খাদ্য চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন পেয়ে যাচাইবাছাই করে প্রতি তিনজনের একজনকে সহায়তা পাঠানো হয়েছে। যাচাইবাছাই করে বাকি দুই-তৃতীয়াংশকে বাদ দেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে রাতে। এর উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত. যাচাইবাছাই, দ্বিতীয়ত. যাদের সহায়তা করা হবে, তাদের সম্মান রক্ষা।
কর্মকর্তারা বলছেন, ফোন পেয়েই খাদ্য না দিয়ে সহায়তা বিতরণের কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক নানা ধাপে আবেদনটি যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এ কারণে অবশ্য খাবার পৌঁছাতে সময়ও লাগছে বেশ কয়েক দিন।
৩৩৩ হচ্ছে সরকারের জরুরি তথ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ পাওয়ার কেন্দ্র। গত ২৫ এপ্রিল থেকে এই সেবাটিতে যোগ হয় করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা সরবরাহ দেয়ার প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্র হিসেবে।
সেদিন সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণের জন্য সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্যাকেটজাত খাবার কেনা হয়েছে।
প্রতিটি প্যাকেটে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, নুডলস, চিড়াসহ বিভিন্ন পণ্য আছে। ১০ কেজি চালসহ প্রতিটি প্যাকেটের মধ্যে প্রায় ১৭ কেজি ওজনের খাদ্যসামগ্রী থাকবে, যা দিয়ে একটি পরিবারের প্রায় এক সপ্তাহ চলবে।
আরও ১০ কোটি টাকার খাদ্যসামগ্রী কেনা হবে। সেই খাবার দিয়ে চলা যাবে আরও এক সপ্তাহের বেশি।
সেবাটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়াধীন
অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।
কতজনকে সহায়তা
প্রকল্পটির পরিচালক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে জানান, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত সারা দেশ থেকে মোট ৪৮ হাজার কল এসেছে। সব কটি কলের তথ্যই ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, এনডিআরসিসি) শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম নিউজবাংলাকে জানান, ৭ মে পর্যন্ত সারা দেশে ১৬ হাজার ১৭৪টি পরিবারকে ৩৩৩-এর কল নিবন্ধন তথ্য যাচাইবাছাই করে জরুরি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
বাকিদের বাদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক-দেশে এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এটা বিশ্বজুড়েই দৃশ্যমান। কিন্তু দেশের এবং সরকারের সক্ষমতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। সবাইকে তো সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়।
‘যে আবেদনগুলো আসছে তা প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং মাঠপর্যায়ে যাচাইবাছাই করেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও অপক্ষোকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্তকে এই সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করে নিউজবাংলাকে জানান, এটা ঠিক, কল নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় প্রাথমিক ক্যাটাগরি বাছাইয়ে মাসিক আয় যে ৫ হাজার টাকার কম বেশি বলা হচ্ছে, তাতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা অসহায় হয়ে পড়ছে তারা এই আবেদনে যোগ্য বলে বিবেচিত না-ও হয়ে থাকতে পারে। তবে একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। পরীক্ষা ক্ষেত্রে না নামলে প্রকৃত চিত্র ধরা পড়ে না।
‘আমরাও বিষয়টির খোঁজখবর রাখছি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে, যাতে মাসিক আয়ের সিলিংটি আরও বাড়ানো হয়।’
অর্থাৎ কল করে প্রতি তিনজনের একজন পেয়েছেন খাদ্য সহায়তা। তবে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব, আর হটলাইন নম্বরের অপ্রতুলতার কারণে বহু মানুষ কল করতেই পারছেন না।
‘মনে করছি পামু না, কইতে গেলে লটারির মতো কলডা দিছি’
বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের তিলক গ্রামের বাসিন্দা গৃহিণী নাসরিন আক্তারও ফোন করার দুই দিনের মধ্যেই পেয়ে গেছেন খাবার। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে গিয়ে দিয়ে আসেন খাবার।
‘৩৩৩ তে কল দেয়ার সময় মনে করছি পামু না। কইতে গেলে লটারির মতো কলটা দিছি। কিন্তু সত্যিই যে পামু হেয়া কল্পনায়ও ভাবিনাই।’
খাবার চেয়ে মিলল বাড়ি
কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বিল্ববাড়ি গ্রামের লতা আক্তারের এখন সুখের দিন।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। দরজির কাজ করে সংসার চলে। তবে লকডাউনের কারণে কাজ তেমন নাই। তিনি ফোন করার পর বিস্ময়ের ঘোরের মধ্যে পড়েছেন।
ইউএনও তার ছাপরাঘর দেখে বাড়ি দেয়ার কথা বলে গেছেন। দিয়ে গেছেন ফোন নম্বরও।
