২০২০ সালের এপ্রিল। করোনা আতঙ্কে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। ঠিক এমন সময়ে ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ওঠে এক গুরুতর অভিযোগ। ভারতে করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দায়ী করা হয় মুসলমানদের। কারণ সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে তারা একটি জনসভার আয়োজন করেছিল। দ্রুত পরিস্থিতি মোড় নেয় ইসলামোফোবিয়ায়।
শত বছরের ঐহিত্য মেনে তাবলিগ-জামাতের লোকজন দিল্লিতে ওই সমাবেশ করেছিল। এতে অংশ নিয়েছিল দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মুসলিম। নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার এটিকে ‘সুপার-স্পেডার ইভেন্ট’ বলে অভিহিত করেন।
ইসলাম-বিদ্বেষে ভরে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। ইসলামোফোবিক মেমস এবং হ্যাশট্যাগগুলোয় ছড়ানো হতে থাকে ভারতে করোনা ছড়ানোর জন্য ওই সমাবেশ দায়ী। পিছিয়ে ছিল না সংবাদমাধ্যমগুলোও। ‘করোনা জিহাদ থেকে দেশকে বাঁচান’-এর মতো উসকানিমূলক শিরোনাম প্রচার করতে থাকে তারা।
লকডাউন নীতিমালা লঙ্ঘনের জন্য সমাবেশে অংশ নেয়া অন্তত এক হাজার মানুষকে অভিযুক্ত করে ভারত সরকার। আট মাস পর আটক শেষ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেয়েছিল আদালতে। বিচারক জানিয়েছিলেন, সরকারের নির্দেশে ‘বিদ্বেষপূর্ণভাবে বিচার করা হয়েছে’।
ওই সমাবেশে অংশ নেয়াদের বেশির ভাগই এসেছিল ভারতের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার ইন্দোনেশিয়া থেকে। আঞ্চলিক শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে ইন্দোনেশিয়া সরকার। দেশটির আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেন, বিতর্কটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে মুসলমানদের কলঙ্কিত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাবেক এক ভারতীয় কূটনীতিক সে সময় বলেছিলেন, এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ‘বহিরাগতকরণ’-এর একটি উদাহরণ।
মহানবী মুহম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপির দুই জ্যেষ্ঠ সদস্যের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে ভারতের চলমান কূটনৈতিক আগুন প্রথমবার নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বা সরকার কথিত ইসলামোফোবিয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে আগেও।
দুই বছর আগে বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য এক বিতর্কের জন্ম দেন। আরব নারীদের নিয়ে ২০১৫ সালের তার একটি টুইট ফের আলোচনায় আসে। দুবাই ও কুয়েতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আইনজীবীরা তার মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সূর্য টুইটটি মুছে ফেলেছিলেন।
কেবল এটা না, ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর আরেকটি মন্তব্য ঝড় তুলেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে তারা দেশকে ‘পোকার মতো’ খেয়ে ফেলছে।’
এই মন্তব্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ঝড় তুলেছিল। একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যকে ‘অবাঞ্ছিত এবং অজ্ঞাত’ বলে বর্ণনা করেন। একজন বাংলাদেশি কলামিস্ট লেখেন, “অমিত শাহের ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে ঘৃণামূলক, অপমানজনক মন্তব্য করার ইতিহাস দীর্ঘ।”
গত এক বছরে ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু কট্টরপন্থি নেতাদের ঘৃণামূলক বক্তব্যের সুনামিতে ভারত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যে হিন্দুদের অস্ত্র ধরতে বলেছে; মুসলমানদের গণহত্যার কথা বলেছে।
অতীতে ডানপন্থিরা তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’ তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিল। ভিত্তিহীন এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বলা হয়, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করছে। এর প্রভাবে হিন্দু জনতা সন্দেহভাজন মুসলিম গরু পাচারকারীদের মারধর শুরু করে, সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ব্যবসা বর্জনের দাবি ওঠে জোরেশোরে।
নারী মুসলিম সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীরা ট্রোলড হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রচার হতে থাকে মুসলিম নারীদের ভুয়া অনলাইন নিলামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। পার্টিজান নিউজ নেটওয়ার্কগুলো তীক্ষ্ণ টকশো চলাকালীন অংশগ্রহণকারীদের চরম অবস্থান নিতে উত্তেজিত করে আগুনে ইন্ধনও যোগ করেছে।
মোদি সরকার এসব ঘটনায় নীরব ছিল। এতে প্রশ্রয় পেতে থাকে উদ্রবাদীরা। সরকারের এই অবস্থান অনলাইনে মুসলিম-বিদ্বেষ ছড়াতে সাধারণ হিন্দুদের উৎসাহিত করেছে বলে মনে করা হয়।
দুবাইয়ের একটি হোটেলের জনপ্রিয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শেফকে ইসলামবিরোধী টুইটের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। দুবাইয়ে বাসকারী ভারতীয়রা যখন ২০২০ সালে তাবলিগ- জামাতবিরোধী টুইট করা শুরু করে, তখন ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কে থাকা একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী টুইটে জানিয়েছিলেন, ‘কেউ যদি সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে, তবে তাকে জরিমানা করা হবে এবং দেশ ছাড়তে হবে।’
মহানবীকে নিয়ে সাম্প্রতিক আপত্তিকর মন্তব্যের পর সৌদি আরব, ইরান, কাতারসহ ১৫টি দেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক তালমিজ আহমেদ বলেন, ‘নবীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা স্পষ্টতই “লাল রেখা অতিক্রম করা”।
নরেন্দ্র মোদি ওই মন্তব্যের জেরে দলের মুখপাত্রকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। ধর্মগুরু প্রতাপ ভানু মেহতা বলেন, ‘দায়মুক্তির সঙ্গে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা এবং সরকারি অনুমোদন দিয়ে ঘৃণাত্মক বক্তৃতায় ভারতের বৈশ্বিক খ্যাতিতে প্রভাব ফেলবে।’
তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেক বিজেপি নেতা বিশ্বাস করেন, ক্ষোভ শিগগিরই কমে যাবে এবং যথারীতি বাণিজ্য হবে।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের পুরোনো ও গভীর সম্পর্ক। প্রায় ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ভারতীয় উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) অন্তর্গত ছয়টি উপসাগরীয় দেশে কাজ করে, যা পাকিস্তানিদের দ্বিগুণেরও বেশি।
ভারতীয়রা এই প্রতিটি দেশে বড় পরিসরে প্রবাসী সম্প্রদায় গঠন করে। তারা প্রতি বছর ৩৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। যার ওপর নির্ভর করে ৪০ মিলিয়ন পরিবার।
ভারতের দরিদ্রতম রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ। ভারত এবং জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের। সৌদি আরবের পরই ভারতে তেল রপ্তানিকারক দেশ ইরাক। ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশের বেশি আসে কাতার থেকে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, ‘শক্তি নিরাপত্তা, অভিবাসী হিসেবে মানুষের কর্মসংস্থান এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভিত্তিতে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দারুণ সম্পর্ক বিদ্যমান।’
তবে আত্মতুষ্ট হতে পারে না ভারত। বিষয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবেও নিতে পারে না। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক ও ‘ওয়েস্ট এশিয়া অ্যাট ওয়ার’ বইয়ের লেখক তালমিজ আহমেদ বলেন, ‘ ভারতীয়রা এই দেশগুলোয় একটি অরাজনৈতিক, আইন মান্যকারী এবং প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে খ্যাতি তৈরি করেছে। যদি এই ধরনের আক্রমণাত্মক কথা চলতে থাকে, তবে উপসাগরীয় নিয়োগকর্তারা নিঃশব্দে ভারতীয়দের নিয়োগ করা থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করতে পারে।’
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয় জয়ের সম্ভাবনার মধ্যে শুক্রবার দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে আজ ভোট হচ্ছে।
সাত ধাপের এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সব আসনে ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ু (৩৯), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), উত্তরাখণ্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মেঘালয় (২), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), পুদুচেরি (১), সিকিম (১) ও লাক্ষাদ্বীপে (১)। এর বাইরে আসাম ও মহারাষ্ট্রের পাঁচটি করে আসনে, বিহারের চারটি, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি, মণিপুরের দুটি এবং ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীর ও ছত্রিশগড়ের একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই চার রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে আজ ভোট।
ভারতে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের জন্য বড় পরীক্ষার এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে ৩৭০টিতে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ ৪০০টি আসনে জয়ী হোক, এমনটি চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে সাত দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। শুরুর দিনে এই রাজ্যে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।
বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একইসঙ্গে এদিন ভোটগ্রহণ হবে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার ৬০টি ও সিকিমের ৩২টি আসনে।
ভারতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩, কংগ্রেস ৫২, সমাজবাদী পার্টি ৫, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ ও টিডিপি ২টি আসনে জয় পেয়েছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন।
এ বছর ভারতে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর বয়সী) এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
ঝড়ের সময় বজ্রপাত ও প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় সীমান্তবর্তী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কমপক্ষে ৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে আল জাজিরা।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানজুড়ে ঝড়ে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ প্রাণহানি হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়, যেখানে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ভূমিধসে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপড়ে যায় গাছ।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিতে ধসে যায় বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, অঞ্চলটিতে বৃষ্টিজনিত কারণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও বৃষ্টি হতে পারে।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্যায় সাতজন প্রাণ হারান।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার এবং বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কুয়েটার সড়ক।
এমন বাস্তবতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
আফগানিস্তানে বন্যা
দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, মৌসুমি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দেশটিতে আহত হয়েছেন ২৭ জন।
তিনি জানান, বন্যায় ছয় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ২০০ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
ওই মুখপাত্র জানান, বন্যায় বিপুল কৃষিজমির পাশাপাশি ৮৫ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন:ঈদের দিন সকালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে একটি স্কুলবাস উল্টে ৬ শিশু নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন।
