের এক নেতা তাকে থামিয়ে দিয়ে সতর্ক করেন, তিনি (জাফরুল্লাহ) যেন বিএনপি নেতার সমালোচনা না করেন। আর করলে যদি তার কিছু হয়ে যায়, তবে তারা দায়ী থাকবেন না।
গত ২৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে এই আলাপন ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।
গত কয়েক বছরে বিএনপির ‘পরামর্শক’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা চীনপন্থি সাবেক বাম নেতা আওয়ামী লীগ ঘরানায় অজনপ্রিয় হয়েছেন, এটা স্পষ্ট, কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকেও তার প্রতি তির্যক মন্তব্য এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নাম উল্লেখ না করে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আওয়ামী লীগের বদলে তিনি বিএনপির সমালোচনা করেন। বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে নিউজবাংলা কথা বলেছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে বিএনপির জোট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, প্রেস ক্লাবের সেদিনের ঘটনায় ছাত্রদলের নেতাদের ওপর তার কোনো রাগ নেই। কিন্তু এটা নিয়ে বিএনপির তার বিরুদ্ধে কথা বলার কিছু নেই।
বিএনপিকে নিয়মিত বুদ্ধিপরামর্শ দিয়ে আসা জাফরুল্লাহ যে দলটির ওপর চটেছেন, সেটি উঠে আসে এই আলাপনে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় ছাত্রদলের এক নেতা আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন, যেটি আসলে হুমকি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। সেদিন আসলে কী হয়েছিল?
তারা দাঁড়িয়ে আমাকে সালাম দিয়েছে। আমি মাত্র বক্তৃতা শুরু করেছি, এমন সময়ে দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে তাদের আমি চিনিও না। তারা আমাকে সালাম দিয়েছে।
বলেছে, আসসালামু আলাইকুম
আমি বলেছি, ওয়ালাইকুম আসসালাম।
বলেছে, আপনি আমাদের কে?
আমি বলেছি, কেউ না। তোমাদের শুভানুধ্যায়ী। বলেছে, আপনি আমাদের নেতা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না। আপনি সব সময় তাকে ছোট করেন। আমি বলেছি, না তুমি আমার কথা শোনো, বসো শোনো তারপর মন্তব্য করো। বলে যে, না আপনি বলবেন না। আমি বললাম, না সেটা আমার অধিকার আছে, আমি বলব, আমার কণ্ঠস্বর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। এটাই তো পটভূমি। এটা শুনে কোনো আলোচনার আমি জায়গাই দেখি না। আমার কাছেও তো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়নি। আমার কাছে বরং মনে হয়েছে তাদের ক্ষোভটাকে তারা প্রকাশ করে ভালোই করেছে।
আপনি কিছু মনে করেননি। তবে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে এই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
কোনো কাজ নাই তাদের। তারা এটা দিতেই পারে। এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে নাগরিক হিসেবে আমার অবশ্যই সব দল সম্পর্কে কথা বলার অধিকার রয়েছে। তাদের পছন্দ হতে পারে, না-ও হতে পারে। তারা তা সমর্থন করতে পারে, আবার সেটার বিরুদ্ধেও বক্তব্য রাখতে পারে। মূল কাজ তো তারা করে না। তারা আন্দোলন করে না, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে না। খালি একটা বক্তৃতা দেয়া ছাড়া কিছু করে না। যে এই দেশে নাই, তাদের নেতৃত্বের যে একটা সংকট চলছে, তাদের তৃণমূলের লোকেরা কার সঙ্গে কথা বলবে? -এটা হলো কী! তারা কোনো বক্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না। একটা ছোট ঘটনাকে নিয়ে…আমার তো মনে হয়, একমুহুর্তের জন্য এই দুটি ছাত্রের সম্পর্কে খারাপ ধারণা হয়নি। বরং আমার মনে হয়েছে, তারা শুনেছে আমার বক্তৃতা, তা নয়তো প্রতিবাদও করতে পারত না, বক্তব্যও রাখতে পারত না। এটা আসলে কোনো বিষয়ই না আলাপের।
ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন আপনার থেকে এমন মন্তব্য তারা আশা করেন না…
কে এই ছাত্র? তার বয়স কত? সে বিয়ে করেছে? তাদের তো ছাত্রই থাকা উচিত না। আমি পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখেছিলাম। আমি খালেদা জিয়াকে বলেছিলাম, ২৫ বছরের বেশি বয়স হলে তাদের আর ছাত্রদল করা উচিত না। তারপরে তারা বিয়েশাদি করে বেড়ায়, বাচাকাচ্চা থাকে। তাদের যুবদল করতে হবে। ছাত্রদলকে ২৫-২৬ বা ২৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। তাইলে তারা আন্দোলন করবে। দেখেন ছাত্রদলের অতীত কত ভালো ছিল। যখন তারা, আমান (আমানউল্লাহ আমান), খোকন (খায়রুল কবির খোকন), এদের তখন বয়স কম ছিল। তারা আন্দোলন করেছে। এখন ছাত্রদল এত বড় একটা নির্বাচন হলো। তারা হারিয়ে গেছে। তাদের তো লজ্জা লাগা উচিত। দুঃখ পাওয়া উচিত।
তিনি বলেছেন আপনি বরাবর তাদের দল নিয়ে, প্রিয় নেতাদের নিয়ে সমালোচনা করেন…
করি, করি। এটা করি হচ্ছে গিয়ে তাদের শুভানুধ্যায়ী বলে। তাদের ব্যর্থতায় কষ্ট পাই বলে করি। তাদের বরং আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে আমি তাদের সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করি। আমার পথ যে সঠিক, তা-ও আমি বলি না। কিন্তু আমি সব সময়…তারা এত বড় একটা দল। এখনও তারা খালেদা জিয়াকে বের করতে পারল না। তাদের ব্যর্থতায় আমি ব্যথিত হই। কিন্তু তারা আমাকে ভুল বুঝছে।
তাদের মধ্যে এহছানুল হক মিলন এই তাদের একটা ইয়াং ভালো…একটা ভালো লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ লিখেছেন। আমি সেটার আলোচক ছিলাম। সুতরাং আলোচনা করতে গেলে সবকিছু আপনার গুণকীর্তন গাইব? আপনার ভুলভ্রান্তি দেখাব না? সুতরাং সহনশীলতা অর্জন করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও তো প্রেস ক্লাবের প্রসঙ্গটি টেনে সমালোচনা করেছেন। সেটি আপনি শুনেছেন?
ওনাদের কোনো কাজ নেই। এটা একটা ঘটনা হইতে পারে? তারা মূল ইস্যুতে যাচ্ছে না। তাদের বরং বলা উচিত খালেদা জিয়াকে…গয়েশ্বর রায়রা মূল ইস্যু থেকে ছুটকে যাচ্ছে। এটা একটা ঘটনা হলো আলাপের? দুটা ছেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা এমনকি বেয়াদবিও করেনাই। এমন কিছু করে নাই, যেটা নিয়ে আলোচনার ব্যাপার আছে?
তাদের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই গোঁয়ার লোকজন। তারা তো এটা করবেই। এগুলো একদমই অহেতুক। খালেদা জিয়াকে বের করতে পারছে না। যেখানে আলাপ করা দরকার, সেখানে আলাপ করছে না। আর দুইটা বাচ্চা ছেলে কী করল না-করল, সেটা নিয়ে আলাপ করল।
আপনার কি মনে হয় বিএনপি আপনার দেয়া পরামর্শ গ্রহণ করে?
না, তারা এত বড় দল যে, সব পরামর্শ আমার গ্রহণ করবে সেটা আমার কামনা করাও ঠিক না। তবে আমি মনে করি, এটা তারা বিবেচনা করতে পারে। তারা বিবেচনা করলে তারা লাভবান হবে। সবকিছু যে আমার কথায় চলবে, তা তো না। তাদের পার্টি আছে। আমি যখন বলেছি, কয় বছর আগে বলেছি, একটা ইমার্জেন্সি কাউন্সিল করেন আপনারা। করে নতুন নেতৃত্ব আনেন। এখন তাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির যারা আছে, সবাই আমার মতো বয়স্ক। দুই-চারজন ছোট হবেন, আর দুই চারজন বয়সে বড় হবেন। এখন আমাদের বয়স বেড়ে গেছে, আমরা দৌড়াতে পারি না। অনেক কিছুতে আমাদের একটা স্থবিরতা চলে আসে। কিন্তু আজকে পরিবর্তন আনতে হলে সাহসী মনোভাব থাকতে হবে। রাস্তায় যেতে হবে, মার খেতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই।
আজকে আমাকে সত্য কথা বলতে হবে। আজকে যেখানে আমলারা এ দেশ শাসন করছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে। এসব জিনিসগুলোকে… আমি তাদের কী বলেছি, তাদের কী পরামর্শ দিয়েছি- আপনি যদি বিবেচনা করেন। তাদের আমি বলেছি, তাদের বহু লোক ভালোবাসে। আমি দেখেছি গ্রামগঞ্জে লক্ষ কোটি লোকের সমর্থন আছে। তারা আজকে রাস্তায় কেন আসছে না?