তার জন্য খাদ্য দিয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের সহায়তা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের কথা শুনে তাকে জমিসহ ঘর দেয়ার কথা বলেছি। আমাদের সকল প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়েছে, ১০-১৫ দিনের মধ্যে তাদের ঘর দেয়া হবে বলে জানিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছি।’
‘এই সাহায্য গরিবের লাইগ্যা না’
তবে সবার ভাগ্য নাসরিন আক্তার বা লতা আক্তারের মতো নয়।
রাজধানীর মধুবাগের বাসিন্দা কুলসুম বেগম। ছুটা বুয়ার কাজ করেন মানুষের বাসাবাড়িতে। দ্বিতীয় দফা লকডাউনের প্রথম দিকে তার ভ্যানচালক স্বামীকেও বসে থাকতে হয় ঘরে। কুলসুমেরও তিনটি কাজের দুইটিই হারাতে হয়।
আয়ে ভাটা পড়ায় কুলসুমের সংসারে দেখা দেয় খাদ্য-সংকট। তিনি যে বাসায় কাজ করতেন সেই বাসার গৃহকর্তা তাকে পরামর্শ দেন ৩৩৩-এ কল দেয়ার।
কুলসুম কল দেন সেই নম্বরে। প্রথম দফায় সংযোগ না পেয়ে একাধিকবারের চেষ্টায় হটলাইনের সংযোগ পান। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী তিনি সব তথ্য দেন। তার রিকোয়েস্টটি রাখা হয়েছে এবং তা বিবেচনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠিয়ে দেবেন বলে হটলাইন থেকে জানানো হয়। এরপর কেটে যায় প্রায় দেড় সপ্তাহ। তিনি কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি।
এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এই সাহায্য গরিবের লাইগ্যা না। হইলে তো পাইতামই। আমাগো চাইতে গরিব আর ক্যাডা?’
একই অভিজ্ঞতা কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী ইউনূস সর্দারের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তি ডায়াবেটিসের কারণে মাস দেড়েক ধরে দোকানে বসতে পারেননি।
একই এলাকার আলমগীর হোসেন কাজ করতেন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় টিউশনিতে মনোযোগী হন। কিন্তু যে কয়টি বাসায় টিউশনি করেন, তার বেশির ভাগই নিম্নমধ্যবিত্তের। বেতন কম। সেটিও হয় অনিয়মিত। কারও কাছে দুই মাস, কারও কাছে আরও বেশি বকেয়া। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে আর্থিক সংকট তাকে দিনের খাবার সংকটেও ফেলে দেয়।
সংকটের কথা জানিয়ে তার স্ত্রী ফোন করেন ওই হটলাইনে। তিনি সংযোগ পান এবং সমস্যার কথা খুলে বলেন। হটলাইন থেকে জানানো হয়, তার আবেদনটি তারা নিবন্ধন করেছেন। এরপর কেটে গেছে ৫ দিন। আলমগীরের ঠিকানায় আসেনি কোনো সহায়তা।
‘শুধু বইলল ১ ছাপেন ২ ছাপেন, খাবার তো পাইলাম না’
বিবি হাজেরা। তিনিও মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। গৃহকত্রীর নম্বর থেকে ফোন করেন। সেখান থেকে যেভাবে যত নম্বর চাপতে বলেছে, তত নম্বরই প্রেস করলেন। সর্বশেষ একজন প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বললে হাজেরা অপেক্ষায় থাকেন। ৭ মিনিট ১৯ সেকেন্ড অপেক্ষায় থাকার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাইন কেটে যায়।
হাজেরা ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি সড়কের একটি কলোনিতে ভাড়া থাকেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম সদস্য। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না।
হাজেরা বলেন, ‘যদি সরকার খাবার দিতে চায় তাইলে সোজাসুজি নম্বর দিলে হইত। কম্পিউটারে বলে ১ ছাপেন ২ ছাপেন। এসব তো আমরা বুঝি না। এগান মশকারি।’
জামাল উদ্দিন। ফেনী শহর থেকে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দিনমুজুরের কাজ করেন। লকডাউনের কারণে প্রতিদিন কাজ পান না।
৩৩৩ নম্বরে কল করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শুধু বইলল ১ ছাপেন ২ ছাপেন, খাবার তো পাইলাম না। এসব কথা বোগাস। বাউতাবাজি।’
একই জেলার সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের মিঞা। এলাকায় ছোট মিঞা নামে পরিচিত। কখনও দিনমুজুর আবার কখনও গাড়ির হেলপার। ৩৩৩ নম্বরে কল করে কিছু না বুঝে লাইন কেটে দেন।
ছোট মিঞা বলেন, ‘আন্ডা গরিব মানষ। কম্পিটারের (কম্পিউটার) এগান বুঝি না। আগের মতো বোর্ড অফিস থেকে চাইল-ডাইল দিলে আইনতে হাইত্তাম।’
কিসের ত্রাণ-ট্যান, খোঁজ এ নিল না কেউ
২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম নামে এক রিকশাভ্যান চালক ফোন করেন খাদ্য সহায়তার জন্য। কিন্তু একাধিকবার ফোন করে সেবাকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে আবার কল দেন। কিছুক্ষণ পরপর কল কেটে যায়। পরে তিনি আর ফোনই করেননি।
পরে তার ক্ষোভ দেখে প্রতিবেশী এক যুবক প্রথমে তার নম্বর থেকে জরুরি সেবা নম্বর ৩৩৩-ফোন করেন তিনবার। কিন্তু সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন। পরে চতুর্থবার সংযোগ স্থাপন হলে তিনি রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে দেন সেবাকেন্দ্রের অপারেটরের সঙ্গে।
রবিউল ইসলাম ও অপারেটরের সেই দিনের কথোপকথন তুলে ধরা হলো:
রবিউল ইসলাম: ম্যাডাম। আমার খাবারটাবার এনা কিছু নাই তো। আমি দুই দিন থাকি মনে করেন না খায়া আছি। এ রকম পরিস্থিতি।
অপারেটর: স্যার, আপনার কি ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন?
