খাদ্য চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন পেয়ে যাচাইবাছাই করে প্রতি তিনজনের একজনকে সহায়তা পাঠানো হয়েছে। যাচাইবাছাই করে বাকি দুই-তৃতীয়াংশকে বাদ দেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে রাতে। এর উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত. যাচাইবাছাই, দ্বিতীয়ত. যাদের সহায়তা করা হবে, তাদের সম্মান রক্ষা।
কর্মকর্তারা বলছেন, ফোন পেয়েই খাদ্য না দিয়ে সহায়তা বিতরণের কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক নানা ধাপে আবেদনটি যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এ কারণে অবশ্য খাবার পৌঁছাতে সময়ও লাগছে বেশ কয়েক দিন।
৩৩৩ হচ্ছে সরকারের জরুরি তথ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ পাওয়ার কেন্দ্র। গত ২৫ এপ্রিল থেকে এই সেবাটিতে যোগ হয় করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা সরবরাহ দেয়ার প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্র হিসেবে।
সেদিন সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণের জন্য সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্যাকেটজাত খাবার কেনা হয়েছে।
প্রতিটি প্যাকেটে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, নুডলস, চিড়াসহ বিভিন্ন পণ্য আছে। ১০ কেজি চালসহ প্রতিটি প্যাকেটের মধ্যে প্রায় ১৭ কেজি ওজনের খাদ্যসামগ্রী থাকবে, যা দিয়ে একটি পরিবারের প্রায় এক সপ্তাহ চলবে।
আরও ১০ কোটি টাকার খাদ্যসামগ্রী কেনা হবে। সেই খাবার দিয়ে চলা যাবে আরও এক সপ্তাহের বেশি।
সেবাটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়াধীন
অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
কতজনকে সহায়তা
প্রকল্পটির পরিচালক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে জানান, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত সারা দেশ থেকে মোট ৪৮ হাজার কল এসেছে। সব কটি কলের তথ্যই ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, এনডিআরসিসি) শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম নিউজবাংলাকে জানান, ৭ মে পর্যন্ত সারা দেশে ১৬ হাজার ১৭৪টি পরিবারকে ৩৩৩-এর কল নিবন্ধন তথ্য যাচাইবাছাই করে জরুরি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
বাকিদের বাদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক-দেশে এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এটা বিশ্বজুড়েই দৃশ্যমান। কিন্তু দেশের এবং সরকারের সক্ষমতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। সবাইকে তো সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়।
‘যে আবেদনগুলো আসছে তা প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং মাঠপর্যায়ে যাচাইবাছাই করেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও অপক্ষোকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্তকে এই সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করে নিউজবাংলাকে জানান, এটা ঠিক, কল নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় প্রাথমিক ক্যাটাগরি বাছাইয়ে মাসিক আয় যে ৫ হাজার টাকার কম বেশি বলা হচ্ছে, তাতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা অসহায় হয়ে পড়ছে তারা এই আবেদনে যোগ্য বলে বিবেচিত না-ও হয়ে থাকতে পারে। তবে একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। পরীক্ষা ক্ষেত্রে না নামলে প্রকৃত চিত্র ধরা পড়ে না।
‘আমরাও বিষয়টির খোঁজখবর রাখছি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে, যাতে মাসিক আয়ের সিলিংটি আরও বাড়ানো হয়।’
অর্থাৎ কল করে প্রতি তিনজনের একজন পেয়েছেন খাদ্য সহায়তা। তবে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব, আর হটলাইন নম্বরের অপ্রতুলতার কারণে বহু মানুষ কল করতেই পারছেন না।
‘মনে করছি পামু না, কইতে গেলে লটারির মতো কলডা দিছি’
বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের তিলক গ্রামের বাসিন্দা গৃহিণী নাসরিন আক্তারও ফোন করার দুই দিনের মধ্যেই পেয়ে গেছেন খাবার। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে গিয়ে দিয়ে আসেন খাবার।
‘৩৩৩ তে কল দেয়ার সময় মনে করছি পামু না। কইতে গেলে লটারির মতো কলটা দিছি। কিন্তু সত্যিই যে পামু হেয়া কল্পনায়ও ভাবিনাই।’
খাবার চেয়ে মিলল বাড়ি
কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বিল্ববাড়ি গ্রামের লতা আক্তারের এখন সুখের দিন।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। দরজির কাজ করে সংসার চলে। তবে লকডাউনের কারণে কাজ তেমন নাই। তিনি ফোন করার পর বিস্ময়ের ঘোরের মধ্যে পড়েছেন।
ইউএনও তার ছাপরাঘর দেখে বাড়ি দেয়ার কথা বলে গেছেন। দিয়ে গেছেন ফোন নম্বরও।
তার জন্য খাদ্য দিয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের সহায়তা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের কথা শুনে তাকে জমিসহ ঘর দেয়ার কথা বলেছি। আমাদের সকল প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়েছে, ১০-১৫ দিনের মধ্যে তাদের ঘর দেয়া হবে বলে জানিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছি।’
‘এই সাহায্য গরিবের লাইগ্যা না’
তবে সবার ভাগ্য নাসরিন আক্তার বা লতা আক্তারের মতো নয়।
রাজধানীর মধুবাগের বাসিন্দা কুলসুম বেগম। ছুটা বুয়ার কাজ করেন মানুষের বাসাবাড়িতে। দ্বিতীয় দফা লকডাউনের প্রথম দিকে তার ভ্যানচালক স্বামীকেও বসে থাকতে হয় ঘরে। কুলসুমেরও তিনটি কাজের দুইটিই হারাতে হয়।
আয়ে ভাটা পড়ায় কুলসুমের সংসারে দেখা দেয় খাদ্য-সংকট। তিনি যে বাসায় কাজ করতেন সেই বাসার গৃহকর্তা তাকে পরামর্শ দেন ৩৩৩-এ কল দেয়ার।
কুলসুম কল দেন সেই নম্বরে। প্রথম দফায় সংযোগ না পেয়ে একাধিকবারের চেষ্টায় হটলাইনের সংযোগ পান। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী তিনি সব তথ্য দেন। তার রিকোয়েস্টটি রাখা হয়েছে এবং তা বিবেচনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠিয়ে দেবেন বলে হটলাইন থেকে জানানো হয়। এরপর কেটে যায় প্রায় দেড় সপ্তাহ। তিনি কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি।
এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এই সাহায্য গরিবের লাইগ্যা না। হইলে তো পাইতামই। আমাগো চাইতে গরিব আর ক্যাডা?’
একই অভিজ্ঞতা কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী ইউনূস সর্দারের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তি ডায়াবেটিসের কারণে মাস দেড়েক ধরে দোকানে বসতে পারেননি।
একই এলাকার আলমগীর হোসেন কাজ করতেন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় টিউশনিতে মনোযোগী হন। কিন্তু যে কয়টি বাসায় টিউশনি করেন, তার বেশির ভাগই নিম্নমধ্যবিত্তের। বেতন কম। সেটিও হয় অনিয়মিত। কারও কাছে দুই মাস, কারও কাছে আরও বেশি বকেয়া। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে আর্থিক সংকট তাকে দিনের খাবার সংকটেও ফেলে দেয়।
সংকটের কথা জানিয়ে তার স্ত্রী ফোন করেন ওই হটলাইনে। তিনি সংযোগ পান এবং সমস্যার কথা খুলে বলেন। হটলাইন থেকে জানানো হয়, তার আবেদনটি তারা নিবন্ধন করেছেন। এরপর কেটে গেছে ৫ দিন। আলমগীরের ঠিকানায় আসেনি কোনো সহায়তা।
‘শুধু বইলল ১ ছাপেন ২ ছাপেন, খাবার তো পাইলাম না’
বিবি হাজেরা। তিনিও মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। গৃহকত্রীর নম্বর থেকে ফোন করেন। সেখান থেকে যেভাবে যত নম্বর চাপতে বলেছে, তত নম্বরই প্রেস করলেন। সর্বশেষ একজন প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বললে হাজেরা অপেক্ষায় থাকেন। ৭ মিনিট ১৯ সেকেন্ড অপেক্ষায় থাকার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইন কেটে যায়।
হাজেরা ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি সড়কের একটি কলোনিতে ভাড়া থাকেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম সদস্য। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না।
হাজেরা বলেন, ‘যদি সরকার খাবার দিতে চায় তাইলে সোজাসুজি নম্বর দিলে হইত। কম্পিউটারে বলে ১ ছাপেন ২ ছাপেন। এসব তো আমরা বুঝি না। এগান মশকারি।’
জামাল উদ্দিন। ফেনী শহর থেকে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দিনমুজুরের কাজ করেন। লকডাউনের কারণে প্রতিদিন কাজ পান না।
৩৩৩ নম্বরে কল করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শুধু বইলল ১ ছাপেন ২ ছাপেন, খাবার তো পাইলাম না। এসব কথা বোগাস। বাউতাবাজি।’
একই জেলার সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের মিঞা। এলাকায় ছোট মিঞা নামে পরিচিত। কখনও দিনমুজুর আবার কখনও গাড়ির হেলপার। ৩৩৩ নম্বরে কল করে কিছু না বুঝে লাইন কেটে দেন।
ছোট মিঞা বলেন, ‘আন্ডা গরিব মানষ। কম্পিটারের (কম্পিউটার) এগান বুঝি না। আগের মতো বোর্ড অফিস থেকে চাইল-ডাইল দিলে আইনতে হাইত্তাম।’
কিসের ত্রাণ-ট্যান, খোঁজ এ নিল না কেউ
