আফগানিস্তানের কাবুলে শিখ মন্দিরে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সহযোগী সংগঠন- আইএস খোরাসান। শনিবারের হামলায় নিহত হন দুইজন, আহত হয়েছেন সাত ব্যক্তি।
সংগঠনটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানায়, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সদস্যরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অপমান করেছে। তার প্রতিশোধ হিসেবে শিখ মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে ইসলামের নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। পরে সে মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন দলের এক সদস্য।
সাত বন্দুকধারী শনিবার ভোরে মন্দিরে হামলার চেষ্টা করে। কাবুল পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের পর সবাই নিহত হয়েছেন।
আইএসআইএস-কে তার টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছে, তাদের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আবু মুহাম্মদ আল-তাজিক মন্দিরের প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষীর দিকে একটি হাতবোমা নিক্ষেপ করলে তাকে হত্যা করা হয়।
‘একটি রাইফেল, পিস্তল এবং হাতবোমা নিয়ে তিনি (হামলাকারী) গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে যান। এ সময় উপাসকরা মন্দিরের ভেতর ছিলেন।’
মন্দির কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলার সময় মন্দিরের ভেতর ৩০ জন ছিলেন।
আইএসআইএস-কে আরও দাবি করেছে, ওই সময় তাদের তালেবান সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। একটি গাড়িবোমা ও চারটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার হয় লড়াইয়ে।
‘আইএসআইএস-কে এবং তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। সংঘর্ষে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল-তাজিক মারা গেছেন।’
আফগানিস্তানের ইসলামিক এমিরেট- (আইইএ) কাবুলের হিন্দু উপাসনালয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ টুইটে শিখ মন্দিরের কথা উল্লেখ করে দোষীদের কঠিন সাজার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাড়ছে ক্ষোভ
আফগানিস্তানে একসময় হাজার হাজার শিখ এবং হিন্দুদের নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নিলে ২০২১ সালের আগস্টে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সেই থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে।
কাবুলে গত বছর শিখ সম্প্রদায়ের ওপর একটি বড় হামলা হয়েছিল। শিখদের দুটি মন্দিরে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ২৪ জন। এর দায় নিয়েছিল আইএস।
শনিবারের হামলাটি বিজেপি সদস্যদের মন্তব্যের জেরে ভারতের প্রতি মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে হলো। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান এবং ইরাকের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পতন ঠেকাতে এখন লড়াই করছে দিল্লি।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে। টুইটে সংস্থাটি বলেছে, ‘শিখ, হাজারা এবং সুফিসহ আফগানিস্তানের সব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
আফগানিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতও এই হামলার নিন্দা করেছেন। বলেছেন, ‘ধর্মীয় এবং জাতিগত বহুত্ববাদকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে রক্ষা করতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘কাবুলের পবিত্র গুরুদ্বারে হামলার খবরে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
আরও পড়ুন:ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে বৃহস্পতিবার বেলেশ্বর মহাদেব মন্দিরে কুয়ার ঢাকনা ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন একজন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ জনকে।
মন্দিরে রাম নবমীর অনুষ্ঠানে বিপুল মানুষের চাপে কুয়ার ঢাকনাটি ধসে যায়, যাতে অনেকে হতাহত হন।
ইন্দোর জেলা প্রশাসক ইলায়ারাজা টির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফিরেছেন। নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
তিনি বলেন, উদ্ধার অভিযান বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে শুক্রবার অব্যাহত রয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোরের অন্যতম প্রাচীন কলোনি স্নেহনগরে অবস্থিত মন্দিরটি পরিচালনা করে বেসরকারি একটি ট্রাস্ট।
কিছু সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ আমলে নিলে ইন্দোর পৌরসভা হয়তো ট্র্যাজেডিটি রোধ করতে পারত।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের এপ্রিলে মহাদেব মন্দির ট্রাস্টের কাছে একটি নোটিশ পাঠিয়েছিল পৌরসভা। সে নোটিশে স্থানীয়দের অভিযোগের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছিল, দখলকৃত একটি পার্কে কুয়ার ওপর মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভেঙে ফেলার জন্য কুয়ার ছাদটি চিহ্নিত করেছিল, তবে মন্দির ট্রাস্ট এর বিরোধিতা করে বলে, এ ধরনের উদ্যোগ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে। ফলে কুয়া ভাঙা থেকে পিছু হটে পৌরসভা।
রাম নবমীতে কুয়ার কংক্রিটের ঢাকনার ওপর ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। ওই ঢাকনাটি ৩০ থেকে ৪০ জনের ভার বহনে সক্ষম ছিল না। সেটি ভেঙে পুণ্যার্থীরা কুয়ার ৪০ ফুট গর্তে পড়ে যান।
