মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উপসাগরীয় অঞ্চলে কূটনীতিতে বিপাকে আছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
আলোচিত ওই নেতার নাম নূপুর শর্মা। এক টেলিভিশন বিতর্কে গত সপ্তাহে ইসলামের নবীকে নিয়ে নূপুর শর্মা এমন এক মন্তব্য করেন যা ভারতের মুসলিমদের পাশপাশি গোটা মুসলিম বিশ্বকে চরম ক্ষুব্ধ করেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গত রোববার দল থেকে বহিষ্কার করা হয় নূপুর শর্মাকে। একই অপরাধে বরখাস্ত করা হয়েছে বিজেপির দিল্লির মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নবীন কুমার জিন্দালকে। টুইটে তিনি নূপুরের আপত্তিকর মন্তব্যের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করছিলেন। যদিও পরে তা মুছে ফেলা হয়।
এক বিবৃতিতে বিজেপি জানায়, ‘কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মকে হেয় করে বা অপমান করে এমন আদর্শের বিরুদ্ধে তাদের দল। এ ধরনের দর্শনে যারা বিশ্বাসী তাদের বিজেপি সমর্থন করে না।’
ক্ষুব্ধ ইসলামিক দেশগুলোকে শান্ত করতে ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, ‘মন্তব্যগুলো সরকারের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। এগুলো তাদের নিজস্ব মতামত কেবল।’
তবে অনেক সূত্র বলছে, নূপুর শর্মা দলের বাইরের কেউ নন। রীতিমতো দলের গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ ৩৭ বছরের এই আইনজীবী।
কে এই নূপুর শর্মা?
দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত নূপুর ছিলেন বিজেপির সরকারি মুখপাত্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের পক্ষে সাফাই গাইতে প্রায়ই তাকে দেখা যেত টেলিভিশন বিতর্কে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় নূপুর তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। সময়টা ২০০৮ সাল। হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আন্দোলনের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে প্রবেশ করেন রাজনীতিতে।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনে স্নাতকোত্তর করার পর ২০১১ সালে ভারতে ফিরে আসেন নূপুর। সেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনে দ্রুত উত্থানের শুরু।
স্পষ্টভাষী ও সুবক্তা নূপুর ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় দারুণ সাবলীল। দৃঢ়তার সঙ্গে তার মতামতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিজেপির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মিডিয়া কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান ২০১৩ সালে।
দুই বছর পর নতুন নির্বাচনে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিপক্ষে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন এই নূপুর।
ভোটে কেজরিওয়ালকে হারাতে না পারলেও প্রচারে নূপুরের উদ্দীপনামূলক ভাষণ তাকে দলে আরও সামনের সারিতে নিয়ে আসে। দিল্লিতে দলের সরকারি মুখপাত্র নিযুক্ত হন, ২০২০ সালে নূপুর বনে যান বিজেপির ‘জাতীয় মুখপাত্র’।
টেলিভিশনে পরিচিত মুখ
গত কয়েক বছরে ভারতের টিভি দর্শকদের কাছে অতি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন নূপুর শর্মা। প্রায়ই সন্ধ্যায় টেলিভিশনে তাকে দেখা যেত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। বিরোধীদের কোণঠাসা করতে গালিগালাজ করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না নূপুর।
নূপুরের সমর্থকরা সম্প্রতি টুইটারে একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, এক আলোচককে তিনি বলছেন, “আপনি একজন ‘ব্লাডি হিপোক্রিট অ্যান্ড আ লায়ার’ (ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী)। এরপর তিনি তাকে বলেন 'শাট আপ'।" ভিডিওটি শেয়ার হয় ব্যাপক।
নূপুর যখন টুইটারে ওই ক্লিপটি শেয়ার করেন টুইটার হ্যান্ডেলে তখন তার পাঁচ লাখের বেশি ফলোয়ার ছিল; যার মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
এ ঘটনায় বিজেপির মধ্যে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে নূপুরের। সমর্থকরা তাকে ‘নারী সিংহ’, ‘নির্ভীক’ ও ‘একজন কঠিন লড়াকু’ বলে আখ্যা দেয়।
বরখাস্ত হওয়ার পর এক বিবৃতিতে নূপুর বলেন, ‘নিঃশর্তভাবে’ মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে ওই মন্তব্যের পেছনে যুক্তি ছিল। ওই অনুষ্ঠানে দেবতা শিবকে অনবরত যেভাবে অপমান আর অসম্মান করা হচ্ছিল, তার জবাব দিতে ওই মন্তব্য করেছিলাম।’
— Nupur Sharma (@NupurSharmaBJP) June 5, 2022
জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দাবি করছে, পবিত্র বারাণসি শহরে এই মসজিদ বানানো হয় ষোড়শ শতাব্দীর এক হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর। তাদের দাবি, মন্দিরটি ১৬৬৯ সালে ধ্বংস করেছিলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব।
মসজিদের ভেতরে ভিডিওর মাধ্যমে একটি জরিপ চালানোর জন্য আদালতের একটি রায় নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। ওই ভিডিওতে পাথরের একটি স্তম্ভ দেখা যায়।
আবেদনকারীরা দাবি করেন, এটি শিবলিঙ্গ (শিবের প্রতীক)। তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ জোর গলায় বলেছিল, এটি একটি পানির ফোয়ারা।
এই বিতর্ক নিয়ে শুনানি চলছে আদালতে। বিষয়টি নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে বিরামহীন বিতর্ক। এসব অনুষ্ঠানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতামতের প্রধান ও সোচ্চার প্রবক্তা হয়ে ওঠেন নূপুর শর্মা।
এর মধ্যে ২৭ মে এক অনুষ্ঠানে তিনি মহানবীকে কটাক্ষ করে যেসব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, তা হজম কেবল নূপুরের জন্যই না, দল হিসেবে বিজেপির জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘শিরশ্ছেদের হুমকি’
সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের যখন নূপুরের ওই অবমাননাকর মন্তব্য টুইটারে শেয়ার করেন, তখন নূপুর পুলিশকে একটি টুইট করেন। সেখানে বলা হয়, 'ধর্ষণ হুমকির বার্তা পাচ্ছি। শুধু তা-ই নয়, আমার বোন, মা এবং বাবাকে হত্যা ও শিরশ্ছেদের হুমকিও দেয়া হচ্ছে।'
জুবায়েরের বিরুদ্ধে নূপুর অভিযোগ তোলেন, ‘মিথ্যা রটনা চালিয়ে পরিবেশ বিষাক্ত করছেন জুবায়ের, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছেন। আমাকে ও আমার পরিবারকে উদ্দেশ্য করে ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।’
