প্রতারণা ও মাদক মামলায় রিমান্ডের পর এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ইশরাত রফিক ঈশিতা এবং তার সহযোগী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম দিদারকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
মাদক ও প্রতারণার মামলায় ৬ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার তাদের আদালতে তোলা হয়। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাদের দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার।
গত ৬ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোসহ ৫ দিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহআলী থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাসুদ রানা।
তখন দুই মামলায় রিমান্ড চলমান থাকায় আদালত ওই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ৯ আগস্ট দিন রাখে।
মামলার আবেদনে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহযোগিতায় ইচ্ছাকৃতভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নিজেদের খ্যাতিমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তারা।
এজাহারে আরও বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আসামি দুজন নিজেদের ভুয়া সাফল্য প্রচার করতেন। প্রচার করতেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মিথ্যা তথ্য।
আরও বলা হয়, আসামিরা অ্যাওয়ার্ডবিষয়ক অনুষ্ঠানের ভুয়া ছবি ও সনদ তৈরি করে গণমাধ্যমে পাঠিয়ে এবং ভার্চুয়াল জগতে প্রচার করতেন। ‘ইয়াং ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফর হিউম্যানিটি’ নামে একটি অনিবন্ধন ও অননুমোদিত সংগঠন পরিচালনা করতেন। এটির সদর দপ্তর দেখানো হয়েছে নিউ ইয়র্কে।
ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতারণা নেটওয়ার্ক তৈরি সংগঠনটির জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন ইশিতা ও দিদার। প্রাথমিক তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এদিন আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদন ও রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেছিলেন মো. ফোরকান । আদালতকে তিনি বলেন, ‘আসামিরা নিরপরাধ। অন্যায়ভাবে তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। ঈশিতা সত্যিকারের একজন ডাক্তার। তার কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ। তার রক্তে অতিমাত্রায় বিলিরুবিন বেড়ে গেছে। তিনি অসুস্থ, ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না। তাই দয়া করে তার রিমান্ড বাতিল করে মানুষ হিসেবে তাকে চিকিৎসা করার আবেদন করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শাহআলী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান রিমান্ড বাতিলের বিরোধিতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক। সেই সঙ্গে আসামি ঈশিতাকে কারাবিধি মোতাবেক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঈশিতা ও দিদারকে ১ আগস্ট মিরপুর থেকে আটক করে র্যাব-৪-এর একটি দল। তাদের বিরুদ্ধে সোমবার সকালে বাহিনীটির পক্ষ থেকে প্রতারণা ও মাদক আইনে দুটি মামলা করা হয়।
মামলা দুটিতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরের দিন আদালতে তোলা হয় ঈশিতা-দিদারকে। আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠায়।
ঈশিতা-দিদারকে আটকের সময় ঈশিতার বাসা থেকে ভুয়া কিছু আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০টি ইয়াবা ও ৫ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করে র্যাব।
বাহিনীটি জানায়, ঈশিতা ফিলিপাইনের একটি ওয়েবসাইট থেকে ৪০০ ডলারে সামরিক বাহিনীর ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ ভুয়া র্যাঙ্ক কেনেন। সে অনুযায়ী র্যাঙ্ক, ব্যাচ ও পোশাক বানিয়েছিলেন। তার দেখানো পথে ভুয়া মেজর জেনারেল র্যাঙ্ক কিনে ব্যবহার করতেন সহযোগী দিদারও।
র্যাবের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঈশিতা পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস পাস করেন। এরপর ২০১৪ সালের শুরুর দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। চার মাস চাকরির পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন। এরপর নানা প্রতারণার রাস্তা বেছে নেন ঈশিতা।