বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘নিকট-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা’ আসলে বাঁচার কৌশল!

  •    
  • ৩ জুলাই, ২০২১ ১৮:০৯

এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ের এই অভিজ্ঞতা আসলে মানুষের টিকে থাকার কৌশলেরই অংশ। এই কৌশল বিবর্তনীয় ধারায় মানুষের মধ্যে এসেছে পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতা থেকে।

মৃত্যুর একদম কিনারে পৌঁছে আবার ফিরে আসার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। এ ধরনের মানুষ চেতনাহীন সময়ের বর্ণনা যেভাবে দেন সেখানে রয়েছে বিস্ময়কর মিল।

অনেকেই বলেন, অদ্ভুত কোনো টানেলের কথা, যার শেষ প্রান্ত থাকে উজ্জ্বল আলো। কেউ কেউ এমন আকাশ ও দিগন্তের বিবরণ দেন, যা স্বাভাবিক পরিবেশে দেখা যায় না।

নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স বা নিকট-মৃত্যুর এই অভিজ্ঞতা বিজ্ঞানের কাছে এখনও রহস্য। তবে কিছু কিছু গবেষণায় একে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, মস্তিষ্কের সক্রিয়তা কমে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে।

সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ের এই অভিজ্ঞতা আসলে মানুষের টিকে থাকার কৌশলেরই অংশ। এই কৌশল বিবর্তনীয় ধারায় মানুষের মধ্যে এসেছে পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতা থেকে।

গবেষণা বলছে, নিকট-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাখ লাখ বছর ধরে প্রাণীজগতে বিদ্যমান, বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ‘থানোটোসিস’। সাধারণত শিকারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই কৌশল কাজে লাগায় বিভিন্ন প্রাণী।

টিকে থাকার জন্য অনেক প্রাণী ব্যবহার করে থানোটোসিস কৌশল

থানোটোসিস এমন এক কৌশল যার মাধ্যমে আক্রান্ত প্রাণীর শরীরকেন্দ্রীক সক্রিয়তা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়ে অনেকটা ‘মৃত অবস্থা’ তৈরি করে। এরপর শিকারির অসচেতন মুহূর্ত তৈরি হলেই পালানোর সুযোগ নেয় আক্রান্ত প্রাণী।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে অক্সফোর্ড অ্যাকাডেমিকের ব্রেইন কমিউনিকেশনস জার্নালে। গবেষক দলের সদস্য বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অফ লিয়েজ-এর নিউরোলজিস্ট স্টিভেন লরিজ বলেন, ‘এই গবেষণাপত্রে, আমরা বেশ কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে দেখিয়েছি, থানোটোসিস হলো মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছানোর অভিজ্ঞতার বিবর্তনগত ভিত্তি। আর এর জৈবিক প্রয়োজন হলো, টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা।’

মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফেরার পর অনেকেই বলেন, তারা শরীর থেকে বের হয়ে শূন্যে ভাসার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সময় স্থির হয়ে গিয়েছিল। আবার অনেকে শৈশব, কৈশোর, যৌবনের সব ঘটনা দেখতে পাওয়ার দাবি করেন। উজ্জ্বল আলো দেখার পাশাপাশি চূড়ান্ত শান্তি অনুভবের কথাও জানিয়েছেন অনেকে।

মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছানোর এসব অভিজ্ঞতা সাধারণত ঘটে বিশেষ কোনো প্রাণঘাতী পরিস্থিতিতে। হার্ট অ্যাটাক বা আকস্মিক দুর্ঘটনা, এমনকি বুনো জন্তুর আক্রমণের মুখেও অনেকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এসব অভিজ্ঞতা লাভের সময় মানব মস্তিষ্কে যে ধরনের অবস্থা তৈরি হয় তা থানোটিসের মতোই। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর এই বিশেষ অবস্থার সামঞ্জস্যই চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা।

এ বিষয়ে গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি, নিকট-মৃত্যুর অভিজ্ঞতার পিছনে মস্তিষ্ক যে ভূমিকা রাখে, সেটি থানোটোসিস থেকে উদ্ভূত। এই কৌশল ভয়ঙ্কর আক্রমণ থেকে প্রাণীকে টিকে থাকার সুবিধা দেয়।’

গবেষকদের একই দল এর আগের একটি গবেষণায় প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে এক জনের নিকট-মৃত্যুর অভিজ্ঞতার তথ্য পেয়েছিল। তবে আরও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার মানুষের সংখ্যা চার থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

নিকট-মৃত্যু অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করতে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ধারণাও রয়েছে। বৈজ্ঞানিকভাবে মনে করা হয়, অচেতন করার ওষুধ, অক্সিজেনের অভাব, মস্তিষ্কের মৃত কোষ অথবা তীব্র চাপের সময়ে নিঃসৃত এন্ডোরফিনের কারণে মানুষ এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারে। তবে এর কোনোটিই এখনও চূড়ান্ত ব্যাখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

নতুন গবেষণায় মানুষের ক্ষেত্রে থানোটোসিসকে একটি সম্ভাব্য সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আকস্মিক ট্রমা বা যৌন সহিংসতার সময় এই জৈবিক কৌশল আক্রান্তের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, আকস্মিক পরিস্থিতিতে মানুষ সম্ভবত ‘বিচ্ছিন্নতার এমন একটি পরিস্থিতিতে’ প্রবেশ করে যা তাকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করে। পরে এটাই তার স্মৃতিতে নিকট-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা হিসেবে টিকে থাকে।

গবেষক দলটি প্রাণীজগতে থানোটোসিসের ঘটনা সংক্রান্ত ৩২টি গবেষণাপত্র মূল্যায়ন করেছে, যেখানে পোকামাকড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে এই কৌশল কাজে লাগানোর প্রমাণ রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর