কয়েক দশক আগেও আমরা সাইন্স ফিকশন মুভিতে টাচস্ক্রিন দেখে অবাক হতাম। সেই কল্পনা এখন বাস্তব। বরং কল্পনা এখন সব সময় হাতের মুঠোতে বন্দি স্মার্টফোনে। কম্পিউটারে কাজ, এটিএম বুথে টাকা তোলা সবই টাচস্ক্রিনের কারসাজি। আমরা কী জানি কীভাবে এই টাচস্ক্রিন কাজ করে?
টাচস্ক্রিন আবিষ্কার করা হয়েছে ৬০-এর দশকে। ১৯৬৫ সালে ই এ জনসন প্রথম সিঙ্গেল টাচস্ক্রিন আবিষ্কার করেন। পর্দায় একটি টাচ করলে চালু হতো কম্পিউটার। সেই সিঙ্গেল থেকে এখন মাল্টি টাচস্ক্রিনের যুগে আসতে সময় নেহায়েত কম লাগেনি। আর সে টাচস্ক্রিন কীভাবে কাজ করে চলুন দেখে নিই।
এখন টাচস্ক্রিনের জন্য দুই ধরনের ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। একটি রেজিস্টিভ অন্যটি ক্যাপাসিটিভ। এর মধ্যে রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা হয় এটিএম বুথ, ওজন মাপার ডিজিটাল স্কেল, দোকানে বিল পরিশোধের জন্য পস মেশিনসহ আরও কিছু ডিভাইসে।
এই প্রক্রিয়ার প্রযুক্তি খুব সাধারণ। প্রথমে স্ক্রিনে জোরে চাপ দিতে হয়। একেবারে ওপরের রেজিস্টিভ লেয়ারের নিচেই থাকে আরেকটি লেয়ার, যেটাকে বলা হয় কনডাক্টিভ লেয়ার। তবে দুটি লেয়ারকে পৃথক করে রেখেছে মাঝের আরেকটি লেয়ার।
তাতে রেজিস্টিভ ও কনডাক্টিভ দুটি লেয়ারের ইলেকট্রিক কারেন্ট চলমান থাকে। যখন স্ক্রিনে চাপ দেয়া হয় তখন রেজিস্টিভ লেয়ার কনডাক্টিভ লেয়ারে গিয়ে স্পর্শ করে। আর সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রিক কারেন্ট চলে যায় ডিভাইসের সফটওয়্যারে। শুরু হয় কার্যক্রম।
এটিএম বুথের স্ক্রিনে হলে, যদি আপনি ১০০০ টাকায় চাপ দেন তাহলে দেখা যাবে এটিএম মেশিন ১০০০ টাকা বের করে দিচ্ছে। মানে কাজ করেছে সঠিকভাবে। এ ধরনের টাচস্ক্রিনে সরাসরি টাচ করা যায় না। বোতামের সাহায্য নিতে হয়। তাই খুব নিরাপদ হয়। তবে এই স্ক্রিনে জুম করার কোনো অপশন নেই।
এই স্ক্রিন আর আপনার আমার স্মার্টফোনের স্ক্রিন কিন্তু আলাদা। আমরা যে স্মার্টফোন ব্যবহার করি, সেগুলোতে থাকে ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন। ফলে আমরা সোয়াইপ করতে পারি, ট্যাপ করতে পারি, স্ক্রল করতে পারি স্ক্রিনেই।
রেজিস্টিভ স্ক্রিনের সঙ্গে ক্যাপাসিটিভ স্ক্রিনের অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে, এখানে প্রেস করতে হয় না। জাস্ট টাচ করলেই কাজ শুরু করে। ক্যাপাসিটিভ স্ক্রিন তৈরি করা হয় ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইড এবং কপার অক্সাইড দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় খুব সূক্ষ্মভাবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও জটিল।
ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনের আবার দুটি ধরন রয়েছে। একটি প্রোজেক্টিভ আরেকটি সারফেস। প্রোজেক্টিভ স্ক্রিনে থাকে টাইট গ্রিড অব স্পেশাল সেন্সর চিপ। এই চিপটি পুরো সেন্সরজুড়েই রয়েছে। অন্যদিকে সারফেসে রয়েছে ইটসি-বিটসি সেন্সর ইন দ্য কর্নার। মানে এর সেন্সরগুলো থাকে চিপটির চার কোনায়।
যখন এই ধরনের ডিসপ্লেতে টাচ করা হয় তখন একটি ক্ষুদ্র ইলেকট্রিক্যাল চার্জ ডিসপ্লে থেকে আঙুলে প্রবেশ করে। এবার স্ক্রিনে যেকোনো স্থানেই টাচ করলে আপনার লোকেশন নিয়ে নেবে ভেতরের সেই চিপ। আর আপনার দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করবে।
কখনও কি খেয়াল করেছেন, গ্লাভস হাতে টাচস্ক্রিন কাজ করে না! মানে আপনার হাত থেকে ইলেকট্রিসিটি ফোনের পর্দায় যায় না। তবে বিশেষ ধরনের গ্লাভস ব্যবহারে আবার সেটি কাজ করে।
বর্তমান সময়ে সেসব টাচস্ক্রিন বেশি জনপ্রিয় তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইনফারেড টাচস্ক্রিন। এটি খুবই ফ্যান্সি হওয়ায় সবাই এটিকে পছন্দ করে। ইনফারেড টাচস্ক্রিন কাজ করার ক্ষেত্রে এতে আঙুলের ছাপ ডিটেক্ট করে। যেখানে আঙুলের ছাপ দেয়া হয় তার ঠিক নিচে থাকা সার্কিট সেই কমান্ড গ্রহণ করে, আর মাইক্রো চিপ কাজ শুরু করে।
এ সব ছাড়া আরও কয়েক ধরনের টাচস্ক্রিন পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে সারফেস অ্যাকুয়েস্টিক ওয়েভ টাচস্ক্রিন, যা আলোকরশ্মির সাহায্যে কাজ করে। রয়েছে নেয়ার ফিল্ড ইমেজিং টাচস্ক্রিন, যেটি ব্যবহার হয় খুব চ্যালেঞ্জিং কাজের ক্ষেত্রে। এটি বেশি ব্যবহার করে মিলিটারিরা।