তালিকাভুক্ত কোম্পানির বোনাস শেয়ার ইস্যু করার সুযোগ বন্ধ করে দিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে অন্তত দুই বছর লভ্যাংশ নগদে বিতরণ করতে হবে। আবার তালিকাভুক্তির পরেও চাইলেই বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না কেউ।
বিএসইসি জানিয়ে দিয়েছে,নতুন তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার আগামী ৫ বছর কোনো বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। ।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত ৯ মার্চ এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করে বিএসইসি। বুধবার সেটিই চূড়ান্ত করে সংস্থাটি।
রেজাউল করিম বলেন, ‘কেবল তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে নয়, তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও কোন কোম্পানি কত বছর বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না, সেটিও বলে দেয়া হচ্ছে। আর আমরা এটা মনিটরও করব।’
তবে তালিকাভুক্তির পর ব্যাংকের বোনাস শেয়ার ইস্যুতে কোনো বাধা থাকবে না। কারণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন বেশি থাকতে হয়।
এর আগে বিএসইসি ই জেনারেশন বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে আলাদা এক আদেশে জানিয়েছিল। এখন সেটি সামগ্রিক হয়ে গেল।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার পরিশোধিত মূলধন বাড়ালেও এমন বহু কোম্পানি আছে যারা পুনর্বিনিয়োগ করে কোম্পানির স্বাস্থ্য বাড়াতে পারে না। বরং গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কোনো বছরে শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি বোনাস ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শেয়ারের দর আকাশচুম্বি হয়ে যায়। কিন্তু পরে বিনিয়োগকারীরা ঠকে থাকে।
বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার বিপরীতে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ টাকা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে তা দিয়ে যে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে তা বছর শেষে কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি আয় ও মুনাফা দেখেই অনুমেয়।
আবার বোনাস লভ্যাংশ দিলে বিনিয়োগকারীদেরও খুব একটা লাভ হয় এমন না। কারণ, যে পরিমাণ শেয়ার যোগ হয়, দামও তার সঙ্গে সমন্বয় হয়।
অর্থাৎ ১০০ টাকা দামের কোনো কোম্পানি যদি ১০ শতাংশ বোনাস দেয়, তাহলে রেকর্ড ডেটের পর সে কোম্পানির শেয়ারের দামও ১০ শতাংশ কমবে। কিন্তু নগদ লভ্যাংশ দিলে শেয়ার দরে তা সমন্বয় হয় না।
- আরও পড়ুন: পকেট ফাঁকা করেছে মুন্নু অ্যাগ্রো
- আরও পড়ুন: তিন বছরে শেয়ার ২৩ গুণ করে ডুবল স্টাইলক্রাফট
সদ্য যেসব কোম্পানি অর্থবছর শেষে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করছে তার কারণও এখন ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে ডিএসই ওয়েবসাইটে।
এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নগদ লভ্যাংশ নিয়ে আগ্রহ যে বাড়তে শুরু করেছে, সেটাও স্পষ্ট। পুঁজিবাজারকেন্দ্রীক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নানা পোস্টেও নগদ লভ্যাংশের পক্ষে লিখে থাকেন তারা।
আবু আহমেদের সমর্থন
বিএসইসির এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটি নতুন কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই কেন বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে হবে? আইপিও থেকে কোম্পানি যে টাকা পেয়েছে সেটি তো তার কাছেই আছে। সেগুলো দিয়ে কোম্পানির উন্নয়ন করুক। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করুক।’
- আরও পড়ুন: শেয়ার বাড়িয়ে অস্তিত্ব-সংকটে জেমিনি
- আরও পড়ুন: ডাচ-বাংলার শেয়ার কিনে ঠকা দুইবার
অকারণে বোনাস শেয়ার ইস্যুকে সমর্থন করেন না আবু আহমেদ। বলেন, ‘এটা কোম্পানির ভাঁওতাভাজি। আগে এসব কিছুর কোনো মনিটরিং ছিল না। ফলে বছর বছর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে পরিচালকরা শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। আর বেশি দামে বিক্রি করেছে।’
বোনাস শেয়ার দিলে যদি কোম্পানির ভালো হতো তাহলে বহুজাতিক কোম্পানি কেন নগদ লভ্যাংশ দেয়-সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বলেন, ‘বিএসইসিকে আরও কঠোর হতে হবে। বোনাস শেয়ার কেন দেবে, কী কাজে ব্যবহার কববে তা যাচাই বাছাই করতে হবে। আর বোনাস শেয়ার দেয়ার পর তা ব্যবহৃত হয়েছে কী না সেটিও মনিটরিং করতে হবে।’
নামমাত্র শেয়ারে তালিকাভুক্ত নয়
কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। বলা হয়েছে, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়াতে চাইলে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।
তবে আইপিও ছাড়ার পর যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকা হবে, সেসব কোম্পানিকে অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। একইভাবে যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, সে কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।
- আরও পড়ুন: বেশি দামে শেয়ার বেচে উধাও ফ্যামিলিটেক্সের মালিকরা
- আরও পড়ুন: বিএটিবিসি, বার্জারে মুনাফা পেতে দুই বছর
নীতিমালায় নতুন কোম্পানিকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। আইপিওর মাধ্যমে কোনো কোম্পানি ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চাইলে সে কোম্পানি ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ইস্যু করার সুযোগ পাবে।
প্লেসমেন্টের এসব শেয়ার কারা পাবে তা ইস্যুয়ার নির্ধারণ করবে। তবে এসব শেয়ার দুই বছরের জন্য ‘লক-ইন’ বা বিক্রি নিষেধাজ্ঞায় থাকবে।