টুইটটি তিনি ট্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডাকে।
তিন দিন পর এক সাক্ষাৎকারে নূপুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পার্টি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সবাই আমার পাশে আছে’।
তবে পাশা পাল্টে যায় ২ মে, শুক্রবার। এদিন উত্তর প্রদেশের কানপুরে নূপুরের মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুসলমানদের একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়ে ওঠে সহিংস।
কট্টরপন্থী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যতে এমন বিক্ষোভ মেনে নেয়া যায় না। তাই তিনি নিলেন শক্ত পদক্ষেপ। বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমন করে পুলিশ। শত শত বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ, গ্রেপ্তার হন অনেকে।
এরপর বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নূপুরের বিবৃতির নিন্দা জানাতে শুরু করে। ফলে পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
কুয়েত, ইরান ও কাতার তাদের দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে। কড়া বিবৃতি দেয় সৌদি আরব।
এমনকি যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে গত কয়েক বছরে ভারতের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়েছিল, সেই দেশও এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে।
এখানেই থেমে নেই বিক্ষুব্ধরা। ধর্ম অবমাননার দায়ে নূপুরের গ্রেপ্তারের দাবি দিনকে দিন জোরালো হচ্ছে। বিরোধী দলশাসিত কয়েকটি রাজ্যের পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে মঙ্গলবার নূপুরের নিরাপত্তা জোরদার করেছে দিল্লি পুলিশ।
থেমে নেই নূপুরের সমর্থকরা। বহিষ্কারের পর অনলাইনে তার সমর্থন বাড়তে শুরু করেছে। #ISupportNupurSharma এবং #TakeBackNupurSharma এই হ্যাশট্যাগে প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নূপুরের প্রশংসা করছে তার সমর্থকরা।
কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, এমন কাণ্ড অতীতেও ঘটেছে। অনেক শীর্ষ ভারতীয় রাজনীতিক এমন ঘৃণামূলক মন্তব্য করেও পার পেয়ে গেছেন। আর তাই নূপুর শর্মার রাজনৈতিক জীবনের ইতি এখানেই দেখছেন না তারা।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয় জয়ের সম্ভাবনার মধ্যে শুক্রবার দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে আজ ভোট হচ্ছে।
সাত ধাপের এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সব আসনে ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ু (৩৯), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), উত্তরাখণ্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মেঘালয় (২), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), পুদুচেরি (১), সিকিম (১) ও লাক্ষাদ্বীপে (১)। এর বাইরে আসাম ও মহারাষ্ট্রের পাঁচটি করে আসনে, বিহারের চারটি, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি, মণিপুরের দুটি এবং ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীর ও ছত্রিশগড়ের একটি করে আসনে ভোট হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই চার রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে আজ ভোট।
ভারতে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের জন্য বড় পরীক্ষার এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে ৩৭০টিতে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ ৪০০টি আসনে জয়ী হোক, এমনটি চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে সাত দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। শুরুর দিনে এই রাজ্যে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।
বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একইসঙ্গে এদিন ভোটগ্রহণ হবে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার ৬০টি ও সিকিমের ৩২টি আসনে।
ভারতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩, কংগ্রেস ৫২, সমাজবাদী পার্টি ৫, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ ও টিডিপি ২টি আসনে জয় পেয়েছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন।
এ বছর ভারতে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর বয়সী) এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
ঝড়ের সময় বজ্রপাত ও প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় সীমান্তবর্তী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কমপক্ষে ৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে আল জাজিরা।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানজুড়ে ঝড়ে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ প্রাণহানি হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়, যেখানে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ভূমিধসে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপড়ে যায় গাছ।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিতে ধসে যায় বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, অঞ্চলটিতে বৃষ্টিজনিত কারণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও বৃষ্টি হতে পারে।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্যায় সাতজন প্রাণ হারান।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার এবং বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কুয়েটার সড়ক।
এমন বাস্তবতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
আফগানিস্তানে বন্যা
দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, মৌসুমি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ৩৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দেশটিতে আহত হয়েছেন ২৭ জন।
তিনি জানান, বন্যায় ছয় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ২০০ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
ওই মুখপাত্র জানান, বন্যায় বিপুল কৃষিজমির পাশাপাশি ৮৫ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন:ঈদের দিন সকালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে একটি স্কুলবাস উল্টে ৬ শিশু নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন।