কারণ, আপনারা যদি ডাক দিতেন…খালেদা জিয়ার প্রতি যে অন্যায় করেছে তাকে যে জামিনটা দেয় না…আজকে হাইকোর্টে গিয়ে ১০ হাজার লোক যদি সাত দিন বসে থাকেন বিচারপতিদের চৈতন্য হবে। বিচারপতিদের বিবেকের দিকে তাদের সাহস বাড়বে।
আমি তো এটাই বলি, যে আপনারা মিছিল-মিটিং করেন। আপনারা আপনারা সবাইকে নিয়ে বের হোন। আপনারাই বের হোন। রাস্তায় মিছিল মিটিং করেন, কিন্তু গাড়ি ঘোড় ভাইংগেন না। সরকার ও ‘র’ (ভারতীয় গোয়েন্দা) এদের দিকেও খেয়াল রাখবেন। ওরা যেন আপনাদের ঘাড়ে দোষ না চাপাইতে পারে। এখানে বলেছি ইয়াংগার লোককে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আনেন। এটা আমি কোথায় ভুল বলেছি বলেন?
আমি বলেছি আজকে যেখানে হাফিজ (এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ) শাওকতরা (শওকত মাহমুদ) যেখানে পরিবর্তনের জন্য সজাগ। তাদের কে উলটো শোকজ করে দিয়েছেন। এটা তো আপনাদের স্থবিরতার প্রমাণ, ভুল সিদ্ধান্ত। যদি শোকজ করতেও হয় সেটা গোপনে করেন। সেটা প্রকাশ্যে এটা করা উচিত ছিল না। তাদের ডেকে নিয়ে কী কী করতে চায় সেটা বলা উচিত।
ছাত্রদলের এই ঘটনা নিয়ে আপনাকে বিএনপি থেকে কি ফোন করা হয়েছে?
না, ফোন করেনি। আর এটা তো ফোন করার মতো কোনো ঘটনায় না। কেনই বা করবে?
রাজনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বারবার বিএনপিকে আন্দোলনের তাগিদ দিয়ে আসছেন? এই সংকট কি শুধু আন্দোলনের মাধ্যমের দূর করা সম্ভব?
আজকে ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা নির্বাচিত হন নাই। কিন্তু কথা হলো, তারা (বিএনপি) কিছুই করতে পারছে না। তার কারণ হলো তারা জনগণের …।
আজকে লকডাউন, লকডাউনের মধ্যে তাদের উচিত ছিল জনসাধারণকে, দরিদ্র মানুষকে কী করে খাবার দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করা। তারপরে মোটরচালিত রিকশা। গরিব মানুষরা আরামে রিকশা চালাতে পারবে না, এটা হলো না। আজকে বিএনপি বলতে পারত, আমরা ক্ষমতায় আসলে যে চালক, সেই হবে মালিক। তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা তাদের চিন্তায় রাখা উচিত।
আর ছাত্রদের যে আন্দোলন ছিল সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণ করার দরকার ছিল। যদিও কেউ কেউ ছিল। তবে পুরোপুরিভাবে না।
৯০ সালে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা আপনার ফাঁসির দাবি করে পোস্টারিং করেছিলেন। সেটা কেন?