২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম নামে এক রিকশাভ্যান চালক ফোন করেন খাদ্য সহায়তার জন্য। কিন্তু একাধিকবার ফোন করে সেবাকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে আবার কল দেন। কিছুক্ষণ পরপর কল কেটে যায়। পরে তিনি আর ফোনই করেননি।
পরে তার ক্ষোভ দেখে প্রতিবেশী এক যুবক প্রথমে তার নম্বর থেকে জরুরি সেবা নম্বর ৩৩৩-ফোন করেন তিনবার। কিন্তু সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন। পরে চতুর্থবার সংযোগ স্থাপন হলে তিনি রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে দেন সেবাকেন্দ্রের অপারেটরের সঙ্গে।
রবিউল ইসলাম ও অপারেটরের সেই দিনের কথোপকথন তুলে ধরা হলো:
রবিউল ইসলাম: ম্যাডাম। আমার খাবারটাবার এনা কিছু নাই তো। আমি দুই দিন থাকি মনে করেন না খায়া আছি। এ রকম পরিস্থিতি।
অপারেটর: স্যার, আপনার কি ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন?
রবিউল: হ্যাঁ-হ্যাঁ।
অপারেটর: জি; আমরা ত্রাণ সহায়তার জন্য রিকোয়েস্ট রাখছি। আপনি আমাদের মাধ্যমে রিকোয়েস্ট রাখতে পারছেন। এই রিকোয়েস্টটি রাখার জন্য আপনার নামসহ তথ্য বলুন।
পরে নাম-ঠিকানা দিয়ে দেন রবিউল ইসলাম।
অপারেটর: আপনার রিকোয়েস্টটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দিচ্ছি। আশা করছি, অতি দ্রুত আপনার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ফোন কেটে দিয়ে রবিউল ইসলাম আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। ত্রাণ সহায়তা পাবেন ভেবে। কিন্তু না; জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও গত চার দিন অতিবাহিত হলেও রবিউলের খোঁজ বা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি।
রবিউলের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা। এই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, 'দূর! এগলে ভুয়ে। কিসের ত্রাণ-ট্যান। খোঁজ এ নিল না কেউ।'
ওই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রি আতাউর রহমান, তার স্ত্রী আরজিনা বেগম ও এক বৃদ্ধা বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করেন ৩৩৩ি-এ। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করেও সেবাকেন্দ্রের এই হটলাইনে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি তারা।
এ নিয়ে আতাউর রহমান বলেন, 'তোমরাই কও। এগলে ফাজলামি ছাড়া কী? হামরা আছি না খায়া; আর ওমরা পুটুর পুটুর করি এটা ওটা কয়া কাটি দেয়। সরকার যে এমাঘরক (আমাদের) কিসক রাখছি।’
কী বলছে কর্তৃপক্ষ
স্থানীয় পর্যায়ের এসব সমস্যার বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হটলাইনটি যেহেতু অনেকগুলো সেবা একসঙ্গে দিয়ে থাকে, তাই নানা প্রয়োজনে মানুষ নানা প্রান্ত থেকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কল করে থাকে। সে কারণে ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো কল প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।’
সেটি সাময়িক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হটলাইনে সংযোগ পাওয়ার সিস্টেম আরও আপগ্রেডের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে, যাতে সবাই সহজেই সেবা পেতে পারে।’
নাম নিবন্ধন করার পরেও অনেকের সহায়তা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘প্রাথমিক ক্যাটাগরি বাছাইয়ে মাসিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কমের সিলিংয়ের কারণে যারা অসহায় হয়ে পড়ছে তারা এই আবেদনে যোগ্য বলে বিবেচিত না-ও হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে, যাতে মাসিক আয়ের সিলিংটি আরও বাড়ানো হয়।’
আরও পড়ুন:রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের আমন্ত্রণে ভুটান সফরে গেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শুক্রবার ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশে ফেরেন ভুটানের রাজা। রাজার আমন্ত্রণে তার সফরসঙ্গী হয়ে ভারত হয়ে ভুটানে যান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। সূত্র: বাসস
এদিন ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গেলেফু সিটিতে অবস্থান করেন ভুটানের রাজা ও বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। সেখানে অবস্থানকালে ভুটানের রাজা বেশকিছু সময় ধরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে গেলেফু সিটি ঘুরে দেখেন এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আইকনিক সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান।
