সোশ্যাল মিডিয়ায় হরেক রকমের মানুষের আনাগোনা। তাই এমন কিছু পোস্ট আমরা দেখি, যাতে অনেক সময়ই হতাশ হয়ে যাই। পোস্টগুলোতে আমরা যা দেখি তার প্রভাব কিছুটা হলেও আমাদের জীবনে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, কয়েকটি উপায় অবলম্বন করে সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসী মনোভাব থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি। তেমনই কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।
ডিলিট অ্যাপ
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ কখনো ডিলিট করে দেখেছেন? কেমনভাবে সময় কাটে? না করলে এবার এই চেষ্টা করে দেখুন। ১২ ঘণ্টার জন্য সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিন। এরপর দেখবেন অ্যাপগুলো ব্যবহারের ইচ্ছা কমে যাবে।
ডিটক্স
এমন বন্ধুকে খুঁজে নিন যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে চায়। জীবনে উন্নতি করা এবং ওজন কমানোই যার লক্ষ্য। তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ফোন থেকে দূরে থাকুন। এক সপ্তাহ পর ফোনের ব্যবহার কতটা কমাতে পেরেছেন তা নিয়ে আলাপ করুন। এতে করে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমালেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হবে না।
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যাপ
কোন অ্যাপ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন তা জানতে ‘মোমেন্ট’ অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। আইফোনের ক্ষেত্রে বিল্ট ইন স্ক্রিন টাইম ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। কোন অ্যাপে কত সময় ব্যয় করেছেন তা ফিচারটি জানিয়ে দেবে। এরপর সেই অ্যাপকে দূরে রাখুন আপনার কাছ থেকে।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলুন
কারো সঙ্গে কথা বলার মাঝপথে ফোন ব্যবহার করাটা অশোভন। এই বদ অভ্যাস ছাড়াতে চাইলে পরিবারের সবার সঙ্গে আড্ডা দিন, কথা বলুন, গল্প করুন।
রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে রাখুন
মনের অজান্তেই আমরা অনেক সময় ফোন হাতে নিয়ে নেই। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে ফোনের মধ্যে রাবার ব্যান্ড পেঁচিয়ে রাখুন। এতে ফোন ধরার সময় বাধা অনুভব করবেন এবং নিজের কাজে মন দিতে পারবেন।
প্রশ্ন
লক স্ক্রিনে ‘এখন কেন? কিসের জন্য? আর কী?’ এ ধরনের প্রশ্ন সেট করে রাখতে পারেন। তাহলে দেখা যাবে, ফোন হাতে নেওয়ার পেছনে কী উদ্দেশ্য তা নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারবেন। আর ব্যবহার কমে আসবে।
মনোযোগ
টাকার মতো করেই হিসাব করে মনোযোগ ব্যয় করতে হয়। কারণ মনোযোগ আর সময় টাকার চেয়ে কম মূল্যবান নয়। তাহলেই বুঝে নিন, কোথায় মনোযোগ বেশি দিতে হবে।
ফোনেরও রেস্ট দরকার
ফোন দূরে রেখে রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়া উচিত। এতে ঘুম ভাঙার পরপরই ফোন হাতে নেওয়ার অভ্যাস থেকে মুক্তি মিলবে। অনেক সময় ঘুম ভাঙলে অনেকেই দুই মিনিটের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারেন। এতে ঘুম চলে যায়। হাতের নাগালের বাইরে থাকলে বারবার ফোন হাতে নিতে মন চাইবে না।
পরিকল্পনা
ঘুম ভেঙেই পরিকল্পনা করা উচিত সারা দিন কী কী কাজ করবেন। তবে এর বদলে বেশির ভাগ মানুষ ফোন স্ক্রল করতে সময় বেশি খরচ করেন। ফলে একগাদা তথ্য মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আসল কাজ আর হয়ে ওঠে না।
অ্যাপ লিমিট
অ্যাপ কতক্ষণ ধরে ব্যবহার করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করা যাবে ‘ফ্রিডম’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট সময় পার হলে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো লক করে দেবে ‘ফ্রিডম’। শত চেষ্টায়ও এই লক খুলবে না। আজই করে ফেলুন অ্যাপ লিমিট।
ফোল্ডার
সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো একটি ফোল্ডারের ভেতরে ঢুকিয়ে দিন। হোম স্ক্রিনে অ্যাপগুলো দেখতে না পেলে মনের ভুলে অ্যাপ চালু করার প্রবণতা কমে আসবে।
মেডিটেশন
ফোনের ব্যবহার কমাতে চাইলে মেডিটেশন করুন। এতে করে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা যাবে। আর কে না জানে, যত কিছুই করা হোক না কেন, দিন শেষে মনের ইচ্ছাটাই জরুরি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ছাড়তে মেডিটেশন ভালো একটি বিকল্প হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে যেমন অনেক কিছু এনে দিতে পারে, তার চেয়ে জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলার পেছনে এটি অন্যতম নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সবকিছুর আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।