হ্যাঁ। কারণটা হলো, ভালো কাজ যারাই করতে চায়, তারা তখন সেই সুযোগ পায় না। তখন, আমি একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এই যে আজকে যে গ্রামে ডাক্তার নাই, ডাক্তারের সম্মান নাই …। আজকে তারা সবাই বলে, ওইটা হইলে খুব ভালো হইত। সুতরাং তারা না বুঝে অবুঝের মতো এই ফাঁসির দাবি করেছে। ওরা বিনা বিচারে আমার ফাঁসি চেয়েছে।
সেই পোস্টার তা আমি একটা রেখেছিলাম। তাদের ভুলটা তারা অনেকেই আজকে উপলব্ধি করে। যে ওই স্বাস্থ্যনীতি হলে দেশের মঙ্গল হতো। চিকিৎসকদের সুবিধা হতো। ডাক্তাররা সব সময় তাদের দৃষ্টিতে বড় ছিল।
যখন বিলেতে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস হয়, সেটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছিল। আজকে তারা মনে করে যে, এটা একটা বিরাট কাজ হয়েছে। যুগে যুগে যারাই পরিবর্তন চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, ঐক্যফ্রন্টের এই মুহুর্তে কী অবস্থা?
ঐক্যফ্রন্ট এই মুহুর্তে নেই বলা চলে।
কামাল হোসেনের সঙ্গে কি আপনার আলাপ হয়? উনি আসলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কেন বলে আপনার মনে হয়?
হ্যাঁ, কথা হয়। উনি হাল ছেড়ে দেন নাই। হলো কী, এখানকার মূল পার্টিটা হলো বিএনপি। বিএনপিকে উনি ওনার কোনো কথাতেই রাজি করাইতে পারেন নাই।
আমাদের একটা প্রস্তাব ছিল আমরা ৩০০টা মামলা করব, এই যে ভোট ডাকাতি হলো। এটার কোনো কিছুই করা যায়নি। আমি বারবার বলেছি ৩০০ টা মামলা করে দিতে, ট্রাইব্যুনালে ৩০০ টা মামলা করে আমরা বিষয়টাকে আবার সামনে আনি।
ব্যাপার হলো বিএনপি এই মুহুর্তে ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন নাই। তারা নিজেরা চলছে…চলুক। কিন্তু আন্দোলন হলেই হলো। তা যে ঐক্যফ্রন্টকে করতে হবে তার কোনো কথা নাই। তারা নিজেরাও নেতৃত্ব নিয়ে করতে পারে।
জুনায়েদ সাকি, নুরুল হক নুর একটি নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আপনাকের সেখানে দেখা গিয়েছে…
এসব কথা আমিও শুনেছি, কিন্তু এমন কিছু দেখছি না।
আপনি সব সময় আন্দোলনের ডাক দেন, প্রতিবাদ জানান। তবে জনগণের কোনো প্রকাশ্য সমর্থন পান না কেন?
আমি তো রাজনৈতিক দলের নেতা না। সুতরাং আমার কাজও না সেটা। জনগণকে আজকে তো আমি সেই ডাক দিই না। সেই ডাক দেয়ার দায়িত্বও আমার না। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যেটা জানানো দরকার সবাইকে, সেটাকে নিয়ে আমি আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই থাকতে চাই। আমি জনগণকে বুঝাতে চাই কী কী পরিবর্তন দরকার। যেমন আমি বলেছি, বাংলাদেশে আজকে সুশাসনের জন্য কী দরকার! আমি যেভাবে দেখি, সেটাকেই প্রকাশ করেছি। কিন্তু এটা কার্যত এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আপনি পাকিস্তানকে ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন জায়গা থেকে পাকিস্তানের ঠিক কোন কোন অপরাধ ক্ষমা করার কথা বলেছেন? আর কেন ক্ষমার প্রসংগটি এনেছিলেন?
পাকিস্তানিরা যারা মানবতাবিরোধী অন্যায় করেছিল তারা আজকে জীবিতই নেই। হয়ত দুই একজন জীবিত থাকতে পারে। যেই প্রজন্ম এখন পাকিস্তান শাসন করছে, পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিতে যুক্ত, তারা কেউ ৭১ সনে সেই অন্যায় আচরণের সঙ্গে পরিচিত নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে যোগসূত্রও নেই, অনেকে জন্মই হয় নাই তখন।
আর তাছাড়া এই ঘটনার মূল নায়ক দুইজন। জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ইয়াহিয়া খান। জুলফিকার আলী ভুট্টোই পরবর্তীকালে পাকিস্তান শাসন করেছেন। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা কে আর?