গেলেফু সিটি থেকে ভুটানের রাজার সঙ্গে বিমানযোগে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। বিমানবন্দরে ভুটানের রাজা ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়। পরে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে যান রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত।
ভুটান সফর শেষে রোববার দুপুরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থাকা খাবার কমে আসছে। এ কারণে জলদস্যুরা বাইরে থেকে জাহাজে খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছে। ফলে খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও এগিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত জাহাজে দুই ধরনের খাবার থাকে। এগুলো হচ্ছে, হিমায়িত খাবার ও শুকনো খাবার। যাত্রাপথের সময় অনুযায়ী জাহাজে খাবার মজুত রাখা হয়। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি করলে জলদস্যুরা সাধারণত খাবার সরবরাহ করে। তবে সুপেয় পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা সম্প্রতি জাহাজের বাইরে থেকে খাবার আনছে- এরকম খবর তারা পেয়েছেন।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘খাবার এখনও শেষ হয়নি, তবে কমে আসছে। জলদস্যুরা তাদের নিজেদের জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আটক জাহাজ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
‘এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি ছিল। এই পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে তখন নাবিকরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তবে রেশনিং করলে অনেক দিন চালানো যাবে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন তারা।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।
প্রায় ১৩ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এমভি জাহান মণি নামের একই গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি ১০০ দিন পর সব নাবিকসহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’
আরও পড়ুন:দেশের চারটি বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, অন্য অঞ্চলগুলোতে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা হয়, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বাসস
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। এটি কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সার্বিক সমস্যা।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য দেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট ৮ হাজার ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ৪৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিসরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম কক্ষ রাখা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিষেবা পান সেজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বুথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের সময় বন্যার বিষয়টি বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (তৃতীয় পর্যায়) নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বাকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলোর নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেন, যাতে করে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে না চাইলেও মাঝে মাঝে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিলম্ব হয়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল- অতিরিক্ত ২৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত); ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি সীমান্ত জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন; ৩৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি মৎস্য খামারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়); ২৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের উন্নয়ন; অতিরিক্ত ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো, উন্নত দক্ষতা ও তথ্যের প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার সামর্থ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত)।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য