রবিউল: হ্যাঁ-হ্যাঁ।
অপারেটর: জি; আমরা ত্রাণ সহায়তার জন্য রিকোয়েস্ট রাখছি। আপনি আমাদের মাধ্যমে রিকোয়েস্ট রাখতে পারছেন। এই রিকোয়েস্টটি রাখার জন্য আপনার নামসহ তথ্য বলুন।
পরে নাম-ঠিকানা দিয়ে দেন রবিউল ইসলাম।
অপারেটর: আপনার রিকোয়েস্টটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দিচ্ছি। আশা করছি, অতি দ্রুত আপনার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ফোন কেটে দিয়ে রবিউল ইসলাম আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। ত্রাণ সহায়তা পাবেন ভেবে। কিন্তু না; জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও গত চার দিন অতিবাহিত হলেও রবিউলের খোঁজ বা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি।
রবিউলের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা। এই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, 'দূর! এগলে ভুয়ে। কিসের ত্রাণ-ট্যান। খোঁজ এ নিল না কেউ।'
ওই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রি আতাউর রহমান, তার স্ত্রী আরজিনা বেগম ও এক বৃদ্ধা বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করেন ৩৩৩ি-এ। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করেও সেবাকেন্দ্রের এই হটলাইনে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি তারা।
এ নিয়ে আতাউর রহমান বলেন, 'তোমরাই কও। এগলে ফাজলামি ছাড়া কী? হামরা আছি না খায়া; আর ওমরা পুটুর পুটুর করি এটা ওটা কয়া কাটি দেয়। সরকার যে এমাঘরক (আমাদের) কিসক রাখছি।’
কী বলছে কর্তৃপক্ষ
স্থানীয় পর্যায়ের এসব সমস্যার বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হটলাইনটি যেহেতু অনেকগুলো সেবা একসঙ্গে দিয়ে থাকে, তাই নানা প্রয়োজনে মানুষ নানা প্রান্ত থেকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কল করে থাকে। সে কারণে ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো কল প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।’
সেটি সাময়িক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হটলাইনে সংযোগ পাওয়ার সিস্টেম আরও আপগ্রেডের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে, যাতে সবাই সহজেই সেবা পেতে পারে।’
নাম নিবন্ধন করার পরেও অনেকের সহায়তা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘প্রাথমিক ক্যাটাগরি বাছাইয়ে মাসিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কমের সিলিংয়ের কারণে যারা অসহায় হয়ে পড়ছে তারা এই আবেদনে যোগ্য বলে বিবেচিত না-ও হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে, যাতে মাসিক আয়ের সিলিংটি আরও বাড়ানো হয়।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আজ গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি এ দিনটি উদযাপন করেন না, তবে দল থেকে সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আজ বিকেলে ম্যাডামের (বেগম জিয়া) জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তাঁর কর্মকর্তারা এটি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দেন।
বিকেল প্রায় ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তাঁর একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের হাতে ফুলের তোড়াটি হস্তান্তর করেন।
এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত উইংয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চীনের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্য জন্মদিনের ফুলের তোড়া পাঠানো হয়।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি ৮১ বছরে পা রেখেছেন।
ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৃহষ্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর রেল ভবনে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে রেল স্টেশনে তামাক সচেতনতা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য আরএনবি ও জিআরপি (পুলিশ) এবং রেলওয়ের ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রেলওয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করে দেশের সকল স্টেশন ও ট্রেনকে ধূমপান ও তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-
মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা), রেলপথ মন্ত্রণালয়; মোঃ জাকির হোসেন, পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহণ), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আনসার আলী, উপ-পরিচালক (টিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে; গৌতম কুমার কুণ্ডু, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (লালমনিরহাট), বাংলাদেশ রেলওয়ে; ফারহান মাহমুদ, এডিসিও (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোহাম্মদ আমিনুল হক, এসিও-১ (ঢাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের বেজলাইন ও এন্ডলাইন সার্ভের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা/কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার যাত্রীসেবার মানের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত আলোচনা করেন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ভূমিকা পালনকারী সাবেক ও বর্তমান সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা। তাঁরা রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “রেলপথ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাবো না।”
অনুষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ধূমপান ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সভা আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।