উনি (বঙ্গবন্ধু) তাকে (ভুট্টো) দাওয়াত দিয়ে ঢাকায় আনলেন। লক্ষ লক্ষ সমাগম হয়েছিল। ওটাই প্রমাণ করে যে উনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। …… আজকে পাকিস্তানের বিভিন্ন ইতিহাসবিদরা তারা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করছে এই ভুল ভ্রান্তি তারা কিন্তু অনেক বেশিই।
আজকে আমাদের এই ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে জাগতে হবে, পাকিস্তানকে আমাদের পাশে দরকার। আজকে এই যে রোহিঙ্গা সমস্যা যেখানে সেটা নিয়ে ভারত কিছুই করল না। ভারত আমাদেরকে যেভাবে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে এইসবের প্রেক্ষিতে আমি বলেছি, আজকে বাংলাদেশেরও উচিত হবে পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, তাতে লাভবান হবো আমরা।
আমাদের গোয়ার্তুমি করা ভালো না। এটাই আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, বঙ্গবন্ধুর একটা বড় গুণ ছিল মহানুভবতা। তো সেই সূত্রেই আমি ক্ষমার কথা বলেছি।
আমি তাই মনে করি যে, এইটাতে তাহলে আমরা লাভবান হবো। ইসলামিক দেশগুলো একত্রিত হতে পারবে, তারা পৃথিবীর অধিকার আদায়ে সমর্থন হবে। এইসব কিছু মিলিয়ে এখন আর আমাদের পুরা ৫০ বছর পুরানো কাহিনি মনে রাখাটা উচিত হবে না।
কিন্তু পাকিস্তানকে কেন ক্ষমা করতে হবে? তারা কী ক্ষমা চেয়েছে?
তারা তো এখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এইটা তো ইমরান খান বাড়িয়েছে…তাদের প্রধানমন্ত্রী এই দেশে এসেছেন। শেখ হাসিনা যখন পয়লা বার ছিলেন, তখন তাদের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এসছেন। তার আসাটা মানেই তো তারা তাদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সো, আমরা সেই হাতটাকে ধরে আমরা আমাদের সুবিধা আদায় করা।
এই যে যেমন তিস্তার পানি পাই না অথচ এখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেলাম। প্রতিদিন, প্রত্যেক সপ্তাহে দুই একটা লোক মারছে। আজকে ভারতের থেকে একদিকে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা যেমন দরকার আছে, তেমনি মাতব্বরিটাকেও সহ্য করা যাবে না।
এখানে পাকিস্তানের শাসন চাইছি না আমি। আমাদের পারস্পরিক সুবিধাগুলি এবং আজকে রোহিঙ্গা সমস্যা আমার কাঁধে বসে আছে… ১২ লাখ এটার কিছুই হবে না। এখানে যখন মুসলিম দেশগুলি এগিয়ে এসেছিল, আমরা ভারতের কারণে আমরা সেদিকেও যাইনি। এই প্রেক্ষিতেই আমি বলেছি মাফ করে দিতে।
আপনি কেন উপযাজচ হয়েছেন?
আমি চাই মাফ করতে। তারা যে যুদ্ধ করেছিল আমাদের সঙ্গে, আমাদের অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল, সেটা তো আমরা স্বাধীন হয়েই গেছি। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করেন তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধার কারণেই আমাদের এইসব পুরানো মধ্যযুগীয় মনোভাব থাকা উচিত না। আমার বাপ দাদার সঙ্গে গণ্ডগোল করেছে বলে আমি এখনও গণ্ডগোল করে বেড়াব তা তো হয় না।
পাকিস্তানের পক্ষে যে দূতিয়ালি করছেন, তারা কি আমাদের প্রাপ্য সম্পদ দিয়েছে?
(হেসে) আমি সম্পত্তি পাইনি, পাবও না। তবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে আমরা অনেক কিছুই পাব। সরকারও পাবে।
কিছুদিন আগে দেখলাম আপনি হঠাৎ ধর্ম শিক্ষায় মনোনিবেশ করবেন। এই সিদ্ধান্ত কেন?