পুণ্যার্থীদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) ও স্টেট ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ)।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান নিহত প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫ লাখ রুপি এবং আহত প্রত্যেকের জন্য ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন:ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে একটি মন্দিরে মেঝে ধসে পরিত্যক্ত কূপে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, ইন্দোরের প্যাটেল নগরের মহাদেব ঝুলেলাল মন্দিরে রাম নবমীর পুজো উপলক্ষ্যে বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। সেই ভিড়ে হুড়োহুড়িতেই কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে কূপে পড়ে যান প্রায় ৩০ জন। এ দুর্ঘটনার পর ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান । এ দুর্ঘটনার তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে ভারতে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে দেশটিতে শনাক্ত বেড়েছে ৪০ ভাগ।
কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য দিয়েছে এনডিটিভি।
২৪ ঘণ্টার হিসাবে নতুন করে ভারতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৬ জনের শরীরে। এই সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে ৪০ ভাগ বেশি। একদিনে শনাক্ত বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৭ ভাগ। সপ্তাহের হিসাবে শনাক্ত বেড়েছে ১ দশমিক ৭১ ভাগ।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশটিতে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে তিনজন, নয়াদিল্লিতে দুজন, হিমাচলে একজন এবং বাকি মৃত্যু হয়েছে কেরালায়।
সবমিলিয়ে ভারতে এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ৩০ হাজার ৮৬২ জন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশজুড়ে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য ৩ ভাগ। করোনায় সেরে ওঠার হার ৯৮ দশমিক ৭৮ ভাগ। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজ্য করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জরুরি বৈঠকের পরিকল্পনা করছে।
নয়াদিল্লিতে গত ১৬ জানুয়ারি কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি, তবে সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৩০০ জন। অন্য রাজ্যগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এরপর তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতসহ নানা দেশে করোনার বেশকিছু ধরন শনাক্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ সারাবিশ্বেই বেশ কমে এসেছে। তবে কিছু কিছু দেশে আবার নতুন করে আক্রান্তের খবর মিলছে সম্প্রতি।
আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে বিজেপির তীব্র বিষোদগার চলছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের দুই নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র ও মাল্লিকার্জুন খাড়গে।
কেরালার ওয়ানাড় আসন থেকে নির্বাচিত এমপি রাহুল গান্ধীকে লোকসভা থেকে অযোগ্য ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তারা এমন অভিযোগ করেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাহুল গান্ধীকে ‘শহীদের সন্তান’ উল্লেখ করে তার বোন প্রিয়াঙ্কা বলেন, বিজেপি প্রতিদিনই কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিকে অপমান করছে। ক্ষমতাসীন দলটি তাদের নেহরু-গান্ধী পরিবারকে নিয়ে কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করছে না।
কংগ্রেসপ্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দিল্লির রাজঘাটে ‘সত্যাগ্রহ’ বা অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এর আগে মহাত্মা গান্ধী স্মৃতিসৌধ এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে চাইলে পুলিশ তাদের অনুরোধ গ্রহণ করেনি।
প্রিয়াঙ্কা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমার ভাই, যিনি কিনা শহীদের ছেলে, তাকে আপনারা বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর ডাকেন। আপনারা তার মাকে অপমান করেন। আপনাদের এক মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাহুল গান্ধী তার মাকে চিনেন না। আপনারা আমার পরিবারকে প্রত্যেক দিন অপমান করেন, কিন্তু (এ কারণে) কোনো মামলা হয় না।’
এর আগে মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড পেয়ে এমপি পদ হারানোর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, লন্ডনে করা সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে ক্ষমা চাইবেন না তিনি।
‘আমার পরবর্তী বক্তব্য কী হবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভীত হওয়ার কারণে আমাকে (পার্লামেন্টে) অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ কারণে তারা আমাকে পার্লামেন্টে কথা বলতে দিতে চায় না’, বলেন কেরালার ওয়ানাড়ের সদ্য সাবেক এমপি রাহুল।
মার্চের শুরুতে লন্ডনে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশনের (আইজিএ) সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রাহুল গান্ধী বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতীয়দের মুখ বন্ধ করে রাখতে চায়।
ওই অনুষ্ঠানে গুজরাট দাঙ্গা ও নরেন্দ্র মোদির উত্থান নিয়ে নির্মিত বিবিসির ডকুমেন্টারির বিষয়ে রাহুল গান্ধীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সর্বত্র কণ্ঠস্বর দমন হচ্ছে, যার একটি উদাহরণ হলো বিবিসির ডকুমেন্টারি।’ বিবিসির ওই ডকুমেন্টারিটি ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
লন্ডনে ওই বক্তব্যের জেরে রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায় বিজেপি। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে রাহুল বলেন, ‘আমার নাম সাভারকার নয়; আমি একজন গান্ধী। আমি ক্ষমা চাইব না।’
লন্ডনে বক্তব্য দেয়ার সময় রাহুল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। সেটি নাকচ করে দেন কংগ্রেস নেতা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় দেয়া বক্তব্যে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘সব মোদি কেন চোর হয়?’
ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া মানহানির মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাটের সুরাটের আদালত। পরের দিন তাকে এমপি পদে অযোগ্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লোকসভা সচিবালয়।
আরও পড়ুন:ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা থেকে সদস্যপদ হারানোর এক দিন পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিয়েছেন দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড পেয়ে এমপি পদ হারানোর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি বলেন, লন্ডনে করা সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে ক্ষমা চাইবেন না তিনি।
‘আমার পরবর্তী বক্তব্য কী হবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভীত হওয়ার কারণে আমাকে (পার্লামেন্টে) অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ কারণে তারা আমাকে পার্লামেন্টে কথা বলতে দিতে চায় না’, বলেন কেরালার ওয়ানাড়ের সদ্য সাবেক এমপি রাহুল।
মার্চের শুরুতে লন্ডনে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশনের (আইজিএ) সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রাহুল গান্ধী বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতীয়দের মুখ বন্ধ করে রাখতে চায়।
ওই অনুষ্ঠানে গুজরাট দাঙ্গা ও নরেন্দ্র মোদির উত্থান নিয়ে নির্মিত বিবিসির ডকুমেন্টারির বিষয়ে রাহুল গান্ধীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সর্বত্র কণ্ঠস্বর দমন হচ্ছে, যার একটি উদাহরণ হলো বিবিসির ডকুমেন্টারি।’ বিবিসির ওই ডকুমেন্টারিটি ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
লন্ডনে ওই বক্তব্যের জেরে রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। এ নিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে রাহুল বলেন, ‘আমার নাম সাভারকার নয়; আমি একজন গান্ধী। আমি ক্ষমা চাইব না।’
লন্ডনে বক্তব্য দেয়ার সময় রাহুল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। সেটি নাকচ করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় দেয়া বক্তব্যে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘সব মোদি কেন চোর হয়?’
ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া মানহানির মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাটের সুরাটের আদালত। পরের দিন তাকে এমপি পদে অযোগ্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লোকসভা সচিবালয়।
আরও পড়ুন:মানহানির মামলায় ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য তথা এমপি হিসেবে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। লোকসভা সচিবালয় তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছে।
এ আসনে এখন বিশেষ নির্বাচন ঘোষণা করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।
কেরালার ওয়ানাড় থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহুল। পার্লামেন্টে তার সদস্যপদ হারানোকে কংগ্রেসের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় রাহুল বলেছিলেন, ‘সব মোদি কেন চোর হয়?’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এমপি পদে রাহুল গান্ধীকে অযোগ্য ঘোষণাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তার দল কংগ্রেস।
লোকসভা সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিত বলা হয়, কেরালার ওয়ানাড় সংসদীয় আসনের প্রতিনিধিত্বকারী রাহুল গান্ধী লোকসভার সদস্য হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। ভারতের সংবিধানের ১০২ এর ১ (ঙ) অনুচ্ছেদ এবং ১৯৫১ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৮ ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামের একটি অংশ ‘মোদি’ নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাটের একটি আদালত।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৮ (৩) ধারা অনুযায়ী, পার্লামেন্টের কোনো সদস্য যেকোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের সাজা পাওয়ামাত্র তিনি এমপি পদে অযোগ্য বিবেচিত হন।
আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামের একটি অংশ ‘মোদি’ নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত এই রায় ঘোষণা করে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
রায়ের সময় রাহুল গান্ধী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কারাদণ্ডের নির্দেশের পরপরই রাহুল গান্ধীকে ৩০ দিনের জামিন দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আদালতে রায় নিয়ে আপিল করতে পারবেন তিনি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ। রাহুল বলেছিলেন, সব মোদি কেন চোর হয়?
বলা হয়, তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে, নীরব মোদি, ললিত মোদিকে বোঝাতে এই মন্তব্য করেছিলেন। তবে এতে মোদি পদবীর সবার অপমান হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ তুলে সুরাটের এক আদালতে রাহুল গান্ধীর নামে মামলা হয় তখন।
রাহুলের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেন গুজরাটেরর সাবকে মন্ত্রী বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেন্দু মোদি। মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, পুরো মোদি সম্প্রদায়কে অপমান করেছেন রাহুল।
মন্তব্য