দেশের শতকরা ৯০ ভাগ বিরোধের উৎস্য ভূমি। এটা কিন্তু খুব কমই প্রতিকার নিতে পারছি আমরা। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণেরও সচেতনতা প্রয়োজন। ফেনীতে অনুষ্ঠিত অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি ফেনী থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি, বাংলাদেশ এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার।
ফেনী জেলা প্রশাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: এমদাদুল হক চৌধুরী, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প এর প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো: পারভেজ হাসান বিপিএএ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব, সাংবাদিক আবু তাহের, ফেনী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন খান, ফেনী সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজিব তালুকদার, ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা নাসরিন কান্তা, ফেনী জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি আব্দুল হান্নান, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বৃহত্তর নোয়াখালীর ভূমি বিষয়ক সার্চ অফিসার সরোয়ার উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফাহমিদা হক প্রমূখ।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জেলার ভূমি বিভাগ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে, কিন্তু এই পদক্ষেপটি আমরা গত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, গত সরকারের সময়ে প্রকাশিত জিডিপি, ব্যক্তিগত আয়, মাতৃস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাস্তবিক অর্থে,স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
উপদেষ্টা আজ বুধবার (১৩ আগষ্ট) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) কনফারেন্স রুমে নাগরিক উদ্যোগ ও পিপলস হেলথ মুভমেন্ট আয়োজিত "বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সতর্ক পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন"- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরিসংখ্যান বহন করলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা গ্রহণের সময় আসবে, এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তা অনুযায়ী নিয়ম মেনে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে শুল্ক ও জিএসপি সুবিধার প্রভাব কোথায় বৃদ্ধি পাবে এবং কোথায় হ্রাস পাবে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় গবাদিপশুর বাজারে প্রভাব পড়বে এবং লাখ লাখ খামারি, বিশেষ করে গরীব মহিলারা যারা গরু লালন-পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে অবদান রাখছেন, তাদের ক্ষতি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে মাংস আমদানি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। কারণ, আমদানি করা মাংসের মাধ্যমে জুনোটিক রোগ প্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, সাগরের সি উইড ও কুচিয়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি হ্রাস করতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জেনেভা ভিত্তিক লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও সিনিয়র রিসার্চার সানিয়া রিড স্মিথ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ মাসুদ, অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের কো-অর্ডিনেটর বারাকাত উল্লাহ মারুফ।
তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও সক্রিয় হয়ে অপতথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নীতি, উন্নয়ন কর্মসূচি ও সাফল্যের প্রচারে তথ্য অধিদপ্তর প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই দায়িত্ব নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে।
বুধবার তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘তথ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম অধিকতর দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে’ আয়োজিত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর।
তথ্য সচিব বলেন, সরকার যেসব জনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে, সেগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সরকারের বার্তা জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেন, তারাই প্রথম চালিকাশক্তি। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা সময়ের দাবী।
বর্তমানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অপতথ্য ও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন মাহবুবা ফারজানা। তিনি বলেন, অপতথ্যের বিরুদ্ধে আপনাদেরই দক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত প্রচার করতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, শিক্ষিত ও দক্ষ। অপতথ্য ছড়ানো গোষ্ঠী ছোট এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা অশিক্ষিত বা সরকারের কাজ সম্পর্কে অবগত নয়। সে তুলনায় আপনারা অনেক বেশি যোগ্য।
তথ্য সচিব বলেন, নিউজ ও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তনের দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে। এজন্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট, ছোট ভিডিও, লাইভ কভারেজ এবং সময়োপযোগী গল্প বলার কৌশল প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মাহবুবা ফারজানা বলেন, আপনারা ইয়াং স্টার। আপনারা অবশ্যই পারবেন। প্রচার-প্রচারণার মান উন্নয়ন করুন। লেখার মান, বলার মান উন্নত করুন। প্রতিটি সংবাদ যেন সরকারের সাফল্যের জীবন্ত চিত্র হয়।
তথ্য সচিব আরও বলেন, সংবাদ শুধু নয়, তথ্য হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি। সত্যনিষ্ঠ খবর প্রচার করতে হবে। তথ্যের মাধ্যমে আস্থা গড়ে তুলেই বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চাই।
মন্তব্য