আমি তো এখনও বলি যে আরবি ভাষা শেখা উচিত। শিখলে চাকরি বাকরির সুবিধা হবে। তাছাড়া একটি বৃহত্তর জনগণের ধর্ম…সেটা তারা নিজেরা আরবি পড়তে হইলে সেটা শেখা উচিত। এই যে কোরআন একটি ধর্ম গ্রন্থ। আমি চাই আমি নিজে এটা পড়ে এটার অর্থ বুঝতে। আমরা যারা পড়ি এটার অনুবাদটা পড়ি। অনুবাদ আড় মূলটা, দুইটা তো আলাদা…সেজন্যই। তাছাড়া আমি মনে করি কি, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। প্রত্যেকেরই ধর্ম পালনে অধিকার আছে। যারা করে না তাদের বিরুদ্ধেও কারও ক্ষোভ থাকা উচিত না।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল।
সোমবার সকালে পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন কুমার সূত্রধরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় দুদকের প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান ও বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন।
কলেজ সূত্র জানা যায়, পরিবহন খাত নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পরিবহন বাবদ অর্থ নেওয়া হলেও কলেজে বাস্তবে কোনো পরিবহন ক্রয় করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে একটি হাইচ গাড়ি কিনলেও এ গাড়ি মূলত অধ্যক্ষ ও কিছু শিক্ষক ব্যবহার করেন এবং ওই গাড়ির ব্যয়ভার চাপানো হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। শুধু পরিবহন খাত নয়, শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিল, খাদ্য বাবদ অতিরিক্ত ব্যয়, সরকারি বরাদ্দের অপব্যবহার এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়েও নানামুখী অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ অভিযোগ করেন, ফি বাবদ যে অর্থ তোলা হয়, তার সঠিক ব্যবহার হয় না।
অভিযান পরিচালনাকালে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন কুমার সূত্রধর জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমতির প্রেক্ষিতে আজকে এখানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা পরিবহন খাতের লগবুক পরীক্ষা করছি। কোথাও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের প্রমাণ নেই। বরং শুধু অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা ব্যবহার করেছেন এবং অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে। এছাড়া অভিযানে প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর পাঠানো হবে। এরপর সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আমরা তাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছি। আমি কোন অনিয়ম দুর্নীতি করি নাই।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গুটারবিলে সোমবার বিকালে এক ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হলো মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবী সমাবেশ।
বিলের মাঝে ভাসমান মঞ্চ স্থাপন করে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের শতাধিক মৎস্যজীবী।
হাঁসাইগাড়ী, শৈলগাছী, শিকারপুর ও দুবলহাটি ইউনিয়নের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে মাছের পোনা অবমুক্ত করার পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম ধলু। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আজম ভিপি রানা, যুবদলের সদস্য সচিব রুহুল আমিন মুক্তার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জালাল হোসেন শাহানা প্রমুখ।
প্রধান অতিথি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেন, ‘দেশের প্রাণিজসম্পদ রক্ষা এবং মাছের উৎপাদন বাড়াতে পোনা মাছ অবমুক্তকরণ একটি কার্যকর ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
পরে অতিথিরা গুটারবিলের পানিতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ অবমুক্ত করেন।
আয়োজকরা জানান, এ ধরনের কর্মসূচি শুধু প্রাণিজ সম্পদ সংরক্ষণে নয়, বরং মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক জলাশয়ের সুরক্ষা এবং মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠিত হয় আনন্দঘন সাংস্কৃতিক পর্ব। দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজন করা হয় গ্রামীণ জনপ্রিয় খেলা হাঁস ধরা, নৌকাবাইচ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী এ আয়োজন প্রাণ পায় স্থানীয় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে।
এ উদ্যোগকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত হলে মৎস্যজীবীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে এবং বিল ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক সম্পদও সুরক্ষিত থাকবে।’
এগিয়ে আসছে শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসবের আমেজে ভরে ওঠেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি উঠোন। জেলার পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। এ বছর জেলায় ৪৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। পূজা উদযাপনকে নির্বিঘ্ন করতে তৎপর রয়েছে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব কয়টি ইউনিট।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ৪৫৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৯টি, কালীগঞ্জে ১০১টি, কোটচাঁদপুরে ৪৬টি, শৈলকূপায় ১২৫টি, হরিণাকুণ্ডুতে ২৭টি ও মহেশপুর উপজেলায় ৪৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হবে।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে একের পর এক সভা করছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রতিনিধিরা মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মহল্লায় মহল্লায় দলীয় কর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের ব্যাপারীপাড়া জোড়াপুকুর সংলগ্ন সার্বজনীন মন্দির, কেন্দ্রীয় বারোয়ারি মন্দির ও চাকলাপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ।