মহেন্দ্রগড় জেলার কানিনা শহরের কানিনা-দাদরি সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বাসটি জিএল পাবলিক স্কুল নামের স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকা সত্ত্বেও স্কুলটি খোলা ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো শিশু ছিল। দুর্ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ৬ জনকে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৫ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি একজনকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণ পর তারও মৃত্যু হয়।
বাসচালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায় পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগের পর চালক মদ্যপ ছিলেন কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১২ আহত শিক্ষার্থীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রোহতকের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মহেন্দ্রগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ধারণা, বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা মারে। তিনি মদ্যপ থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মহেন্দ্রগড় জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আরশ ভার্মা বলেছেন, ‘বাসচালকের (মদ্যপ থাকার) বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার একটি মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে।’
সরকারি নথি থেকে এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরে তা আর নবায়ন করা হয়নি।
দুর্ঘটনার খবরে শোক প্রকাশ করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সাইনি।
এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কানিনায় স্কুলবাস দুর্ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা নিষ্পাপ শিশুদের হারাল, ওইসব পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
ছুটির দিনেও কেন স্কুলটি খোলা ছিল, তার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী সীমা ত্রিখা।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে মাজারে যাওয়ার পথে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রাক খাদে পড়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে বেলুচিস্তানের হাব জেলায় শাহ নুরানী মাজারে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জিও নিউজ জাানিয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র জি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
সিন্ধুর ঠাট্টা থেকে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী ট্রাকটি খুজদার জেলার শাহ নুরানি মাজারে যাওয়ার সময় হাব জেলায় খাদে পড়ে যায়।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি জেলা প্রশাসনকে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করার প্রায় সাত বছর পর এখন তাদেরই সাহায্য নিচ্ছে দেশটির সামরিক জান্তা।
রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিবিসি সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে সাম্প্রতিক সপ্তাহে যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে বিবিসি।
৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম, কিন্তু আমাকে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’
রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছের একটি শিবিরে থাকেন তিনি। এক দশক ধরে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা এ ধরনের শিবিরে থাকছেন।
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একদিন রাতে মোহাম্মদের কাছে আসেন এক শিবিরনেতা। তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে জানান ওই নেতা।
মোহাম্মকে তখন বলা হয়েছিল, এটা সেনাবাহিনীর আদেশ। আদেশ পালন না করলে তার পরিবারের ক্ষতি করা হবে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, সেনা কর্মকর্তারা শিবিরগুলোর (ক্যাম্প) আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। তারা তরুণ রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীতে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০১২ সালে রাখাইনের বসতি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন শিবিরে থাকতে শুরু করেন। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও নিধন অভিযান শুরু করলে ওই সময় সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
ওই সময় মিয়ানমারে হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
সম্প্রতি আরাকান আর্মি নামক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারানোর পর একই সেনাবাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করছে।
দেশটির অন্য অংশে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জান্তাও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। তারা নিহত ও আহত হয়েছে এবং অনেক আত্মসমর্পণ করেছে।
আরও পড়ুন:দাবদাহ মোকাবিলায় ভারতের মুম্বাইয়ের নগর কর্তৃপক্ষ শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের জন্য কোল্ড রুমের ব্যবস্থা করেছে এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিট স্ট্রোকের ওষুধ মজুত রেখেছে।
তীব্র দাবদাহ ও গরম বাড়তে পারে এমন শঙ্কা থেকে কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুক্রবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
কোল্ড রুম এমন একটি কক্ষ যেটি কম তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর মুম্বাইয়ের গভর্নিং সিভিক বডি বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বলছে, তারা শহরের ১০৩টি ওষুধের দোকান শীতাতপনিয়ন্ত্রীত করা হয়েছে।
সিভিক বডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হিট স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪টি বড় হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের কোল্ড রুমে দুটি করে শয্যা থাকবে। হিট স্ট্রোক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য মেডিক্যাল অফিসার এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল এবং মে থেকে তুলনামূলকভাবে গরম বাড়তে থাকে। তাই এ সময় হিট স্ট্রোকের প্রবণতাও বেড়ে যায়।
নাগরিক সংস্থাটি হিট স্ট্রোক এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য