মহেন্দ্রগড় জেলার কানিনা শহরের কানিনা-দাদরি সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বাসটি জিএল পাবলিক স্কুল নামের স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকা সত্ত্বেও স্কুলটি খোলা ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো শিশু ছিল। দুর্ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ৬ জনকে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৫ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি একজনকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণ পর তারও মৃত্যু হয়।
বাসচালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায় পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগের পর চালক মদ্যপ ছিলেন কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১২ আহত শিক্ষার্থীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রোহতকের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মহেন্দ্রগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ধারণা, বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা মারে। তিনি মদ্যপ থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মহেন্দ্রগড় জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আরশ ভার্মা বলেছেন, ‘বাসচালকের (মদ্যপ থাকার) বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার একটি মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে।’
সরকারি নথি থেকে এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরে তা আর নবায়ন করা হয়নি।
দুর্ঘটনার খবরে শোক প্রকাশ করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সাইনি।
এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কানিনায় স্কুলবাস দুর্ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা নিষ্পাপ শিশুদের হারাল, ওইসব পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
ছুটির দিনেও কেন স্কুলটি খোলা ছিল, তার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী সীমা ত্রিখা।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে মাজারে যাওয়ার পথে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রাক খাদে পড়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে বেলুচিস্তানের হাব জেলায় শাহ নুরানী মাজারে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জিও নিউজ জাানিয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র জি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
সিন্ধুর ঠাট্টা থেকে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী ট্রাকটি খুজদার জেলার শাহ নুরানি মাজারে যাওয়ার সময় হাব জেলায় খাদে পড়ে যায়।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি জেলা প্রশাসনকে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার প্রায় সাত বছর পর এখন তাদেরই সাহায্য নিচ্ছে দেশটির সামরিক জান্তা।
রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিবিসি সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে সাম্প্রতিক সপ্তাহে যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে বিবিসি।
৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম, কিন্তু আমাকে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’
রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছের একটি শিবিরে থাকেন তিনি। এক দশক ধরে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা এ ধরনের শিবিরে থাকছেন।
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একদিন রাতে মোহাম্মদের কাছে আসেন এক শিবিরনেতা। তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে জানান ওই নেতা।
মোহাম্মকে তখন বলা হয়েছিল, এটা সেনাবাহিনীর আদেশ। আদেশ পালন না করলে তার পরিবারের ক্ষতি করা হবে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, সেনা কর্মকর্তারা শিবিরগুলোর (ক্যাম্প) আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। তারা তরুণ রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীতে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০১২ সালে রাখাইনের বসতি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন শিবিরে থাকতে শুরু করেন। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও নিধন অভিযান শুরু করলে ওই সময় সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
ওই সময় মিয়ানমারে হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
সম্প্রতি আরাকান আর্মি নামক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারানোর পর একই সেনাবাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করছে।
দেশটির অন্য অংশে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জান্তাও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। তারা নিহত ও আহত হয়েছে এবং অনেক আত্মসমর্পণ করেছে।
আরও পড়ুন:দাবদাহ মোকাবিলায় ভারতের মুম্বাইয়ের নগর কর্তৃপক্ষ শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের জন্য কোল্ড রুমের ব্যবস্থা করেছে এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিট স্ট্রোকের ওষুধ মজুত রেখেছে।
তীব্র দাবদাহ ও গরম বাড়তে পারে এমন শঙ্কা থেকে কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুক্রবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
কোল্ড রুম এমন একটি কক্ষ যেটি কম তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর মুম্বাইয়ের গভর্নিং সিভিক বডি বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বলছে, তারা শহরের ১০৩টি ওষুধের দোকান শীতাতপনিয়ন্ত্রীত করা হয়েছে।
সিভিক বডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হিট স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪টি বড় হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের কোল্ড রুমে দুটি করে শয্যা থাকবে। হিট স্ট্রোক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য মেডিক্যাল অফিসার এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল এবং মে থেকে তুলনামূলকভাবে গরম বাড়তে থাকে। তাই এ সময় হিট স্ট্রোকের প্রবণতাও বেড়ে যায়।
নাগরিক সংস্থাটি হিট স্ট্রোক এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য