প্রতীমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যথাসময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুর্গা দেবীর আরাধনার জন্য মণ্ডপগুলো প্রস্তুত করা হবে।
শহরের চাকলাপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি রনজিৎ শাখারী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মতো এবারও আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পূজা উপলক্ষে দারুণ উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’
সদর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মালা রাণী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের গ্রামে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। এবারও প্রস্তুতি শেষের দিকে। এখন সবাই মিলেমিশে আনন্দের সঙ্গে প্রতিমা তৈরি ও মণ্ডপের সাজসজ্জার কাজ করছে।’
জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক চন্দন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার মণ্ডপগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বড় রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারব বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা পূজার আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে, গণমাধ্যমকর্মীরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরছেন। আমাদের সঙ্গে তারাও এই পূজা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া একটি গণমাধ্যমকে বলেন, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ও সাইবার টিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল ইউনিট জেলাব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ চলমান। পূজা চলাকালীন সকল মণ্ডপে পুলিশের কঠোর নজরদারি রাখা হবে। গত বছর ঝিনাইদহে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। এ বছর নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে বলে আশা করছি।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ৬ শতাধিক হতদরিদ্র রোগীকে বিনা মূল্যে চক্ষুসেবা দেওয়া হয়েছে। সোমবার দিনব্যাপী ব্র্যাক মাইক্রোফিন্যান্স কর্মসূচির উদ্যোগে এই চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
ক্যাম্পে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওষুধ, চশমা ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া ক্যাম্প থেকে শতাধিক রোগী বাছাই করে বগুড়ায় গাক চক্ষু হাসপাতালে বিনা খরচে ছানি অপারেশন করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আলী হোসেন শাহ, বগুড়া ব্র্যাক ডিভিশনাল কোঅর্ডিনেটর লিড জেনারেশন মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, জয়পুরহাট জেলা সমন্বয়কারী আরিফুল ইসলাম, এলাকা ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও বগুড়া রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর লিড জেনারেশন হাসান উল কবিরসহ বিভিন্ন ডাক্তার ও নার্সরা।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মা-ছেলেকে মারধরের অভিযোগ ওঠেছে।
সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ব্রি-কালিয়াকৈর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য ও সাংবাদিক আজিজুল হাকিম সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আহত নান্ন মিয়া ও সম্পি বেগমকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে আজিজুল হাকিমের পরিবারের সাথে চাচাতো ভাইয়ের বউ মধুমালার বিরোধ চলছিল। এরই জেরে সোমবার সকালে মধুমালা বেগম, তার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার, বোন রংমালা আক্তার, বোন জামাই মবজেল ও মধুমালার বাবা তোতা মিয়াসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও কয়েকজন বাঁশের লাঠি নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর অভিযুক্তরা ঘরে ঢুকে গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় ভুক্তভোগীর ভাই নান্ন মিয়া প্রতিবাদ করলে তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। হামলার সময় তাদের মা সম্পি বেগম বাধা দিতে গেলে তাকেও কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মেরে জখম করা হয়। পরে তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্যাস সংকটে প্রায় ২০ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। এতে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। কারখানা বন্ধ থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। চলতি আমন মৌসুমে ইউরিয়া সার সংকটের আশঙ্কা করছে কৃষকরা। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে কারখানার সাথে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার।
