বন্ধ হয়ে যাওয়া আলহাজ টেক্সটাইল এখন উৎপাদনে, রিংশাইনে শুরু হয়ে গেছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন আর এমারেল্ড অয়েল উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
এগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পাল্টে দিয়ে এই উন্নতি ঘটাতে পেরেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আর গত কয়েক মাসে তিনটি কোম্পানিরই শেয়ার দর বেড়েছে।
তবে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন চালুর কোনো আভাস নেই, এমনকি যেসব কোম্পানি চালুর বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আশাবাদী নয়, এসব কোম্পানির শেয়ারের দামও বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।
বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানিগুলোতে প্রাণ ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এটি নিয়ে বেশ প্রশংসা যেমন হচ্ছে, তেমনি বাছবিচার ছাড়াই দুর্বল কোম্পানির দামে উল্লম্ফন নিয়ে নানা কথা হচ্ছে।
গত এক বছরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থানে যখন একটি স্থিতিশীল বাজারের প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তখন এই প্রবণতায় আবার বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে যায় কি না, সেই সংশয়ও আছে। আর এর পেছনে কারসাজি থাকতে পারে বলেও জোর ধারণা রয়েছে।
গত তিন মাসে এমনও লোকসানি কোম্পানি আছে, যেগুলোর শেয়ার দর বেড়ে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও এসব বেশির ভাগ কোম্পানির রিজার্ভে নেই অর্থ।
অন্যদিকে নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়, মুনাফাও ভালো, ভবিষ্যতেও দুর্দশায় পড়ার আশঙ্কা নেই- এমন সব কোম্পানি উত্থানের মধ্যেও দর হারাচ্ছে বা দর দুই দিন বাড়লে কমছে চার দিন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব কোম্পানির দর বৃদ্ধির কারণে লেনদেন বাড়ছে বা সূচকের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তাতে মৌলভিত্তির বা ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। এসব কোম্পানির লোকসানে ভরা, এসব কোম্পানির ডে ট্রেডিংয়ের অংশ হিসাবে কিছু মুনাফা আসতে পারে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ঝুঁকিই বেশি।’
পুঁজিবাজারের আরেক বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘বিএসইসি যখন খারাপ বা তুলনামূলকভাবে দুর্বল কোম্পানিগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করে দিচ্ছে, তখন এর প্রভাব সব দুর্বল কোম্পানির ওপর পড়েছে।
‘তখন এসব কোম্পানির শেয়ার দরও অনেক কম ছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই ধারণা হয়েছে, বিএসইসি পর্যায়ক্রমে সব দুর্বল কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করে উৎপাদনে নিয়ে আসবে। এমন ধারণার কারণে এখন বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।’
- আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে ‘জাগবে’ এমারেল্ডের স্পন্দন
এভাবে দাম বাড়তে থাকায় কী ঝুঁকি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসব কোম্পানির কোনোটিরই অবস্থাই ভালো না। কয়েকটি চালু করা যাবে, কয়েকটি হয়তো চালু করাই যাবে না। যেগুলো চালু করা যাবে না কিন্তু শেয়ারের দর বাড়ছে, সেগুলোতে অবশ্যই ঝুঁকি আছে।’
দুর্বল কোম্পানি কতগুলো
লভ্যাংশ দেয় না, যেসব কোম্পানি, সেগুলো জেড ক্যাটাগরিতে থাকে।
পুঁজিবাজারে ৩১টি জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি ছিল। গত ১৩ জুন চারটি কোম্পানি ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে এসে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। ফলে এই ক্যাটাগরিতে কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫টি।
গত ১৫ জুলাই জেড ক্যাটাগরি থেকে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ‘বি’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর হয়েছে। ২ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেয়ায় এই উন্নতি হয়েছে কোম্পানিটির। ফলে বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে ৩৪ কোম্পানি। এর মধ্যে দুটির লেনদেন স্থগিত, একটির লেনদেন হয়নি।
তিনগুণও হয়েছে দাম
সিএনএ টেক্সটাইল কোম্পানির শেয়ারদর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ২ টাকা। সোমবার তা দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১৯৫ শতাংশ।
এই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করার পর দামে এই উল্লম্ফন হয়। তবে তিনটি কোম্পানি জীবন পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও এই কোম্পানিটি ব্যতিক্রম। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানিয়েছেন, এটি এবং ফ্যামিলি টেক্সকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নতুন বোর্ড আশাবাদী নয়। এ কারণে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার চিন্তা করছেন তারা। কিন্তু দুটির দাম বৃদ্ধি থামছে না।
১০০ শতাংশের বেশি যেগুলো
তুং হাই নিটিংয়ের দর বেড়েছে ১৬১.৫৩ শতাংশ। গত ২৮ এপ্রিল দর ছিল ২ টাকা ৬০ পয়সা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়াস।
ফ্যামিলি টেক্সের পর্ষদ পুনর্গঠনের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার দর ছিল ২ টাকা ৫০ পয়সা। ২৮ এপ্রিল তা ছিল ২ টাকা ৪০ পয়সা। বর্তমান দর ৫ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১২০.৮৩ শতাংশ।
জেনারেশন নেক্সটের দর বেড়েছে ১৩৫.৭১ শতাংশ। গত ২৮ এপ্রিল দর ছিল ৩ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাঁড়ায় ৬ টাকা ৬০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১০৯.৬৭ শতাংশ
ফারইস্ট ফিন্যান্সের দর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ৩ টাকা ৪০ পয়সা। সোমবার দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। শতকরা হিসেবে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০৮.৮২ শতাংশ।
তাল্লু স্পিনিংয়ের দর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ৩ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে তা ৭ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১০৭.৮৯ শতাংশ।
৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে যেগুলোর
আরএন স্পিনিংয়ের দর ২৮ এপ্রিল ছিল ৪ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমান দর ৬ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৮৮.০৯ শতাংশ।
মেঘনা পেটের দাম গত ২৮ এপ্রিল ছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমান দাম ১৬ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৬৬.৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্সের দর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ৪ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৬৩.৪১ শতাংশ।
মিথুন নিটিংয়ে দর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ৮ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমান দর ১৩ টাকা ২০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৬২.৯৬ শতাংশ।
ইমাম বাটনের দাম গত ২৮ এপ্রিল ছিল ১৯ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমান দাম ২৯ টাকা ৮০ পয়সা। শতকরা হিসেবে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫৬.০২ শতাংশ।
বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের গত ২৮ এপ্রিল ছিল ১২ টাকা। বর্তমান দাম ১৮ টাকা ৮০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।
জিলবাংলা সুগার মিলসের দর ২৮ এপ্রিল ছিল ১০১ টাকা। সোমবার দাঁড়িয়েছে ১৫৫ টাকা ২০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৫৩.৬৬ শতাংশ।
জুট স্পিনার্সের দাম ২৮ এপ্রিল ছিল ৯৬ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমান দাম ১৪৬ টাকা ৭০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৫২.৪৯ শতাংশ।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের গত ২৮ ছিল ৩ টাকা ৬০ পয়সা। বর্তমান দাম ৫ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৫১.৪২ শতাংশ।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ১০ টাকা। বর্তমান দাম ১৫ টাকা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
সাভার রিফ্যাক্টরিজের দর গত ২৮ এপ্রিল ছিল ১৫৭ টাকা ৪০ পয়সা। বর্তমান দাম ২২৮ টাকা ৫০ পয়সা। শতকরা হিসেবে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৪৫.১৭ শতাংশ।