কারখানা সুত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে তারাকান্দি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সার কারখানা। এ কারখানাটি বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা নিয়ন্ত্রণাধীন এবং কেপিআই-১ মানসম্পন্ন সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দৈনিক ১ হাজার ৭০০ টন সার উৎপাদন করছিল কারখানাটি। কিন্তু গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমে ১ হাজার ২০০ টনে নেমে আসে। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও উত্তরাঞ্চলের রাজবাড়ী ও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ প্রায় ২০টি জেলার আড়াই হাজার ডিলারের মাধ্যমে যমুনার সার সরবরাহ করা হয়।
গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে তিতাস গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেওয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানাসংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কর্মচারী, পরিবহনের চালক, হেলপার, কারখানার আশপাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকরা। দীর্ঘ ১৩ মাস পর ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্যাস সংযোগ পেয়ে পুনরায় উৎপাদনে ফিরে কারখানাটি। উৎপাদন শুরুর ৪ দিনের মাথায় ২৬ ফেব্রুয়ারি গত বুধবার রাত ৭টার পর অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ফের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকেই বন্ধ রয়েছে বৃহৎ এ কারখানাটি। দীর্ঘ ২০ মাস ধরে বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকা হারে লোকসান হচ্ছে বলেও জানা যায়। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় সার সংকট হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষকরা। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে বৃহৎ এ শিল্প কারখানাটি সচল রাখতে না পারলে পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান যমুনা সার কারখানা পরিদর্শন করতে আসেন। এ সময় স্থানীয় শ্রমিক, ডিলার ও ব্যবসায়ীরা গ্যাস সংযোগের দাবিতে মানববন্ধন করেন। পরে দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান।
কারখানার দৈনিক মজুরিভিত্তিক একাধিক শ্রমিক, ট্রাক পরিবহন শ্রমিকসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, কারখানার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক, ট্যাংক ও লড়ি পরিবহন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। কারখানা এভাবে বন্ধ থাকলে এক সময় চিনি ও পাটশিল্পের মতো এ শিল্পও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে যমুনা সারকারখানা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম তালুকদার বলেন, আমরা কারখানাটি চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছে অতি তারাতাড়ি গ্যাস সংযোগ দেবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘যমুনার সারের গুণগত মান ভালো। যমুনার সার জমিতে ব্যবহারের ফলে ফসল বৃদ্ধি পায় ও উৎপাদন ভালো হয়। গাছও সতেজ থাকে। আমদানি করা ও অন্য কারখানার সারগুলোর গুণগত মান ভালো না। আমদানিতকৃত সারগুলো দীর্ঘদিন ধরে কারখানায় মজুত করে রাখায় জমাট বেধে শক্ত হয়ে যায়। ফলে এটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। যমুনা সার কারখানাটি চালু করা অতি প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে যমুনা সার কারখানার জিএম (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের কারখানাটি এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা আশ্বাস পেয়েছি যে আগামী মাস নাগাদ যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। গ্যাস সংযোগ পেলে আমরা পুনরায় পুরোদমে উৎপাদনে ফিরতে পারব।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (উনি শাখা-২) ১৫/৯/'২৫ ইং তারিখের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাঃ ইয়াসমিন আক্তার (১৫৭২৮)-কে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব আমিনুল ইসলাম এর স্বাক্ষরিত চিঠি মোতাবেক তার বর্তমান দায়িত্ব থেকে পদায়ন করে যুগ্ম-সচিব পদে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগে বদলী করা হয়েছে। জনস্বার্থে জারিকৃত উক্ত আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই-আগষ্ট/'২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে তাকে মাদারীপুরর ডিসি হিসাবে পদায়ন করা হয়েছিলো।মাদারীপুরে যোগদানের পর থেকে তিনি সুনামের সাথে তার নিজ দায়িত্ব পালন করে মাদারীপুরবাসির মধ্যে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সরকারী দায়িত্বের পাশাপাশি অফিস টাইমের পরেও তাকে অনেক সময় কাজ করতে দেখা গেছে। তার কাছে অফিস ও জনসমস্যা সংক্রান্ত যে কোনো কাজ নিয়ে মাদারীপুরের যে কেউ গেলে তিনি তা অধীর আগ্রহে শুনতেন, ব্যবস্থা নিতেন। তার সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্য পরায়ণতাকে মানুষ পজিটিভ চোখে দেখেছে, অনেকে মনে করছেন যে, মাদারীপুরবাসি একজন অত্যন্ত দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও জনবান্ধব ডিসিকে হারালো।
মন্তব্য